শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮

বনবীথি_পাত্র


চক্ষুদান

.
বাড়ির সাবেকি দুর্গাপুজোতে ক'দিন আগে থেকেই আসতে শুরু করেছে সবাই । ভাঙাচোরা বাড়িটা সরগরম কিছুদিনের জন্য ।
পরপর দুটো মরা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল শিবানীকে ।  জ্ঞাতিগুষ্টিরা কেন নিজের দিদিরাও এড়িয়ে চলে শিবানীকে । বাবা মারা গেছে সাতবছর । একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়ানোর মাইনেতে কোনরকমে চলে যায় মা-মেয়ের । 
কাল রাতে ফিরতে অনেকটাই দেরি হয়েছিল শিবানীর । মা তাও জেগে ছিল । চোখে না দেখলেও মা যেন সব  বুঝতে পারে । রাতে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছিল , একটা ভালো ডাক্তার দেখিয়ে নিস । তোর শরীরটা ভালো ঠেকছে না ।
ডাক্তারখানাই তো গিয়েছিলাম । বলতে গিয়েও কথাটা বলতে পারেনা মাকে ।
ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারলে মায়ের চোখদুটো হয়তো নষ্ট হতো না । 
ভোরবেলা ঘুম ভাঙে মায়ের ডাকে । রেডিওতে মহালয়াটা চালিয়ে দেয় ।
স্নান করে তৈরি হয়ে নেয় শিবানী । রোগটা শরীরের গভীর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে । ডাক্তারবাবু না বললেও শিবানী বুঝতে পারছে , তার আর বেশি দিন নেই । 
 শিবানীর মৃত্যুর পর যেন তার চোখদুটো দিয়ে মা আবার দেখতে পায় , সেই ব্যবস্থাটা করতেই হবে । একতলার নাটমন্দিরে ঠাকুর তৈরি হচ্ছে একমাস ধরে । ঠাকুরমশাইএর মন্ত্রোচ্চারণ-উলু-শঙ্খধ্বনি ভেসে আসছে নীচে থেকে , আজ মায়ের চক্ষুদান ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন