রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০

তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়


এই সংখ্যার কবি তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়I জন্ম- ১/০৯/১৯৯৬। ২০১৯  প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়েছেন। ২০১৫ থেকে সক্রিয়ভাবে লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নানা ছোটোপত্রিকায় লেখালেখি করেন। ২০১৮ তে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম বই 'ঘুম দাও ঈশ্বর', পেয়েছেন 'সোনাঝুরি কবি সম্মান-২০১৯'।তার ১০টি কবিতা পড়া যাক।

১) সুখের আগে নাইবা 'অ' লিখলাম
------  
কবি ফিরে এসে লিখলেন,
বুকে এখন পয়েনসেটিয়া গাছের নিবিড় চলাচল!  
এদিন ওদিক দোলাচ্ছে মাথা!
ওখান থেকে কয়েকটি পাতা রেখে যাব ডায়েরিতে
 কারণ
উপহারকে কখনো শেষ বলতে নেই...

অথচ চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, 
তাঁর হৃৎপিন্ডে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।         

২) অমোঘ
----- 
স্বপ্নে,
আমাকে বিদায় বলে
অতঃপর, তারাটি মিলিয়ে গেল!
 সাবধানে হেঁটে গিয়ে জানলাম,
সে আমার কপালের টিপ ছিল এককালে।

কোনো চুম্বনবিহীন সঙ্গমের পর,
তাকে রেখে এসেছিলাম প্রেমিকের স্নানঘরের আয়নায়। 


৩)  আংশিক
------ 
নদীতে পাথর ছুঁড়ে দেখেছি,
সে কখনো চিৎকার করেনি!
 শব্দ করে বুঝিয়েছে,
  স্নিগ্ধ হাসি!    
একেকদিন ভাল বিক্রির পর
যে হাসি দেখা যায়
ক্লান্ত ফেরিওয়ালার ঠোঁটে।   

৪) সেমিকোলন 
---- 
সন্ধের দিকে পা বাড়ালে 
সকাল অভিমান করে না!
কিন্তু
তোমার দিকে পা বাড়াতেই এক নারী
সহসা এগিয়ে এল কাছে...
মুখে তার অজস্র দাগ!   
যেন বালিকা জীবনের ভেতর
 ধরে রেখেছে বার্ধক্য কুসুম!

পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই আকাশবাণী হল,
এই আমার ছায়া,
জন্ম থেকে সঙ্গে সঙ্গে আছে।    


৫) ভিক্ষা শেষ হলে
----
আমার গর্ভ শূন্য করে
 যে সন্তানটিকে নিয়ে গেলে
সে একদিন দস্যু হবে!
 তরবারি দিয়ে অসহ্য অক্ষর ছিঁড়ে
 সন্তান আমার,
তোমাদের চোখের মণির মধ্যে চেপে ধরবে হাঁটু! 

অন্ধ তোমরা,
 হাত তুলে বিলাপ করতে করতে বলবে -
'পারে,
 নিশ্চিত, 
একটি কবিতা করতালি ছেড়ে 
মঞ্চের পিছন দিকে অন্ধকার আলোয় 
বিমর্ষ মানুষের বুকে গেঁথে যেতে পারে।'





(সিরিজ)

সর্পদংশনে 
----- 

(১) 
বিষ উগড়ে দিচ্ছে মুখ। 
সে মুখে চুম্বন কতখানি অপেক্ষার বিষয়
তা  নিয়ে কাটাছেঁড়া করছে ছটফটে তরুণ।
তরুণের ঠোঁট 
এর আগে আরও বেশি বিষ পানে খ্যাত... 

(২) 
নারীর স্তনের মত আকাশে
ধবধবে বক উড়ে যায়।
শ্যাওলা ধরা দেওয়ালের পাশে 
আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যাওয়া মিলনদৃশ্য 
বুঝে নিচ্ছেন পরিচালক,
যিনি কিনা সাহিত্যে কাঁচা!  



(৩)
লিপি আঁকড়ে থাকে সাপ
সাপের গতি বাড়ে ফেনিল সমুদ্রে।
সমুদ্রে ঝিনুক কুড়াতে গিয়ে তাই
হারিয়ে গিয়েছিল মেয়েটি
মা...  

(৪)
ঘড়ায় মোহর ভরা আছে।
ঘরে আছে কৃষকের লাঙল। 
লাঙলের ফলা থেকে জন্ম নেবে কর্ষিত সীতা এবং মানসকন্যারা।
অথচ মনের কোনো লিঙ্গ নেই,
নেই যোনিমুখ। 

(৫)   
সর্পকাব্য পড়, 
ফিরে পাবে হারানো প্রেমিক।
প্রেমিক ভুলিয়ে দেবে দুঃখ,তাপ,জরা। 
কান্নায় মিশে যাবে একা একা খেলার দুপুর।

সর্পকাব্য পড় সন্তর্পণে!
দংশন স্থানে রেখে দেখ আঙুল!
ইতিহাস জানে সাপে আর অগ্নি গহ্বরে
কতখানি ভাব,ভালবাসা!       


তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়
যোগাযোগ -৯০৬৪৭৫৯৯২৭  


রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

শানু চৌধুরী



" সৃজন" ব্লগজিনের এই সপ্তাহের শানু চৌধুরী ৷ জন্ম ১৯৯২ সালের জানুয়ারী। ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক। শানুর লেখালেখি শুরু ২০১৫ সাল নাগাদ। এখনও পর্যন্ত একটি কবিতার বই ‘আলো ও আত্মহত্যা’, প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও প্রবন্ধ লেখায় পারদর্শী৷ পড়া যাক তার কিছু কবিতা।




১.
রঙ থেকে বেরিয়ে গেলে আরেকটা রঙ হয়
যে রঙের আগে সময়ের স্পৃহা লেগে যায়

আমি সময় দেখি অতল থেকে মাংসের দাগে
জ্বালের আকাশে কাঁচাতেল ও গন্ধের শিখা

এত নাবিক হল, সমুদ্র তবু টোপ বুঝলো না
আঙুল ক্ষয়ে যেতে যেতে পায়ের রেখা

নুনের মতো দামী হয়েছে কি কোনোদিন?

বীজ ঝরে যাওয়ার আগে যন্ত্র থেকে যে শব্দ হয়
আমাদের ঢাল বরাবর বরাদ্দের চাষ হয়নি তা এযাবৎ

২.
চাবি খুলে নেওয়ার আগে পড়ে গেছে শিশির
বিষন্ন হেলের খোলস ছাড়ার আগে একবুক
দিয়ে দেখি ইন্দ্রপতন!

এভাবেই উচ্চতার আগে দ্বিধার নিকটে
উড়ে এসে বসে জ্যান্ত মধু-র ইউলিসিস

যার শবে রাখা আছে একদানা ঋতুর সেতার

৩.
বিকেলের আগে হিপোক্রেসি করেছে
আমাদের নিতান্ত চা বাগান
অতএব একটা আফিমের সরল বীজে
আমাদের ক্ষয়ে যাওয়ার কথা ছিল

আমি দেখেছি চড়ুইভাতির সাথে
চড়াইয়ের সম্পর্ক নেই
শুধু খাবারের দানা ঘাসে ঢুকে গেলে
পদাতিক হয় সামান্য ঈশ্বর!


৪.
দুধ দোয়ার আগে পৃথিবী থেকে চাবুক হল একটানা হিম
যে পাতার আগে মিহিন বসেছিল তার রুক্ষতা
অনায়াসে মেলে দিল প্যাগান ও প্রার্থনার নিরাকার লিঙ্গগুলি

তবুও শ্রমের কাছে নগর ছিল
পেরেকের কাছে ছিল ভাষাবোধ
           তুলসীপাতা ওষুধ হওয়ার আগে
বর্ণময় লাল শালুতে ঢাকা হয় আমাদের গ্রন্থসভা

৫.
ফোটন বুঝতে গিয়ে দেখি চরিত্র বদলে যায়
যে দেখায় বসে আছে নিকট ইন্দ্রিয়
তাকে দেখে কি অবাক হবো না?

যে পায়ের আগে ঘুম লেগে থাকে
তার চাকায় নদীভাগের দাগ
এই কোয়ান্টাম অথবা হাইপোথিসিস
                   হাস্যরোলের আগে খুঁজে নেয়
জ্যামিতির আকারে মাপসই জুতো

যেখানে আমাদের সমুদ্রগুলি সিন্থেটিক হয়ে গেলে
পাথর আর প্রতিমার ফারাক থাকে না

৬.

রোদের গোড়ায় বৃষ্টি পড়ছে আর স্বাস্থ্যগুলো
ভেঙে যাচ্ছে পেয়ালা বরাবর
যে দৌড়গুলোতে বুক ফুলে গেছিল আমাদের
তাকে আজকাল প্রশিক্ষণ বলে ডাকো

   মারা যাওয়ায় ল্যাটিন দর্শন থাকে
        যেখানে
কাচের শিশুরা আজ অবধি ছাত্র হলো না আমার
অথচ গাছের নাম জানতে চেয়ে
গতজন্ম মাপতে চেয়েছি বারবার

৭.
মুঠোর ভিতর স্তন্যপায়ীর রূপক
আমি ছাড়িয়ে এসেছি মেধাহীন জলে
এভাবে বাচ্চাদের দেখতে দেখতে
মেহফুজ গল্প লিখে ফেলে ঈশ্বরের হাতে

উন্মাদ হয়ে কেউ ঝাঁট দেয় সকালের উঠোন
আর খাটাল থেকে শুনি শ্লেষভরা দুধের আওয়াজ

কীভাবে ঘোরালে নিলাম?
এসব ভেবে দেখি বিস্ময় আর জিজ্ঞাসায়
আটকে আছে মোষের তেল মাখানো দেহ

আর অস্থিরভাবে কারও পেটের ভিতর
ধরে যাচ্ছে
বিষাক্ত রেডিওর গান.

৮.
খালকে কাজে লাগিয়ে জমে যাচ্ছে
খালের
মা
এভাবে ঋতু থেকে দূরে দাঁড়িয়ে
বিভ্রম হয় শালিখের ডানা
শা
দা

জল খেতে গিয়ে যাদের ভিজে গেছে ডানা
তাঁদের রক্তে দেখি
কবিতার ঝাঁঝ বয়ে নিয়ে যেতে
পারেনি সন্ত্রাস

৯.
হাসি টপকে যাওয়ার আগে
অভিশাপ নিয়ে খেলেছিল হীরের ছাদ

আমার ভুলে আমি যেভাবে মনীষা
সেভাবে পাথর হল না

ভালবাসছি ঈর্ষা দিয়ে
কবিতা লিখতে
লালসা দিয়ে নয়

এভাবে ভাতের হাঁড়িতে
চাপা পড়ে যায়
সভ্যতার অধিক হ্যাঁচড়
১০.
রুচি থেকে বিরতি নিলে
নিজেকে টাটকা লাগে না কখনও
এভাবে আঁশফলের বাগানে
ছেঁয়ে থাকে পোকার কাচ

আমি দেখেছি
ওরা ফিরে যায় আগুন থেকে
চোখের শান্তিকে রেহেলে বসিয়ে

ঝুনো হয়ে যাওয়াকে কি পুরনো বলা যায়?
জুন থেকে গড়িয়ে এসে ধাক্কা মারে আকাঙ্ক্ষার ব্যথা

এভাবে শতাব্দী ও সুচারু গাছ
সংক্রামক কোণে বসে থাকে
ঝরঝরে নাভিকে ধুয়ে নেয় স্যালোর জলে
এভাবেও মহৎ হয় অশ্বের বেদ
যেখানে বৃষ্টি আটকে দিয়েছিল রোদের কুঠার




রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০

জয়াশিস ঘোষ




"সৃজন " ব্লগজিনের এ সপ্তাহের কবি জয়াশিস ঘোষ৷তার +জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৬ শে জানুয়ারি। পেশায় সরকারী আধিকারিক। নেশা ঘুরে বেড়ানো ও লেখালেখি। তাঁর লেখায় বারেবারে উঠে আসে মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষদের জীবনকথা। লেখা প্রকাশিত হয়েছে দেশ, কৃত্তিবাস, তবুও প্রয়াস, শুধু বিঘে দুই, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম, সৃষ্টি, কোলাজ সহ অনেক ম্যাগাজিন ও ওয়েবম্যাগে।

প্রকাশিত বই পাঁচটি। বৃষ্টি আসার আগে (নীলকন্ঠ প্রকাশনী), বৃষ্টি বাই লেন ( অপদার্থের আদ্যক্ষর ও গ্রন্থালোক) এবং চুল্লী (রংছুট প্রকাশনী) কবিতার বই। অপদার্থের আদ্যক্ষর থেকে কলকাতা বইমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয়েছে বিষয়ভিত্তিক গদ্যের বই 'ডার্ক চকোলেট ও অন্যান্য'। সৃষ্টিসুখ থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত 'বৃষ্টি বারোমাস' লেখকের প্রথম গল্পের বই।



আবহাওয়ার খবর


চলে যাওয়ার দিন বৃষ্টি আসবেই

একটা একগুঁয়ে কুকুর আপনার চৌকাঠে
বসে থাকবে। বিস্কুট দিলে আপনার দিকে তাকিয়ে
মুখ সরিয়ে নেবে

চলে যাওয়ার দিন খবরের কাগজওয়ালা বলবে
একটা লটারির টিকিট কাটবেন স্যার? বাড়িতে ছেলেটার
খুব অসুখ…

চলে যাওয়ার দিন আপনি অনেকক্ষণ ধরে
গাছে জল দেবেন। নতুন পাতায় হাত বুলিয়ে বলবেন
ভালো থাকিস

হারিয়ে যাওয়া কোন বন্ধু দুম করে মেসেজ পাঠাবে
পাশের বাড়ির যে মেয়েটিকে লুকিয়ে দেখেন
সে নারকেলের বড়া দিয়ে যাবে এক বাটি

পড়ে থাকা রেডিওটা সস্তায় বিক্রি করে দেওয়ার আগেই
অনেক দিনের মৌনতা ভেঙে
বলে উঠবে বিবিধ ভারতী

চলে যাওয়ার দিন খবরে বলবে
আবহাওয়া আগামী তিনদিন খারাপ থাকবে
                                 সমুদ্রে যাওয়া মানা...



খিচুড়ি


খিচুড়ি বসানোর আগেই বাসগুমটি নদী হয়ে গেল

কাজলদা ছুঁয়ে গেছে যেখানে
সেখানে এখন জেদী মেঘ। যেন টোকা পেলে
ঝরবে খিচুড়ির হাঁড়িতে

দূর থেকে রেলগাড়ির কু-ডাক আসে
মেঘ হাতে করে এক দৌড়ে জানালায়

খিচুড়ির হাঁড়ি থেকে ভাজা পেঁয়াজের গন্ধ লাগে
আপাদমস্তক ভিজে যায়

কিশোরীর কপালে শাঁখের দাগ

আজ এই ভীরুলগ্নে যদি কাজলদা আসে,
যদি ক্ষিদে পায়

সমস্ত সিঁড়ি ভেঙে ছুটে যাবে
             খিচুড়ি বেড়ে দেবে অঙ্কের খাতায়...




দর্জি

ফিরবো না আর -
এই বলে একটু দূরে নারকেল গাছের নীচে
বসে আছে বউটি। ভেঙে ফেলেছে কাচের চুড়ি
                        আধখাওয়া সিঁদুর

ঝড় আসবে জেনেও
মাঝিটি বসে আছে নৌকার পাশে
তারপিন তেল দিয়ে মুছে দিচ্ছে দাঁড়ের চোখ

ফিরতে ফিরতে দল থেকে একা হয়ে যাচ্ছে পাখি

অঙ্কের মাস্টার বসে আছে বাসস্টপে
যদি কিশোরী মেয়েটি বাড়ি ফেরার সময়
                        নামতা ভুলে যায়

আর এদের থেকে একটু দূরে
তুমি অপেক্ষা করছ একজন দর্জির

            যে ভুল বোতাম সেলাই করেছিল…
ইনটু দ্য ওয়াইল্ড


নদী পেরোনোর সময় মনে রেখো
ফেরার সময় জল বেড়ে যেতে পারে
সমস্ত ইতিহাস রেখে আসো নদীর ওপারে

এখানে শুধু ঘাসের দিন
একটি পরিত্যক্ত বাস, যার গায়ে মরিচের দাগ
শুকিয়ে আছে, গোপন ব্যথাটির মত

তোমার অপেক্ষায় কেউ নেই
কেউ ছিল না কোনদিন, শুধু
একমুঠো ধুলো আসার সময় বলেছিল

আর কিছু না নাও, বাঁশি নিয়ে যেও

এখানে ঘাসের বুকে অনন্ত সঙ্গীত ফুটেছে
সমস্ত পশুপাখি শিকার ভুলে শুনছে
               তোমার আশ্চর্য সুর

তোমার গায়ের চামড়া সবুজ হয়ে যাচ্ছে
চুল থেকে ঝুরি নামছে
চোখের পাতায় পিঁপড়ের সংসার

আজ থেকে অনেকদিন পরে যদি কেউ এসে
হাত রাখে তোমার কপালে

জানতেও পারবে না
মানুষ কতটা একা হলে গাছ হয়ে যায়..


জ্বর


প্রতিটি জ্বরের দিনে সমুদ্রপারে বসে থাকি

আবহাওয়া প্রতিকূল। সমুদ্রে যাওয়া মানা
তবু সংসার গুছিয়ে নেয় কতিপয় জেলে

একাকী শাঁখের গায়ে জ্বর
ফেরার অপেক্ষায়
             বালির হৃদয় খুঁড়ে ফেলে

আমি তার ঘুমের ভেতর ঢুকে পড়ি
আশ্চর্য আলো নেচে ওঠে ঢেউয়ের মাথায়
যেন খুঁজতে এসেছে এক দল ঘোড়সওয়ার

রাত জেগে লিখি ফুল ছিঁড়ে ফেলার কাহিনি

যে মেয়েটি বলেছিল যেদিন একা হবে, এসো

মনে পড়ে
             তাকে শাঁখের দাম দিতে পারিনি

দুঃখ


যে লোকটা ঈষৎ ঝুঁকে পেছন পেছন আসত
আমি তাকে দুঃখ বলে চিনি

লোকটার সাথে বনিবনা নেই। অথচ
মাছের বাজারে, অফিসের গেটে
যেখানেই দেখা হত
অসহ্য হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করত,
'ভালো আছ তো'?

এই তো সেদিন, হঠাৎই পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখেছে
হাত সরাতে গিয়ে দেখি আঠার মত এঁটে গেছে

তারপর তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি

সেই থেকে
দুঃখ বসে আছে পাশে কাঁধে হাত দিয়ে
                          হাসিমুখ


রচি মম ফাল্গুনী



চোখ ফেরাতে পারিনি

মিনিবাসে চলে গেছে বিকেল
দুটো ফিঙে জাপটাজাপটি করে
গুছিয়ে নিয়েছে সংসার

তার মধ্যে এক বিন্দু জল
স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে তোমার কপালে
যে আলো অন্ধ করে দেয়
আমি তার কাছে ঋণী

সে আলোয় দেখেছি তোমার
উপেক্ষা কতটা নরম হতে পারে
বৃষ্টি নামলে

উঠোনে জমেছে জল
আমার চোখের উপরে পা রেখে
হেঁটে যাও অতল
আশ্চর্য মিনিবাসের দিকে

চোখের কথা আর কে শুনেছে কোথায়
এক উঠোনে এত জল আটকে রাখা যায়!

রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০

অনিরুদ্ধ সাঁপুই


এই সপ্তাহের কবি  অনিরুদ্ধ সাঁপুই।কলা বিভাগের ছাত্র।জন্মস্থান— আমতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। জন্মসাল— ১৯৯১, মার্চ। প্রায় ৫ বছর ধরে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করছে ।


*ঠিকানা*

 #১
জলের কাছে এসে আমি যে ডানাটা কুড়িয়ে 
নিয়ে গেছিলাম, তার আত্মায় আকাশ ফুটেছে
মা বলেছে—মুখ দেখা যায়। হাসি, দাঁত, জিভের আগায়
শস্যের স্রোত।
সেদিন অনেক বিকেলে
      ঢেউ গুনতে যাওয়া হয়েছিলো। 
আর ফিরে আসা হয়নি। কোন্‌ দেশের জাহাজ ক্লান্ত কুকুরের 
মতো শ্বাস ছেড়ে দাঁড়িয়েছিলো, আর পাখিরা তার পেছনে 
মিলিয়ে গেলো অনর্গল।
এখন উৎসবের সময় চলে এলো কাছে
পুরোনো তুলি তারপিনে ডুবিয়ে রেখে রঙ
কিনতে গেছে ছবিওলারা।

#২
পড়শীরা মধু খায়। 
তাদের কুলুঙ্গি ভরে ভ্রমরের চাষ,—দু'একবার হুল ফোটে
আবার সমতলে নেমে আসে চামড়া হাড়গোড়ের কাছাকাছি
       তারা তাকায়, চোখে তাদের সর্ষের খেত
নখের কোলে খাদ্যের স্মৃতি নিয়ে
বুক নাচিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
তাদের সর্বাঙ্গে মধু ও বিষ
ছাদের টবে যে গাঁদা ফুটেছিলো, তা অগত্যা 
একদিন ভয় পেয়ে ঝরে যায় নীচের পাথরে; পাশে রানী 
মৌমাছিটির শবদেহ।

#৩
আমাদের পরিবারে আগে পাঁচজন মানুষ…..
একজন গলায় দড়ি নিয়ে, একজন শিরা কেটে
আর একজন জমিতে দেওয়া বিষ খেয়ে মরে।
আমি আর মা এখোনো মরিনি। আমরা বাঁচবো বলে 
মরিনি।
 এখন প্রত্যহ মৃতদের ছবি এড়িয়ে যাই
এবং,
        তাদের কথা ভাবি—যারা মরে গেলো।
এভাবে ভাবতে ভাবতেই আমরা আর 
বাঁচতে পারিনা মরতেও পারি না—
কিন্তু আমরা জীবিত।

#৪

বর্ষার দিনে আমাদের সবুজ 
জানলাটা বেশ গাঢ় হয়। ফাঁক-ফোকরে দুচার 
পাখি আশ্রয় নেয়। তারা গমের দানা খুঁটে খায় হাত থেকে
সরাসরি, মাঝেমধ্যে হাত খুঁটেও খায় দানা শেষ হয়ে এলে।

বৃষ্টি থামলেও তারা বসে থাকে
দানা যে পাবে না, তা তারা জানে।
হয়তো প্রেম জমিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ের অন্তরালে, যাতে 
পুনরায় এলে না তাড়িয়ে দিই। কিন্তু মানুষের কি আর অত মনে থাকে! তার ওপর সব পাখিই রুপে এক গুনে এক হিসেবে মানুষের কাছে বিবেচিত
তাছাড়া কখন কে মরে—কেই বা জানতে পারে!

#৫
বাড়িটা ছেড়ে যাবো ব'লে দিন গুনি।
আসবাবপত্র সব ছড়িয়েই আছে।
সব খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছি যেভাবে ছড়িয়ে থাকার কথা
যেখানে যা, তা শেষপর্যন্ত সেখানেই থাকছে কিনা
তারপর হুট করে বেঁধে ছেঁদ নেওয়া হবে।
অন্তত ঘাড় ঘুড়িয়ে ফাঁকা মানচিত্রের মতো কয়েকটা রেখা 
দেখতে হবে জেনে কিছু জিনিস রেখেই যাওয়া হচ্ছে।
বেপাড়ার বেড়ালটার জন্যে মাখা ভাত 
আর দেওয়ালে ঘষা কাঁচের আয়না রইল—যদি আবার ফিরে আসা হয় তখন দেখে নিতে হবে মুখটা এখনের মতোই হবে নাকি আকাশে যেমন কিউমুলোনিম্বাস!




মুক্তগদ্য:


*উজর ব্যাথা*
--------------------------------- 


বহুক্ষণ প্লাবন উপযুক্ত মন দেওয়ালগামী দৃষ্টি নিয়ে পথ হারালো। একটা মোমআলো তার গর্ভধারিণী দেহ নিঃশ্বেস করে আকণ্ঠ আত্মদহনে যে আঁধার ছুঁড়ে দিয়েছে সেইদিক সততই একটা সিল্যুট এবং মানুষ কল্পনার ভূত মাথায় নিয়ে ফেরে তাই চোখ একপ্রকার মায়া। এক বিশাল ক্যানভাসে তিরতির কম্পমান পুরাণ ছবির মতো দৃশ্যপট একে অপরে মিশছে। আমি এখানে দর্শক সেই প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে দণ্ডায়মান আসলে বহুক্ষণের নির্যাস যেন বিভ্রম তৈয়ার করে গতি ক্ষয় অথবা সঞ্চয়শীল উপচার প্রভূত। মগ্নতার ভেতর মুহুর্মুহু নৃত্যরত অকপট সেই আলো মোমদ্বারা গঠিত যেন তিনি আমার দিক হতে আলোকিত- এই কথা! এক্ষেত্রে যদিও অনেক আগে কচি রোম আবর্তিত ঠোঁটের নোনতা স্বাদ একদিন জ্ঞাত করেছিলো সে আমার বয়ঃসন্ধি সেই তখন আমার একক ইন্দ্রিয় যা কর্ণকুহর সম্বন্ধিত যে- শব্দের কী মহিমা। এবং আমার একান্ত দ্রষ্টব্য এই একপ্রকার উচ্চকিত যা আমাকেই যে মড়া মানুষও শব্দরহিত নয়। এক্ষণে টিকটিকির কিককিক ধ্বনি পর্দা করে যেন মঞ্চের আলো নিভলো আর সে মানুষ যে কিছুদূরে হতাশার ঘোরে দর্শকাসনে আপনাতেই যাত্রা করছিলো নিজেরই ইতিহাসের দিকে এবং হঠাৎ মোহ ভেঙে উজ্জীবিত হয়, তেমনই বৃষ্টি তার বহুবর্ণিল আঘাতে খানখান করে দেয় আপন জাগর। সে কিছু নয় যতটা হৈ হৈ রবে চারপাশে আকুল মানুষ সিক্তের মতো।