মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য


কোন অপরূপ সৃষ্টি ......বৃষ্টি.....বৃষ্টি   
"এ মাই ভাত দে না"- ফাঁকা থালার উপর হাত বোলাচ্ছে বছর ছয়ের মেয়েটা লছমী এক হাতা ফেনা ভাত উপুর করে নুন ছড়িয়ে দেয় – "তাড়াতাড়ি গিলে লে" চারিদিকটা কেমন যেন গুমোট আকাশে তারা নেই অন্ধকার আকাশে মাঝে মাঝে  বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মেঘের হুঙ্কার কানে আসছে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হবে লছমীর বড় ভয় করে এই আপদ বৃষ্টিটাকে আর সঙ্গে যদি ঝড় হয় কথাই নেই আসলে আস্তানা বলতে এই আমহার্স্ট্রীটের চারমাথার মোড়ের রাস্তার এক পাশে একটা ফুটপাথের কোনা বৃষ্টি হলে এই  আশ্রয়টুকুও চলে যায় পাশ দিয়ে দুটো  লোক কথা বলতে বলতে যাচ্ছে- "আর পারছিনা , এবার বৃষ্টি নাম " লছমীর বুক কেঁপে ওঠে গলা বেয়ে ঘাম গড়িয়ে  পরছে হঠাৎ দমকা বাতাসের চোটে শরীরটা জুড়িয়ে যায় রাস্তায় শুরু হয়েছে ধূলোর ঝড় মেয়েটা এখনও ভাতটা খেয়ে উঠতে পারেনি লছমী মেয়েটার পিঠে দুমদুম করে দিলো দুঘা বসিয়ে ততক্ষনে শুরু হয়েছে ঝড় আর মুষল ধারে বৃষ্টি লছমী মেয়ের হাত ধরে টান দিল সামনের হোটেলের নীচের ছাউনিতে দাঁড়াতে হবে কিছুক্ষন বেশিক্ষন সেখানে দাঁড়াতে দেবে না যদিও মেয়েটা থালায় একটা ইট চাঁপা দিয়ে মায়ের সাথে সুরক্ষিত আশ্রয়ে দাঁড়িয়ে পরল

        হোটেলের দ্বিতীয় তলায় ব্যলকনি সংলগ্ন রুমটিতে উঠেছে নবদম্পতি - ঈশা আর সুজিত এসেছে মেদিনীপুর থেকে কাল সকালে ট্রেন ধরে চলে যাবে পুনেমধুচন্দ্রিমা যাপনে - "সুজিত, কি ভালো লাগছে না আমাদের নতুন জীবনের প্রথম বৃষ্টি " মেঘের গর্জনে ভয়ে আঁকড়ে ধরছে সুজিতের হাত আবার বৃষ্টির সাথে খেলা করছে এখন দুজনেই সিক্ত আজ ধরিত্রীও সিক্ত হচ্ছে , সূর্যের দাবদাহ থেকে অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজছে  ঈশার গলায় সুরের বৃষ্টি নেমেছে কোন অপরূপ সৃষ্টি .........বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি


       ভাতের থালা জলে ভরে গেছে বৃষ্টির জলে ভাত ভেসে যাচ্ছে বছরের মেয়েটার এখন খুব রাগ হচ্ছে আরও রাগ হচ্ছে গানটা শুনে তাদের বৃষ্টি চাইনা আজ রাতে আর ফুটপাথে শোয়া হবে না চারিদিকের নোংরা উড়ে এসেছে বৃষ্টির জলে ভিজে গেছে রাতের অস্থায়ী বাসস্থান যদিও বৃষ্টি ধরে এসেছে তবু আজকের মতো  খুঁজতে হবে নতুন ঠিকানা   হোটেলের দারোয়ান খেদিয়ে দিয়েছে ওদের ওরা অপরূপ  বৃষ্টির শোভা বোঝে না ওরা বোঝে বৃষ্টি মানেই আশ্রয়হীন এক রাত      

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন