“আগুন্তুক”
“আ মোলো এতো ঝড় জলের রাত্রে কে জ্বালাতে এলে বাছা এই বুড়িমানুষকে” ঝন ঝন করে দরজার শিকল টা ধরে কেউ নাড়াচ্ছে মনে হচ্ছে, নাকি ভুল শুনলাম। সবই বয়সের দোষ! আবার শিকল নাড়ছে। ওহ মা, এবার তো আরো জোরে। মিনতি হ্যারিকেন হাতে নিয়ে কোনোরকমে ঘোমটার আড়ালে মাথা বাঁচিয়ে দরজা খুলতেই খুশিতে গদগদ একেবারে। সামনেই দাঁড়িয়ে ছোট ছেলে।
- ওহ মা, সমু এসেছিস! তা একবার মা মা করে ডাকলোই তো হয়। আরও আগেই খুলে দিই। পাগল ছেলে আমার! এহ হে, কাক ভেজা হয়ে গেছিস বাবা!
- এতো জোরে দরজায় শব্দ করছি শুনতে পাচ্ছনা আর ডাকলেই শুনে ফেলতে! কি যে বলো। তার মধ্যে এই মেঘ ডাকছে এত্ত জোরে। মা ছেলে তাড়াতাড়ি ঘরে এসে ঢোকে। মিনতি গামছা এনে তড়িঘড়ি ছেলের ভিজে মাথা মুখ মুছিয়ে দেন। নিজের একখানা কাচা ধুতি সমুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান ঘর থেকে।
- এতো রাত একটু দুধ মুড়ি আর কলা খেয়ে পিত্ত রক্ষা কর সমু। কাল সকাল সকাল মোক্ষদা এসে খাবার বানিয়ে দেবে। মাছ ধরাবো দুপুরে খাবি।
- দুপুর আবার কোথায় পেলে মা। তোমার সমু কাজ পেয়েছে। কালই যেতে হবে। এতদিনে তোমার ভগবান মুখ তুলে চাইলো। বেকারত্বের গ্লানি থেকে মুক্তি পেলাম মা। দুঃখ একটাই অনেক দুরের দেশে যেতে হবে। নতুন জায়গা নতুন জীবন তাই তোমায় প্রণাম করতে এলাম।
ছেলের কথায় আচঁল দিয়ে চোখ মোছেন মিনতি।
- বড়ো খোকাও নিশ্চয় খুব খুশি হয়েছে ভাইয়ের কাজের খবর পেয়ে। বকাঝকা করলেও তোকে স্নেহ করে তো খুবই। ছোট ভাই বলে কথা।
- হ্যাঁ মা খুশি তো হবেই, তবে কেউ তো এখনো জানেই না। খবরটা জানামাত্রই সব্বার আগে তোমাকে বলতেই ছুটে এলাম।
-মা, সমু এসেছে। তোমায় একটিবার প্রণাম করতে এসেছে মা।
- হ্যাঁ জানি তো সমু এসেছে। তুই কাঁদছিস কেন খোকা?
- মা আমি পারলাম না। আমি হেরে গেলাম মা। তোমার কাছ থেকে ভাইকে আমি নিয়ে গেছিলাম মা। চাকরি না পাওয়ার ব্যর্থতা সমুকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিলো মাগো। কাল রাত্রে দশটার এক্সপ্রেসের সামনে সমু আত্মহত্যা করেছে মা।
হতচকিত মা ছুটে যান ঘরে যেখানে সমুকে ঘুমাতে দিয়েছিলেন। টানটান করে কাচা চাদর বালিশ পাতা। কারোর চিহ্ন নেই সেখানে। টলতে টলতে বেরিয়ে দাওয়ায় এসে বসে পড়েন মিনতি, চোখে পরে তখনও কলতলায় সমুর দুধ মুড়ি খাওয়া এঁটো থালা পরে আছে। পাশেই কলার খোসায় অগুনতি পিঁপড়ে হানা দিয়েছে। দূর থেকে কানে আসে, “বলো হরি হরিবোল বলো হরি হরিবোল”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন