মারমেড
১)
তার আসার কথা ছিল না
তবুও সেই কিশোরী এসেছিল বিকেলে
উড়ন্ত রুখুশুখু চুল আর চকচকে চোখ নিয়ে
মুঠোয় ছিল এক টুকরো কাগজে মোড়া হজমিগুলি
আর পিঠে বেঁধে রেখেছিল টানটান ইতিহাস।
তার নীলচে সবুজ লেজ আবিষ্কারের পরে
ওকে মারমেড নামে ডেকেছিলাম।
আঁশের ভূমিকা নিয়ে কোন কৌতূহল রাখি নি।
ওর জেগে ওঠা ডাঙা আর ডুবে যাওয়া জলে
কাগজের নৌকোগুলো ভাসছিল।
আমাদের স্বাভাবিক কথার ভেতরে
ও গুঁজে দিয়েছিল লেবু লজেন্স আর লুকোচুরি
বারান্দার পিলার সাক্ষী ছিল রূপান্তরের –
কিশোরী ও মারমেড, নারী ও কিশোরীর।
২)
এই মারমেড সিরেনকে চেনে না
জাহাজ দেখে নি জীবনেও
তার আছে অনন্তের নৌকো আর নাবিকের হাল।
গঙ্গার তীরে বেড়ে ওঠা কিশোরী
কানের রিং-এ ইউফ্রেটিস বুনেছে
আর অজানা আশঙ্কায় দুলে উঠছে নারী
অর্ধেক হলুদ পাখি, আধা নীল মাছের শরীরে
বাবুইয়ের বাসা এঁকেছিল গত জন্মে।
এ জন্মের মারমেড, একালের কিশোরী ও নারী
ত্রিকালের সম্ভাবনায় নিজেদের সাজিয়েছে।
৩)
মারমেড, মারমেড তুমি কলঙ্ক চেনো নি
কিশোরীর কুঁড়ি স্তন থেকে জন্ম নেওয়া ফুল তুমি
নারীর স্তনে দুধের ভান্ডার রেখেছ
মারমেড, মারমেড তোমার সাথে কথা নেই
তোমার কাছে যাব না আর –
কিশোরীর অভিমানের ঘর থেকে খিল খুলে
নিতে পার না তুমি, মারমেড?
নারীটি ভরন্ত বেশি
পড়ন্ত যৌবন খুলে রেখেছে ফ্রকের ফ্রিলে
বালার মকরমুখ থেকে জন্মেছিল যে
সে আর কেউ না, তুমিই মারমেড, মারমেড!
৪)
পাথরের ওপরে তুমি বসে আছ যেন কতকাল ধরে
এমনই স্থির এই ভঙ্গী যেন সাঁতার ছিল না কোনদিন
নিস্তব্ধ লেজ থেকে ঝরে পড়ছে জলের অবশেষ
অথচ একটু বাদেই অনন্তের ডাকে সাড়া দিয়ে সাঁতারে ডুব
দেবে
যে হাত দুটি এখন পড়ে আছে তোমার কোলের ওপরে
তাদেরই পাখনা হয়ে ঢেউ কেটে এগিয়ে যাওয়া দেখব
তখন তুমি মারমেড নও, মাছের প্রজাতি এক
এখন যা আছ, ভুলে যাবে
যেভাবে ভুলেছিলে মাছের জীবন।
৫)
সেই বালিকাটির কাছে যাবে না আর?
যাবে না সেই নারীর কাছে?
ডাঙার টান ভুলে যাওয়া যেত যদি
অস্তিত্বহীন জীবন থেকে মুছে যেত নারীর শরীর।
উভচর তোমারই গায়ে বাস করে কত ব্যাঙ, কত সমুদ্রের বালি
মাটির খোঁজ তবু লুকিয়ে রেখেছ দুই নীল চোখে
পাথরের ওপর এসে বসে ছুঁড়ে দাও দৃষ্টি তোমার
সমুদ্র ডিঙিয়ে, বালির ওপারে –
যেখানে মানুষের ঘরবসতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন