রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০

অনিরুদ্ধ সাঁপুই


এই সপ্তাহের কবি  অনিরুদ্ধ সাঁপুই।কলা বিভাগের ছাত্র।জন্মস্থান— আমতলা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। জন্মসাল— ১৯৯১, মার্চ। প্রায় ৫ বছর ধরে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করছে ।


*ঠিকানা*

 #১
জলের কাছে এসে আমি যে ডানাটা কুড়িয়ে 
নিয়ে গেছিলাম, তার আত্মায় আকাশ ফুটেছে
মা বলেছে—মুখ দেখা যায়। হাসি, দাঁত, জিভের আগায়
শস্যের স্রোত।
সেদিন অনেক বিকেলে
      ঢেউ গুনতে যাওয়া হয়েছিলো। 
আর ফিরে আসা হয়নি। কোন্‌ দেশের জাহাজ ক্লান্ত কুকুরের 
মতো শ্বাস ছেড়ে দাঁড়িয়েছিলো, আর পাখিরা তার পেছনে 
মিলিয়ে গেলো অনর্গল।
এখন উৎসবের সময় চলে এলো কাছে
পুরোনো তুলি তারপিনে ডুবিয়ে রেখে রঙ
কিনতে গেছে ছবিওলারা।

#২
পড়শীরা মধু খায়। 
তাদের কুলুঙ্গি ভরে ভ্রমরের চাষ,—দু'একবার হুল ফোটে
আবার সমতলে নেমে আসে চামড়া হাড়গোড়ের কাছাকাছি
       তারা তাকায়, চোখে তাদের সর্ষের খেত
নখের কোলে খাদ্যের স্মৃতি নিয়ে
বুক নাচিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
তাদের সর্বাঙ্গে মধু ও বিষ
ছাদের টবে যে গাঁদা ফুটেছিলো, তা অগত্যা 
একদিন ভয় পেয়ে ঝরে যায় নীচের পাথরে; পাশে রানী 
মৌমাছিটির শবদেহ।

#৩
আমাদের পরিবারে আগে পাঁচজন মানুষ…..
একজন গলায় দড়ি নিয়ে, একজন শিরা কেটে
আর একজন জমিতে দেওয়া বিষ খেয়ে মরে।
আমি আর মা এখোনো মরিনি। আমরা বাঁচবো বলে 
মরিনি।
 এখন প্রত্যহ মৃতদের ছবি এড়িয়ে যাই
এবং,
        তাদের কথা ভাবি—যারা মরে গেলো।
এভাবে ভাবতে ভাবতেই আমরা আর 
বাঁচতে পারিনা মরতেও পারি না—
কিন্তু আমরা জীবিত।

#৪

বর্ষার দিনে আমাদের সবুজ 
জানলাটা বেশ গাঢ় হয়। ফাঁক-ফোকরে দুচার 
পাখি আশ্রয় নেয়। তারা গমের দানা খুঁটে খায় হাত থেকে
সরাসরি, মাঝেমধ্যে হাত খুঁটেও খায় দানা শেষ হয়ে এলে।

বৃষ্টি থামলেও তারা বসে থাকে
দানা যে পাবে না, তা তারা জানে।
হয়তো প্রেম জমিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ের অন্তরালে, যাতে 
পুনরায় এলে না তাড়িয়ে দিই। কিন্তু মানুষের কি আর অত মনে থাকে! তার ওপর সব পাখিই রুপে এক গুনে এক হিসেবে মানুষের কাছে বিবেচিত
তাছাড়া কখন কে মরে—কেই বা জানতে পারে!

#৫
বাড়িটা ছেড়ে যাবো ব'লে দিন গুনি।
আসবাবপত্র সব ছড়িয়েই আছে।
সব খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছি যেভাবে ছড়িয়ে থাকার কথা
যেখানে যা, তা শেষপর্যন্ত সেখানেই থাকছে কিনা
তারপর হুট করে বেঁধে ছেঁদ নেওয়া হবে।
অন্তত ঘাড় ঘুড়িয়ে ফাঁকা মানচিত্রের মতো কয়েকটা রেখা 
দেখতে হবে জেনে কিছু জিনিস রেখেই যাওয়া হচ্ছে।
বেপাড়ার বেড়ালটার জন্যে মাখা ভাত 
আর দেওয়ালে ঘষা কাঁচের আয়না রইল—যদি আবার ফিরে আসা হয় তখন দেখে নিতে হবে মুখটা এখনের মতোই হবে নাকি আকাশে যেমন কিউমুলোনিম্বাস!




মুক্তগদ্য:


*উজর ব্যাথা*
--------------------------------- 


বহুক্ষণ প্লাবন উপযুক্ত মন দেওয়ালগামী দৃষ্টি নিয়ে পথ হারালো। একটা মোমআলো তার গর্ভধারিণী দেহ নিঃশ্বেস করে আকণ্ঠ আত্মদহনে যে আঁধার ছুঁড়ে দিয়েছে সেইদিক সততই একটা সিল্যুট এবং মানুষ কল্পনার ভূত মাথায় নিয়ে ফেরে তাই চোখ একপ্রকার মায়া। এক বিশাল ক্যানভাসে তিরতির কম্পমান পুরাণ ছবির মতো দৃশ্যপট একে অপরে মিশছে। আমি এখানে দর্শক সেই প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে দণ্ডায়মান আসলে বহুক্ষণের নির্যাস যেন বিভ্রম তৈয়ার করে গতি ক্ষয় অথবা সঞ্চয়শীল উপচার প্রভূত। মগ্নতার ভেতর মুহুর্মুহু নৃত্যরত অকপট সেই আলো মোমদ্বারা গঠিত যেন তিনি আমার দিক হতে আলোকিত- এই কথা! এক্ষেত্রে যদিও অনেক আগে কচি রোম আবর্তিত ঠোঁটের নোনতা স্বাদ একদিন জ্ঞাত করেছিলো সে আমার বয়ঃসন্ধি সেই তখন আমার একক ইন্দ্রিয় যা কর্ণকুহর সম্বন্ধিত যে- শব্দের কী মহিমা। এবং আমার একান্ত দ্রষ্টব্য এই একপ্রকার উচ্চকিত যা আমাকেই যে মড়া মানুষও শব্দরহিত নয়। এক্ষণে টিকটিকির কিককিক ধ্বনি পর্দা করে যেন মঞ্চের আলো নিভলো আর সে মানুষ যে কিছুদূরে হতাশার ঘোরে দর্শকাসনে আপনাতেই যাত্রা করছিলো নিজেরই ইতিহাসের দিকে এবং হঠাৎ মোহ ভেঙে উজ্জীবিত হয়, তেমনই বৃষ্টি তার বহুবর্ণিল আঘাতে খানখান করে দেয় আপন জাগর। সে কিছু নয় যতটা হৈ হৈ রবে চারপাশে আকুল মানুষ সিক্তের মতো।




২টি মন্তব্য:

  1. খুব ভালো লাগল। তবে বানান ভুলটা শুধরালে খুশি হব।

    উত্তরমুছুন
  2. কত অভিধান আর কত ব্যাখ্যায় খুঁজে ফিরি কবিকে কবিতায় আর কবির কবিতাকে। হদিস কি মেলে এত ছোট আকাশ নিয়ে! ৩-এ পথ পলেও আঁধার নামে ৪-এ। কিন্তু এলোমেলো হয়ে যায় শেষে। তবু অপেক্ষায় থাকি আলো জ্বেলে। তাই অভিনন্দন কবিকেও।

    উত্তরমুছুন