এইতো আমাদের দৃষ্টিঃ
দেখ , তুই ছেঁড়া জামাকাপড় পরে থাকতে পারবি বা পুরানো জামা
পরে ঠাকুর দেখতে বেড়তে পারবি । কিন্তু তোর দিদি বোন ওরা তো আর ছেঁড়া জামাকাপড় পরে
থাকতে পারবেনা । ওরা তো মেয়ে । তুই ছেলে তাই তুই পারলেও ওরা পারবেনা । আর দুদিন
বাদে ওদের বিয়ে দিলে ওরা পরের বাড়ি চলে যাবে । তখন ওরা কেমন থাকবে আর না থাকবে তা
তো জানা নেই । যতদিন আছে ততদিন অন্তত আনন্দে থাকুক । তুই , পূজোর জামা না পেলি
ভাইফোঁটায় তুই তো জামা পাবিই । তাই পুজোর জামা তোর বাবা কিনে দিতে পারবেনা । জানিস
তো আমাদের অবস্থা । একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
মায়ের মুখে এই কথাগুলো শুনে কাঁদতে কাঁদতে সুজয় বলল – তাহলে
ভাইফোঁটায় আমাকে দুটো জামা দিতে হবে । ছেলেকে সন্তুষ্ট করতে মা বলল – হ্যাঁ বাবা ।
তোকে দু খানাই জামা দেবো । এই কথা শোনার পর তবেই সুজয়ের কান্না থামল আর মা কে গলা
জড়িয়ে চুমু খেয়ে বলল – আমার দুটো কিন্তু যেন বাবা দেয় মা । মা ও ছেলের পাটিতে চুমু
খেয়ে বলল – হ্য বাবা । তোর বাবা কে আমি বলব দুটো জামা যেন আমার সোনাটার জন্য কিনে
দেয় ।
আজ তো ষষ্ঠী । আমরা অষ্টমীর দিন ঠাকুর দেখতে যাবো । মায়ের
মুখে এ কথা শুনে সুজয় তো বেশ আনন্দিত । দূরে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে ... পুজো পুজো
গন্ধ , কাশফুলের গন্ধ হাওয়ায় তবুও বিষাদের ছায়া । এদিকে মা আসছে... দেবী বরন হচ্ছে
। মাকে নতুন সাজে সাজাচ্ছে কিন্তু এদিকে এক মা ও যে পুরানো ছেঁড়া বস্ত্র পরিহিত ।
সেই জলজ্যান্ত মা । জগতজননী মায়ের ও পূজোর পোশাক নেই । তা ছোট্ট সুজয় ছেলেটাও
বুঝতে পারেনি ।
আমাদের দৃষ্টি তো শুধু নিজের দিকে । মাটির প্রতিমার দিকে ।
যে রক্ত মাংসের শরীরে আমাদের জন্ম তাকেও ঠিক মতো না বোঝা । ঠিকমতো দৃষ্টি দিয়ে
দেখিনা । সেই মায়ের বেদনা বোঝার বা জানার শক্তি নেই । এমনকি দৃষ্টিও নেই । দৃষ্টি
শক্তিও হারিয়ে ফেলছি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন