ইচ্ছে
আমিঃ
একটা জানলা, কাচে জমা হয়েছে কুয়াশা আর জলবিন্দু কিছু। বিকেল না সকাল রোদ দেখে বোঝা যাচ্ছে না তেমন। এপারে বসে আছি দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে। এমনিই। কোনো কাজ নেই, ব্যস্ততা নেই, নিত্যকার কাজকর্ম নেই, মানুষের মৃদু সাড়া আছে। আর উদাস বসে থাকা আছে। মস্ত বড় একটা ছায়াকে এগিয়ে আসতে দেখেও উঠব না। গায়ে কিছু জড়ালে ভাল লাগত, ভেবেও উঠব না চাদর আনতে। ধীরে ধীরে হাজার হাজার তারার মালায় জড়িয়ে যাবে পাহাড়। চিকমিক করবে ওরা আকাশ থেকে, জানলার কাচের ওপার থেকে। কেউ একজন শুধুই বসে বসে দেখতে থাকবে, দেখতেই থাকবে...#
ভোরঃ
ক্রমশ অন্ধকার ফিকে হয়ে এসে লালের ছটা লাগবে জানলায়। একটা জ্বলজ্বলে বল সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসে বলবে--এবার উঠে পড় সোনা মেয়ে। ভোর হল। তোমার চা তেষ্টা পায় না? তাকিয়ে দেখব জানলার জলবিন্দুগুলো ঝরে পড়ছে দ্রুত। ওদের কোথায় যেন যাওয়ার আছে। আমি বরং আরেকটু বসি...
#
কুয়াশাঃ
কেন বসে থাকতে চাও অযথা? তোমার কোনো কাজ নেই বুঝি? এই দ্যাখ! আমরা গা ঘামালেই আকাশের ঘাম ঝরে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়। আমরা বসে থাকলেও অন্য ভঙ্গিতে বসি। তখন জমাট বেঁধে যায় আমাদের ত্বক। সাদা কেন শুদ্ধতার বাহক জান? আমরা জমায়েত হই বলেই। তোমার এই বসে থাকা তো অনর্থক। সময় নষ্ট!
জানলার কাচে কান চেপে ধরে শুনে ফেলি এসব। আমার কি একবারও এই জানলার ধার ছেড়ে ওই পাহাড়ের রাস্তায় যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না? ওই যে চাঁদোয়ার মতো লেক পড়ে আছে, যার গায়ে আকাশ বারবার ঘুমে ঢলে পড়ছে...যেতে ইচ্ছে করছে না ওই লেকের ধারে? আর ওই যে হিমশৈল চূড়া, মনে হচ্ছে না কি ওখানে উঠে গোড়ালি ডুবিয়ে দাঁড়াই কিছুক্ষণ? যতক্ষণ না অসাড় হয়ে আসবে পা আর একপায়ে লাফাতে লাফাতে আমি গড়িয়ে পড়ব বরফের মসৃণ গা বেয়ে... ঠিক যেন স্লিপ বেয়ে নেমে আসছি, আর তারপর আবার চূড়ায় উঠে গড়ান দেব! ইচ্ছে করে না আমার?
#
পাহাড়ঃ
এই বসে থাকার মধ্যে একটা সুতো গুটোনোর শব্দ লুকিয়ে আছে। ঠিক যখনই আমি উঠে পড়ব, গুটনো সুতোর বাণ্ডিলটা আর কেউ খুঁজে পাবে না। চারিদিকে মানুষের শব্দ, তীব্র যানজট আর মরিয়া ব্যস্ততা। কাচের জানলাটা ঢাকা পড়ে যাবে ভারি পর্দায়। যার ওপারে ধুলোর মলাটে ঢাকা পড়ে থাকবে সেই পাহাড়। তার চেয়ে এই বসে থাকা অনেক আরামের।
'বসে থাকা'-টা যোগ সূত্র প্রতিটা কবিতার মধ্যে। বা, একজনকে আর একজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছে।
উত্তরমুছুন