রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

সম্পাদকীয়





“শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে”।প্রকৃতির মধ্যে গ্রীষ্ম থেকে হেমন্ত পর্যন্ত যত মলীনতা থাকে,সবই পূঞ্জীভূত হতে থাকে শীতের শরীরে।শরৎ ও হেমন্তের মাঝে শীত হল বিলাস এবং কর্মময় ঋতু। শীতকে শূদ্রবর্ণের মধ্যে ফেলেছেন রবীন্দ্রনাথ।শীতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
“শরতে তাহা চোখ জুড়াইয়া নবীন বেশে দেখা দেয়, হেমন্ত তাহা মাঠ ভরিয়া প্রবীণ শোভায় পাকে,আর শীতে তাহা ঘর ভরিয়া পরিণতি রূপে সঞ্চিত”।শীতের প্রতিটা ছন্দে ধ্বনিত হয় প্রকৃতির লাস্যময়তা। মনের গহীনে কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে সবুজকে কাছে পাওয়ার প্রবল আগ্রহ।
গ্রামবাংলায় উঠোন ভরতি ধান, মাঠভর্তি শাকসব্জির আবাদ, সর্ষে ফুলের হলুদে ক্ষেতে মৌমাছির গান আহ্বান জানায়, “পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আয় আয়  শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লেপমুড়ি দেওয়া প্রকৃতি ; অপেক্ষারত থাকে নতুন সূর্যের।
বর্তমানে বিদ্যুতায়ন ও স্যালো-মেশিন আসার পর শীতের চেহারা বদলে গেছে।শীতের সৌন্দর্য ও মোহটা এখন মানুষের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।সেই ছোটবেলাকার শীতটা কোথায় যেন কুয়াশার আড়ালে মুখ ঢেকেছে। 
শব্দের নিজস্ব অনুতাপ হারিয়ে 
পর্যটন বিমুখ শীত আসে
 
মনের ইজিচেয়ারে
সামুদ্রিক প্রেম হামাগুড়ি দেয়
কমলালেবুর খোসায়,
 
নলেনগুড়ের চৌকাঠে...

“আমাদের সাথে সেই শীতের কি আর কোনোদিন দেখা হবে না— একদিন একথা বলার জন্য কাউকে খুঁজতে হবে”।রবীন্দ্রনাথ অল্প কথায় বর্ণনা করেছেন শীতের অন্তর্ধান নিয়ে।
তবে আমি একঝাঁক শীতের পরিযায়ী পাখিকে উপস্থিত করতে পেরেছি আপনাদের ভালোবাসার এই ব্লগে। বিখ্যাত কবি, লেখকদের সাথে নতুনরাও আছেন সৃজনে। কবিতা,গল্প,ধারাবাহিক ঠাসা ‍“সৃজন” ব্লগজিনের ‘শীত সংখ্যা’।সম্পাদক হিসাবে কী লিখব,কী লিখব না ভাবতে ভাবতে দু’চার লাইন লিখে ফেললাম। ব্লগজিন খুলতে গিয়ে আমি যে অকুন্ঠ ভালোবাসা,আন্তরিকতা পেয়েছি আপনাদের কাছে তাতে সত্যিই আমি আপ্লুত।আপনাদের ভালোবাসায় এই ব্লগ সার্থক হয়ে উঠুক, তার জন্য আপনাদের সর্বদাই পাশে চাই।আমার “সৃজন” আপনাদের কাছের হয়ে উঠুক।
প্রত্যেকের লেখা পড়ুন,মতামত দিন যা আগামীদিনে “সৃজন”-কে সমৃদ্ধ করবে। ভালোবাসায় থাকুন, সৃজনে থাকুন।


সৃজন

সম্পাদিকা, 
পারমিতা চক্রবর্ত্তী

পিয়ালী বসু


স্পর্শ ও প্রতিশব্দের বায়োস্কোপ–প্রথম স্ন্যাপশটে নিরাপদ বিশ্বাস ও মৃত্যু

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শব্দগুলি স্তনের মরশুমি ভাঁজে
গত জন্মের স্মৃতিমুখর আর্দ্রতা লিখে রাখছে 
:
বাইরে এখন প্রবল বৃষ্টি , রবীন্দ্রনাথ - শক্তি চাটুজ্যে গালিচা পেতেছেন
বিষাদের  আনোখা উদ্ভাসে 
:
"আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরানসখা বন্ধু হে আমার"


কিন্তু তুমি নেই বাহিরে - অন্তরে মেঘ করে
ভারী ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে " 
:
গানের কলিতে সন্তর্পণে ... মাপ বুঝে গেঁথে বসছে ... 
:
মধ্য সপ্তকে'র সুর ছাপিয়ে 
নকশাবন্দী ইচ্ছেগুলি কুরুশের কারুকাজ তৈরি করছে 
:
অসাবধানী শব্দগুচ্ছেরা 
তিরিশের টানটান নাভি পেরিয়ে দূরবর্তী সম্পূর্ণতায় 
অকালবোধনের যাবতীয় শর্ত বুঝে ... শরীরী ক্লিভেজে
স্পর্শের পোজিশন মাপছে ...
:
সুস্পষ্ট ভাবনার প্রতিফলনে ...আধো আলো-আবছায়ায় 
শব্দজোড়া স্মৃতিকাতরতা ক্রমাগত অগণিত ক্ষয় ছুঁয়ে যাচ্ছে 
:
লেখাকে বাঁচিয়ে রাখে শব্দ আর উপমার অবিরত চোরাস্রোত , অথচ এই মুহূর্তে শহরের পথে ঘাটে উদাসীন অসমাপ্ত প্রেম , ধূমকেতু , ছায়াপথ গুঁড়িয়ে স্পষ্টতর হচ্ছে স্মারক মনখারাপ । 
:
আমি ও আমার ছায়া এই মুহূর্তে পরস্পরের মুখোমুখি বসে
এতদিন আলপথ ছিল কথার নিভৃত সহবাসে 
আজ ... আবছায়া মৃত্যুকে সঙ্গী করেছে স্পর্শ সম্ভাবনার অনিশ্চিত প্লাবন
:
তারপর ... 
:
নগ্নতাজনিত ক্লিশে ধারণাগুলিকে 
অনন্ত বৃষ্টির শব্দে ধুয়ে ফেলে ...হাওয়া মেহফিলে প্রবেশনিষিদ্ধ স্তব্ধতা
:
প্রতিটি বিশ্বাসী সম্পর্কের আড়ালে আসলে নিঃসঙ্গতা , যাপন করা প্রাত্যহিক ব্যর্থতা থাকে ... ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও দীর্ঘকালীন সময়ের অবয়বে ,শব্দের পরেই জন্ম হয় প্রতিশব্দের , কথারা কোন প্রতিশ্রুতি বহন করেনা , একথা মেনে নিয়েই অনবরত শব্দক্ষরণ হতে থাকে ... শূন্য মুহূর্তের গহন ঘেরাটোপে ।



( ক্রমশ )

সোনালী ঘোষাল



মিশরীয় উপকথা থেকে গৃহীত
আইসিস ও সাতটি বিছের গল্প
অনুবাদ-সোনালী ঘোষাল

দাদা ওসিরিস কে হত্যা করার পর তার সদ্যোজাত শিশুপুত্র হোরাস এবং বৌদি আইসিস কে কারাগারের গোপন কুঠুরিতে বন্দী করে তার চক্রান্তকারী হিংসুক ভাই সেথ। লক্ষ্য একটাই সেই বহু কাঙ্খিত রাজসিংহাসন। কারাগারে থাকাকালীন দেবী আইসিসের সঙ্গে দেখা করতে আসেন অন্তর্যামী ভগবান থোথ । তিনি আইসিসকে এই প্রচন্ড বিপদে শান্ত থাকা এবং নিজেকে সংহত রাখার পরামর্শ দেন। একদিন তিনি আইসিস কে বলেন,
এখন দুঃখ বা কান্নাকাটি করার সময় নয় আইসিস ,তোমাকে তোমার পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে দ্রুত ।এমন কিছু কর যাতে ওসিরিস এর আত্মা শান্তি পায়,তোমার প্রাথমিক কর্তব্য হল হোরাস কে সেথের কুনজর থেকে আগলে রাখা ও তাকে বড় করে তোলা,যাতে সে সঠিক সময় তার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারে এবং রাজসিংহাসনে তার নিজের ন্যায্য অধিকার কায়েম করতে পারে। তুমি বরং পালিয়ে যাও,এমন কোন জায়গায় পালাও যেখানে হোরাস থাকবে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং নিরাপদ

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

অরুণজীব রায়



পলেস্তরা খসা দেওয়াল দেখলেই 

বক্র লেজীর মন উশখুশ 


গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের দাপটে 

সব মাসেই দলবদ্ধ 


পরিবর্তনের প্রাকৃতিক নিয়মে 

টর্চের আলোতেও সালোকসংশ্লেষ 

জাকিয়া জেসমিন যূথী





তোমরা যে সব ঘুরে বেড়াও ভারত নেপাল ভুটান
ইচ্ছে হলেই ঘুরে আসো দার্জিলিং বা কোলকাতা
ইচ্ছে হলেই রঙিন ডানা হাওয়ায় ছোটাও
এথায় ওথায় সেথায় কত স্বপ্ন জুড়াও
.
হরেক দেশে হরেক রঙের মানুষ দেখো
নানান দেশের নানান জাতের শুকপাখিটা
জানান দেয় হাজার রঙের সুখ ছবিটা
ভুলিয়ে দেয় মনের জরা দুখ গ্লানি টা

ভজন দত্ত


১.
ঘেমো জামায় কিছু সুগন্ধ মাখিয়েছিল যে, তার গোপন উপস্থিতি মোবাইল/ ফোনবুকে।কেঁপেছিল শুধু ঠোঁট। ভাইরাল হয়েছিল সুগন্ধ /আঁকাবাঁকা ইথারে।

২.
ঝাঁকানিতে লেখা পেয়বিধিটি। ঢেউয়ের ওপরে নোঙর। রামকাটারিতে কাটা ডাব। / মোহমাখা হয় স্বপ্ন দিয়ে। কলির ঘোরে মাথা। ঘন্টাধ্বণি না গিটার কিংবা / মোহনবাঁশি বাজে, বাজে অহর্নিশি।

শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

জুবায়ের আহম্মদ



তুমিই তো সেই রবীন্দ্রনাথ
যার ছোট নদী বারে বারে ডাকে
শৈশবে ফেলে আসা পথে।
.
তুমিই তো সেই রবি ঠাকুর,
বীরপুরুষ এর মায়া তে বেঁধে
যে জাগিয়ে দিয়েছে
আমার ভিতরের অন্য আমি কে।
.
তুমি তো ওই রবীন্দ্রনাথ
যার সোনার বাংলা আজো স্বপ্ন দেখায়
নতুন দিনের আলোকিত পথে।
.
তুমি সেই রবীন্দ্র
যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের দেয়া
'নাইট' ছুড়েছিলে ফেলে।
.
তুমিই তো সেই নেতা
স্বদেশী আন্দোলনে যে ছিলে
সাহিত্যের বজ্রকণ্ঠ হয়ে।
.
তুমি সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
যে গীতাঞ্জলী নোবেল দিয়ে
বাংলাকে নিলে বিশ্বের দরবারে।
.
তুমি তো আমাদের রবীন্দ্রনাথ
যে আজো টিকে আছে যুগ কাল পেরিয়ে

শত কোটি বাঙালীর প্রাণে।

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

অঞ্জলি সেনগুপ্ত



পাইন গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে কুমার ঘোষ মশাই আয়েশে চোখ ঝিমুচ্ছিলেন ।তাঁকে ঘিরে টিনা-মীনা-করণ সহ এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর ভিড় ।ষাট ছুঁই ছুঁই কুমার নিয়মিত জিম পরিচর্চিত,পার্লার লালিত সুগঠিত দেহভঙ্গিমায় এখনো টান টান লেডিকিলার ।শ্মশ্রুগুঁম্ফহীন মুখমণ্ডল, ব্যাকব্রাশ চুল , কানের দুপাশের জুলপিতে সামান্য সাদার ছোঁয়া, নীল জিনসের সঙ্গে কালো টি সার্ট । কুমার বিখ্যাত ঠিকাদার। তার থেকেও বিখ্যাত তাঁর বদান্যতা ,উদার চিত্ত, পরোপকারী ব্যক্তিত্ব। উষ্ণ স্নেহ বিতরণে তাঁর জুড়ি নেই । টাকা ছড়ান ফুলঝুরির মতো। তাঁর হৃদয় আকাশের মতো উদার ,দৃষ্টি সমুদ্রের মতো গভীর , স্নেহ অগাধ, অপার ।এই স্নেহে যে একবার ডুবেছে , সে আর পার পায়নি। মধুস্নেহ ও ঘৃতস্নেহ যুগপৎ দুই স্নেহের অপার ভাণ্ডার তাঁর। তবে যত্রতত্র স্নেহের প্রদর্শনীও তাঁর পছন্দ নয়। নদী যখন অগাধ জলধির কাছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ব্যাকুল ভাবে ছুটে আসে,তখনই দাতা কর্ণ কুমার স্যার পরম আশ্লেষে করুণ-কাতর হয়ে উঠেন। তখন তিনি বিপদভঞ্জন ও বটে । পরদুঃখে কাতর কুমার মশায় গোটা জীবনই দান করেছেন আর্তসেবায়।

বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

মলয় রায়চৌধুরী




ঘাস হয়ে জন্মেছি আমি, একজন কচি
যুবতীর দু'পায়ের মাঝে, ঘিরে আছি তার
গোপন গন্ধমাদনের ঝর্ণা, বিগত অস্তিত্বে
ঘাসই ছিলুম, আমার সবুজ রক্ত পান করে
জেব্রা মহিষ ভেড়া ছাগলেরা রক্তকে লাল
করে নিতে পেরেছিল, আমিষ ভক্ষণকারি
এই যুবতীর রক্তে এখন মিশেছি, তাই
তার দু'পায়ের মাঝে কোঁকড়া কৃষ্ণ ঘাস
হয়ে ক্রমে জন্মালুম, আমি তোতলাবো
প্রজাপতি ডানার গরম উড়ালে
তখন শীতল আগুনে দাউ-দাউ পুড়ে

শুভময় মজুমদার


ঘুম ভাঙানোর আলসি কথায়
রাত পরীদের স্নান
পাঁজর জানে ধূর্ত চোখে
ব্যথার কত দাম
বিষের আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেহে 
অদৃশ্য আলাপিনে বিদ্ধ বন্ধ্যা প্রেম .... 

সুপ্রতীম সিংহ রায়




এতদিনে কি কি শিখিয়েছ আমাকে?
অন্ধকার গেস্টরুমের টেবিলে বসে ভাবনারা ঘিরে ধরলেই
তোমার কথা মনে পড়ছে হে দিল-এ-নাদাঁ
মনে পড়ে, গেল বছর নভেম্বরের কথা...

গৌতম যুথিপুত্র



এখানে রাস্তা নেই ,
হলদে ট্যাক্সি ছিল না কখনো ।
ঢালু পথ বাদাবন ঘেঁষে নেমে গেছে নদীর কিনারে
মধ্যরাতে লম্বা ট্রিপের আশায় জিজ্ঞাসা করে মাঝি
ক’দ্দুর কত্তা ? উজান না ভাটায় !

মধ্যরাতে ভদ্দরলোকেরা রোজ কোথায় যে যায় .....

বাসব মন্ডল



The lesson by Maya Angelou
..........................
I keep on dying again.

Veins collapse, opening like the
Small fists of sleeping
Children.

জয়তী অধিকারী



কিন্নর-কিন্নরীশুনলেই মনে ভেসে ওঠে অপরূপ সুন্দর-সুন্দরী মানুষচেহারা। যদিও ব্যাপারটা যে আদৌ তা না ১৯৯৭ সালের পুজোর ছুটিতে হিমাচলপ্রদেশের কিন্নর ভ্রমণে না গেলে হয়ত অজানাই থেকে যেত। যাই হোক, কয়েকজন বন্ধু আর তাদের পরিবার মিলে মোট পনেরো জন গিয়েছিলাম কিন্নর-ভ্রমণে। অর্ধেক ট্যুর হয়ে যাওয়ার পর সারাহান থেকে যখন আমরা কল্পার পথে, মাঝরাস্তায় জানা গেল সামনে পথ বন্ধ। কারণ দিন দশেক আগেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দুই পাহাড়ের মধ্যে এসে উপস্থিত একরাশ মেঘ। দুজনেরই অহংকারী মাথা আকাশ ছুঁতে চায়।


মুনিয়া



এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অনু। সব কিছু করছে, খাচ্ছে দাচ্ছে অফিসে যাচ্ছে-- কিন্তু আসলে যেন কিছু করছে না। বাইরের লোক কিছু বুঝবে না, তার বুকের ভেতর একটা ভীষণ টাল মাটাল চলছে। অথচ দু দিন আগেও সে এক সুন্দর মানুষ ছিল। এইতো গেলো বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে কোলাঘাট। খুব হৈ হৈ , মজা, ছবি, জোকস সব চললো। এরা সব তার অফিসের বন্ধু। চারটে মেয়ে দুটি ছেলে। বয়স তাদের সবার তিরিশের কোঠায়। বিয়ে ফিয়ে করে হিল্লে বানিয়ে ফেলেছে। শুধু অনুর এখনো গতি হলো না। বিয়ে করবে ভাবেই না সে। বাবা মা অসুস্থ। সে একমাত্র মেয়ে। সেইই সব বাড়ীর। যদিও মা বার বার বলেন, চোখের জল ফেলেন, কিন্তু সে অনড়।
"তোকে কে দেখবে? আমরা না থাকলে?" মা কঁকিয়ে ওঠেন।

সৌমলেন্দু ঘোষ



"বিয়েটা কোন অঙ্ক? এরিথম্যাটিক প্রোগ্রেসান! বাড়তেই থাকবে, তিন, পাঁচ, সাত, নয়। জীবনটাকে নয় ছয় করে দেবে।"

এই অব্দি পড়েই বেশ খানিকটা চমকে গেলুম; চোখটা বোধহয় একটু বড় বড় হল, কপালে একটা সেকেন্ড ব্র্যাকেট ঠেলে উঠল আর সঙ্গে সঙ্গেই কেমন যেন জল পিপাসা পেয়ে গেল। সব্বোনাশ, কয় কি?

বিতস্তা ঘোষাল



দরজা খোলার আর পায়ের মৃদু শব্দে পারমিতা বুঝতে পারল ছন্দা এল।মাঝের ঘরে বিছানায় বসে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে আলতো স্বরে সে বলল  কিরে,আজ এত তাড়াতাড়ি? বারোটা এখন ও তো বাজেনি? উত্তর না দিয়ে ছন্দা মাঝের ঘরে টেবিলে পড়ে থাকা হটপট থেকে একটা রুটি হাতে নিয়ে কি যেন ভাবতে লাগল ।আর তখনি শান্তু কাগজ ওলটাতে ওলটাতে বলে উঠল ,  ছন্দা এলি? বাঁচালি ।কত দিন যে চা খাইনি! পারমিতা একটু বিরক্ত, এই চা টা শেষ করো আগে।এখনো মুখেই তোলোনি। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্নানে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল।

মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬

অনিন্দ্য রায়




"পৃথিবীর সব স্তম্ভ কেবল একটি দিক ঢাকে"
উপপাদ্যে যে রেখেছে বিছানা- গ্রিটিংস 
       সেও পানীয়ে ঘুমের বড়ি চিনতে পারেনি 
তাকে জলের উদাসে নিয়ে যেও
সরের তলায়, অসুখের নরম আঠায় তাকে পড়ি
নয়টি দরজা খোলা
     কেবল একটি বন্ধ, একটিই চুম্বনের দাগ

পিয়ালী বসু ঘোষ


সাঁঝবিহান
প্রথম পর্ব 

(১)

ভোরবেলা একটা তালকানা পাখির ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেলো কলমির,রাত থেকে ডেকেই চলেছে পাখিটা।মাঝে একটু বিরাম নিয়ে আবার ডাকছে ভোর থেকে ,কেমন উদাস করা ডাকটা। যেন ওর দোসর জঙ্গলে গিয়ে হারিয়ে গেছে আর ফেরেনি,কলমির স্বামী হারানের মতো ।
হারান নিখোঁজ হয়েছে সেও অনেক দিন হয়ে গেলো ,এখন কলমির আর ওকে তেমন মনেও পড়েনা শুধু মাঝে সাঝে কোন শীতকালীন অবকাশে কিংবা এমনি কোনো পাখি ডাকা ভোরে ওর বুকের মধ্যেটা হু হু করে ওঠে ।ওর তিন মেয়ে ,সাঁঝ ,বৈচি আর ঝিনুক ।অনেকেই বলে এমন নাম এ অঞ্চলে কারো শোনা যায় না ।
সাঁঝ কে নিয়েই ওর যত জ্বালা এখন ।সারাদিন মেয়েটাকে একলা ঘরে ফেলে ও বেরিয়ে যায় ,ফেরে সেই সূয্যি ডুবলে ।বৈচি আর ঝিনুক ও ইস্কুলে বেরিয়ে যায়।
প্রায় পাচঁ কিলোমিটার হেঁটে সরকারী স্কুলে যায় ওরা প্রতিদিন ।পড়ার আগ্রহ শুধু নয় ,ওখানে ফি'দিন খিচুড়ি দেয় হোক সে চালে পোকা ,ডালে ছাতকুড়ো পড়া গন্ধ, তবু গরম খিচুড়ি পেটে পড়লেই ওরা কেমন যেন বল পায় শরীরে ।ফেরার পথে হেঁটে আসতে আসতে সন্ধ্যে নামে !ফিরেই ইস্কুলের থলেটা মাটিতে ফেলেই ঘুমিয়ে পরে ওরা।কোনও কোনও দিন মন্টু মাস্টার পাশ 
দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাবার সময় বলে ,"চল বৈচি তোদের কে বাড়িতে নামিয়ে দিই ।"বৈচি রাজি হয়না বরং ঝিনুকের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে , "ঝিনুক সাইকেলে চড়তে ভয় পায় মাস্টারবাবু,আপনি যান ।"ও জানে মাস্টারের মতলব ,মাস্টার যেতে চায় সাঁঝের জন্য ।ও অনেক দিন দেখেছে সন্ধ্যার অন্ধকারে যে জানলার ধারে সাঁঝের বিছানা পাতা থাকে সেখানে কার যেন একটা হাত নেমে আসে ওর বুকে।সাঁঝ কুঁই কুঁই করে উঠলে পালিয়ে যায় সে ।
হাতের মধ্যমায় একটা আংটি দেখেছিলো বৈচি একদিন ।পরে ইস্কুলের মাঠে যেদিন ও খেলায় প্রথম হলো সেদিন মন্টু মাস্টারের হাতেও ঠিক একইরকম একটা আংটি দেখেছিলো ও ।সেদিন থেকে মন্টুকে দেখলেই বড্ড গা ঘিন ঘিন করে ওর ।


(২)


সতীশ এই অঞ্চলে সরকারী কাজের ঠিকাদারি নিয়ে এসেছে ।লাল মোরামের পথ,শালবনের- মহুয়াবনের সবুজ অরণ্য সতীশ কে টেনেছিল খুব ।তাই কাজটা পাবার পর বাড়ির কথা ভাবেনি একমুহূর্ত আর।আসার দিন শাল্মলী এসেছিলো দেখা করতে ,হাতে কিছু জুঁই ফুল ,কথা বলেনি কোনো ।নিঃশব্দে টেবিলে রেখে চলে যাবার সময় সতীশ ওর হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরেছিলো।নিজেকে ছাড়াতে পারেনি শাল্মলী ।ঘোড়ায় চড়া সহজ অনেকের কাছেই কিন্তু নামাটা যে কঠিন সেটা বুঝতে বুঝতেই শাল্মলীর কিঞ্চিৎ অনাবৃত কাঁধে ঠোঁট রেখেছিলো সতীশ ।
শাল্মলীর দুই বুক তড়িতাহতের মতো কাঁপছিলো সতীশের হাতের তালুর মধ্যে ।এলোমেলো কাপড় ঠিক করতে করতে চোখ থেকে জল পড়ছিলো ওর ।
সতীশ বললো,"কাঁদছিস কেন বোকা মেয়ে ?তোর জন্যই তো যাওয়া রে,ফিরে আসার জন্যই তো যাওয়া" বলেই ওকে ছেড়ে দিয়ে জানলার ধারে গিয়ে একটা সিগ্রেট ধরায় ।
শাল্মলী অনেকক্ষন চোখ নামিয়ে ছিল,বুড়ো আঙুলে পা'টা মাটিতে গেঁথে ফেলছিল প্রায় । সতীশের কথা শুনে চোখ তুলে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ।
সতীশ ওরই সমবয়সী ,ছোট থেকেই ওরা একসাথে বড়ো হয়েছে ,পড়াশুনা করেছে ।সতীশ ওর বিধবা বড়ো পিসিমার ছেলে,ও জানে কোনোদিন-ই ওদের সম্পর্কের সামাজিক সহবস্থান হবেনা তবু বুকের ভিতর ছিলা টান করে দাঁড়াবার এক আশ্চর্য বাতাস ভরে দেয় সতীশ ।কিন্তু আজ ওর এই কথাটা কেমন স্তুতি মনে হলো ওর। ও দুম করে সতীশের কাঁধে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো -"পুরুষ মানেই কি মিথ্যেবাদী!সত্যি টা কি তারা নিজেরাই মানতে শেখেনি "! 


(৩)



সাঁঝ কলমির বড় মেয়ে।গতবছর শীতলা পুজোর সময় সাঁঝ গিয়েছিলো শালবনের জঙ্গলে শুকনো পাতা কুড়াতে ।শুকনো পাতায় জ্বালানি হয় ভালো ।ডাল ,ঘুঁটে ,গুল এসব কম লাগে ।পাতা নিয়ে ফেরার পথে গোমস্তা চৌধুরীর সাথে দেখা ।হাঁটুর ওপর ধুতি টা তুলে হনহন করে জঙ্গলের পথ পাড়ি দিচ্ছিলো সে।সাঁঝ কে দেখে থমকে দাঁড়ালো-বললো,"তুই কলমির মেয়ে না !"সাঁঝ বলে- হ্যাঁ !
"তা এই সাঁঝের বেলা জঙ্গলে একলা মেয়েমানুষ তুই কি করছিস রে?"
সাঁঝ পাতার ঝুড়িটা পাশে রেখে গড় করে চৌধুরীকে, বলে "পাতা কুড়োতে এসেছিলাম গো ,এইবার যাবো "
চৌধুরী ওর কাঁধ ধরে তুলে দেবার সময় ওর ছেঁড়া জামার ফাঁক দিয়ে ওর বুকের নরম ফর্সা পাখি দুটো দেখে। ও হঠাৎই বোঝে ওর ভিতরের পৌরুষ এখনো অক্ষুন্ন আছে ।ও সাঁঝকে কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়।আচমকা সাঁঝ প্রথম পুরুষ স্পর্শে হুঁশ জ্ঞান হারায় ।অবশ হয়ে যায় ও।তবু বলে "আমাকে ছেড়ে দিন, কেউ এসে পরবে আমার সর্বনাশ হবে"
চৌধুরী তার হাতের প্রবল চাপে ,ঠোঁটের উত্তাপে চুপ করিয়ে দেয় সাঁঝকে । সাঁঝ আর বাধা দিতে পারে না ।চৌধুরীর হাত তার কচি কদম ফুলের মত বৃন্ত নিয়ে খেলতে থাকে ।এরপর প্রবল উল্লাসে ওই সাঁঝবেলায় চৌধুরী সাঁঝকে চরমভাবে ভোগ করে । সব শেষ হলে বোকা মেয়েটাকে মৃদু ধমক দিয়ে বলে "কাউকে বলিসনা সাঁঝ ।তোকে অনেক জিনিস , আদর দেব।মাঝে মাঝে আসবি দুপুরে বৈঠকখানায় ,আমি তোকে শহর থেকে স্নো পাউডার আনিয়ে দেব !
কিন্তু আমার ক্ষতি করার আস্পর্ধা দেখাসনা যেন "
এরপর উঠে দাঁড়িয়ে ধুতির খুট বাধঁতে বাঁধতে বললো "এই মেয়ে দিব্যি কেটে গেল বল একথা তুই কারোকে বলবিনা তো? আজ শীতলা পুজোর দিন মিথ্যে বললে তোর পাপ লাগবে ।"
সাঁঝ উত্তর দেয়না, জামা কাপড় সামলে বসে থাকে ওই শালবনের অন্ধকারে আরো অনেকক্ষন, অদূরের টাঁড়ে তখন একটা তিতির ডেকে ওঠে ।ততক্ষনে চৌধুরীও হাঁটা দিয়েছে অন্য পথে ।একসময় টালমাটাল পায়ে ঘরে ফিরে আসে সাঁঝও । ঝুড়িটার কথা আর খেয়াল থাকেনা ওর ।


ক্রমশ______

চন্দ্রাণী বসু





হিস্-হিস্....হিস্-হিস্...
শব্দটা শুনলেই কি মনে পড়বে?
পাশের বাড়ির অমুক বৌদি,তমুক দিদি তার কোলের বাচ্চাটাকে হিসু করাচ্ছে...অথবা হেলে সাপ ডাকাডাকি করছে,অবশ্য ফোঁস ফোঁস,না হিস্ হিস্ ,সেটা কনফার্ম নয়...তাই দুইই চলে!!

যুগান্তর মিত্র



সোনা বউদির কথা-১
সোনা বউদির কথা বলা হয়নি কখনো।
সর্ষেফুলের ভোর ঝুলে থাকত মুখে।
আঁচলে হাওয়া দুলিয়ে
 
মুঠো মুঠো হাসি বিলিয়ে দিত
 
পায়রাদের ভিড়ে।
আর কী কৌশলে যেন ঠিক লুকিয়ে রাখত
দুপুরের ছায়া।

সন্ধ্যা পেরলেই সে সোনা বৌদিই
শামুকের খোলে রাত বিছিয়ে
একা একা হেঁটে যেতে চাইত তারামণ্ডলের দিকে। 
কতকাল আগের সেই সোনা বউদি
এখন আমার উঠোনে
তুলোবীজ ওড়ায় যখন তখন। 




সোনা বউদির কথা-২
সোনা বউদির উঠোনে কুয়াশাকুসুম,
তুলোবীজ ওড়ে প্রায় সারাবছরই।
বাৎসরিক উৎসবের মতো উষ্ণতা আসে।
শীতকালীন ঋতুসংহার
অহংকার লুকিয়ে রাখে কম্বলের ওমে।
কুরুশ কাঁটায় ফ্যাকাসে উল
যত্ন খুঁজে ফেরে।
সোয়েটার সোয়েটার ভোর-গান
উঠোনে বিছিয়ে দিয়ে
হাসির আলখাল্লা ঝুলিয়ে রাখে
সোনা বউদির ছাইয়ের উনান।
সোনা বউদির দুই ঋতু শীত আর বর্ষা
হাসাহাসি করে দুই বোনের মতোই।


শুভাশিস সিংহ



মীরা-১

কৈশোরের নির্জন দুপুর
চিলেকোঠার নিস্তব্ধতায় দুটি অপরিণত প্রাণ
কখন বুকে মাথা রেখেছি জানতে পারিস নি
লজ্জা চুঁইয়ে পড়ছিল ভয়ের চিবুক গলে

তোর বুকের চড়াই-উতরাই মাঝে
নিঃশ্বাসের উষ্ণ প্রস্রবণ
যা তোকে ঠেলে নিয়ে গেছে অনেক দূরে
সুখের একেবারে শেষ প্রান্তে
এরপর তৃপ্তির স্বেদ বিন্দু
বিকেলের ভুল ভেবে উবে যায় একদিন

সময়ের মাপকাঠিতে 
আমরা যুবক-যুবতী-দুটি পরিণত প্রাণ
কিন্ত হঠাৎ যদি ফিরে আসে
কোন ত্রয়োদশীর রাত কিংবা
নজরদারির পরোয়া বিহীন চিলেকোঠা
নিজের একাকীত্বের মাঝে খুঁজবি না

আমাদের একান্ত কিছু নাবালক দুপুর



মীরা-২
ঘুম পালাচ্ছে
কালিম্পং এর জাপানি ঘরে
একা মীরা
তিক্ততা লক্ষ্মীর ভাঁড় হয়ে গেছে




জয়ীতা ব্যানার্জী গোস্বামী



ধারাবাহিক রহস্য গল্প
অভিশপ্ত নীল 
প্রথম পর্ব 


ঘুম ঘুম চোখে সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলো পিয়াস। দোতালার ল্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে একবার দেখে নিল টাইটান রাগা'র সোনালী ডায়ালটা...এখন প্রায় বারোটা...হ্যাঁ এক্কেবারে জিরো আওয়ার যাকে বলে ...ঝাপসা কাঁচের জানালা দিয়ে দেখলো নীল ট্যাক্সিটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। শহর ভেসে যাচ্ছে আজ অকালের বৃষ্টিতে.....দুদিনে শীতটাও বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।

রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

ইন্দ্রজিৎ দত্ত


ডাউনফল
---------- বড় মেঘের গল্প শোনা ছিলো তাই নৌকা ছেড়ে দিলাম
নদীতে জল নেই নদীতে পিয়ানো নেই
কাজিয়া
ছইয়ের বাইরে অস্থির আমাদের হাত পা
তুমি বললে, দাঁড়াও
অামি বললাম, থামো
হাইওয়ে কোথায়
অাঙুল গ্রাহ্য করে ডুবে যাচ্ছে বচ্ছরকার রুমাল
সমুদ্র শেষ হলো





অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়



প্রিয়তমা

কাঁচের ভিতর কাঁচ-
খানিকটা আবছা ধোঁয়া...ধোঁয়া!
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র হিম কুয়াশায় পৌঁছায় না
লেলিহান শিখার আগুনের কুণ্ডলী!
পৌঁছয় না মাংস পোড়ার গন্ধও।

মানস চক্রবর্ত্তী



হাত রাখলে হাত
মাটির ওপর!
সেমিকোলন না পেয়ে বিস্ময়...
কতোওটা নুয়েছো!
একবছুরে যেন  

হাসান রোবায়েত





একটি নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে
একটি নৌকোর পাশে দাঁড়িয়ে
ছোট নৌকোটা— তুমি শুধু বড় নৌকোটির পাশেই ছোট আর যা কিছু—ফেনায় দুলে যাওয়া পিঠ ঢালুর গভীরে এক তাজা ফুল খুঁটে খুঁটে জড়ো করে মথ—
ছোট নৌকোটা, ভাসো: কমলালেবুর পাশে গোল!

শৌনক দত্ত



কেবলি ছবি...

বাতাসে পুজো পুজোএকটা গন্ধ ।পাড়ায় পাড়ায় মন্ডপ তৈরীর কাজ চলছে ।পাল তার নিপুন হাতে খড়ের উপর মাটির প্রলেপ লাগাচ্ছে ।তৈরী হচ্ছে মূর্তি ।এমন দিনগুলোয় সাম্য অদ্ভুত একটা গন্ধ পায় বাতাসে ।ঢাক কাঁসরের আওয়াজ শুনতে পায় ।এটা কেন হয় সাম্য ঠিক বুঝে না ।
ছোটবেলা চুপিচুপি চলে গেছে ।ছোটবেলায় মনে হতো ইস কবে যে বড় হবো ।আর বড় হবার পর মনে হয় ধ্যুর ছোটবেলাটাই ভাল ছিলো ।সাম্যের ও আজকাল তাই মনে হয় প্রায়ই ।

শুভ আঢ্য











ঘোড়া ও লোকটি

লোকটার ধুলো ঝাড়া হলে ঘোড়াটিও মুখ তোলে 
ছবির দিকে, আর চাবির গোছারা ঘর ভুলে যায়
আঙুলে লাগানো আরোগ্যের প্রেসক্রিপশন মাখায়
মেয়েটি, তার ফোন থেকে অক্ষম ধ্বনিরা গতকাল সাজায়

তারপর আর কোনো গমবাড়ি নেই
তারপর আর কোনো হাইওয়েও থাকে না
তারপর শেষ হয় বার্লির মদ

ডি মাইনর কর্ড আঁকা আঙুল লোকটার, দেখে যায়
মেয়েটার ভাঁজ ও পরে থাকা ঘোড়াটির নাল

লোকটা আর মেয়েটির জ্যোৎস্না এতটুকুই

ঘোড়াটি ওইসব দিনে রাস্তায় ঘাস খায় শুধু


অনুপম দাশশর্মা



বৃষ্টিঘেঁষা দরিয়া
অলৌকিক সন্ধ্যের উঠোনে দাঁড়াতেই
কুয়াশা ঘিরে ধরল, দেখি..
শেষ শ্রাবণের আলতো জলবিন্দু হাতে
নিয়ে তুমি চুপ করে আছো
..
তোমার শরীর থেকে ভেসে আসছে
আমার রেখে দেওয়া সুখানুভূতির সুবাস
অথচ পিঠ থেকে আঁচল সরাতে গিয়ে
দেখলাম, সেখানে ছোপ ছোপ বিস্মৃতির মেঘ
...
স্থির চাহনির দিকে উদ্বেগ ফেলে বললাম
আদিম উল্লাসের মুখে হাত চাপা দেওয়াটাই কি
সমাহিত করেছে আমার বৃষ্টিঘেঁষা দরিয়াকে?



এটা ভয়ঙ্কর সত্য
কেউ মনে রাখেনা, রাখেওনি সংসারের
ধুলো পড়া কোণ
চোখ ফোটা সন্তানের মুখ দেখে যে চোখে
লেগেছিল খুশির ঝলক, সেখানে এখন
হতাশার অহঙ্কার
ধূসর পৌঢ়ত্ব সিঁড়ির শেষ ধাপে বসে দেখছে
কত দ্রুত উড়ে যাচ্ছে অপত্য স্নেহের
গুঁড়ো ধুলো।
.
মনে রাখেনি ছোট ছোট হাতের পুষ্পাঞ্জলি
দেওয়া শপথগুলো
মধ্যরাতের মুষলপর্বে ফুটপাথে উন্মত্ত যৌবন
কুশিক্ষিত হয়ে মোটা দাগ কেটে দেয়
প্রবীণ শিক্ষকের অবসরকালীন বুকে।
.
ভুলে গেছে ওরা পাথরের বুক চিরে
জ্বলে ওঠা চকমকির ইতিহাস
বন্যজীবন অসংযমীর পোশাকে আজ
খান্ডবদহন,আর.

ইস্পাতের আঘাতে চৌচির হয়ে যাচ্ছে
পৃথিবীর পিঞ্জর।
.
মনে রাখেনা কেউই ...
শুধু থেকে যায় সমস্ত কথা
অক্ষরে অক্ষরে, ক্ষমাশীল চোখে।




শ্রাবণ আমার
বাদামী রংয়ের মেঘ নেমে এলে রাজপথের
দাবানলে নিজস্ব শ্রাবণ খুঁজি
চেনা ঋতুরা বেয়াদব হয়েছে বহুবছর
বর্ষার নিজস্ব ঘ্রাণ পেতে হয়
চোখ শাসান কোন ঘূর্ণি বদতমিজের কাছে
বিচ্ছিন্ন পৃথিবীতে এক থেকে গেছে
হেমন্তের শিশির
সেখানেও ভিজবার বায়না ধরি
শ্রাবণ আমার দেউলিয়া মনের
সিক্ত প্রবোধ
বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখা জলপাইরঙা
ভরা নদী।