ঘরোয়া খাদ্যে অমৃত পুষ্টি
করোনা থাবা ঘরের দরোজা। নিস্তার মিলবে কি না কেউ জানি না। প্রতিটিদিন মূল্যবান। এখন বোঝা গেছে, কেন বলা হয়, একটি সুস্থ দিন আশীর্বাদের মত।
কাল কিসনে দেখা... মহা মূল্যবান এই বাণী। কালকে কি অপেক্ষা করে আছে জানি না। আজ জানি। আজকের লড়াই জানি। নিজেদের কর্মফলের দিকে এগিয়ে চলেছি সেটাও জানি। কর্মফল কোনো আধি ভৌতিক ব্যাপার নয়। যে কাজ করছি তার ফল ভুগছি। সঙ্গে আরো দশজনকে টেনে নিচ্ছি।
পৃথিবীর অন্য দেশ পারছে আমরা পারছি না? মৃত্যুকে বরণ করে নিয়ে আসছি। লক ডাউন জরুরি। হচ্ছে না।
তবু, কুর্নিশ তাদের যারা একটা অসহায় অবস্থায় লড়াই করে যাচ্ছেন। সেই আমাদের ডাক্তার ভগবানের দল। উপর থেকে কেউ নেমে আসেন না। ডাক্তার আসেন। নিজে নিরাপদ থাকবেন না হয়ত, জেনেও আসেন।
***
আমরা লড়াই করছি। প্রতিদিন নিজের মত করে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি ভাইরাসের প্রবল কামড়। রোজ মেপে চলেছি অক্সিজেন।
সত্য যতই নির্মম হোক জারি থাক লড়াই। মন ভালো রাখুন ... বললেই তো মন ভালো হয় না। সেটাও যেমন সত্যি, তেমনি ভয় কিন্তু সৃষ্টি করে ক্ষতিকর হরমোন। তার ফলে লড়াই করার ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। ফুসফুসের বাতাস কম হতে থাকে।
এনার্জি ক্ষয় হয় বেশি কথা বললেও। এইসময় মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় ত্রাস। ত্রাসের আক্রমণে মাথা ঠাণ্ডা রাখা খুব মুশকিল। বাড়ির লোকের সঙ্গে অশান্তি হয়ে চলে। মুখ ভার। ভিতরের ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। অতীতের কথা মনে পড়ে। করোনা আগের পরিস্থিতি কত ভালো ছিল! মৃত্যু হচ্ছে কাছের মানুষের। ভয়ঙ্কর রকমের শূন্যতার সৃষ্টি হয়। অতল খাদের মধ্যে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। এনার্জি আর অবশিষ্ট থাকে না।
এনার্জি হল জ্বালানি। বাঁচিয়ে রাখতে হলে ধ্যান জরুরি। ধ্যান না হোক, নিজেকে নিয়ে একটু বসতেই হবে। বিশেষ করে দুপুরবেলার সময়। ওই সময় সবচেয়ে ক্লান্ত থাকে মন।
ভাইরাস এসে গেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই। এই সময় নিজেকে চাঙ্গা রাখতে হবে। দুঃখ বোধ আক্রান্ত করবে। এটাও কিন্তু , মহামারীর প্রক্রিয়া। মানুষকে ভিতর হতে বিপর্যস্ত না করে দিতে পারলে, আক্রমণের কামড় সহজ হবে না।
দুঃখ বোধ থাকুক। তাকে নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাজারে যেতে হবে। কাজ করতে হবে। মনের এনার্জি লেভেলের দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। বিপদের সময় কাজে লাগবে এই মন। এমনকি বিপদের পরেও কাজে লাগবে। অনর্থক কথায় ভারাক্রান্ত হয়ে কি লাভ?
****
নিজের রুটিন ঠিক করে নিন। এখনো লকডাউন হয় নি। অফিস যেতে হচ্ছে। ভয় নয়। যেতে হচ্ছে যখন যেতে হবে।
সব রকম সতর্কতা সেই সঙ্গে নিজেকে উৎসাহ দেওয়া। পারব। আমি ই পারব। পারতেই হবে।
ব্যায়াম করা জরুরি। মহামারীর জন্য নয়। এমনিতেই প্রয়োজন। ব্যায়াম কথাটা শুনলেই আমাদের মত মধ্যবয়সী মহিলা পুরুষের কপাল কুঁচকে যায়। আমি বলি, চলতে ফিরতে ব্যায়াম করা যাক।
১. দুই হাতে যেন ধরে আছি দুটো বালতি , এই ভাবে বালতি দুটো শ্বাস নিয়ে উপরে তুলে, নামিয়ে কোমরের কাছে রেখে , নিচে শ্বাস ছেড়ে নামাতে হবে। পাঁচ বার। শ্বাস নিয়ে উপরে। কোমরে ধরে রাখা। নিচে ছেড়ে দেওয়া। রান্না করতে করতে, অফিসে কাজ করতে করতে করাই যায়।
২. পিছন দিকে হাঁটা। দশ পা গুণে গুণে। পাঁচ বার।
৩. লিখতে লিখতে , একটু থেমে, মুখ দিয়ে বাতাস টেনে, মুখ ফুলিয়ে দম বন্ধ করে বাতাস ছেড়ে দেওয়া। যতবার খুশি।
নিজেই বুঝবে কতখানি আরাম পাচ্ছে ফুসফুস।
*****
বলো তো, কোন ইন্দ্রিয় মানুষের একাধারে বন্ধু ও শত্রু? সে হল জিভ। জিহ্বা।
স্বাদবস্তু এখানেই অবস্থান করে। আজ ফাস্টফুডের এত রমরমা, সে কিন্তু আমাদের এই ইন্দ্রিয়ের কারণে।
মাঝে মাঝে পান্তাভাত খাই।
লালচাল ভিজিয়ে রাখি। করোনা কাল চলছে। তার উপর গরম। প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান যেমন পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। পান্তাভাত থেকে ভিটামিন সি ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। দ্রুত যোগায় শক্তি। অনেকক্ষণ কাজ করা যায়।
পান্তাভাতের জল/ তিন পুরুষের বল।।
৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তৈরি হয় ফাইটিক অ্যাসিড। ল্যাকটিক অ্যাসিড। আয়রন ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এত বেশি যে , এই সময় শরীরকে লড়াকু করে তুলতে সাহায্য করে।
*****
মানুষ চেষ্টা করে যায়। পরিস্থিতি প্রতিকূল। এমন ভয়াবহ মহামারীর কবল থেকে বাঁচার উপায় আমাদের খুঁজতে হবে। হঠাৎ ছোবল মারবে এই ভাইরাস। পরিচিত ডাক্তারের ফোন নম্বর থাক। অক্সিজেন মাপার মেশিন থাক। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়া থাক। শরীরে জোর থাক। সেইসঙ্গে মনের জোর থাক।
যুদ্ধক্ষেত্রে এইগুলি সম্বল করে নেমেছি। তারপর?
কাল কিসনে দেখা?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন