কোল্হাপুর ডায়েরী ৭
ঠিক হোলো রবিবার সকালে সকলে বোসদার বাড়িতে মিট করবে। সেখান থেকে একসাথে প্রত্যেকে নিজের নিজের গাড়ীতে রওনা হবে পান্হালার উদ্দেশে। ওখানে গিয়েই হবে ব্রেকফাষ্ট আর লাঞ্চ।
মিমি স্ন্যাক্স কিছু প্যাক করে নিয়েছিল। সাড়ে আটটা নাগাদ সপরিবারে পৌঁছে গেল বোসদার ওখানে। মিমিদের সাথে সাথেই ভটচাযদা আর বৌদি এসে পৌঁছলেন। ভটচাযদা একটি নামী টেক্সটাইল কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার। খুব সুরসিক নিপাট একজন ভদ্রলোক। কম কথা বললেও সেন্স অব হিউমার প্রবল। আর ভটচাযবৌদিতো ভীষণ আমুদে মানুষ। একাই হৈ চৈ করে মাতিয়ে রাখেন সারাক্ষণ। জীবনের কঠিন যণ্ত্রণাকেও কিভাবে নিজের প্রাণশক্তি দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় এঁকে না দেখলে মিমি কোনদিন বুঝতেই পারতোনা।
জীবনের চলার পথে প্রতিনিয়ত জানবার শেখবার যে অপরিমেয় রত্নভান্ডার ছড়িয়ে রয়েছে জীবনবোধের পাতায় পাতায় মিমি কেবল তার সন্ধান করে গেছে
পরম শিক্ষার্থীর ঔৎসুক্যে। এই তার সঞ্চয়। মনের মণিকোঠায় এদের সযত্নে সাজিয়ে রাখে মিমি।নিজের সাথে একলা হবার অবকাশে নেড়েচেড়ে দ্যাখে তার অভিজ্ঞতা ঝুলি ভরে ওঠা সেইসব দুর্লভ রত্নরাজি।
দেখতে দেখতে বিশ্বাসদা মিত্রদা বৌদিদের নিয়ে এসে পড়লেন কলকল করতে করতে। নেক্সট জেনারেশন বলতে মিমির দুই ছেলেমেয়ে বোসবদির ছেলে ছেলের বৌ। মেয়ে গেলনা ওর কিছু জরুরী কাজ পড়ে গেছিলো তাই।
সকলে মিলে বেরোতে বেরোতে সাড়ে ন'টা বেজে গেল। বোসদার ছেলে পুপু প্রস্তাব দিলো ওদের গাড়িতে মিমির দুউ ছেলেমেয়ে যাবে। পরিবর্তে বোসদা বৌদি যাবে মিমিদের গাড়িতে।।
কোল্হাপুর মিউনিসিপ্যালিটির পাশ দিয়ে খানিকটা পথ গেলে ডানদিকে একটা রাস্তা বেরিয়ে গেছে পান্হালার দিকে। শহর ছেড়ে বেরিয়ে খানিকটা যাবার পরেই শুরু হলো পাহাড়ী পথ পরিক্রমা।
দেখতে দেখতে পথের দু'ধারের বাড়িঘর ক্রমশ অপসৃয়মান সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ঘন সবুজ অরণ্যানী।পূরো পথটাই খাড়া উপরে উঠে যাচ্ছে পান্হালার দিকে। বেশ খানিকটা যাবার পরে একটা রাস্তা ডানদিকে
চলে গেছে জ্যোতিবা পাহাড়ের দিকে। আর সোজা রাস্তাটা একেবারে পান্হালা। পথে বেশ কিছু ক্ষীণতোয়া জলধারা নজরে পড়লো। সলজ্জ কিশোরীর মতো গাছগাছালির ফাঁকে নিজেকে আড়াল করে ভীরু পদক্ষেপে নীচে নেমে আসছে।
এই কুড়ি বাইশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে লাগলো
প্রায় একঘন্টা।সবার আগে চলেছে মিত্রদার গাড়ি। আর মিমিদের গাড়ি সবার শেষে। আর সকলের কাছে এই পথটা পরিচিত হলেও সূর্যর কাছে নতূন তাই তার গাড়ির গতিও ধীর।গাড়ির কাচের ফাঁক দিয়ে মিমি আস্বাদন করতে করতে চলেছে পাহাড়ি পথের অনুপম প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য। অরণ্যানীর নিবিড়তা ক্রমশ কমে এলে পাহাড়ের
গায়ে প্রতিভাত হতে লাগলো ছোট ছোট বসতি। এইভাবে
পথের বিলাস পেরিয়ে একসময় পৌঁছে গেল পান্হালার দ্বারপ্রান্তে। এখানে ফোর্টে প্রবেশ করার আগে টিকিট কাটতে হয়। ড্রাইভারের টিকিট মকুব। তাই মিমিদের কাটতে হলো তিনটে টিকিট।
প্রবেশপথের বহিরঙ্গটা গম্বূজাকৃতির অর্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টিত। সামনের অংশে মারাঠা সম্রাট শিবাজীর একটি মুক্ত কৃপাণ হস্তে অশ্বারূঢ় প্রস্তরমূর্তি।
সহ্যাদ্রি পর্বতগাত্রে নির্মিত এই ফোর্টটি সমতল থেকে চারশো মিটার উঁচু। অসংখ্য সুরঙ্গ এই দুর্গের নীচে নির্মিত। এরমধ্যে একটি সুড়ঙ্গ এক মিটারের ও বেশী লম্বা।দুর্গের প্রাকার ত্রিভুজাকৃতির। এর ব্যাপ্তি সাত মিটারের ও কিছু বেশী।দুর্গের প্রাচীরগূলি একদম ঋজু খাড়া পাহাড়ের
গায়ে দন্ডায়মান।
অধিকাংশ স্থাপত্য বিজাপুরী স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত।
কিছু কিছু স্থাপত্যে ময়ূরের মোটিফ বাহমনী সাম্রাজ্যের স্থাপত্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
কিছু কিছু স্তম্ভের গায়ে পদ্মের কারুকাজ রাজা দ্বিতীয় ভোজের সময় স্মারক। দুর্গের কিছু কিছু স্তম্ভ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর্চের আদলে নির্মিত দরওয়াজা দিয়ে একে একে প্রবেশ করলো মিমিদের সবক'টি গাড়ি। পান্হালার ভেতরে অনেক হোটেল রেস্তোঁরা ও খাবারের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এতক্ষণ টানা জার্নি করে সকলের খিদেও পেয়েছে প্রচন্ড।ফোর্টের সামনেই একটি হোটেলে সকলের গাড়ি দাঁড়ালো এক এক করে। খানিকটা গার্ডেন রেস্তোরাঁ মতো। তবে থাকবার সুবন্দোবস্ত ও আছে। ভটচাজ বৌদি বিশ্বাস বৌদি মিত্র বৌদি সকলেই এত মিশুকে যে কিছুক্ষণের মধ্যে মিমির জড়তা একেবারেই কেটে গেল। কোল্হাপুরী মিসাল খেতে খেতে পান্হালা সম্পর্কে ভটচাজবৌদির কাছে মিমি শুনছিলো অজানা নতুন আরো অনেক গল্পকথা।
ঠিক হোলো রবিবার সকালে সকলে বোসদার বাড়িতে মিট করবে। সেখান থেকে একসাথে প্রত্যেকে নিজের নিজের গাড়ীতে রওনা হবে পান্হালার উদ্দেশে। ওখানে গিয়েই হবে ব্রেকফাষ্ট আর লাঞ্চ।
মিমি স্ন্যাক্স কিছু প্যাক করে নিয়েছিল। সাড়ে আটটা নাগাদ সপরিবারে পৌঁছে গেল বোসদার ওখানে। মিমিদের সাথে সাথেই ভটচাযদা আর বৌদি এসে পৌঁছলেন। ভটচাযদা একটি নামী টেক্সটাইল কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার। খুব সুরসিক নিপাট একজন ভদ্রলোক। কম কথা বললেও সেন্স অব হিউমার প্রবল। আর ভটচাযবৌদিতো ভীষণ আমুদে মানুষ। একাই হৈ চৈ করে মাতিয়ে রাখেন সারাক্ষণ। জীবনের কঠিন যণ্ত্রণাকেও কিভাবে নিজের প্রাণশক্তি দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় এঁকে না দেখলে মিমি কোনদিন বুঝতেই পারতোনা।
জীবনের চলার পথে প্রতিনিয়ত জানবার শেখবার যে অপরিমেয় রত্নভান্ডার ছড়িয়ে রয়েছে জীবনবোধের পাতায় পাতায় মিমি কেবল তার সন্ধান করে গেছে
পরম শিক্ষার্থীর ঔৎসুক্যে। এই তার সঞ্চয়। মনের মণিকোঠায় এদের সযত্নে সাজিয়ে রাখে মিমি।নিজের সাথে একলা হবার অবকাশে নেড়েচেড়ে দ্যাখে তার অভিজ্ঞতা ঝুলি ভরে ওঠা সেইসব দুর্লভ রত্নরাজি।
দেখতে দেখতে বিশ্বাসদা মিত্রদা বৌদিদের নিয়ে এসে পড়লেন কলকল করতে করতে। নেক্সট জেনারেশন বলতে মিমির দুই ছেলেমেয়ে বোসবদির ছেলে ছেলের বৌ। মেয়ে গেলনা ওর কিছু জরুরী কাজ পড়ে গেছিলো তাই।
সকলে মিলে বেরোতে বেরোতে সাড়ে ন'টা বেজে গেল। বোসদার ছেলে পুপু প্রস্তাব দিলো ওদের গাড়িতে মিমির দুউ ছেলেমেয়ে যাবে। পরিবর্তে বোসদা বৌদি যাবে মিমিদের গাড়িতে।।
কোল্হাপুর মিউনিসিপ্যালিটির পাশ দিয়ে খানিকটা পথ গেলে ডানদিকে একটা রাস্তা বেরিয়ে গেছে পান্হালার দিকে। শহর ছেড়ে বেরিয়ে খানিকটা যাবার পরেই শুরু হলো পাহাড়ী পথ পরিক্রমা।
দেখতে দেখতে পথের দু'ধারের বাড়িঘর ক্রমশ অপসৃয়মান সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ঘন সবুজ অরণ্যানী।পূরো পথটাই খাড়া উপরে উঠে যাচ্ছে পান্হালার দিকে। বেশ খানিকটা যাবার পরে একটা রাস্তা ডানদিকে
চলে গেছে জ্যোতিবা পাহাড়ের দিকে। আর সোজা রাস্তাটা একেবারে পান্হালা। পথে বেশ কিছু ক্ষীণতোয়া জলধারা নজরে পড়লো। সলজ্জ কিশোরীর মতো গাছগাছালির ফাঁকে নিজেকে আড়াল করে ভীরু পদক্ষেপে নীচে নেমে আসছে।
এই কুড়ি বাইশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে লাগলো
প্রায় একঘন্টা।সবার আগে চলেছে মিত্রদার গাড়ি। আর মিমিদের গাড়ি সবার শেষে। আর সকলের কাছে এই পথটা পরিচিত হলেও সূর্যর কাছে নতূন তাই তার গাড়ির গতিও ধীর।গাড়ির কাচের ফাঁক দিয়ে মিমি আস্বাদন করতে করতে চলেছে পাহাড়ি পথের অনুপম প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য। অরণ্যানীর নিবিড়তা ক্রমশ কমে এলে পাহাড়ের
গায়ে প্রতিভাত হতে লাগলো ছোট ছোট বসতি। এইভাবে
পথের বিলাস পেরিয়ে একসময় পৌঁছে গেল পান্হালার দ্বারপ্রান্তে। এখানে ফোর্টে প্রবেশ করার আগে টিকিট কাটতে হয়। ড্রাইভারের টিকিট মকুব। তাই মিমিদের কাটতে হলো তিনটে টিকিট।
প্রবেশপথের বহিরঙ্গটা গম্বূজাকৃতির অর্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টিত। সামনের অংশে মারাঠা সম্রাট শিবাজীর একটি মুক্ত কৃপাণ হস্তে অশ্বারূঢ় প্রস্তরমূর্তি।
সহ্যাদ্রি পর্বতগাত্রে নির্মিত এই ফোর্টটি সমতল থেকে চারশো মিটার উঁচু। অসংখ্য সুরঙ্গ এই দুর্গের নীচে নির্মিত। এরমধ্যে একটি সুড়ঙ্গ এক মিটারের ও বেশী লম্বা।দুর্গের প্রাকার ত্রিভুজাকৃতির। এর ব্যাপ্তি সাত মিটারের ও কিছু বেশী।দুর্গের প্রাচীরগূলি একদম ঋজু খাড়া পাহাড়ের
গায়ে দন্ডায়মান।
অধিকাংশ স্থাপত্য বিজাপুরী স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত।
কিছু কিছু স্থাপত্যে ময়ূরের মোটিফ বাহমনী সাম্রাজ্যের স্থাপত্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
কিছু কিছু স্তম্ভের গায়ে পদ্মের কারুকাজ রাজা দ্বিতীয় ভোজের সময় স্মারক। দুর্গের কিছু কিছু স্তম্ভ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর্চের আদলে নির্মিত দরওয়াজা দিয়ে একে একে প্রবেশ করলো মিমিদের সবক'টি গাড়ি। পান্হালার ভেতরে অনেক হোটেল রেস্তোঁরা ও খাবারের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এতক্ষণ টানা জার্নি করে সকলের খিদেও পেয়েছে প্রচন্ড।ফোর্টের সামনেই একটি হোটেলে সকলের গাড়ি দাঁড়ালো এক এক করে। খানিকটা গার্ডেন রেস্তোরাঁ মতো। তবে থাকবার সুবন্দোবস্ত ও আছে। ভটচাজ বৌদি বিশ্বাস বৌদি মিত্র বৌদি সকলেই এত মিশুকে যে কিছুক্ষণের মধ্যে মিমির জড়তা একেবারেই কেটে গেল। কোল্হাপুরী মিসাল খেতে খেতে পান্হালা সম্পর্কে ভটচাজবৌদির কাছে মিমি শুনছিলো অজানা নতুন আরো অনেক গল্পকথা।
ক্রমশঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন