কল্লোলিনী
কিছু পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার রং মেখে ঝিরি ঝিরি বাতাস বয়ে যায়----
স্মৃতি আর বিস্মৃতির মাঝে কিছু পুরোন বিষন্নতা নিয়ে দাঁড়িয়ে কল্লোলিনী!
সমুখে চলেছো ক্রমশঃ সুদূর দিগন্তের পানে...
বিষন্নতার হাওয়া ছুঁয়ে যায় গলি আর ব্যস্ত রাস্তার আনাচ কানাচ---
তুমি ভুলেছো ভোরের শিউলির সুবাস,
তুমি ভুলেছো অলস দুপুরের ফেরিওয়ালাদের হাঁক,তুমি ভুলেছো পালকি বাহকের হু হুম না, তুমি ভুলেছো ভোরের ভেজা রাস্তার কথা।
পুরোন গলিরাস্তায় আজও ভেসে বেড়ায় কিছু অমুল্য পদধূলিকণা... বিখ্যাত সব মানুষের পদচিহ্ন হারিয়েছে এই জনপদ।
আড্ডা ভুলে বাড়িগুলোর রোয়াকে জমে পুরু ধূলোর স্তর।
পড়ন্ত বিকেলে আসে কিছু স্মৃতিচারনের দল, জমা ধুলো সরাতে
তাদের বিষন্ন বিকেল গুলো পার হয়ে যায় ধুলোর মতোই উড়ে---
শেষ পরিণতির নির্দশন সৌধ আর সমাধিতে চূড়ান্ত অবহেলা ভার, ভাঙাচোরা জীর্ণতায় ধুঁকছে তারা
সেখানে শীতের ঝরাপাতার ওপর শুকনো হাওয়ার করুণ দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায়---
আওয়াজ আসে খস খস খস খস...
ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেনা আর আতর গন্ধে মাতোয়ারা করে আলোয়ান গায়ে ধুতির কোঁচাধরা কোন বাবু, দরজা খোলে না কোন কোচোয়ান
নামে না কোন বাড়ির ঘোমটা দেওয়া গৃহিনী গঙ্গা চানের পূন্যার্জনের আশায়।
বিলুপ্তপ্রায় সার্কাসের ক্লাউনের মুখোশে মুখ ঢেকেছি আমরা।
হেরাসিম তুমি হার মেনেছিলে নিঃস্ব হয়ে;
নিষ্পেষিত হয়েছিলে।
চূড়ান্ত অবমাননা সয়ে রেখে গিয়েছিলে যে সাধের থিয়েটার
দেখে যাও তুমি লেবেদেফ----
আজও তোমার ঐতিহ্য বহন করছে কিছু মানুষ ভালোবেসে, বিরূপ পরিস্থিতি আর শত প্রতিকূলতাতেও,
তারা বাঁচিয়ে রেখেছে তোমার ভালোবাসা,আজও কোথাও ভেসে আসে তোমার ভায়োলিন চেলোর সুর....
পার্থিবের পরিণতি আর মৃত্যুউৎসবের দ্বারে ওড়ে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী---
উড়ে যায় তার সাথে কিছু ভাঙা মন আর বেদনার ইতিহাস।
কখনো কোথাও উড়েছিলো তোমারই বুকে সতীর বুকভাঙ্গা হাহাকার----
তখনো তুমি কল্লোলিনী হও নি যে!
তোমার সম্পদ কিছু হারিয়েছে কালের গহ্বরে---
তোমার সম্পদ কিছু হারিয়েছো তুমি আমাদেরই অবহেলায়।
তবু যতটুকু আছে সে তো আমাদেরই!
তুমি কল্লোলিনী তুমি যে তিলোত্তমা,তুমি কলকাতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন