রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

সম্পাদকীয়



"তোমার বুকের ’পরে আমাদের পৃথিবীর অমোঘ সকাল;
তোমার বুকের ’পরে আমাদের বিকেলের রক্তিল বিন্যাস;
তোমার বুকের ’পরে আমাদের পৃথিবীর রাত:
নদীর সাপিনী, লতা, বিলীন বিশ্বাস।"

এমন কিছু বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে " সৃজন " যাত্রা শুরু ৷ যেমন দিনের পর রাত , গ্রীষ্মের পরে বর্ষা , লালের পরে নীল তেমনই সৃজনের আগমন ৷কুয়াশা মাখা ভোর সরিয়ে একঝাঁক রোদ্দুর সাথে নিয়ে বিগত ৩১ ডিসেম্বর  " সৃজন " পথ চলা শুরু করেছিল ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৷ বিপুল পাঠকের  চাহিদা , ও  " সৃজন " কবি , লেখকদের অনুরোধে  মাসিক ভাবে প্রকাশ হতে শুরু করে জুন ২০১৬ পর থেকে ৷সৃজন  "সৃজন২০১৭ " সম্মান প্রদর্শন করছে ৬ জন কবি/লেখক বন্ধুদের, যারা ধারাবাহিক ভাবে  লিখে গেছেন সারা বছর ধরে  ।  " সৃজন " এই মানুষদের সম্মানিত করতে পেরে গর্বিত ৷ 
" সৃজন সেরা সম্পাদক " সম্মান পাচ্ছেন 
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এবং 
" সৃজন ২০১৭" সম্মান পাচ্ছেন 
অনিন্দ্য রায়,যুগান্তর মিত্র,ভজন দত্ত,জয়তী রায়,চয়ন ভৌমিক,চন্দ্রাণী বসু,তুষ্টি ভট্টাচার্য , অর্ঘ্য দত্ত

একই সঙ্গে "আমার সৃজন"পত্রিকার দ্বিতীয় ও পাগল সংখ্যা প্রকাশ হতে চলেছে ।  পত্রিকার মুদ্রিত ও অনলাইনে মাধ্যমে " সৃজন" অনেক বেশী সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছাক এটা আমাদের উদ্দেশ্য ৷ ইতিমধ্যে আমাদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে যার সদস্য সংখ্যা ১৯০০ ৷ " শব্দের হাতেখড়ি "  আপনাদের খুব পরিচিত একটা গ্রুপ হয়ে উঠেছে ৷ বিগত দিনে এই গ্রুপ সাহিত্যের অন্যতম গ্রুপ হয়ে উঠবে এটা আমার বিশ্বাস ।


আর যদি না আসো তবে ফুটন্ত জলের বাষ্পে মিশে থেকো 
প্রতিদিনের অভ্যাসের মত 
তোমার অভাব বুঝি আজকাল 
কেমন যেন নীলাভ ভোর হয়ে আসে গাছের পাতাগুলি 
নিজের চুলের মৃদু ঘ্রাণের মত বিকাল গড়ায় 
তারপর আসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি পূর্ণিমার তিথিতে

হয়ত বা আবার দেখা হবে 
চোখে লাট্টুর মত জানলা তার মাঝে সবুজ খড়খড়ি
উড়ন্ত বাতাসের ঠোঁটে চুম্বন করতে করতে 
কিছু কবিতার কথা বলা হবে

শিশুদের তরল আহার্যের মত তোমার হারিয়ে যাওয়াটা  বড় সত্যি ছিল সেদিন
তবু 

ফুটন্ত জলের বাষ্পে মিশে থেকো

আপনাদের হারিয়ে যেতে আমরা দেবনা কোনভাবেই ৷ ভালোবাসায় থাকুন ,সৃজনে জড়িয়ে থাকুন । " সৃজন ২০১৮ সম্মান " কারা পাবে তার জন্য আপনাদের সৃজনের সাথে আরও বেশী ভাবে থাকতে হবে সারা বছর ধরে  ৷



সম্পাদিকা 
পারমিতা চক্রবর্ত্তী
 ২৩ , বিপিন গাঙ্গুলী রোড , কলিকাতা -৩০
দমদম
পো+ অফিস : ঘুঘুডাঙা

সুফিয়া নাসরিন

খেলাঘর "

গরীব বাবার বড় আদুরি রাজকুমারি
ছোট ছোট হাতে সাজাত পুতুলের সংসার,
গামছা দিয়ে শাড়ি পরা ছোট মেয়েটি কতব্যস্ত-
মাটির হাঁড়ি , কড়া দিয়ে মিছি মিছি খেলাঘর নিয়ে।
ভ্যানচালক বাপ আর পাঁচ বাড়ির কাজ করা মা,
ভালোবাসা আদরের কমতি নেই পরিবারে।




হঠাৎ কালবৈশাখি ঝড়ে ওলট পালট সব,
মা মরল মরণ রোগে, বাপও গেল শেষে।
কিশোরী তখন যুবতী, শরীর জুড়ে মাদকতা,
মিষ্টি, লালিত্য মাখা, শরীরের বিভঙ্গে যৌবনের ডাক।
পাড়ার দাদাগুলোও কেমন পাল্টে গেল সব,
সবার চোখ জুড়ে তখন লোলুপ দৃষ্টি।।



দিনের আলোয় তবু স্বস্তি , রাতের আঁধার বিভীষিকায়,
দরজার বাইরের শিয়াল কুকুরের ডাকে ত্রস্ত মেয়েটি।
পেটের জ্বালা নিবারণে যেতে হয় বাবু বাড়িতে,
আদরে বেড়ে ওঠা মেয়েটি সহ্য করে শত গঞ্জনা।
যে নরম হাতে মা মেহেন্দি পরাত ভালবেসে
সেদুটো আজ ফোস্কা হাজাতে ভরা।।

হঠাৎ করে বয়স বেড়ে যায় একাকিত্বের ধাক্কায়,
বাবু বাড়ির মেজছেলেটার কুনজরও বুঝতে পারে।
কত শুভাকাঙ্খির আনাগোনা তার বাড়িতে,
ওই যে ওপাড়ার রেখামাসি স্বপ্ন আনল বাড়ি বয়ে ,
ভাল পাত্র, পন ছাড়াই ঘরে তুলবে তাকে।
সংসার হবে নাকি তার ঠিক যেমনটি চায় সে।


আশায় বুক বেঁধে সাড়া দিল অশানির ডাকে,
এগলি ,,ওগলি কত রোশনাই পাড়া জুড়ে ।
চোখ ধাঁধান আলোর বাহার, কানে আসছে গান
চড়া মেকাপে উপাস্থিত এই মেয়েগুলো কারা?
এত সাজ সজ্জা, আলো, গান তার জন্য?
হাজার প্রশ্নের ভীড়ে কখন মেয়েটি হল বিক্রি 
টেরও পেল না উঠতি যৌবনের এই যুবতি।।

এখন প্রতিরাতে তার বাসর সাজে, খেলাঘর হয়,
জীবন সঙ্গী নেই কেউ, তবে শয্যা সঙ্গী রোজই নতুন।।।

মেঘ অদিতি



ঘুম অথবা সঙ্গীতে
অন্ধকার তরল হলে দু'তিন লাইন রেড সিগন্যাল
অরোরার অহিফেন নেশা

পা ডুবিয়ে তুমি ভেজামাটির অ্যাসাইলাম শুদ্ধতা
গাইছ গর্ভসঙ্গীত, বন্ধুহীন টুপটাপ
কোমল ঋষভে ছুঁয়েছ মিশরের প্রবেশদ্বার

এসবে সহজতা কোথায়..
থেকে থেকে ফেরানো বেতফল
শৈশব ডেকে নিচ্ছে ঘুমাবে বলে
-----------------
অথবা ভালবাসা
এই যে ডুবে আছি জ্বরের ঘোরের ভেতর, পাতাবাহারের রঙ খসে না-মানুষী বিষমাখা হা হা ওই হাসি কাঁপিয়ে দিচ্ছে আমার হাড়, এ কিছু নয়- এসব দৃশ্যের ভেতর উড়ে বেড়াচ্ছে এক ঝিনুকজন্ম ও বিস্ফোরক।

ভালবাসার অদৃশ্য পাখিটা আগের মতই গান গাইছে আর একটা পুরনো আয়নায় মুখ রেখে তুমি আঁকছো তার উত্থান ইতিহাস-

বিপ্লবীরা কে কোথায়?

সন্ধের বুকে তোমাদের ঘ্রাণ মুছে কতদূর যেতে পারে এই প্রৌঢ় পৃথিবী!



দৃশ্যবদলে- শেষবার
তবে কি রক্তজবার ঝোপের ঠিক নিচেই জেগেছিল সেই সুর যার কাছে মুহূর্ত খরচ করতে আর কোনো দ্বিধা ছিলো না! যদি তাই, তীব্র ঝাঁঝের আড়ালে তিক্ত স্বাদটুকু তো আমরা বুঝতে চাইনি। চেয়েছি শুধু অবিসংবাদিত এক ভোর অথচ অজানা ছিল অন্তরীপের খোঁজ। সেই বাংলো, খোলা আকাশের নিচে আড়াআড়ি শুয়ে থাকা, বাক্সবন্দি একটাই ঘুমপাড়ানি গান ঘুরে-ফিরে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, বারবার.. কিন্তু কোথাও তো কেউ ঘুমিয়ে পড়ছে না!
শুধু একটা প্রশ্ন তীরের মতো বিঁধে যাচ্ছে চোখে মুখে আর মাথা ঝাঁকিয়ে তাকে ”না” বলছি বারবার ..
দৃশ্যবদলে বিষাদ-যুবক ছুঁতে চাইছে আমার অসম আঙুল, কপাল আর কাঁধ। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ডুবে যেতে যেতে ভেসে উঠে বলছে- এই শেষবার...

শুভাশীষ , পারমিতা

স্বীকৃতি



জ্বরের বিকেলে ব্সলাম
পাশে দীর্ঘদিন
ঋতুর প্রয়োজনীয় বার্তায়


কানকে যতটা সম্ভব

আবেদন থেকে  দূরে রাখছি

যদিও কথার দৈর্ঘ্য কমছে- আজকাল

ভাবছি চিঠি লিখব
সেই সব দুপুরদের
যারা খেলতে , খেলতে কুড়িয়ে নিত

সন্ধ্যের অযত্নে থাকা  গোধূলি


তারপর অন্ধকারে'র মানচিত্রে


জোনাকির বিছানায় / ডুবে যাওয়া ঘুমে

কিছু নিরাপদ আত্মগোপন


এসো সম্ভাবনা

  এবার একটা ভুলকে  স্বীকৃতি দিই 

শুভ আঢ্য





যে জন আছেন পদ্যে আর মদ্যে 
(১)
(গলা খাঁকারি – ধরতাইও বলতে পারেন, মানে সন্ধ্যেবেলা মদের টেবিলে বসার আগে পাঁড় লোকজন যেমন গুছিয়েগাছিয়ে পাঞ্জাবিটা, ধুতির খুঁটটা সামলে বসতেন একসময়, তেমনই আর কি... আর কিছুক্ষণের মধ্যে গ্লাস আসিবেক, একটা আঙ্গুলে গ্লাসে ডুবিয়ে সামান্য মদ ছুঁইয়ে নিয়ে শুরু হবে গলায় ঢালা অনেকটা কমলকুমারের ইস্টাইল... উচ্ছুগ্‌গ করা আর কি) 
‘আন্‌ধেরা কায়েম রহে্‌’... সেই কিলবিষ! ছোটোবেলার শক্তিমানের ভিলেন। তো, শক্তিমান হয়ে উঠতে হয় কাউকে না কাউকে, যাকে দেখে, যার চারপাশ মে গুল খিল্‌তে হ্যায় ইয়াহা... তেমনই তো, নাহ্‌, সেভাবে ভিলেন কেউ নেই, আবার আছেও। চল্লিশ, পঞ্চাশের দশকে যখন বাংলা সাহিত্যকে দেখে ভক্তিবাদী অনেকে হয়তো বলে উঠছেন, ‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছো?’ আর তাদের সামনে জলপান করাতে আসছেন, আর সেই অবাক জলপানে তেষ্টা মিটে আর উঠছে কই! মানে ওই এন্তার সস্তা লেখার মধ্যে সেভাবে আলাদা করে দাগ কেটে উঠছেন না কেউ, ব্যতিক্রম জীবনবাবু, আর ঠাকুরমশাইয়ের অতি-দানবিক ব্যাপারস্যাপারের বাইরে এসে কিছু করে উঠতে পারছেন না, তখন জানা গেল, কিছুদিনের মধ্যেই বাংলা সাহিত্যের মেনস্ট্রিমের বাইশ গজে নেমে পড়তে চলেছেন সেকেণ্ড ডাউন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। মানে সাধারণ ছাপোষা বাঙালী যার বছরে তিনবার করে শান্তিনিকেতনে গুরুদেবকে দেখে আসার সামর্থ্য নেই, বা চান না ততটাও, বা যার মধ্যে কিছুটা ব্যাডবয় ইমেজ রয়ে গেছে (অভিযোজন ইনকমপ্লিট) যা তৎকালীন লেখাপত্তর পড়ে হেজে উঠেছে আর তিনি একটা টোটাল আইকনের খোঁজে তাকিয়ে বসে আছেন পথপানে চেয়ে... শক্তি চাটুজ্জে তাকেই আর কিছুদিনের মধ্যে পাকড়াও করবেন। অনেকটা মন্ত্রমুগ্ধের মত ব্যাপার, অনেকটা ছেলেধরা টাইপের আর ওই কি যেন বলে না, হ্যামলিন, হ্যাম-লীন হয়ে যেতে শুরু করবে যার মধ্যে, সেই মানুষ রেডি হচ্ছেন। 
ওপেনিংয়ের সমস্যা বলুন, বা সুবিধেই, হ্যাজ। তেমন ভাবেই মিডল অর্ডারেরও সমস্যা বলুন, আর সুবিধেই, সে’ও হ্যাজ। নতুন বলে যেমন কিছু বাউন্সার আসতে পারে আর তা থেকে ইনিংসকে পথ দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে, তবে আবার এও বটে তখনও ফাস্ট বোলারের জড়তা কাটেনি, তেমন অভাবনীয় খেলার সামান্য কাঠিন্য দেখাতে পারলে তা অনেকাংশেই দর্শকের মন জিতে নিতে পারে (এক্ষেত্রে রবিবাবুর ব্যাপারটার সাথে কোনো সামঞ্জস্য না খুঁজতে যাওয়াই সমীচীন, তিনি ব্র্যাডম্যান। আপনি প্রাজ্ঞ হে পাঠক, জানি, সে ভুল আপনি করবেন না... আর এমন ভুলও করে উঠবেন না যে জড়তাময় বোলারকে আমি পাঠক বলে সামান্য এসেন্সও দিতে চেয়েছি... বেড়াল প্রথম রাতেই মেরে রাখা ভালো। পরে সে কি অলুক্ষুণে কাণ্ডই না ঘটাতে পারে তা তো নিউটনের গল্পে পড়েইছেন, ওই রিসার্চের কাগজপত্র পুড়েটুড়ে গিয়ে এক্‌সা।) 

ক্রমশঃ 


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


২০১৭ সৃজন সম্মান


ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

                    পাগল যে তুই, কন্ঠ ভরে
                   জানিয়ে দে তাই সাহস করে  
-   
       প্রয়াত সাহিত্যিক নীলকন্ঠর একটি রম্য রচনা গ্রন্থে (নামটা মনে নেই) শুরু করেছিলেন এই বাক্যটি দিয়ে –“ইতিহাসে অনেক পাগলের কথা আছে, কিন্তু পাগলদের কোন ইতিহাস নেই । সত্যিই তো ইতিহাসে আমরা কত পাগলের কথাই না জেনেছি –বিত্তবান পাগল, নিষ্ঠুর পাগল, দয়ালু পাগল, ধার্মিক পাগল, পন্ডিত পাগল আরো কত ধরণের । বিদ্বান ও জ্ঞানী সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলককে তো ইতিহাস ‘পাগলা রাজা’ বলেই দেগে দিয়েছে । ইতিহাস তো সেদিনের ব্যাপার । ইতিহাস ছেড়ে পুরাণে উঁকি মারলেও তো পাগলের দেখা মেলে মানে আমরা সে রকমই ভাবি । আমাদের বিশ্বাস মতে প্রাচীনতম বা আদি পাগল হলেন  দেবাদিদেব মহাদেব, যিনি পাগলা ভোলা নামে অখুশি হয়েছেন এমন কেউ বলেন না । একটা সিনেমার গান শুনেছিলাম – “আহা রে হৈমবতী শিবসোহাগী রাজার নন্দিনী, তার কপালে পাগলা ভোলা লোকে কি কবে...” লোকে তাঁকে পাগলা ভোলাই বলে আর সেই পাগলের মত স্বামী পাওয়ার জন্য মেয়েরা শিবরাত্রী তে কত জল আর জল মেশানো দুধ ঢালে ‘পাগলা ভোলা পার করেগা’ বিশ্বাসে !
       একটা কৌতুকী শুনেছিলাম ছেলেবেলায়,সেটা বলি প্রধাণমন্ত্রী নেহেরু গিয়েছেন রাচীর পাগলা গারদ পরিদর্শণে এক পাগল জিজ্ঞাসা করলো তুমি কে বাপু ? নেহেরু বললেন আমি প্রধাণমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু পাগলটা হেসে বললো,এখানে আসার আগে আমিও তাই বলতাম দুদিন থাকো, ঠিক হয়ে যাবে অমোঘ সত্য বলেছিল পাগলটি পাগল না হয়েপাগলের মেলায়দুদিন থাকা কি চাট্টিখানি কথা !আমায় দে মা পাগল করেবলে আমাদের কত আকুতি !স্বর্গ নাকি আমাদের পরম কাঙ্খিত গন্তব্য, সেখানেও নাকি পাগলের মেলা, মানে মেলাই পাগল ! সেই যে পান্নালাল ভট্টাচার্য গীত শ্যামা সঙ্গীত “স্বর্গেতে পাগলের মেলা, যেমন গুরু তেমনি চেলা” আমরা শুনে আপ্লুত হই !
       পাগলদের মহা গুন যে তাদের পাগল বললে মোটেই রাগ করে না বরং উপেক্ষা, অবহেলার হাসি হাসে । মহা বিজ্ঞানী নিউটন ছেলে বেলায় কত শুনেছেন পাগলা ছেলে পরিচয় । পাগলই তো ~ নাহলে গাছ থেকে টুপ করে আপেল পড়তে দেখে কোথায় সেটা আগে খাবে, তা না করে দুনিয়ার ভাবনার জট ছাড়াতে লাগলেন যে আপেলটা মাটিতে পড়লো কেন, শূন্যে ভেসে থাকলো না কেন ? আসলে পাগলামি ছাড়া সর্বোচ্চ মেধা অর্জিত হয় না। বিজ্ঞান নাকি এমন কথাও বলেছে । বিশ্ব বন্দিত মার্কিন সাহিত্যিক এডগার এলেন পো একবার বলেছিলেন ‘‘লোকে আমাকে পাগল বলে ৷ কিন্তু পাগলামিতেই বুদ্ধিবৃত্তির সবচেয়ে শিখরস্পর্শী অবস্থান নিহিত কিনা সেই প্রশ্নের এখনও সুরাহা হয়নি” ৷ আর সৃষ্টিছাড়া পাগলামির মধ্যেই চিত্রশিল্পী ভ্যানগখের সৃষ্টিশীলতা তাও কারো অজানা নয় । বাঙালির ঘরের লোক ঋত্বিক ঘটক তো আছেনই । ভার্জিনিয়া উলফের মত সৃষ্টিশীল সাহিত্যিকও পাগল বলেই চিহ্নিত হয়েছিলেনউলফের নিজের বয়ানে ‘‘আমি বিয়ে করে ফেললাম এবং আমার মাথায় যেন আতশবাজির আগুনের ফুলকি ফুটতে শুরু করল৷ পাগলামির অভিজ্ঞতাটা আসলেই ভয়াবহ ভীতিকর৷ কিন্তু, আমি এখনই খুঁজে পাই যে, আমি যা কিছু লিখেছি, যেসব নিয়ে লিখেছি তা ওই আগুনের লাভাতেই জন্ম নিয়েছিল” ৷ এমন সৃষ্টিশীল মানুষ শেষ পর্যন্ত পকেটে ভারি পাথর রেখে নদীতে ঝাঁপিয়ে নিজেকে শেষ করেছিলেন । প্রতিভাই পাগলামি আর আমরা অ-পাগলরা ক্ষুধিত পাষাণের পাগলা মেহের আলির ‘সব ঝুট হায়, তফাত যাও’ চিৎকার শুনে তফাতেই থাকি ।
       বাঙালি বেশ একটা প্রবাদ চালু করেছে অনেকদিন আগে থেকে ‘পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়’ যদিও ছাগল সব কিছু খায় না, বরং মানুষই ছাগল সহ সব কিছু খায় । আর পাগলেরাও বেশি কথা মোটেই বলে না । মহা বিজ্ঞানী আত্মভোলা নিউটনের কথাই বলি । এক রাত্রে বন্ধুকে তার বাড়িতে খাবার নিমন্ত্রণ করে ভুলে গেছেন । বন্ধু যথা সময়ে এলেন, নিউটন গণিতের জটিল সূত্র সন্ধানে মগ্ন, কোন কথা নেই । বন্ধু ভাবলেন টেবিলে রাখা খাবার প্লেটটি তার জন্য রাখা । তিনি কথা না বলে খেয়ে নিলেন । তারপর নিউটন আত্ম নিমগ্নতা কাটিয়ে খালি প্লেটটা দেখে বললেন ভাগ্যিস তুমি এসেছ, নাহলে বুঝতেই পারতাম না যে  আমি এখনো খাইনি ।
       বৃটিশ গণিত বিজ্ঞানী অলিভার হেভিসাইডকে তাঁর বন্ধুরা পাগল আখ্যা দিয়েছিলেন । তিমি বড় বড় গ্রানাইট পাথরখন্ড ঘরে ব্যবহার করতেন আসবাবপত্র হিসাবেমাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে স্কুলছুট স্ব-অর্জিত মেধা সম্পন্ন গণিত বিজ্ঞানী ‘পাগল’ হেভিসাইড ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিসম’ বিষয়ে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন ।
       রবীন্দ্রনাথ যতই লিখে যান না কেন “পাগল শব্দটা আমাদের কাছে ঘৃণার শব্দ নহে” কারো কারো কাছে কিন্তু এটা ঘৃণার শব্দ, এমনই মনে করেন তাঁরা কোন রাজনীতিক নেতা-মন্ত্রীর ভাষণ শুনে তাকে পাগল বললে কিন্তু আর রেহাই নেই । কিল চড় লাথি জুটলে তা হবে কম, মানহানির মামলাও ঠুকে দিতে পারেন তাঁরা । পাগলদের কিন্তু পাগল বললে তারা তেড়ে মারতে আসে না  । এই যে মাঝে মধ্যে দু একটা পাগল হাওড়া  ব্রীজের টং’এ উঠে মজা পায় এই দেখে যে তার জন্যই অ-পাগলদের কত হুলস্থুল , কত লোক ঘাড় উঁচু করে তার কান্ডকারখানা দেখছে । তো, সেই লোকটা যদি বলে ব্রীজটা তৈরি করতে কত নাটবল্টু লেগেছে সেগুলো গুনে দেখার জন্যই ওপরে উঠেছি, তাহলে ? মেহেনত করে উঠেছে যখন নেমেও তো আসতে পারে ! আচ্ছা, লোকটা যদি হাওড়া ব্রীজের টং’এ উঠে আবার নেমে এসে অ-পাগল ট্রাফিক পুলিশ বা কোন লোককে সেলাম ঠুকে বলে ওপরটা ঘুরে এলাম স্যার, অনেক অক্সিজেন নিলাম  ! তাহলে ?
       আমাদের রোজকার জীবন-ছন্দের বাইরে কারো যাপন একটু অন্যরকম হলে কিংবা আমাদের স্থুল দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়ার হিসেবের চৌহদ্দির বাইরে গেলেই তাকে পাগল বলে দেগে দিই । শ্রী চৈতন্যদেবকে তো খ্যাপা বলেই আমরা ভক্তি করি । ‘মেরেছো কলসির কাণা, তা বলে কি প্রেম দেবো না’ ? খ্যাপা ছাড়া কে কবে এমন কথা বলতে পারে ? চৈতন্য দেব থেকে প্রেম বিলনো সবাইকেই খ্যাপা বলেই ভক্তি করি । আর পাগল ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব তো আছেনই । যশোর জেলার রাখাল বালক কানাই শেখ গরু চরাতে চরাতে মুখে মুখে দেহতত্বের বাঁধতেন । পরিশীলিত অ-পাগল আমরা তাঁকে ‘পাগলা কানাই’ হিসাবেই চিনলাম । কিংবা কালনার ভবেন্দ্রমোহন সাহা হয়ে গেলেন ‘ভবা পাগলা’ যার কৃষ্ণপ্রেম ও শ্যামা বিষয়ক গান একালেও শহুরে শিল্পীরা গাইছেন ।
       আবার সেই বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথকেই শিরোধার্য করি । বলেছেন “প্রতিভা খ্যাপামির এক প্রকার বিকাশ কি না এ কথা লইয়া য়ুরোপে বাদানুবাদ চলিতেছেকিন্তু আমরা এ কথা স্বীকার করিতে কুণ্ঠিত হইনা। প্রতিভা খ্যাপামি বৈকি, তাহা নিয়মের ব্যতিক্রম, তাহা উলট পালট করিতেই আসেতাহা আজিকার এই খাপছাড়া সৃষ্টিছাড়া দিনের মতো হঠাৎ আসিয়া যত কাজের লোকের কাজ নষ্ট করিয়া দিয়া যায়কেহ বা তাহাকে গালি পাড়িতে থাকে, কেহ বা তাহাকে লইয়া নাচিয়া - কুঁদিয়া অস্থির হইয়া উঠে”
       রবীন্দ্রনাথকে সাক্ষ্য মেনে অ-পাগল আমার একটা চাওয়াও জানিয়ে রাখি । আমরা অপাগলরা তো ক্রমেই পৃথিবীটাকে আর বাসযোগ্য রাখছি না । ‘পাগলা দাশু’রা নেই, আমরা বিপন্ন শৈশব বলে হাহাকার করছি । আর কোন ‘পাগল ঠাকুর’ রামকৃষ্ণ, ‘ভবা পাগলা’ কিংবা ‘পাগলা কানাই’রাও নেই । আমরা বরং এই চাওয়াটাকেই জানিয়ে দিই যে স্বর্গের মত মর্তেও পাগলের মেলা বসুক আর আমরা ‘পাগল ভালো করো মা’ না বলে বলি ‘পাগল যে তুই, কন্ঠ ভরে জানিয়ে দে তাই সাহস করে’ ।




অনিন্দ্য রায়


ছায়াবীথিতলে


যেভাবে মুষ্টিতে আসে ছড়ানো আঙুল,তালু
গোল হয়ে, ছোট হয়ে সমস্ত শক্তিকে 
                                              আনে  ঘন করে 
যেভাবে বেলুন তার নিজ চাপে বিস্ফোরিত হয়
যেভাবে কাগজ মুড়ে তাতে আঁকা নিসর্গভুবন 
                                  বন্ধ করে অতৃপ্ত আর্টিস্ট
যেভাবে বরফ গলে, বাষ্পীভূত জল
জানি, এর কোনোটিই নয়

লুডো খেলতে খেলতে হঠাৎ যে উল্টে দেয় বোর্ড
                                                 সেরকমও না
সূর্য ওঠার মতো, অস্তের মতো 
আলোআঁধারির প্রিয় কাটাকুটি-প্যাটার্নের মতো
জানি, সব গুটিয়ে আসবে
বলের ব্লাডার থেকে বাতাস বেরিয়ে গেলে 
তেমনি আকাশে ধ্বংস হবে মহাকর্ষ
জানি, তবু দুহাত বাড়াই , তর্জনী সক্রিয় করি
আ-তরযোনিতে 
প্রতিটি স্পর্শকে চিনি ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়ে
আর ত্বকে অসংখ্য চক্ষু  জন্ম নেয়
দেখি এই আলোপাঠ্য, শুনি আলোগীতি

কোথাও ছিল কি প্রাণ ? আমার শরীর ছাড়া আর কি কোথাও
মহাসমুদ্রের তলে স্ফুট হত অযুত বুদবুদ ?
এবং সঙ্গীর খোঁজে হয়ে ওঠে তারাও চঞ্চল ?

সেই সমুদ্রেও আছে প্রবালকীটের অভিমান
আছে শ্যাওলার কেঁপে ওঠা যতটা সম্ভব মানবিক
জলে যে লবণ আছে
   অশ্রুর, রক্তের, ঘাম বা রসের মতো স্বাদের ভিন্নতা
চিনেছে একটি জিহ্বা, ডুবোপাহাড় একটি
ছোট ছোট দারুচিনিদ্বীপ
বেলাভূমি জুড়ে আছে নগ্ন মানুষের অবসর
রিসর্ট ও ঋষি
আছে ভ্রমণকাহিনী
প্রেমের কবিতা
ইমারত
স্টেডিয়াম
হাওয়াই আড্ডা
সবই তো ধ্বংস হবে
সূর্য, সেও হলুদ বসন খুলে লোহিতদানব হয়ে গিলবে সকল 
      গ্রহ, উপগ্রহ, পাথর, তৈজস
মৃত্যু হবে তারও

সব আলো নিভে যাবে
সব অন্ধকারও

একটি বিন্দুর গর্ভে ঢুকে পড়বে রেখচিত্র সব

যদি ওই বিন্দু অব্দি আমার শ্বাসের কণা টিকে থাকতে পারে
ডিমে ফুটবে আবার কুসুম

আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে, শ্রী
এই ছায়াবীথিতলে


দেবাশিস কোনার


রঙ্গ ভরা জন্মভূমি

পায়ের নিচে নামিয়ে দিলেও কিছুতেই চলে যাব না
ছেড়ে যেতে পারব না জন্মভূমি ।কেননা আমি তো জানি
মা এবং জন্মভূমি একে অপরের দোসর। ছলে বলে 
হয়তো কৌশলে ছিন্ন করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন করবে
আমি পুরাতন ইতিহাস ঘেঁটে তুলে আনব সুদৃশ্য যাতনা

আমি তুষের আগুন জ্বালিয়ে ধিকি ধিকি চুল্লির ভিতর
তোমাদের কুয়াশা বানাব । চাঁদের গায়ে ভাসিয়ে দেব 
মনিমহেসের ভোগ আর নিশ্চল ভদ্রলোক স্যার তখন
তপস্যা করবে চন্দ্রভাগায়।

কোন কাগজের আশায় ভাসে কোন পুতুলের নৌকা
কেউ কি জানে ? রোদের মধ্যে হাঁটছে সময় - - -

অর্পণ কুমার মাজি


নীপবীথি ভৌমিক


বাড়ির নাম সুখপাখি


   ___এই যে ওষুধগুলো সব দেখছেন র‍্যাকটার উপর,এগুলোর ঠিকানা এখন সুখপাখির এই ঘরটা জানেন। আসুন,এদিকে আসুন,দেখুন এই সব তত্ত্বকথা,মহাপুরুষদের বাণী সমৃদ্ধ গ্রন্থ দেখছেন, সবই এখন সুখপাখির ঠিকানায়__কি আশ্চার্য না, বীথি সেন আর তত্ত্বকথা ! হোয়াট আ জোক…! যে কিনা এসব কোনো দিনই পাত্তা দিতে চাইনি। আর তার থেকেও বড় আশ্চার্যের বিষয়, ঠিক এক বছরের মাথায় আপনাদের সামনে আবার আমি সেই উন্মাদ ডাক্তার বীথি সেন । অবশ্য আপনাদের দোষই বা দিই কিভাবে ? শহরের সবথেকে নামকরা অ্যাঙ্কোলজিস্ট ডক্টর বীথি সেন মানসিক বিকার গ্রস্ত। আর তার উন্মাদনার ঘটনায় আজ  খবরের শিরোণামে এই বিখ্যাত হাসপাতালটি।  অবশ্য আপনারা তো আপনাদের কাজ করে গেছেন ।এমন মুখরোচক খবর পেলে মশাই কোন পাগলে বলুন তো তাকে হাতছাড়া করতে পারে ? তাই নয় কি মিস্টার বাসু,ইউ… অ্যাম আই রাইট…? হা, হা, হা…

   ___অ্যাকচুয়ালি কি জানেন তো, পাগল আমি কোনো কালেই ছিলাম না । যেটা ছিলো আমার,তা হলো আমার দৌড়ানোর নেশা। এগিয়ে যেতে হবে অনেক অনেক দূর। আসলে, যখন সদ্য সদ্য অক্ষরের সাথে পরিচয় ঘটে আমার,ঠাকমার শেখানো একটা বিখ্যাত লাইন আমার মনে ধরে যায় । আপনারাও হয়ত ! আহা, হয়ত কেন আবার,অবশ্যই জেনে থাকবেন---“লেখাপড়া করে যে,গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে ।“ আর এই গাড়ি ঘোড়া চড়েই যে আমাদের এগিয়ে যাওয়াটাই প্রধান লক্ষ্য,সেটাই ধীরে ধীরে আমার রক্ত,মজ্জায় ঢুকে যেতে থাকে বায়ু সেনার অফিসার বাবা এবং অধ্যাপিকা মায়ের সহচর্যে । তবে যা ছিলাম,একটু বেশি অনুভূতিপ্রবণ । আর সেটাই হয়ত আমার প্রথম পাগলামির লক্ষণ !কখন যে কোথায় চলে যেতাম একা একা,নিজেই জানতাম না। একদিন তো মা কলেজ থেকে ফিরে দ্যাখেন,আমি ঘরে নেই। বাবাও খুব কম ফিরতেন সে সময় শহরে—তারপর আর কি ,খুঁজে খুঁজে আমাকে পাওয়া গেল আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিক দক্ষিণ বরাবর যে রাস্তাটা চলে গিয়েছে,সেখানেই একটা কবরস্থানের কাছেই ।ভয় ডর তো প্রাণে তেমন ছিলো না,আবার ছিলো না বললেও হয়ত কিছুটা ভুল হবে। আসলে,কেন জানি,আমার এই একটা মনের ভিতরে অনেকগুলো মনের বাস ছিলো ।এই যেমন আমি ছুটতেও পারি জীবনের সাথে তেমনই এই একাকীত্ব,এই নির্জনতাও আমার প্রবল ভালোবাসার। তাই কখনো বা ফ্ল্যাটের জানলার রেলিং ধরে নিজের মনে কথা বলে যেতাম আবার কখনও বা আমার থেকে অনেক অনেক ছোট্ট বাচ্চাদের পেলেই বসে যেতাম ওদেরকে নিয়ে সেই ছোট্ট বেলার মতো । হ্যাঁ জানি,আশেপাশের লোকজন চোখ ট্যাঁরা করে দেখে নানান উপহাস করত,কিন্তু সত্যি বলতে কি,এসব সেভাবে আমার মনেই ঢোকেনি কখনও ।
    __  আরে মশাই দেখুন তো ভুলেই গেলাম…আসুন এবার একটু চা হয়ে যাক ।আজ  যেরকম ওয়েদার করে আছে সেই সকাল থেকে !এই পরিবেশে  গরম গরম চা কিন্তু ভালোই মানাবে…কি বলো বাসবী ? তুমি তো আমাকে অনেকগুলো বছর ধরেই চেনো ।খুব একটা ভুল না হলে তা সেই তোমার প্রথম অফিস থেকে ! যাইহোক, আমার বিশু কিন্তু বেশ ভালোই চা বানায়…নিন ! ( ট্রে টা সামান্য এগিয়ে দিলো বীথি )
   
    __ যা বলছিলাম,আমার ছোটো বেলার কথা । সেভাবে হয়ত কাটেনি আমার ছেলেবেলা ।ঠামের মৃত্যুর পর বাবার অভাব আর মায়ের ব্যস্তময় জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই আমাকে শিখিয়েছে ছুটতে হবে,ছুটে চলতে হবে । বই,খাতা,পেন নিয়ে গাড়ি,ঘোড়া থেকে আরও অনেক অনেক বড় রাস্তার উদ্দেশ্যে ।গতির নেশা পেয়ে বসেছিল আমায় । আর এই ছুটতে গিয়েই সব…( বীথির মুখটা এখন হয়ত সুখপাখির জানলায় কাউকে না কাউকে খুঁজতে চায় ) বরাবরই স্বাধীনচেতা মানসিকতার ছিলাম আমি । একা থাকব,কারোর উপর কখনই ডিপেন্টডেন্ট হবোনা,আর তাই মনে হয় এইসব প্রেমটেম আমার জীবনে তেমন পাত্তা পাইনি ।ঠিকই করেছিলাম বিয়ের পিঁড়িতে বসব না কোনোদিন।বিদেশে সেটইল করব । তবু মায়ের মৃত্যুর পর বাবা চাইলেন আমিও যেন সব মেয়ের মতো বিয়ে করে সুখী হই ।

   __তবে কি জানেন,সুস্থ হয়ে উঠছিলাম ধীরে ধীরে। আসলে,খুব যে একটা পাগলামি করতাম,তা তো নয় !হয়ত কিছুটা লক্ষণ ছিল। চিকিৎসায় ভালো রেসপন্সও ছিল। ক্রমশ নিজের চেম্বারে আবার বসতে শুরু করলাম,হাসপাতালেও নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলাম । কিন্তু ওই যে,সেদিন! কি যে হলো ! আপনারা তো জানেন সব (মুখটায় তাচ্ছিল্যের হাসি রেখে) !  

    __অবশ্য সে সময় মনে হয় আমাদের এই সংবাদ মাধ্যমের ব্যবসা ভালোই চলেছিলো ।কি বলেন মিস্টার বসু ? আসলে কি জানেন তো,এই ‘পাগল’ শব্দটা আমার বড় অপছন্দের । অবশ্য সেটাই মনে হয় সব পাগলদের প্রাথমিক লক্ষণ ।কিন্তু কেউ কি আর নিজেকে সেভাবে মানতে চায় বলুন _( নিজের ডান হাতের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে গেলেন বীথি ওর সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের ।)

   __হ্যাঁ,যা বলছিলাম, আর সহ্য করতে পারলাম না সেদিন ।কয়েকদিন ধরেই বেশ একটা কানাঘুষো শুনছিলাম। কিছুটা ট্রেস কাটিয়ে ফিরে আসার পর আমাকে নিয়ে মানে আমার পাগলামো নিয়েই চর্চা ,সে আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি আমার ।প্রথমে বিশেষ পাত্তা দিইনি জানেন, কিন্তু সেদিন ওই পেশেন্টের সাথে আসা ওই ব্যক্তি ! ওর রিলেটিভ কিংবা বন্ধু গোছের কেউ হবে,তার এমন অবাক করা আচরণ ! আসলে কি জানেন তো মানুষ কিন্তু আজও  মানসিক অবসাদ আর  পাগলামো,এই দুটো ভীষণই এক করে ফ্যালে । যাইহোক, এটাই আমার চাকরী জীবনের সমাপ্তি কাল ।তবু ওই যে,অপরিসীম জেদ,হারবো না কিছুতেই…ডুবে গেলাম ক্রমশঃ আরো গভীর ডিপ্রেশনের ভিতর ।যদিও অ্যাসাইলাম থেকে ফিরে আসার পর অতীতের ঘটনা তেমন করে আর মনে নেই,মনে রাখতেও চাইনা আর । তবে বিশুর মুখে শুনেছি সত্যিই আমি ধীরে ধীরে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম । কথাবার্তা,চালচলনে অসংলগ্নতা প্রকাশ পেতে থাকে। বদ্ধ উন্মাদের মতো যা খুশি তাই ভাঙচুর করা…উফ !!! এখন ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে । আর শৌনক! শৌনক মিত্র, যার সাথে সুখে থাকতে দেখলে আমার বাবা এবং প্রয়াত মা সবথেকে বেশি খুশী হতেন,সেই সহজ সরল মানুষটাকেও সুখে রাখতে পারলো বীথি সেন ।

    ___ছেড়ে এসেছিলাম শৌনক কে নিজের অত্যাধিক ইগোর বশে ।ও, এক মিনিট…প্লিজ নোট ডাউন…আমাদের কিন্তু আজও  ডিভোর্স হয়নি ।আসলে মনে মনে আমি চেয়েছিলাম ডিভোর্স । কিন্তু শৌনক যে শুধুমাত্র একজন মানুষ নয়,আরও অনেক বেশি কিছু,সেটা তখন বুঝে উঠতে পারিনি ।বাবার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল । আরও অনেক অনেক নাম,যশের আশায় ছুটে চললাম রাতদিন ।এই ‘সুখপাখি’ তারই নিদর্শন । কত সুখ না আজ এই সুখপাখির ভিতরে, দেখেছেন ?

    __তবে, শৌনক আর আমার পিতৃদেব এখনও কিন্তু সেই আগের মতো আমার সুখ কামনা করে চলেছেন । অথচ, আজ  আমি,সেই উচ্চাকাঙ্খী বীথি সেন এত সুখ আর চাইনা । এবার থামতে চাই। শুধু থামতে…লিখে নিন, আপনাদের আজকের সান্ধ্য শিরোণাম_ উন্মাদ ডাক্তার বীথি সেন আজ  ক্লান্ত…ঘুমাতে চায়,শুধু ঘুম। আশাকরি,এই সোসাইটি বেশ ভালোই খাবে খবরটা ।


---