অসমাপ্ত উপপাদ্য এবং মধুরা
মানস
চক্রবর্ত্তী
পোঁদ ঘষে সে যায় । ভিক্ষে মাঙতে । হাগতে মুত্তে । এমনকি চুল্লুর ঠেকেও ।
মাথাময় লালচে শুখা চুল । একটা দুটো জটা । আর অনর্গল ' হরে কৃষ্ণ ' । কেবল সুর পাল্টায় পকেটে হাত ঢোকাতে দেখলে , হরে হরি হয় , বলে , ' হরি কৃষ্ণ হরি কৃষ্ণ , মঙ্গল হোক বাবা/ মা ' । দুটো হাতে ভর কোরে কেমন অনায়াসে দুলতে দুলতে তার এই যাওয়া , এমনকি একটা বগি থেকে নেমে আরেকটায় উঠে পড়া , অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ।
ক্ষিপ্র শব্দের মধ্যে অচানক এক গতির ঈশারা আছে , তা এক নির্দিষ্ট অভিমুখের ইঙ্গিতও যেন দিয়েই যায় । অবচেতনে । যেমন মধুরার অবচতনে তার চলন্ত ট্রেন থেকে নেবে যাওয়াকে আত্মহত্যার দিকে যাওয়া বলেই মনে হয় । সে পোঁদঘষা ভিখিরির এই জার্নিটায় উদ্বিগ্ন হতে হতে ভবিতব্য নিয়ে সংশয়ে পড়ে । আবার এই দৃশ্যমান ঘটনাকে তার মৃত্যুর দিকে গভীর অনুশীলন বলেও মজা হয় , একটা থ্রীলের নকশা তাকে নির্নিমেষ মনস্তাপের দিকে গড়িয়ে দেয় । ক্লাস পর্যন্ত সে অইখানে মন রাখে ।
মধুরা রোজই তাকে পয়সা দেয় । রোজ মানে সোম টু শনি । যেদিন আসেনা সেদিনের পয়সা পরেরদিন একসঙ্গে । কলেজ থেকে ফেরার সময় এখানে ওখানে ঘোরে ... আজ নন্দন তো কাল পাপিয়ার বাড়ি । বাড়ি না নিজেকে সংশোধন করে ...বাড়ি আর ফ্ল্যাট কী এক ! বাড়ি মানে উঠোন , একটা সিঁড়ি , সিঁড়ির মাথায় চিলেকোটা , চিলেকোটার দরজা পেরলে আহা ... আকাশের দিকে চেয়ে থাকা একটা ছাদ !
ফ্ল্যাটের মাপ বড়োসড়ো । আর সব সময় গান বাজে সেখানে । পাপিয়া আর ওর সেভেনে পড়া ছেলে । দুজনের জন্যে বেশ বড়ই । এই ফ্ল্যাটে এলেই মধুরার বিষণ্ণতা পেয়ে বসে , বারান্দার দিক থেকে পিংপংবলের মতো ড্রপ খেতে খেতে বিষণ্ণ বিকেল ঢুকে আসে পোঁদে পোঁদে আসে পাপিয়ার ছেলেটি । ওর চোখে বিকেল ছড়িয়ে থাকে , ক্যাচ আউটের সমস্ত আফশোষ ,অথচ ওর সকালটা ভালোই ছিলো ।
খুব তাড়াতাড়ি রাত এসে যায় । আর ছেলেটির পড়ার টেবিলে নানান বই লুকোচুরি খ্যালে । ও সেসব পাশ কাটিয়ে ক্রমশ মাথা গুঁজতে থাকে দুটি সমান্তরাল সরলরেখার ছেদক বিপ্রতীপ কোণের দিকে এবং আরও নানান জ্যামিতিক সমস্যা যা আসলে সত্য নয় তা কিকরে স্বতসিদ্ধ হতে পারে তেমন ভাবনায় ও বিষণ্ণতাকে প্রয়োগ করে । মধুরা ওকে ছুঁলে ও লুকিয়ে ফ্যালে সন্তাপ আর খাটের ব্যাটম বরাবর আঙুল তুলে ঘরের মধ্যে ঘর এর ধাঁধার কথা বলে । ও হাসে এবং সেই হাসির শব্দে পাশের ঘর থেকে পাপিয়া চেঁচিয়ে ওঠে আর বলে তোমায় বারণ করেছি না কাঁদতে ।
এ ঘর থেকে নিঃশব্দ তখন পোষা কুকুরের মত গিয়ে পাপিয়ার পায়ে গড়াগড়ি খায় ।
সে সময় খাটে ক্যাঁচ কোঁচ শব্দে পাপিয়ার সন্দেহ হয় এই বুঝি মধুরা ছেলেটাকে গোপনে হাসাচ্ছে । তার সন্দেহ আজকাল নিজেকেও ছাড়ে না । সবসময়ই সন্দেহ তাকে তাতিয়ে রাখে । ঐ পর্যন্তই , নিরসনের কোনও ইচ্ছা জাগে না বরং ধন্দ নিয়ে ঝাপসা নিয়ে একটা খেলা সে খেলতেই থাকে । এ ভাবে পাপিয়ার সন্দেহের তালিকায় মধুরা যুক্ত হয়ে যায় !
মধুরাও কি তবে তার অগোচরে আসতো এই ঘরে ! এখানে কি সেও পৃথার মতো কাপড় চোপড় খুলে মজা কোরতো জীমূতের সঙ্গে ! জীমূত যেদিন ধরা পড়লো তারপর থেকে আর আসতোনা মধুরা । এক আর এক এ দুই এর দিকে যেতে যেতে সে ছেলের দিকে যায় আর দ্যাখে বৃত্ত এঁকে ছেলে পরিচয় করাচ্ছে কেন্দ্র সম্পর্কে মধুরাকে । মধুরা মনযোগ দিয়ে এককেন্দ্রীয় বৃত্তের প্রতিটি স্পর্শক কি করে সমান্তরাল হয় তা দেখছে ।পাপিয়া ধীরে ধীরে মধুরাকে ছুঁয়ে আসলে অজানা উপপাদ্যের পাতায় পৌঁছুতে চায় । সে গভীর মমতা নিয়ে জিগ্যেস করে , ' তোর সেই অন্ধ ভিখিরিটার খবর কি রে ? '
মধুরা মুখ না ঘুরিয়েই বলে , সে অন্ধ নয় খোঁড়া ... মানে খোঁড়াও নয় পেছন ঘষে চলে ... হাত দুটো বলশালী ... কোমরের নিচে থেকে
হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে , পাপিয়া থামিয়ে দেয় মধুরাকে আর বলে চল্ ও ঘরে যাই । এভাবে সে উপপাদ্য থেকে নিজেকে এবং মধুরাকে মুক্ত করতে চাইলো । কিন্তু পোঁদ ঘষটে চলা ভিখিরিকে নিয়ে এলো পাশের ঘরে । পাপিয়া কৌতুহলী কিন্তু মধুরাও কি ! কিকোরে হাগে কিকোরে মোতে এসব ভাবতে ভাবতেই সে কি বিবাহিত পর্যন্ত পৌঁছে এতক্ষণের আহারে আদীমতার রাস্তা পেলো । পাপিয়া খিল্লীতে ঠেলা দিলো মধুরাকে । কিন্তু মধুরা ততক্ষণে হরিকৃষ্ণকে আর ভিখিরি থেকে বের করে এনে পাপিয়াকে আক্রমণের লক্ষ্য করে তুলতে বোল্ল , ' জিমূত যদি ওরোম হোত ! ' পাপিয়া সহজে হরিকৃষ্ণকে মানুষ ভাবতে পারেনি সে ভিখিরি ... তাই জিমূতের প্রসঙ্গ আসতে পাপিয়া হতভম্ব । এখানেই খাট নড়ে উঠলো , পাপিয়া বিড়বিড় করে বোল্ল হোলে বোধয় ভালো হতো , পৃথার সঙ্গে ধরা পোড়তে হোত না । আরও কতজনকে এই খাটে এনে শুইয়েছে তার ঠিক নেই , সে সব তো হোত না ।
এসব কথা বেশী দূর যায় না । মধুরাও রাস্তা কেটে দিল ।
চলি আজ রে ।
খেয়ে যা ।
না সোমবার আসবো ... দক্ষিণাপনে যাব ... দুজনে ।
সে রাতে মধুরা ঘুমের মধ্যেই চরম সুখ পেয়ে উঠে বসে ধরমর কোরে ... হাঁপাতে থাকে কিন্তু সুখের সে চরম দৃশ্য মুছতে পারেনা , মুছতে চাইছিলনা হয়ত ! দুটো বলশালী হাতে দুলছে একটা বাবু হওয়া শরীর আর মধুরার শরীরের সঙ্গে মুহুর্মুহু মিলিত হচ্ছে ... ওফ হরিকৃষ্ণ ।সে অবাক হয়ে দ্যাখে বাঁ হাতের মধ্যমা হ্যাঁ মধ্যমাই ভূমি থেকে ক্রমশ শীর্ষবিন্দুর দিকে ধাবিত হচ্ছে আর শিহরণে ভেঙে পড়ছে তাবৎ ভূগোল । আশ্চর্য জনক ভাবে এককেন্দ্রীয় বৃত্তের যাবতীয় আকাঙ্ক্ষা একটা আঙুলের ক্ষিপ্রতার জন্যে ব্যাকুল । মোবাইল খুলে দেখলো আসলে অ্যালার্ম বাজার আর দেরি নেই । সুতরাং চলো পরবর্তী দৃশ্যে ।
হরিকৃষ্ণ ট্যাক্সি থেকে নেবে পোঁদ ঘষটে ঘষটে ঢুকে পড়বে ৩/১ ঝিল রোডে মধুরার পায়ে পায়ে পোষা কু... দর্শক যা খুশি ভাবতেই পারে । তারপর মধুরা খাতির করবে ... ওর সঙ্গে সমতল পেতে মেঝেয় কার্পেট বিছোবে ... চান করতে বলবে আর হরিকৃষ্ণের পৈতৃক সম্পত্তির রগে ওঠার জোগাড় । সে যথেষ্ট লজ্জা পাবে অন্তত ভিক্ষে করার থেকে ঢের বেশি সে লজ্জা ।
তার সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করবে বলে মধুরা ওর সামনেই শাড়ী উল্টো দিকে পাক দিতে দিতে খুলে ফেলবে ... শায়া বুকে তুলে ব্লাউজ ... হরিকৃষ্ণ এবার কেঁদে ফেলবে কিন্তু মধুরা প্রকৃতির ভরসায় যত্ন করে কোরে তার কান্না ধুয়ে দিতে চাইবে ।
রাতের স্বপ্নের দিকে মধুরা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । আমাকে চিরকালের হরিকৃষ্ণ করে তুললো , দুহাত মাটিতে ... বাবু হয়ে দুলছি ... মধুরা ঘুমের দিকে ... আমি তার স্বপ্নের দিকে ... অথবা পাপিয়ার ছেলের পড়ে যাওয়া জ্যামিতি বক্সের ভেতর কিম্বা একেবারেই জীমূতের কাছে ধরা পড়ে যাই পাপিয়া তখন আমার বুকের ওপর ...
ছবি : গুগুল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন