এই সপ্তাহের কবি অনির্বাণ দাশ। জন্ম ১৯৭৬। দু'দশক যাবৎ বাংলা ভাষা-সাহিত্যের শিক্ষকতা। কবিতাবির্ভাব শূন্য দশকে। বহু কবিতা 'শুধু বিঘে দুই', 'ক্লেদজ কুসুম', 'একদিন'-এর 'নব পত্রিকা' সহ বহু পত্র-পত্রিকায়, 'বাক্'-সহ অন্যান্য ব্লগজিনে, স্বকৃত স্বহস্তাক্ষরে কবিতার প্যামফ্লেট প্রকাশিত। কিছু আঞ্চলিক কবিতা-সংগঠন থেকে পুরষ্কার লাভ। সম্পাদনা - 'আবৃত্তিলোক','চেতনা'।
------------------------------ -----------------------------
চাঁদামামা
------------------
কোন্ মামা সবাকার বলতে কজনা পারো?
জানি জানি বলবেই সত্যিটা এইবারো।
চাঁদামামা উত্তর জানা আছে সব্বার
রাতে তার জোছনায় আলোময় ঘরবার।
একবার আকাশের চাঁদ ছিলো ---
মা আমার কপালেতে টিক দিয়ে বলেছিল,
আয় আয় চাঁদামামা। কতো ভেবে ঘুমঘোরেে ---
কতোবার মনে আছে চাঁদ এসে গেছে ফিরে।
এত আলো শহরের! এত ধোঁয়া শহরের!
চাঁদ দেখা ভার বড়ো। আকাশ তো বহরের
বড়ো নয় আজকাল। বলে দাদু শোনো নি কি
চাঁদদেখা সোজা নয়, চাঁদধরা বাপরে কী!
চাঁদে আর বুড়ি নেই। চরকাতে কাটে না সে
সুতো। বাঁধে না বাছুর কদমের গাছপাসে
শুনে দাদু বললে, কী অদ্ভুত কথা মউ বলো!
হ্যাঁ গো দাদু জানো না তো বিক্রম বলে গেল---
বিক্রম জানা আছে? না না সেই গুগাবাবা
সিনেমার ছেলেটার কথা বলি নি গো বাবা ;
চারপেয়ে যন্ত্রের চাঁদে নামা রোবোটের
কথা দাদু শুনেছো তো চাঁদে তার ভ্রমণের?
------------------------------ ------------------------------ --
২।।
পত্রাণু
------------------------------ -
জলের দাগের ক্ষত মিলালো আকাশে বহমান
হৃদিমন্থে যা বলেছি যা লিখেছি প্রণয়-প্রপাতে
জানি তুমি ভুলে থাকো মনে পড়া শ্রেষ্ঠ ভালবাসা
যাপনের যন্ত্রণারা দিন হয়ে ঝরে পড়ে রোজ
আজ থাকুক ঘরকন্না প্রজাপতি বাঁধনের স্মৃতি
নৈমিত্তিক বাহুডোর চির শয্যা আলোড়ন রীতি
মুঠোফোন পড়ে থাক দূরে যাক ওয়েব ভার্সন
যেদিন দু'খানি ঠোঁট কাছে এসে খুঁজে ফিরে ছিল
চির অনন্ত প্রতীতি তুমি জানো দীর্ঘ অনুধ্যানে
স্মৃতি যতো সুখ দ্যায় দুখ দ্যায় তারও চেয়ে বেশি
দুকলম লেখাটুকু বুকে ভরে শ্বাস নিও শুধু
------------------------------ ------------------------------ --
৩।।
লাইন
-----------
লাইন সোজা করো বাঁকা হচ্ছে লেখা
।
ছোট থেকে রেখা টেনে এখনো নিজেকে
সিধে করা গেল না
বাসে ট্রামে ব্যাঙ্কে শুধু লাইন লাইন
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শেষে শেখা হয়ে গেল
লাইন মারা কাকে বলে
।
আজ দীর্ঘ সারিতে প্রতীক্ষায় অতিমারী
একলা গুণে চলি নিভন্ত দীপের লাইন
।।
------------------------------ ------------------------
৪।।
সুজনেষু
---------------
কাছে কেউ নেই হৃৎস্পন্দন শুনে যাবে মনে
গাছ থেকে পাতা চোখ থেকে দুটি বিসর্গ বুঁদ
পরিশেষে সেই পৃথিবীটা গোল তাত্ত্বিক ঘোরা।।
দেশলাই ঠুকে উষ্ণ আনবো শীত বড়ো জ্বালা
ঠোঁটে কতোদিন ঠোঁট আসেনিকো সিগারেট জ্বলে।।
দুমুঠো অন্ন রাত হলে খাবো নির্জলা অ্যাকা
এসো অরণ্য বিরাট ডাইনো আমার দোসর
ফিরে যাই শেষে স্লগ ওভারের উচাটন ম্যাচে
দিনলিপি লিখি কারা বেঁচে আছে কে কে আছে পাশে
------------------------------ ------------------------
৫।।
কাকিনী সংবাদ
--------------------------
বেল পড়ল কাক ডাকল
তাল পড়ল কাক উড়ে গেল
বেল তাল কুড়িয়ে নিয়ে গেছে
কাক দেখল কার্নিশে বসে
বাড়িতে আর কাক চিল বসে না
ঘুঘু চরে না উঠোনে
পাখিরা বিলুপ্ত প্রজাতি
সেলফোনের অ্যালার্মে বাজে কাক ডাকা ভোর
নুড়ি ফেলে নয় স্ট্র ফেলে
তলানিটুকু শুষে নিচ্ছে বায়সবৃন্দ
------------------------------ -------------------------
৬।।
মকরচান
---------------------------
।।
গোরুমোষের গাড়ির শব্দে
পৌষের শেষ রাত্তির
ভোর হ'য়ে যায় দামোদর তীরে
।
বেড়াল সাইজের তিলছাঁই পিঠে
খড় কাঠকুটো ছই থেকে বেরিয়ে
স্নানান্তে আগুন পোহায়
তখনও লাল হয়নি পুবাকাশ
।
নকুল পাল না কোন্ বৃদ্ধ সিনান-শহীদ হ'ল
মাঝ যেখানে হাঁটুজলও নেই
শুধু ধূ ধূ বালি
চুড়ি মালা বালা নিয়ে ব'সবে এবার
নদী হবে বেলা হ'লে মেয়েদের কল কল রব
ভেঁপু ফুলঘোরা মমিপুতুল নিয়ে
মেলাতীরে পসার সাজালো মাগারাম
লাল পারা ডিম সিজা গেঁয়ো শিশুটির
খাদ্য হবে ব'লে বায়না ধরেছিল
।।
তিন দশক গেছে কেটে
তর্পণের চৌদলে গেছে ভেসে টুসু-জাগানিয়া
।
দামোদর আর নদী নয়
নর্দমা
।
দু'একজন মারুতি স্করপিও থেকে নামে
রোদেলা সকালে। দু'আঁজলা মাথায় জল ঠেকায়
।
নাকে ধুলোমাস্ক শিশুটির মেলামাঠে
লাল পারা ডিম হ'য়ে গেছে মোমো চাউ রোল
।
বাথরুমে ভরদুপুরে নামে মকরের ভোর
।।
------------------------------ -------------------------
৭।।
প্রিয়তমাসু
--------------------
তোমার বাড়ি যাবো
ফ্রিজ থেকে দুগ্লাস জল খাবো
--- তুমি রাজি হবে
তোমার বাড়ি যাবো
এক কাপ কফি সঙ্গে দুটো বিস্কিট
--- তুমি রাজি হবে
তোমার বাড়ি যাবো
দুপেগ হুইস্কি
--- তুমি রাজি হবে
তোমার বাড়ি যাবো
ছাদে বোসে ফুকো-লাঁকা-দেরিদা
--- তুমি রাজি হবে
তোমার বাড়ি যাবো
বেডরুমে শরীরে মিশে যাবে শরীর
--- তুমি রাজি হবে না বোধহয়
------------------------------ ----------------------
৮।।
শুভেচ্ছা
-----------------
কাশ নেই ও আকাশ এখানে নীলাভ
বুকের পেরেক সব এখনও ওঠেনি
তোমাকে পাঠাবো শব্দ এবং শুভেচ্ছা
আলো হোক ভালো হোক হৃদিমন্থ প্রীতি
জীবনের গাঢ়তর কোনো ছায়াছবি
প্রাসঙ্গিক ও প্রেক্ষিত বজায় রেখেছে
তবে সে তো গেলাসের মদির মদিরা
আমি কিন্তু ভালবাসি হৃদয়ের ওম
তোমাদের পাঠালাম কবিতার ভাষা
তালা আজও বন্ধ আছে চাবি নেই কাছে
হিরণ্ময় পাত্র আছে দরজা ওপারে
না থাকুক চাবিখান আছো কাছে তুমি
জন্ম আর মৃত্যু দিয়ে এ বই সাজানো
শেষ পাতা তাড়াতাড়ি শেষ করে নিলে
অন্য বই আছে জানি ছড়ানো টেবিলে
শোনো তুমি শুনতে পাচ্ছো তোমাকেই বলছি
নববর্ষের সকাল
------------------------------ -----------------
৯।।
গোলাপীয়
---------------------
গাছের অরণ্য সব কংক্রিটের
তাহার ঠোঁট এবং ঠোঁটের রং
শাড়ি এবং ম্যাচিং ব্লাউজ
সূর্যাস্ত ক্রিকেট মাঠ মাঠের বল
গোলাপী বর্ণের আজ
আমাদের গ্রামে গ্রামে গোলাপীয় পথে
ধীরে ধীরে শীত নামে
কলকাতা, বসন্তের পলাশ নিয়ে
ফিরে যাও বছর বছর
পুরুলিয়া বাঁকুড়ার পথশিশুটিকে
একটি কম্বল দিও
গোলাপী কলকাতা ।।
------------------------------ ----------------------
১০।।
ক্লাইম্যাক্স
-------------------------
ডিম ভেঙে হয়ে গ্যাছে জীবনের ওমলেট
।
সরীসৃপ-সন্ধ্যা এসে চাঁদ খেয়ে গ্যাছে
আর
নিধুবনে পড়ে আছে ভাঙা আড় বাঁশি
কদম ও তমালের নার্সারিতে ঝুলন্ত টব্
যমুনার জলে ভাসে রাধিকার লাশ
স্যুইম্ অয়্যারে
।।
জ্যোৎস্নালোকে ছাতা মেলে চলে যাচ্ছি অ্যাকা
অভিসারে
।
ব্যান্ডেড লাগাই তবু রক্ত বাঁধে নাকো
খাণ্ডব দহন কিম্বা জালিয়ানা বাগের
।
অমৃত সাগর মেঠে ক'বোতল ধেনো হয়ে যায়
অসুরের ভাগ্যে আহা ভাগ্যিস যোটে নি
।।
------------------------------ ---------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন