প্রতিদিন বই পড়া নিয়ে কিছু কথা।
প্রথমেই আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবে যে আজকের এই গতিময় জীবনে মানুষের সময় কোথায় বই পড়ার। কিন্তু এ ধারণাটা ঠিক নয়। আমরা চাইলে দিনের যে কোন সময় একটু বার করে নিতে পারি বই পড়ার জন্য। বর্তমান আধুনিক যুগে তো e-book এরও প্রচলন হয়েছে।
ব্যায়াম যেমন আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনকে সুস্থ ও আনন্দিত রাখতে পারি। একটা ভাল বই মানুষের মনের চোখ যেমন খুলে দেয় তেমনি জ্ঞান ও বুদ্ধিকে প্রসারিত ও বিকশিত করে মনের ভেতরে আলো জ্বালাতে সাহায্য করে। বারট্রাণ্ড রাসেল বলেছেন, " সংসারে জ্বালা যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।"
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শন কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস না মানলে ভূগোল -- এরকম আরো কত কি ? এখন প্রশ্ন এত ভুবন সৃষ্টি করব কি করে? সেটা করা যায় বই পড়ে বা ভ্রমণ করে। সেক্ষেত্রে বইপড়াটা সকলের নাগালের মধ্যে।
জীবনে চূড়ান্ত সফল অনেক মানুষই বইপড়ায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। বইপড়ার মধ্য দিয়ে তাঁরা রোজ নিজেকে সমৃদ্ধ করেন।
এখন বই পড়ব কেন ? সে প্রসঙ্গে যে কথাগুলো বলা যায় তা হল বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধি হয়। বইপড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। যত বেশি বই পড়া যাবে, তত জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। বই-ই পারে একজন মানুষকে যথার্থ জ্ঞানী বানাতে, আর জ্ঞান সবসময় একজন মানুষকে সমৃদ্ধ করে।
বর্তমানে depression একটা সুপরিচিত শব্দ। Depression আসে জীবনের কোন বিশেষ পরিস্থিতি মেনে নিতে না পারার জন্য। দেখা গেছে বই পড়লে সেই বই তার নিজস্ব পরিস্থিতি, আবহাওয়া পাঠকের মনকে সম্পূর্ণ অধিকার করে। ফলে কিছু সময়ের জন্য depression থেকে বেরিয়ে আসা যায়।বই পড়ায় মানসিক উদ্দীপনা তৈরি করে। একটা গবেষণায় দেখা গেছে বইপড়ার অভ্যাস মানুষকে Dementia এবং Alzheimer's নামে দুটি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বই পড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় যা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীর সুস্থ রাখতে যেমন ব্যায়াম করি তেমনি মস্তিষ্ককে সবল ও কর্মচঞ্চল রাখতে বইপড়া বিশেষ জরুরী।
এছাড়া বইপড়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ২০০৯ সালে ইউনাইটেড কিংডম এর সাসেক্স ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকরা হার্টরেট ও মাসল্ টেনসন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখেন যে কিছু কিছু কাজ আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাতে দেখা গেছে মাত্র ছয় মিনিটের জন্য বই পড়লে স্ট্রেস লেভেল ৬৮% কমে যায়, যা হাঁটা (৪২%}, কফি পান (৫৪%} বা গান শোনা (৬১%} থেকে অনেকটা বেশি কার্যকর। বইপড়ার মধ্যে পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার ফলে আমরা এক মুহূর্তের মধ্যে কোনো এক অজানা জগতে পৌঁছতে পারি যা প্রতিদিনকার বাস্তবতা ও নানা দুঃখ কষ্ট থেকে একটু হলেও রেহাই দেয়, ফলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।
বই পড়লে কল্পনাশক্তির বৃদ্ধি হয়। গল্প বা উপন্যাস যাই হোক তার বর্ণনা আমাদের কল্পনাকে দূর বিস্তৃতি দেয়। কোন জায়গার বর্ণনা পড়ে কল্পনায় আমরা সেইরকম স্থানে চলে যাই। কোন চরিত্র তার বইয়ের বর্ণনার সঙ্গে নিজের কোন চরিত্র মিলে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। এইভাবে বই আমাদের কল্পলোক ভ্রমণ করায়। যত বেশি বই পড়া যাবে ততবেশি কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
স্মরণশক্তিরও বৃদ্ধি ঘটে। যখন কোন বই পড়ি তখন বইয়ের অগণিত তথ্যগুলি মনে রাখতে হয়। মস্তিষ্কের অনেক exercise হয় ফলে memory power বৃদ্ধি পায়। এছাড়া রোজ নিয়ম করে বই পড়লে একাগ্ৰতা শক্তি বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে আত্মসম্মানবোধ তৈরি হয়। এই আত্মসম্মানবোধ আসে তখনই যখন মানুষ ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতি মানবিক গুণগুলির মূল্য বুঝতে শেখে। বই পড়তে পড়তে মানুষের মনে এই বোধ জন্মায়। ফলে মানুষ অন্যকেও সম্মান জানাতে শেখে।
Virginia Woolf এর একটা সুন্দর উক্তি দিয়ে লেখা শেষ করি -- "Books are the mirrors of the soul."
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন