সরেজমিনে
সকাল থেকেই দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে পার্বতী নিবাসে। বাড়ির কর্তার তো কোন হুঁশ নেই । সব দায় শেষ মুহূর্তে বাড়ির কর্ত্রীর উপর এসে পড়ে। আর তাতেই শুরু হয় এই কাণ্ড। যাকে নিয়ে হৈ চৈ সে ব্যক্তির সাড়া শব্দটিও পাওয়া যাচ্ছে না । তাতেই মাথা গরম হয়ে গেছে বাড়ির গিন্নির।
'গণশা...এই গণশা... বলি গেলি কোথায়? ডেকে ডেকে অপদার্থ গুলোর টিকি পাওয়া যায় না বাছা! এরা কি মা বাপের ডাকেও সাড়া দেবে না? বলি, আমরা তো মরি নি গজু, একটু মুখ খুলে উত্তর নিতে কতটা কষ্ট হয় শুনি? না কি কাল রাত থেকেই বারকোষের কাছে হত্তে দিয়ে পড়ে আছিস বাছা ...'
মায়ের এরকম রুদ্র মুর্তি দেখে সার সার দিয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে গেছে বাকী সন্তানেরাও! মা যেন গণশা কে হাতের কাছে না পেলেই এদের কেই প্রায় এক হাত নেবেন... ঠিক সেই সময় মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে গণশা এসে দাঁড়াতেই পিছে পিছে বদ্ধিমান চ্যালাটিও এসে উপস্থিত।
মুখের ভিতরের মাল মশলা গুলোকে কোন রকমে গলধকরণ করে গণশা উত্তর করল ঃ 'মা , মা গো তুমি ওমন ক্ষিপ্ত হয়োনা মা। আজ যে চতুর্থী । তুমি মামবাড়ি যাবার আগে দেখে আসি গিয়ে সেখানে কতটা পরিবর্তন হয়েছে রাস্তাঘাটের , দোকান পাটের, ব্যওসা পত্তর কেমন চলছে তবেই না তুমি সাঁ সাঁ করে পৌঁছাতে পারবে সেখানে। কে.এফ.সি তে শুনলাম আজকাল হেব্বি ছাড় দিচ্ছে। একটু ঝিমিয়ে পড়েছে অার্সেনাল, আমেনিয়া, লাজিজ এর বিরিয়ানি ব্যওসাটা। ঐ যে , ঐ ভাগাড় কেসটার জন্য কটা মানুষের কাজ কর্ম কমে গেল গো মা, এসব নিয়েই একটু ডিসকাস করছিলুম আমার সার্কিটের সাথে'।
মা এতক্ষণ গণশার বক্তৃতা শুনছিলেন মনযোগ সহকারে। বললেন ঃ 'গণশা শোন বাবা , তুই লাড্ডু , দরবেশ খাচ্ছিস খা বাবা, কিন্তু দেখে নিবি হলদীরামের এক্সপায়ারি ডেট আছে কি না। তোর যা লোভ বাছা, আর শোন তোর সার্কিট কে একটু নজরে নজরে রাকিস বাপু। কোনদিন না ভাগাড়ে চালান হয়ে যায়। ভাগড়ের মাংস তো এরা সেই কবে থেকেই খাচ্ছে, সে কি আমি জানি নে ! গেরুয়া, নীল, লাল রঙেদের নিজেদের ভাগ বাটোয়ারা আর ঐ রাজনীতি- ফিতির সব চাল আর কি। যাগ্গে বাবা, কে এফ সি ম্যাগ ডি তে বেশী যাস নে। শুধু নতুন কি কি আইটেম এসেছে আর অফার টফার কি আছে দেখে আসিস। গতবার তো সেই পঞ্চমী টু দ্বাদশী থাকতে হয়েছিল, এবার আবার ব্রিজ কেসের জন্য ক'দিন আটক রাখবে কে জানে। এই দ্যাখো ব্রিজের কতায় মনে এলো, ও বাবা গণশা এবার কি বেয়ালর দিকের থীমের মামাবাড়ি গুলোতে যেতে পারবো রে বাবা? একটু দেখে আসিস তো বাবা। আর যাই হোক ভাঙা ব্রিজের তলা দিয়ে যাস নে, কে যেন বলছিল বঙ্গোপসাগর হয়ে ডায়মণ্ড হাবরা হয়ে টোটো নিয়ে গেলেই হবে। ওটা বরং সহজ হবে বাবা। তাই করিস কেমন! বাবা ওদিকের সব নীল সাদা রঙের ব্রিজ গুলোর থেকে দূরে থাকিস সোনা। তোকে নিয়ে আমার মহা জ্বালা। একটু ভালোমন্দ খাবার দিল কি দিলোনা তুই সব বাজে সিমেন্ট, বালি, স্টোনচিপস সাপ্লায়ার গুলোর উপর কৃপার দৃষ্টি দিবি, তারপর ঐ ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ার গুলোর বাড়িতে লাইটিং, নতুন , জামা কাপড়, একটু খিচুড়ি, লাবড়া, নারকেল নাড়ু, চাটনী, লাড্ডু দেখে গলে জল হয়ে যাস। এবার থেকে একটু শক্ত হ বাবা। এদের ছল চাতুরির দিকে নজর রাখ। বাছা রে ঐ ব্রিজের তলায় চাপা পড়া সাধারণ দিন মজুর গুলো কিন্তু একটা তিনটাকা দামের লাড্ডু অনেক ভক্তি করে তোকে দেয় বাবা '।
এতক্ষণ সার্কিট মায়ের সব কথা মনযোগ সহকারে শুনছিল। শেষে ফুটনোট কেটে বলল ঃ 'মা গো বিষ্ণুমাতাও মনে হয় এবারে স্থান পাচ্চে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে ... এ কে নিয়ে মামারা সবাই বড়ই উদগ্রীব, তোমার আপ্যায়ণ যে কতটা হবে সে বিষয়ের চিন্তাটাই গণশা দা আর আমার বেশী হচ্ছিল মা, সে কতা গণশা দা মুখ ফুটে তোমারে কইতে পারছেল না তা আমি কয়ে দিলাম , নিজগুণে ক্ষমা করে দিও মা গো '...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন