বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

ইমেল নাঈম


১.
স্মৃতির মেঘপুঞ্জ

 ঘুম ভাঙা মুহূর্তে কিছু দৃশ্য ভাসে অপলক। দৌড়ে যায় স্মৃতির মেঘপুঞ্জ। বৈশাখের খরতাপে এক ফোটা জল খোঁজে নগরীর পথ। পথিকের গল্প লিখে রাখে অন্ধ ভিক্ষুক। পাড়ার বেকার ছেলের দল ব্যস্ততায় আঁকছে নিখুঁত অবসর। এক কাপ চা আর সস্তাদরের নিকোটিন শলাকায় আটকে রাখে অবকাশকালীন মুহূর্ত। পুঞ্জিভূত কথাদের কাছে ফিরে যাই অথচ আমার ফেরার কথা ছিলো না।

অভিমানের পরতে লেখা নামগুলো মুছে দিই। খড়িমাটি দিয়ে লিখে রাখি ভালবাসার নিষিদ্ধ ইশতেহার। ইনকিলাবি মন নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ আয়োজনে ব্যস্ত। নিক্তি নেই, পরিমাপ করি বৈধতাটুকু। মুছে দিতে চাই স্লেটে লেখা প্রেম। মানা করার কেউ নেই। মোছার বদলে রেখে দিই ডাস্টার। নিজেকে অন্বেষণ করার পর্যাপ্ত সময় হাতে নেই, যতটুকু পাই সেটুকু পার হয় কবিতার খাতায়।

আলসে সময়ের ভাজে নিরুপায় হয়ে ভাবতে থাকি কাল্পনিক সঞ্জীবনীকে। হারিয়ে ফেলেছি বিগত সময়ের এলিজি। সেমেটেরিতে বসে থাকি, ঝুলছেন ক্রুশবিদ্ধ জেসাস অসহায়, যাপিত জীবনের অভিযোগগুলোকে উড়িয়ে দিই শূন্যে। নিজের কাছে চাইবার কিছু নেই। না পাওয়াতে রটে অবজ্ঞাপূর্ণ ইঙ্গিত। পরাজিত গল্প বলে কোনো গল্প নেই। নিজেকে বারবার বলি, দুঃখক্রান্ত হয়ে ফিরে আসছে যে বাতাস তাকে আলিঙ্গন করো।

আপাদমস্তক ব্যর্থ মানুষের পরিভাষায় নতুন কোনো শব্দ নেই, হতাশাগুলোকে তারা মান অভিমানের প্রলেপে আটকে দেয় এরপর ছুটতে থাকে স্বপ্নহীন পথে।



২.
মৃত্যুর পরোয়ানা


চোখ বেধোনা, আমিও মাতাহারির মতো
মৃত্যুর মঞ্চে দাঁড়িয়ে তোমার দিকে ছুঁড়বো ফ্লাইং কিস
তোমার ছোঁড়া বুলেট আমাকে আহত করে যাবে

মৃত্যু তো লিখে রেখেছিলো তোমার ওই নীল চোখ।
প্রস্থান সুনিশ্চিত জেনেও অট্টহাসিতে মাতবো
দেখবো সেই হাসির অনুরণন কতটা কাঁপায় বুক

সংসার জীবন অতীত হলেও পুতুল খেলায় টিকে
বর্ণাঢ্য জীবন, ধনাঢ্য জীবন থেকে সার্কাসের দলে
মুক্তো খচিত বক্ষবন্ধনীর যুদ্ধের কলাকৌশলে বাঁচে

প্রিয়তমা চোখ বেধোনা, মৃত্যু সমনজারি হলেও
প্রেমিকদের পৃথিবী দেখতে হয়, আনন্দ উপভোগ
করে সামনের দিকে এগুতে হয়। মৃত্যুর মুখোমুখি
দাঁড়ালেও পৃথিবী অনেক সুন্দর, প্রেমিক চোখ
জানে মৃত্যু পরোয়ানা লোকদেখানো প্রলাপ কেবল।

প্রিয়তমা, কিংকর্তব্যবিমূঢ় নীরবতা ভাঙুক অবশেষে
মুক্ত চোখে সুন্দর দেখে প্রস্থান লিখা আনন্দের।



৩.
জ্যামিতিবিদ


কম্পাসজুড়ে লাল নীল বৃত্ত, কুয়াশার গভীরতায়
বুজে আসে চোখ, পথ আঁকতে গিয়ে এঁকে ফেলি
ট্রাপিজিয়াম, জ্যামিতীয় ভাষার কিছু নকশাকে
কাঁটা ছেঁড়া করতে গিয়ে জন্ম দিচ্ছি কবিতাদের।

আজও প্রবাহিত নীল নদ তার গভীরতা নিয়ে
অদৃশ্যমান সুতো বেঁধে দিয়েছে হাত আর পা,
দৌড়তে পারিনা সামনে, পিছনের পথ অচেনা
জীবনকে তিনপাতার উপন্যাসের আদলে মমিবন্ধী
করেছে সময়, ছোটোখাটো ভুল আর অবিশ্বাস।

ক্যাফেটেরিয়ায় কফি খেতে বসলে অচেনা দুচোখ
আমকে অনুসরণ করে, পাখিদের ভাষাকে রপ্ত
করতে হলে পাড়ি দিতে হতেও পারে সুদূর ব্রাজিল
কফির স্বাদ মিটে গেলে হারিয়ে যায় চোখ দুটো

পুরো দৃশ্যকে জাদুকরের ইল্যিউশন মনে হয়
মনেমনে আওড়াই, অহেতুক অনুসরণ করোনা
অচেনা বেশে। আমিও পলাতক মরুর দেশে।
সীলগালা করে দিয়েছি বুকের বাম ক্ষতকে
ওখানে কোনো স্থাপনা নেই, আছে প্রত্নতাত্ত্বিক
আবরণ, যেগুলোকে ভুলবশত ফেলে গেছে কেউ

বালুতে বৃত্ত আঁকি, মাঝে ব্যাস, সামনে নীলনদ।
প্রবাহিত ঢেউ জানে জ্যামিতিবিদের যত ভুল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন