অনিন্দ্য রায়
এত চেনা সবকিছু, যেন বহুদিনের অভ্যেস
কাগজ, নরমপৃষ্ঠা, বিশশতকের কোনো প্রেস
ছেপেছিল, সেই ছোট পাইকা অক্ষর, আজও হাতে
কালি লাগে, উত্তেজনা খাঁড়া হয়, আদরপ্রপাতে
স্নান যেন, বহুদিন, বহুদিন পর এসেছে সারস
এবং কিনারে নীচু ঘাসগুলি, ফার্নগুলি, মস
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই, স্পোর ফেটে ছড়ায় অনন্তফোঁটা
পিছু ধাই, যতদূর সৌরসেচে ফুটেছে বারোটা
চুম্বনের পুষ্প আর তাদের কেশরদন্ডে সুখ
বলে ঝোলে কিছু, হাত লাগলে যতটা পারুক
ঝরে যাক, সেই ছোট পাইকা অক্ষর, যেন বীজ
অভ্যেস ছাড়িয়ে আজ জেগে উঠে খুলেছে কামিজ
এবং বেরিয়ে এলেন অগ্নি, তাঁর কোনো উপাদান নেই, তবু যা কিছু কঠিন বস্তু
সকলকে দ্রবণে বানান, যা কিছু ক্ষুধার বান্ধবী সকলকে জ্বালানি বানান, তাঁর দন্ত নাই,
দংশন রয়েছে, আছে সহস্র জিহ্বা আর স্বাদকোরকের মধ্যে অণুপরমাণুর কারখানা
তাহলে উরজা আসে ওই আগুনবিহঙ্গ থেকে
পুব থেকে, পশ্চিমে নামতে তার ডানা ছিঁড়ে অত রক্ত
অত রংবেলুন ফেটেছে
তাহলে সূর্যাস্ত হল উল্টে রাখা আহ্নিকমুকুর
আমার কাজ তো বিম্বের মাপ করা, তাদের মস্তকে ফলা এঁকে রশ্মি টাঙিয়ে রাখি,
পা অব্দি নামাই ছলকলা। ওই শতদল থেকে পিছতে থাকি, শূন্যেরও ঊনে; দেখি, আদিমের দুটি
টুকরো, আধা আধি, তারা জুড়লেই বিষ্ফোট হয়, শূন্যটি নিযুতের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, এত বিম্বের মাঝে খুঁজেই পাই না কে স্বয়ং
যদি দীঘি , সাঁতার রাখোনি
যদি শয্যা নিদ্রাকেইযোনি
ভেবে, যদি প্রবেশ করেছি
তাতে স্বপ্ন যদিবা ধরে, ছিঃ
যদি ছেচল্লিশ ভেঙে নাও
জলে ভেসে যাচ্ছে প্রেরণাও
পপকর্ন ছিটকে পড়ে, ধরো
ওর ঘায়ে ফেটেছে অম্বরও
সেই ফাটলের থেকে রোদ
গড়িয়ে আসছে, কে পারদ
কে স্বর্ণ, তামা বা লোহা কে কে
বুঝে বুঝে এসেছি প্রত্যেকে
হাতে ঈশ, চোখে মহাছিপ
মহাকাশে তোমাকে জরিপ
করতে গিয়ে অন্ধ হইলাম
প্রতিটি চুম্বনে আছে প্রতিটি প্রণাম উনি এসেছেন মেঘ থেকে, কখনো পীত হলে বামন হন,
রক্তিম হলে দৈত্য, কখনো আলোর ডুগডুগি। উনি রশ্মিপৈতে গায়ে কখনো কালিগুহা।
আমরা তাঁরই সন্ততি, শরীর থেকে ছিটকে আসা প্রত্যঙ্গে বাস করি।
আমাদের ভেতরেও আছে আরেক মন্ডল, আছে তেরো নদী আর কিনারের নির্জন কুঠুরি।
যার সমস্তণটাই দরজা, অথচ ঢুকতে পারে না কেউ, থাকতে পারে নামণণ, কেবল জলসারেঙ্গী বাজছে জন্ম থেকে।
আর ছেচল্লিশটি নুড়ি জড়ো করাই তো জন্ম, তার দুটি শুধু খেলবার। ওইখানে এসো একদিন । আমরা তেইশটি করে ঘুঁটি নিয়ে বসব।
ছড়িয়ে দেব সর্বস্ব । দান মিলে গেলে জড়িয়ে ধরব দুজনে। আর উনি চেঁচিয়ে বলবেন স্কোর।
কেউ কি হাততালি দেবে? কেউ নৈঃশব্দ্যের টুপ কুড়িয়ে চলে যাবে ফেনসিংয়ের দিকে,
আরেকটু এগোলেই খাদ
নীচে চড়ে বেড়াচ্ছে ছটি রিপু, গলায় ঘন্টা
কেউ কি ওই টুপ ছুঁড়ে দিচ্ছে সেদিকে?
আর দূরের পাহাড়ে ছাদের ওপর আয়না বেঁধে রেখেছে
আলোর ড্রপ উড়ে আসছে ধাক্কা খেয়ে
অথচ কোটরে এখনও তৈরি হয় নি চক্ষু
স্নায়ুসুতো পাকিয়ে এখনও সলতে পারিনি আমরা
কেবল আন্ধারগাছে ঝুলছে তারারা
ওদিকে আসছে নেমে অব্যর্থের খাঁড়া
চটচটে আঠালো সন্ধ্যায় তুমি যেই
হাত বাড়িয়েছ লাগে কামনার লেই
তাতে আঙুলেরা ক্রমে ক্ষয়ে যায়, কব্জিও লঘু হতে থাকে
শৃগাল গলা বড় করে সব চেটে নেয়
তাতে মুন্ড হেলে পড়ে
জিহ্বা দীর্ঘ হয়ে লন্ঠনের ফিতের মতো শিখা ধরে থাকে আত্মহত্যার পর এইসব ভয়ের পোস্টার
একটি চুমুর জন্য ছাপা হতে থাকে
একটি চুমুর জন্য গাছে গাছে কুঠারের দাগ
তা থেকে রস গড়াচ্ছে, চিনি-নুন-স্নেহ ও আমিষ
তা থেকে ক্ষুধা গড়াচ্ছে, মানুষের রন্ধনকৌশল উনোনে চাপিয়ে আমি জল ঢালি লৌকিকতার
যেন কোনো বিবাহে এসেছি
যেন কনেটি আমাকে দেখে কেঁদে উঠল
ব্যন্ডপার্টি উড়ে গেল গ্যালাক্সি পেরিয়ে
এত বড় স্টেডিয়াম, তবু গোলপোস্ট মাত্র দুই
যদি রাজি হও, এসো, ঘাসের ছায়ায় বাঁধি শরীর-রসুই
ছবি কৃতজ্ঞতা স্বীকার : অরিণ রায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন