পট্টি
ক্ষতের ওপর কোনোমতে ধূলো, মাটি, ঝরা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। চলতি কথায় যাকে পট্টি বলি আমরা। কেউ বাইরে থেকে যেন কিচ্ছু বুঝতে না পারে... এভাবেই সমস্ত বিরোধিতা, ক্ষোভ চাপা দিয়ে রাখাটাই আমাদের অভ্যেস।
যাতে রাগ ছড়িয়ে না পড়ে তাই বসত অঞ্চল ভেঙে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন পট্টিতে। যাতে রোগের কথা ছড়িয়ে না পড়ে ক্ষতস্থল ঢেকে রাখা হয়েছে পট্টিতে। তবু সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে লিঙ্গ রাজনীতি, ধর্মীয় বিভেদ, বর্ণ বৈষম্য ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ। তবু শরীরের অনেকটা গভীরে মন বলে একটা বিষয় থাকে। থাকে বলেই ফুল ফোটে... ঋতু বদলায়... স্বাদ-গন্ধের সাথে ভালোলাগা জড়িয়ে যায়।
রোগের সাথে নাতিদীর্ঘ সহবাসে - আমরা যত অসুখেতে সুখ খুঁজে নিতে শিখে নিই, ক্রমশ ততটাই শরীরের গভীরে শিকড় ছড়িয়ে ফেলে সমস্ত সকল অসুখগুলো। মনে বিষ ঢুকে যায়। আমরা ক্ষতের ওপর ধূলো, মাটি, পাতার পুরু আস্তরণ পেতে রাখি যাতে কেউ বাইরে থেকে কিচ্ছু বুঝতে না পারে। অধিকারবোধ এভাবেই আয়ত্ত ভুলে বৃত্ত পেরোয়, আগ্রাসী হয়ে ওঠে আরো আরো আরোর চাহিদায়। আমার মনে হয় যখন একজনের অধিকারবোধ আয়ত্ত হারালে আরেকজন অধিকার খোয়াতে বাধ্য।
অধিকার খোয়ালে ঠিক মাথা নাড়া দিয়ে ওঠে প্রত্যয়। আর ক্ষতের ওপর কোনোমতে ধূলো, মাটি, ঝরা পাতা দিয়ে ঢেকে দিই আমরা। খাদ্যের অধিকারে ভিক্ষে, স্বাস্থ্যের অধিকারে সুরা, শিক্ষার অধিকারে মনোরঞ্জন, বিপ্লবের অধিকারে অনির্দিষ্টকালের বিচারাধীনতা, স্বাধীনতার অধিকারে মৃত্যু... কেউ বাইরে থেকে যেন কিচ্ছু বুঝতে না পারে... এভাবেই সমস্ত বিরোধিতা, ক্ষোভ চাপা দিয়ে রাখাটাই আমাদের অভ্যেস। যাতে রোগের কথা ছড়িয়ে না পড়ে ক্ষত ঢেকে রাখা হয় পট্টিতে। যাতে রাগ ছড়িয়ে না পড়ে তাই বসত অঞ্চল ভেঙে ফেলা হয় বিভিন্ন পট্টিতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন