২৫ শে বৈশাখের "সৃজন" স্বল্প প্রয়াস :
~~~~~~~~~~~~ ~~~~~
"জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে ..."
জীবনে বা মরণে সমস্ত ক্ষেত্রে রবিঠাকুর ভীষণ ভাবে বিদ্যমান ৷ জীবনের কোন পর্যায় থেকে তাঁকে অনুসরণ করা শুরু ঠিক বলতে পারব না, তবে চিন্তাশক্তির উন্মেষ যখন হয়েছে তবে থেকে তাঁর প্রতিটি শব্দে , প্রতিটি চরণে নিজেকে উপলব্ধি করেছি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনে ঈশ্বর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। ঈশ্বরের মূল অর্থ নিহিত রয়েছে মানব সংসারের মধ্যেই। তিনি দেববিগ্রহের পরিবর্তে মানুষ অর্থাৎ কর্মী ঈশ্বরকে পূজার কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বা বলতেন ৷ সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন ।
দূর থেকে যাকে দেখি সে আমার
অন্তিম ...
রবীন্দ্র রচনাবলীর পাতাগুলো আরও একবার ওলটাতে মনের সরণীতে ধরা দিল –
." রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি ৷
শিখর হইতে শিখরে ছুটিব ,
ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব ,
হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি"
শৈশবের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পাহাড়ে রবির কিরণ মূলত স্রোতস্বিনী নদীর মতো ৷ মনোরাজ্যে রাণী হয়ে ভূস্বর্গ থেকে মর্ত্যলোক জয়ের আনন্দে বিভোর হয়ে থাকত অবচেতন মন ...
যাপনের নিশ্চুপ গুহা থেকে যখন কৈশোরের আবর্তে ঢুকলাম চারিপাশে প্রাত্যহিকতার মাকড়শার জাল একটু একটু করে জড়িয়ে পড়তে লাগল I প্রভাত পাখির গান বেসুরা লাগত ৷ যাপনের বেড়া পেরিয়ে গতানুগতিক গড্ডালিকা প্রবাহমান হওয়াটাই ট্রাজিক l
" কতবার আমি ভেবেছিনু ' উঠি উঠি ,
আলস ত্যাজিয়া পথে বাহিরাই ছুটি I "
মুক্তির স্বাদ তখন থেকে একটু একটু করে গ্রাস করছিল অতৃপ্ত মন l সংসারের বাঁধাধরা গণ্ডিতে থেকে পঙ্কজ হয়ে চায়নি এ হৃদয়ের উপাখ্যান l মুক্তিসুখের উল্লাসে মৌচাকে প্রবেশ করে হুল খেতে প্রস্তুত ছিল উৎশৃঙ্খল মন ৷ নিতান্ত সাধারণ একটি মেয়ে অসাধারণ হবার স্বপ্ন দেখত কেন ! এই প্রশ্ন কেউ করেনি ৷ কেউ তার জন্য বিনিদ্র রজনী যাপন করুক ; কবিতার নেত্রী হোক এই চেয়েছিল নিসঙ্গ মন l
" নিজের কথা বলি ৷
বয়স আমার অল্প l
একজনের মন ছুঁয়েছিল
আমার এই কাঁচা বয়সের মায়া ৷
তাই জেনে পুলক লাগত আমার দেহে –
ভুলে গিয়েছিলাম অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি ,
আমার মত এমন আছে হাজার হাজার মেয়ে ,
অল্প বয়সের মন্ত্র তাদের যৌবনে ৷৷ "
গুপ্ত প্রেম অব্যক্ত থেকে যায় ৷ মনের ক্ষিদের সাথে চোখের ক্ষিদের সামঞ্জস্যতা শূন্য ব্যবধানে মেশে ৷ তবু যেন মনের দোড়গোড়ায় কে যেন ছোবল বসায় I
"মনে গোপনে থাকে প্রেম , যায় না দেখা ,
কুসুম দেয় তাই দেবতায় l
দাঁড়ায়ে থাকি দ্বারে , চাহিয়া দেখি তারে,
কী বলে আপনারে দিব তায় ?
গুরুর লেখার অনুসরণে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস বর্ষায় প্রেম :
বাদল দিনে
__________________
এমন বাদল দিনে তারে ভোলা যায়
গগনে মেঘরাশি চমকায়
আঁখিতে অশ্রুরাশি ,
মিশিছে চারিধার ।
হৃদয় রাঙিছে বনছায় ,
কুসুম কাননে কে যেন গড়িছে ফুলহার৷
যে লয়ে এসেছে মোরে ,
একি তারি লাগি উপহার ?
এমনি দিনে তারে বলা যায়
ব্যাকুল বেগে প্রেম বাহিছে চারিধার ,
হৃদয় মিলেমিশে একাকার I
সে কথা আজি যেন বলা যায় ,
তোমারে ভালবাসি শতবার ৷
জীবনের চড়াই উত্ড়াই পেরিয়ে বসন্তের শেষ বেলায় দাঁড়িয়ে মনে হয় পুরো বসন্তই ঝরা পাতা I অসামর্থের ঘুণ অস্থিমজ্জা শিরা উপশিরার মধ্যে প্রবেশ করে রক্তকে দূষিত করে I বসন্তের রঙ বড় ফ্যাকাশে মনে হয় ৷
" যদি বসন্তের শেষে শ্রান্তমনে ম্লান হেসে
কাতরে খুঁজিতে হয় বিদায়ের ছল ?
আছি যেন সোনার খাঁচায়
একখানি পোষ-মানা প্রাণ I
এও কি বুঝাতে হয় _ প্রেম যদি নাহি রয়
হাসিয়ে সোহাগ করা শুধু অপমান ?
মনে আছে , সেই একদিন
প্রথম প্রণয় সে তখন l "
অনেক ছবির মাঝে নিজের ক্যানভাসটি তুলিশূন্য হয় ৷ ভেবেছিলাম তুমি আর আমি মিলে সিন্ধু পারাপার হব ৷ অনেক মেঘের মাঝে রাখাল বালক হারিয়ে যায় অলীক স্বপ্নে ৷
" কথা ছিল এক তরীতে কেবল তুমি আমি
যাব অকারণে ভেসে কেবল ভেসে ,
ত্রিভুবনে জানাবে না কেউ আমরা তীর্থগামী
কোথায় যেতেছি কোন দেশে সে কোন দেশে
আপনার থেকে যা পেয়েছি
তা এ জীবনের শত
দাসত্বেত্ত ঘুচবে না l "
আপনার তরীতে সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয় |
হঠাৎ দেখা
পশ্চিম আকাশ থেকে এক ফালি রোদ ভেসে আসে ৷ ট্রেনের কামরায় বসে রবীন্দ্রনাথ পড়তে পড়তে পেরিয়ে যায় স্টেশন ৷ দমকা হাওয়ায় এলোমেলো চুল বলে , কত কিছু বলার ছিল , কতটা দেওয়ার ছিল ; যদি সবটুকু উড়াড় করে দিতে পারতাম বেশ হত ৷
আমার পোড়া বালিশ আর ডায়েরীর পাতায় শুধু অবিন্যস্ত শব্দ হেঁটে বেড়ায় ৷ কখনও মনে হয় এই অবয়ব থেকে বেরিয়ে যদি নদী হতে পারতাম বেশ হত ৷ আমার প্রজাপতির রঙ হতে ভীষণ ইচ্ছা করে৷
বোলপুর আমার বড় প্রিয় ৷ কেন জানি না মনে হয় আমার সর্বনাশ ওখানে লেখা আছে I কোপাই নদী আমার অনেক কিছু কেড়ে নিলেও দিয়েছে অনেক কিছু ...
দিয়েছে তোমায় ! শুধু আমি অার আমার মেয়েবেলা ৷
একান্ত বসন্ত তোমায় দিলাম
আজ ২৫ শে বৈশাখে " সৃজন " সকল পাঠককে জানায় শুভেচ্ছা ৷
২৫ শে বৈশাখ
ছবি কৃতজ্ঞতা স্বীকার : রুমা অধিকারী
~~~~~~~~~~~~ ~~~~~
"জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে ..."
জীবনে বা মরণে সমস্ত ক্ষেত্রে রবিঠাকুর ভীষণ ভাবে বিদ্যমান ৷ জীবনের কোন পর্যায় থেকে তাঁকে অনুসরণ করা শুরু ঠিক বলতে পারব না, তবে চিন্তাশক্তির উন্মেষ যখন হয়েছে তবে থেকে তাঁর প্রতিটি শব্দে , প্রতিটি চরণে নিজেকে উপলব্ধি করেছি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনে ঈশ্বর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। ঈশ্বরের মূল অর্থ নিহিত রয়েছে মানব সংসারের মধ্যেই। তিনি দেববিগ্রহের পরিবর্তে মানুষ অর্থাৎ কর্মী ঈশ্বরকে পূজার কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বা বলতেন ৷ সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন ।
দূর থেকে যাকে দেখি সে আমার
অন্তিম ...
রবীন্দ্র রচনাবলীর পাতাগুলো আরও একবার ওলটাতে মনের সরণীতে ধরা দিল –
." রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি ৷
শিখর হইতে শিখরে ছুটিব ,
ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব ,
হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি"
শৈশবের উচ্চাকাঙ্ক্ষার পাহাড়ে রবির কিরণ মূলত স্রোতস্বিনী নদীর মতো ৷ মনোরাজ্যে রাণী হয়ে ভূস্বর্গ থেকে মর্ত্যলোক জয়ের আনন্দে বিভোর হয়ে থাকত অবচেতন মন ...
যাপনের নিশ্চুপ গুহা থেকে যখন কৈশোরের আবর্তে ঢুকলাম চারিপাশে প্রাত্যহিকতার মাকড়শার জাল একটু একটু করে জড়িয়ে পড়তে লাগল I প্রভাত পাখির গান বেসুরা লাগত ৷ যাপনের বেড়া পেরিয়ে গতানুগতিক গড্ডালিকা প্রবাহমান হওয়াটাই ট্রাজিক l
" কতবার আমি ভেবেছিনু ' উঠি উঠি ,
আলস ত্যাজিয়া পথে বাহিরাই ছুটি I "
মুক্তির স্বাদ তখন থেকে একটু একটু করে গ্রাস করছিল অতৃপ্ত মন l সংসারের বাঁধাধরা গণ্ডিতে থেকে পঙ্কজ হয়ে চায়নি এ হৃদয়ের উপাখ্যান l মুক্তিসুখের উল্লাসে মৌচাকে প্রবেশ করে হুল খেতে প্রস্তুত ছিল উৎশৃঙ্খল মন ৷ নিতান্ত সাধারণ একটি মেয়ে অসাধারণ হবার স্বপ্ন দেখত কেন ! এই প্রশ্ন কেউ করেনি ৷ কেউ তার জন্য বিনিদ্র রজনী যাপন করুক ; কবিতার নেত্রী হোক এই চেয়েছিল নিসঙ্গ মন l
" নিজের কথা বলি ৷
বয়স আমার অল্প l
একজনের মন ছুঁয়েছিল
আমার এই কাঁচা বয়সের মায়া ৷
তাই জেনে পুলক লাগত আমার দেহে –
ভুলে গিয়েছিলাম অত্যন্ত সাধারণ মেয়ে আমি ,
আমার মত এমন আছে হাজার হাজার মেয়ে ,
অল্প বয়সের মন্ত্র তাদের যৌবনে ৷৷ "
গুপ্ত প্রেম অব্যক্ত থেকে যায় ৷ মনের ক্ষিদের সাথে চোখের ক্ষিদের সামঞ্জস্যতা শূন্য ব্যবধানে মেশে ৷ তবু যেন মনের দোড়গোড়ায় কে যেন ছোবল বসায় I
"মনে গোপনে থাকে প্রেম , যায় না দেখা ,
কুসুম দেয় তাই দেবতায় l
দাঁড়ায়ে থাকি দ্বারে , চাহিয়া দেখি তারে,
কী বলে আপনারে দিব তায় ?
গুরুর লেখার অনুসরণে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস বর্ষায় প্রেম :
বাদল দিনে
__________________
এমন বাদল দিনে তারে ভোলা যায়
গগনে মেঘরাশি চমকায়
আঁখিতে অশ্রুরাশি ,
মিশিছে চারিধার ।
হৃদয় রাঙিছে বনছায় ,
কুসুম কাননে কে যেন গড়িছে ফুলহার৷
যে লয়ে এসেছে মোরে ,
একি তারি লাগি উপহার ?
এমনি দিনে তারে বলা যায়
ব্যাকুল বেগে প্রেম বাহিছে চারিধার ,
হৃদয় মিলেমিশে একাকার I
সে কথা আজি যেন বলা যায় ,
তোমারে ভালবাসি শতবার ৷
জীবনের চড়াই উত্ড়াই পেরিয়ে বসন্তের শেষ বেলায় দাঁড়িয়ে মনে হয় পুরো বসন্তই ঝরা পাতা I অসামর্থের ঘুণ অস্থিমজ্জা শিরা উপশিরার মধ্যে প্রবেশ করে রক্তকে দূষিত করে I বসন্তের রঙ বড় ফ্যাকাশে মনে হয় ৷
" যদি বসন্তের শেষে শ্রান্তমনে ম্লান হেসে
কাতরে খুঁজিতে হয় বিদায়ের ছল ?
আছি যেন সোনার খাঁচায়
একখানি পোষ-মানা প্রাণ I
এও কি বুঝাতে হয় _ প্রেম যদি নাহি রয়
হাসিয়ে সোহাগ করা শুধু অপমান ?
মনে আছে , সেই একদিন
প্রথম প্রণয় সে তখন l "
অনেক ছবির মাঝে নিজের ক্যানভাসটি তুলিশূন্য হয় ৷ ভেবেছিলাম তুমি আর আমি মিলে সিন্ধু পারাপার হব ৷ অনেক মেঘের মাঝে রাখাল বালক হারিয়ে যায় অলীক স্বপ্নে ৷
" কথা ছিল এক তরীতে কেবল তুমি আমি
যাব অকারণে ভেসে কেবল ভেসে ,
ত্রিভুবনে জানাবে না কেউ আমরা তীর্থগামী
কোথায় যেতেছি কোন দেশে সে কোন দেশে
আপনার থেকে যা পেয়েছি
তা এ জীবনের শত
দাসত্বেত্ত ঘুচবে না l "
আপনার তরীতে সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয় |
হঠাৎ দেখা
পশ্চিম আকাশ থেকে এক ফালি রোদ ভেসে আসে ৷ ট্রেনের কামরায় বসে রবীন্দ্রনাথ পড়তে পড়তে পেরিয়ে যায় স্টেশন ৷ দমকা হাওয়ায় এলোমেলো চুল বলে , কত কিছু বলার ছিল , কতটা দেওয়ার ছিল ; যদি সবটুকু উড়াড় করে দিতে পারতাম বেশ হত ৷
আমার পোড়া বালিশ আর ডায়েরীর পাতায় শুধু অবিন্যস্ত শব্দ হেঁটে বেড়ায় ৷ কখনও মনে হয় এই অবয়ব থেকে বেরিয়ে যদি নদী হতে পারতাম বেশ হত ৷ আমার প্রজাপতির রঙ হতে ভীষণ ইচ্ছা করে৷
বোলপুর আমার বড় প্রিয় ৷ কেন জানি না মনে হয় আমার সর্বনাশ ওখানে লেখা আছে I কোপাই নদী আমার অনেক কিছু কেড়ে নিলেও দিয়েছে অনেক কিছু ...
দিয়েছে তোমায় ! শুধু আমি অার আমার মেয়েবেলা ৷
একান্ত বসন্ত তোমায় দিলাম
আজ ২৫ শে বৈশাখে " সৃজন " সকল পাঠককে জানায় শুভেচ্ছা ৷
২৫ শে বৈশাখ
ছবি কৃতজ্ঞতা স্বীকার : রুমা অধিকারী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন