সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

মৃগাঙ্ক মজুমদার




নিয়ম ভাঙার লড়াই - 
-----
রক্ত ঝরছিল টপ টপ টপ করে। সারা গা হাত পা কেটে গিয়েছে  কিন্তু ভিতরের জ্বালাটা অনেক অনেক বেশী। কিছুতেই কাটবে না সেটা হয়ত কোনোদিন ই না । বয়েস হয়ত কম সুন্দরীর কিন্তু বুদ্ধি তেজ অনেক অনেক বেশি। নিজের মত করে জগৎ গড়তে চেয়েছিল বাধা পেয়েছে শুরু থেকেই । যদিও ওদের পরিবারে মেয়েদের কথাই বেশি শোনা হয় পুরুষরা চট করে সামনে আসে না। কিন্তু নিয়মের বাইরের কাজ কেউই পছন্দ করে না। সীমানার বাইরে যেতেও কেউ ই পছন্দ করে নে কেউ ই । সুন্দরী মানতে চাই নি নিয়মের বেড়াজাল খেসারত দিতে হয়েছে তাকে বিশাল। তবু তার জেদ তাকে লড়াই এর পথেই নিয়ে গিয়েছে। লড়াই সে করেছে শেষ অবধি ।

নিজের একটা জগৎ নিজের মত করে গড়ে তুলবে ভেবেছিল সুন্দরী। ছেলেটা অনেক দিন ঘুরঘুর করছিল ওদের এলাকার চারিধারে। বার দুয়েক বাবার চোখে পড়েছে কিন্তু যতবার মা, মাসী বা কাকীমাদের চোখে পড়েছে প্রায় প্রাণ হাতে নিয়ে চলে গিয়েছে ছেলেটা। নিজেদের পরিবারের সম্মান রক্ষার ব্যাপারে এতটাই সংবেদনশীল আর রক্ষণশীল যে নিজেদের মেয়েকেই ছেড়ে কথা বলে নি । শাসানির অন্ত ছিল না । সুন্দরীর বয়স বাধা না মানার বয়েস আর ছেলেটাকে তার বেশ মনে ধরেছিল । গলার আওয়াজের একটা মাদকতা ছিল যা একবার শুনলেই ঘোর লেগে যেত। অমোঘ আকর্ষণের টান এড়াতে পারল না সে।

পালিয়ে গিয়েছিল সে রাহিল এর টানে। রাহিলের বোহেমিয়ান জীবন তাকে টেনেছিল আর চেয়েছিল সে নতুন করে একটা সংসার করতে। উদ্দামভাবে ভেসেছিল দুজনে। বন্য আদিম স্রোতে ভেসে গিয়েছিল তারা, দুজনের ভালোবাসার স্বরে কাঁপতে শুরু করেছিল এলাকা। সে শব্দ কোনোভাবে পৌঁছেছিল সুন্দরীর পরিবারের কানে।


যূথবদ্ধ আক্রমণের সামনে সুন্দরী আর রাহিল প্রাণপণ লড়েছিল । এ যেন এক অন্য ধর্মযুদ্ধ। তার নিজের পরিবার আজ তাকে আর তার প্রেমিককে মেরে দিতে চাইছে । তাদের কাছে তাদের পরিবারের সম্মান অনেক অনেক বেশি মেয়ের চাইতে।  সুন্দরী লড়তে চেয়েছিল, রাহিল তার মধ্যেই আগলে দাঁড়িয়ে মার খেতে খেতে ইশারা করেছিল, চলে যেতে আলাদা করে। অন্য কোথাও একা।


রাহিল কে মেরে ফেলেছিল ওরা, সুন্দরী রক্ত মুছতে মুছতে নিজের পেটের দিকে তাকাল। বেড়ে উঠছে রাহিল আর ওর প্রেমের চিহ্ন।
একদিন গড়ে তুলবেই সে নিজের জগৎ নিজের মত করে। হনার কিলিং এর জায়গাই রাখবে না সেখানে।


লড়াই এর তিনদিন বাদে, ফরেস্ট রেঞ্জারের দল রাহিলের ‘বডি’ খুঁজে পেল। এটা সিংহের কোনএকটা প্রাইডের মধ্যে পড়ে না। একা একা ঘুরে বেড়ায়। নিজেদের প্রাইড মানে যূথ গড়তে চায়। সিংহের যূথে একটার বেশি ছেলে চট করে অ্যালাউড নয়। 

সুন্দরী নতূন সম্ভাবনার কথা ভেবে থাবায় মাথা নামিয়ে বসল। সারা শরীর আর মাথা তখনও অপমান আর রাগে জ্বলছে  । মেয়েরাই কি মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু?  রাত বাড়ছে খাবারের খোজে বেরোতে হবে। একা মেয়েদের সমস্যা সর্বত্র। সুন্দরী তৈরী হল আরো লম্বা আর কঠিন লড়াইয়ের জন্য।  তিনদিনে কাটা শুকিয়ে এসেছে শরীরের কিন্তু মনের ভিতর এখবো দ্গদগে ঘা।

নিয়ম গুলো ভেঙে নতুন করে গড়তে হবে।

লড়াই শুরু...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন