রান্নাঘরের গল্প নিয়ে আবার হাজির হলাম
বন্ধুরা। অনেকেই ভাবতে পারেন রান্নাঘরের গল্প আবার কি? রান্নাঘর মানেই তো
তেল-নুন-মরিচ,নয়তো কালি,ধোঁয়া আর ঝাঁজ। কিন্তু একটু অন্যভাবে যদি ভাবেন তাহলেই
বুঝতে পারবেন আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই রান্নাঘরকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে জমে আছে
নানান গল্পকথা,জিভে লেগে আছে খাবারের স্বাদ-এইসবের খোঁজেই সৃজনের ব্লগের প্রতি
সংখ্যায় আমরা হাজির থাকছি বিভিন্ন রান্নাঘরের গল্প নিয়ে আমাদের বিভাগ-“অন্তরমহল”
নিয়ে।
এবারের অন্তরমহলে আমাদের গল্প শোনাবে আমাদের
অনেকেরই পরিচিত কবি জারিফা জাহান। গল্প শোনার আগে একটু আলাপ সেরে নিই পেশায়-নেশায়
আমাদের আজকের ইঞ্জিনিয়ার কবি জারিফা জাহানের সম্পর্কে দু-চার কথা। বারাসাতের
এই মেয়েটির সাথে আমার প্রথম আলাপ গতবছর রেওয়া পত্রিকার অনুষ্ঠানে,এরপর ফেসবুকে ওর
নিয়মিত লেখা পড়েছি এবং অবশ্যই মুগ্ধ হয়েছি। এত সাবলীলভাবে যেকোনো বিষয় লিখে ফেলতে
পারে জারিফা,যারা ওর লেখা পড়েছেন তারা অবশ্যই এই বিষয়ে আমার সাথে একমত হবেন। পেশায়
একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েওবাকি সময়টা লেখালিখির চেষ্টা করে যাচ্ছে সফল ভাবে।
সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে আরও একটি শখ ওকে অনেককেই চমকে দিতে সাহায্য
করে,সেটা হল ওর রান্না করার নেশা। এবং ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লগে আমরা ওর সুস্বাদু
রেসিপি আমরা পেয়েছি। এবার সরাসরি চলে গেলাম জারিফা জাহানের “রান্নাঘরের গল্পে”।
জারিফার আজকের গল্পের নাম- "মামার বাড়ি ভারী মজা, কিল চড় নাই"রান্নার শেষে আমাদের
পাঠকদের জন্য রয়েছে একটি লোভনীয় রেসিপি। রেসিপি জানতে গেলে অবশ্যই গল্পটি পড়তে
হবে।
কথাটা মেয়েবেলায় পড়েছিলুম বটে, তবে কিল-চড়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আয়েশি উপমায় ছিল আমার মামা বাড়ি- নানি
বাড়ির সাদা চোখের ঢলাঢলি। মামাবাড়ি কথাটাতে আমার ঘোরতর আপত্তি। 'নানিবাড়ি' শব্দটাতেই আসে
আমুদে আহ্লাদ, ছুটির বিলাসযাপন, অবাক সম্মোহন। নানি খাঁটি বাটানগরের মেয়ে, মায়ের দাদু ছিল বাটা কোম্পানির চিফ কেমিস্ট। তবে
কলকাত্তাইয়া বনেদী ঠাঁটবাট একাত্তরের পর বাংলাদেশে গিয়ে থিতু হয়, মৌসুমী কাঁচপোকায়। নানির হাতের জাদু তাই এপার-ওপর-অপার
বাংলার সাঁতারে এক্কেবারে ফার্স্টক্লাস ডুবুরি।পরীক্ষার ছুটির পর আম্মি আর আমার
যাওয়ার রুটিন ছিল শিব্রামের হিউমার সুলভ বাঁধাধরা। সকালে কেক, ডিমসেদ্ধ, বাটার টোস্ট এর
সাথে লেজুড় হতো ঢাকাই পরোটা, মিষ্টি আর জর্দা
সেমাই। দুপুরে হতো চিংড়ি কোর্মা, ইলিশের মাথা দিয়ে
বেগুন, মাটন, ডাল আর দু'তিন রকম ভাজা।
রাতেও লিস্টি খানিকটা এরকম। সাথে ডেজার্ট হিসেবে জুড়ে যেত ফিরনি, রসগোল্লা, দই। এই এলাহি
আয়োজন থরে থরে পেটে থুড়ি ভুঁড়িতে ডানা ঝাপটিয়ে পাঁচদিনেই কিলো দুয়েক ওজন দিব্যি
নধর জাঁকিয়ে বসতো। আব্বু আসার দিনে 'জামাই আদর' এর তোরজোড়ে সেই পেটে-পিঠে কুলিয়ে উঠতে না পারা
মাংসপিন্ডগুলো দেখতাম কেমন পোলাও-পোলাও করে পালানোর বদলে আরো দু'দণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার অছিলায় খোলতাই বাজতো আগাম, কাহারবা লয়ে, ঢেঁকুরের তালে।এই
পোলাও হলো বিশুদ্ধ নারকেল দুধের পোলাও। নারকেল গাছ থেকে পেড়ে জড়ো করা, সকাল থেকে ছিলে কোরা আর তারপর জল ফুটিয়ে নারকেল গুঁড়োয়
অল্প অল্প মিশিয়ে চালুনিতে ছাঁকা- পুরো পদ্ধতিতেই একটা রাজসূয় আয়োজন, মোগলাই সোহাগ। আর কবিতায় অন্ত্যমিলের মতো থাকতো সঙ্গী
আলু চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাজা, বেগুন ভাজা, ইলিশ ভাজা, মাটন রেজালা আর
সবশেষে পাতে বাড়িতে পাতা মিষ্টি দই। নানি বেঁচে থাকাকালীন ওই প্রেমসুবাস ছিল সে
বাড়ির ইউএসপি কোশেন্ট। তার আধখানা, আধভাঙা টুকরোও
প্রায় দু'যুগের অভ্যেসের মনকেমনে
মখমলি বুনোট হতে পারেনি অস্থির ছন্দে।
নারকেল দুধের
পোলাও রেসিপিঃ
উপকরণ:পোলাওয়ের
চাল- ১ কেজিঘন নারকেলের দুধ- ১ কাপঘি- ১/২ কাপদারুচিনি- ১ সেমি ৩টিএলাচ-
৩টিআদাবাটা- ১ চা-চামচরসুনবাটা- ১ চা-চামচজল ফুটানো- ৬ কাপপেঁয়াজ বেরেস্তা- ১/২
কাপকেওড়াজল- ১ চা-চামচকিশমিশ- ১/৪ কাপপেস্তা, কাঠবাদামকুচি- ১/৪ কাপচিনি- ২ চা-চামচকাঁচালঙ্কা- ৫-১০টি
প্রণালী:চাল ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। হাঁড়িতে ঘি দিয়ে গরম মশলার( দু-একটা তেজ
পাতা, কয়েকটা এলাচ, ৩-৪ টে লবঙ্গ ও একটা দারুচিনি) ফোড়ন দিন। এতে আদা রসুন
দিয়ে হালকা নেড়ে, ১ কাপ জল ও নুন
দিন। এবার মশলা কষান। ফ্রাইং প্যানে আলাদা করে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে আলাদা রেখে
দিন। কষানোর পর তেল উঠে আসলে চাল দিন। চাল মশলার মধ্যে কিছুক্ষণ ভাজতে হবে। চাল
ভাজা ভাজা হলে এতে ৬ কাপ গরম জল দিয়ে দিন। জল একটু কমে আসলে নারকেলের দুধ, চিনি, কেওড়াজল মেশান।
এবার দমে বসিয়ে দিতে হবে ২০-২৫ মিনিট এর জন্য। জল শুকিয়ে পোলাও ঝরঝরে হলে এর মধ্যে
বেরেস্তা এবং কাঁচালঙ্কা দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। এবার পরিবশেনের পাত্রে
পোলাও দিয়ে উপরে বাদামকুচি এবং কিশমিশ, বেরেস্তা ছড়িয়ে
পরিবেশন করুন। ব্যাস সাথে ভাজাভুজি আর মাংস থাকলে খানা জমে ক্ষীর, যাকে বলে মগনলালের প্যায়ার।
গল্প বলার ধরন গল্পটিকে আরও মধুর করে,এখানেও ঠিক তাইই হয়েছে। আশাকরি,আমাদের
পাঠকদেরও এই গল্পটি এবং রেসিপিটি ভালো লাগবে। এবার আজকের পর্ব শেষ করার পালা। পরের
সংখ্যায় আবার অন্য কোন রান্নাঘরের গল্প নিয়ে আমি হাজির থাকবো সৃজন ব্লগের
“অন্তরমহল” বিভাগে।
বিভাগ পরিচালনায়- আমি জয়িতা দে সরকার। (দুর্গাপুর)
রান্নাঘরের গল্পে- জারিফা জাহান। (বারাসাত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন