রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শুভদীপ নায়ক

                                      


"সৃজন " এই সপ্তাহের কবি শুভদীপ নায়ক৷ জন্ম কলকাতায় ১৯৮৯ সালে ।শৈশবস্থা কেটেছে উত্তর কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলে । স্কুলশিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি বিজ্ঞান ও বাস্তুবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেন । অধুনা তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত । শৈশবস্থা থেকেই সাহিত্যের বইপত্র পড়া, লেখালিখি ও ছবি আঁকার চর্চা করেন । সাহিত্যে কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন  একুশ শতকের প্রথম দশকের একেবারে সূচনা পর্বে, ২০১০ সালে । নিজেও যুক্ত থেকেছেন একাধিক সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে । সাহিত্যে মূলত কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাসের রচয়িতা৷ প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল: নির্বাক মুহূর্তগুলো (২০১৬), আত্মহত্যার স্নানঘর (২০১৭)

       


স্মরণ, তোমাকে





পেলাম না পণ্যের স্বীকৃতি, ভার পড়ে রইল দূরে, চোখের মণিতে ।

সারাদেহ ভরে গেল কালির হরফে, বৈচিত্রে । কোথায় রয়েছ তুমি !  

পালক ফুটেছে তোমার কবিতার শরীরে, একদিন মনের ভিতরে 

জমে ছিল ভয়, ছাই থেকে পুনরায় আগুন খোঁজার ঝুঁকি, সেসব

পাখির ঠোঁটের মতো বয়ে বয়ে বেড়িয়েছি এতকাল, দারুব্রহ্ম, মীন, 

প্রেমঘটিত যুদ্ধ এবং নিত্য পুজোর প্রাক্কালে হয়েছিল তৃষ্ণা নিবারণ ।

একটি রঙিন সুতোর জট থেকে খুলে পড়ে ছায়া, উৎসবের দিনে

অহেতুক আঁধারে ভরে আছে শহরের যেসব গলি, জীবিত থাকলে

সেখানে দাঁড়িয়েই তোমাকে বলা যেত : সমস্ত সদর বন্ধ, নিজ নিজ

ইতিহাস লেখার ছলে প্রতিটি মানুষ বসন্ত হয়ে বাঁচে দূরের টিলায় ।





মনে নেই, ভুলভ্রান্তি আর কিছু ছিল কিনা পুরনো বাড়ির চৌকাঠে ।

যদি থাকে, নিয়ে যেও । ভুল থেকে কত ধারণা গড়ে ওঠে, সংস্কার

পাল্টে যায়, ভ্রান্তির ছাপ নিয়ে বেরিয়ে আসি সম্পর্ক থেকে, কিছুতেই

কাটে না পুরনো সংস্কার, ভয় । এইভাবে শতছিন্ন মানুষও একদিন

অন্যের সংস্পর্শে আসে, সশব্দে, আশঙ্কায় । ভাঙা পড়ে বাড়ি,

ঘর ছোট হয়ে আসে, আক্ষেপ বাড়তে থাকে, বয়স পেরিয়ে যায় দূরে ।

সর্বত্রই ভাঙা পড়লে বোঝা যায় এতদিন সবটা দাঁড়িয়েছিল শূন্য এক

জমির ওপরে, আসন্ন বিপদে, হয়তো পাহাড়ের ঢালে, মরা মৃত্তিকায়, 

কিংবা ডুবন্ত চোরাবালি ঘিরে । যে পায়ে চিরকাল বেড় থাকার কথা, 

সেই পায়ে লেগে আছে কাদা, সেই পায়ে নোনাবালি, ঢেউ, উচ্চারণ ।

এখন শুধুই প্রতীক্ষা, বিশেষণ আর সর্বনামে, যে বাতাসে উড়ে গেছে

গা থেকে খসে পড়া সামান্য পালক, সেই বাতাস জানতে চাইছে

অতীতের সম্বন্ধগুলোর চেয়ে তুমি কতটা পৃথক ? কতটা গোপন ? 














আয়নার স্বভাব ছিল তোমাকে উন্মোচিতা হতে দ্যাখা, কখনো আঁধার রাতে

আয়নার শরীরে ফুটে উঠতে তুমি, বিবর্ণ মুখের ছবি দেখতে । যে মুখে সহস্র

শীতকাল খসে গেছে, তুমি সন্ধান পাওনি, তুমি বিপন্ন হয়ে বেড়িয়েছ পাহাড়ে, 

ঘাস জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে দেখেছ চারপাশে শৈলশিরার বিস্তৃত রজনী ।

মনে আছে, এই আয়নার সামনেই ব্লাউজের হুক বেঁধে দিয়ে বলেছিলাম, আজ

বহুদিন পর তোমাকে ঘিরে নেমেছে সৌজন্যের মেঘ, আঁকা হয়েছে বাড়তি দূরত্ব, 

যে লেখায় তুমি নিখোঁজ বহুকাল, সে লেখায় ফিরেছ আজ স্বভাবদোষে, কটুযত্নে ।

এখন আর ব্লাউজের হাতায় নেই সুতো দিয়ে বোনা ফুলের কাজ, পরিবর্তে

সরু লেস, অঙ্গের সমাহার । আঙুলের প্রান্তে এখন অসহায় নখ, ঠোঁটও হারিয়েছে

চিকণ চুমুর স্বাদ, আয়নার স্বভাব ছিল তোমাকে কালো টিপ আর সিঁদুরে দেখা ।






এই জন্মের যেটুকু আছে তার সবটা রেখে গেলাম, প্রয়োজন মতো খরচ করে ফেলো ।

যূথবদ্ধ মথের পাখনা, সাহসে কুড়ানো ফুল, ভাঙা তৈজসপত্র, হিসেব লেখার ঐ বাতিল

খাতাটা, জংধরা তালা, পরিত্যক্ত জুতোর চামড়া, সবেতেই পাবে আমাকে । এককথায় 

আমি ছিলাম ব্যবহারকারীর ভূমিকায়, তাই ছাপ রেখেছি স্মৃতিতে, আমাকে ঠকাতে গিয়ে

করুণা এসেছে মনে, আমাকে ভুলতে অবজ্ঞার সাহায্য নিতে হয়েছে । তবুও একদিন হঠাৎ

মনে হয়েছে, নতুন করে কিছু পাওয়ার ছিল পুরনো অভ্যাসগুলোর থেকে । তাই, বৃষ্টিতে

সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে এলোচুলে ভিজে ছাতা হাতে ধরে এসেছ এখানে, বহুদিন পর জঙ্গলে ঘেরা

এই সমাধিক্ষেত্রে । তোমারও প্রশ্ন ছিল, কেন মানুষ স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি নয় ? 

কীভাবে আগেকার দূরত্ব মুছে দিয়ে নতুন করে ফিরে আসা যায় ? আমিও বই পড়তে পড়তে

ভেবেছি পৃষ্ঠা-শেষের জীবন কীভাবে ডুবতে পারে অদ্বিতীয় কোমল আভায় ! এসো বিস্তৃতি হয়ে, 

দরজা খোলাই আছে, যেখানে যা ফেলে গেছ আমি তার কিছুই রাখিনি সরিয়ে । আছে ধূপদানি, 

কর্কশ রেডিও, জ্বলন্ত বৃত্তের মধ্যে দিয়ে আর যা কিছু পালিয়ে গেছে, তা সঞ্চয়ের জন্য ছিল না ।















 ৫



মায়ার মতো মানুষের সবকিছুরই ইন্দ্রপতন ঘটে । চোখের কাজল 

যে বয়সে যা পায়নি, কাজল হারানো চোখ তাই-ই খোঁজে সারাজীবন ।

অবলুপ্ত সৌন্দর্যকে ভালবাসবার সময় দেখেছি, সুন্দর নিজেকে

খেয়ালহীনতায় হারিয়েছে, বাঁধা পড়েছে । হঠাৎ সেই বন্ধন ভেঙে দেখি

আসন্ন বাঁকের মুখে পথ গেছে ঘুরে, যেন লজ্জা ভেঙে এই প্রথম

কোনও ফিঙে পাখি বসেছে আমার বাড়ির জানলায় । ভূলুণ্ঠিত আলো, 

বনাঞ্চল, ঢালু ঘাসের জমি, এতদিন যা কিছু সংগ্রহে ছিল সমস্ত কবিতায়, 

কোনও এক মানুষের শতপ্রশ্ন চাহনিতে সেসব বিক্রি হয়ে গেল । 

এই আনাদায় গোধূলিবেলায়, বিস্মৃতিপ্রান্তে, পাহাড়ের পথে, যেখানে

ভাঙা মানুষ, ভ্রান্ত মানুষ, মিছিলের শৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে এসে

নির্দ্বিধায় বিস্তার করে নিজেকে, স্বেচ্ছায় হারানো চাবির স্বপ্নে, 

ত্রাস ও হিংসার বিনিময়ে, সেইসব মুখবায়বকে ভাসিয়ে দিয়ে এসে

পুনরায় বসেছি, দৃশ্যের মধ্যে ভুল করে ঝরে গেছে বহু ফুল, খবর রাখিনি ।






নিজেকে পুনরাবিষ্কারে দক্ষ নই, তাই অলিখিত প্রতিশ্রুতির দলিল রেখে যাই ।

আরও একটি পরিকল্পিত চিঠি লিখে, নতুন করে বাড়ির পুজোয় তোমাকে 

আসতে বলি । যারা আমার ভিতরে চিরকাল অন্ধকারে তাঁবু ফেলেছিল, 

যারা প্রজ্জ্বলিত চাঁদকে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে নিতম্বকম্বল দিয়ে ঢেকে 

অকস্মাৎ ছিন্ন করে বানিয়ে তুলেছিল দারিদ্রহীন হ্রদ, তারা সব ফিরে গেছে

একে একে । শুধু পরিধিনাশক কিছু ছায়া এগিয়ে চলেছে, আমাকে ছোঁবে

তোমারই অনুপস্থিতিতে । তাই, নৃশংস অন্ধকার কাঁদে : পরার্থপর সুরের অভাবে

গানগুলো ঝরে যায় রাতে । দূরে বিস্তীর্ণ গাছের সারি, স্থিরজল ঠেলে ঠেলে 

অনেক দেরিতে ফেরে আশাহীন নৌকো, মাছ নিয়ে, টাঙানো লণ্ঠন নিয়ে,

তার কিছু কথা ছিল, ছেঁড়া জাল ও বৈঠার সামান্য কাহিনি, আগুনের পাশে, বৃষ্টিতে । 











অরণ্য পুড়ছে, এর চেয়ে নিদারুণ অখণ্ড অস্বস্তি আর কী হতে পারে ! 

যদিও প্রেরণা পুড়তে পারে, পুড়ে যেতে পারে নিঃশব্দে বেঁচে থাকা ক্ষমা, 

অনেক দূরের তারা, সেও পোড়ে প্রেমে, ক্ষুধায়, বোধিসত্ত্ব স্নেহের জারণে ।

এই মাঘ-ফাল্গুন মাসে তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বীরভূমে, শাড়ির ওপরে

জড়ানো সুতোর কাজ করা একটা শাল, তুমি বাজার থেকে রিক্সা নিয়ে 

ফিরবে বলে দাঁড়িয়েছিলে । আমি পথভ্রান্ত বেমানান, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ,

পরিচিত লেখার খাতাটা নিয়ে সন্ধের আড্ডার দিকে যাচ্ছি । মা হারা মাতাল

যেমন রাত্রে ফেরে না বাড়ি, জীবনের ফাঁকে ফাঁকে যেমন জলপতনের শব্দ, 

ফুটে থাকা ফুল যেমন অনাদৃত সৌন্দর্য নিয়ে পোড়ে, তেমনই পুড়েছি আমি ! 

ঐ সমুদ্রটিলার নুন, ঐ রেললাইনের ভঙ্গুর পাথর, বন্ধ টিকিটঘর, রঙতামাশা, 

সবই সীমার মধ্যে ছিল, আমি দেখিনি । শাড়ির পাড় চওড়া ছিল কিনা, শালের

আসল রঙ সবুজাভ নীল না কি স্পর্শকাতর মেরুন, দেখিনি রত্মমালা থেকে

ছিঁড়ে পড়া মাণিক্য হারিয়ে গিয়েছিল কিনা, শুধু পতনমুখী আলোয় দেখেছি

তোমার অরুন্ধতী মুখ । লেখা ছিল, 'যাও সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ো সব ব্যাথা নিয়ে !'






একদিন বাইরে তাকিয়ে দেখি ঊষাকাল ভাঙছে । যাদের সূর্যাস্ত অবধি যাওয়ার কথা

তারা জমায়েত হয়েছে ফেরিঘাটে । ওখানেই বিচরণ আমার, ওখানেই আজন্ম অস্তিত্বটুকু

দায়দাস হয়ে বেঁচে । ঐ অনন্ত, ঐ আতিথ্য থেকে বহুকাল হল সরে এসেছি । সম্পর্কে

কেন আমি সবটা তার মতো করে ভাববো ! সেখানেও অংশ আছে আমার, আছে জমি, 

এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু শিশুগাছ, কাঁটার জঙ্গল, উঁইয়ের ঢিবি । আমারও

রয়েছে খাগের কলম, কালির দোয়াত, রঙের গভীরে ডুবন্ত তুলি, আমি তাই নিয়ে লিখব ।

একদিন অনুপম আঘাত থেকে বেরিয়ে এসে দেখি জন্ম নিচ্ছে প্রেম, বাকি সব মরে আছে

বীজের আশায়, জলের ফাঁকে, ক্ষতির অন্নে । আমিই শুধু ক্রান্তিহীন, জয়ের মাস্তুলে, ঝাউবনে, 

ভাঙা হাড় বেছে বেছে এসেছি ভূর্জতটে, রাতের সাগরে । ব্যবহৃত খামের উল্টোপিঠে যেটুকু

শূন্যস্থান আছে, সেখানেই লিখে ফেলি অঙ্গীকার, কবিতা হয়তো । স্থান ফুরায়, এখনো

অনেক লেখা অনিয়ত, অপ্রকাশিত থেকে যায় । বৈকুণ্ঠকে কোথায় রেখেছে সে,— কোন ঠিকানায়!

অপরাহ্নে জাল বোনা দেখি, দুপুরে তাঁতের মেশিন চালাই, বাড়ির উঠোনে যারা আলপনা দিত, 

তারা আজ নেই কোনও দূরের সীমানায় । টেবিলে ন্যস্ত থাকে খাতা, জীবনের হিসাব, অনাদায়ী ঋণ, 

নিমন্ত্রণের ত্রুটি, শিমুলের মৃত্যুর বেশ কিছু খতিয়ান, এবং অনেক বছর পর এই আমি ! 











বসতি ফুলের ডালি, আমি তাকে গ্রাম ভেবে ভুল করি ।

এসেছি কলকাতা থেকে, বইপত্র হাতে, ব্যাগভর্তি মন,

জামাকাপড়ে জড়ানো, আছে তাঁবু, লোহার পেরেক, 

সম্পর্ক গাঁথার জন্য হাতুড়ি । যেহেতু পাহাড়ে এখন আর

বরফ পড়ে না, তাই ধাপ কেটে ঝুমচাষ শুরু করেছে লোকে ।

তিনদিকে সবুজ পাহাড়, বাদামি মাটির ঢাল পাথরে জড়ানো, 

তাই গোপনে নদির স্রোত বয়ে চলে এখানে । যৎসামান্য বাড়ি, 

দোকানবাজার, খাদ্য ও বিশ্রামাগার । আমি স্থান পেয়ে যাই, 

আমি মৃত্যুর খুব কাছে, দারুণ অসুখে সব লিখে ফেলি,—

আলো জ্বালি, সন্তাপ মুছে ফেলি । তবুও রহস্য থাকে, 

পড়ে থাকে ভাঙা শব্দ, পথ হারানো অক্ষর, বিচ্ছেদমুখী চিহ্ন !

আত্মীয়েরা পক্ষ নেয় তোমার, আমার সমর্থনে এগিয়ে আসে

মরশূন্য লাইব্রেরি । কথা ওঠে, অন্ত্যমিল থেকে সরে যায় ক্রিয়াপদ ।

স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি বাজারে ফলের দোকান, রেলিং টানা 

মদের দোকানে পর্যটকদের ভিড়, যানবাহনের খোঁজে 

অনেকেই চলেছে খানিকটা নিচে, বুকস্টোরে । আছে সামগ্রী,—

অন্যায় ও অপব্যবহারের । লোহার কয়েদ ছিল এখানেই, 

একদা যা ছিল বন্দি, এখন সেটাই হয়েছে ভ্রমণের উপযোগী,

জংশন আর অববাহিকায় খোলা আছে চায়ের আস্তানা, 

বিদেশিরা বসে আছে সেখানে, শুধু সবুজ বনানীই হয়ে আছে অনিশ্চিত ! 



১০



তামার অচেনা রঙ, তবু সেটা আমাকে টানে, দ্বিপ্রহরে, ধূসর কম্বলে ।

তুমি তো ছিলে না সেই ভুলবোঝাবুঝির পরে, ছিল সে, কাঙাল হৃদয়ে, 

অজ্ঞাত অভিসারে । যে সূত্রে পরিচয়, সেই সূত্রে এতকাল বাঁধা ছিল দূরে, 

পীড়িত ছিল স্বপ্নে, আহত ছিল গানে । অভ্যাস খুলে ছড়ানো ছিল,

বালিশে ঘুমন্ত রাত, তার পাশে কবিতার বই, অন্য ঘরে, বিভেদদেওয়ালে ।

এ ঘর শূন্য দেখে ভরা এক সন্ধেতে এল ঝড়, বাসনা নিভেই ছিল এতদিন, 

স্ফুলিঙ্গ জ্বলেনি, দণ্ডী কাটেনি, সবুজ পানের গায়ে এতকাল লাগেনি চুনাদাগ ।

তবু হাহাকারের মতো  শস্যখেতে জন্ম নিল অচেনা গম, আত্মহত্যার আগে, 

গ্লানির আগে, মানুষের এই পরাভব, তঞ্চকতা, জেদ, দুপায়ে ঘিয়ের আগুন, 

একান্নবর্তী রক্ত, সবটুকু বোনা হল । বুনে নিল সে, বুঝতেই পারিনি— বৃশ্চিকের মতো

তার লতামূলে, চোরাটানে, প্রাণহননের শিকড়ে এতকাল লুকিয়ে ছিল সূচবেঁধা সন্ধান ।


৬টি মন্তব্য:

  1. আপাতত ৬টি কবিতা পড়লাম। পড়ে যা মনে হল তা আসলেই স্বর্গীয় আনন্দ। মনের খুব গভীরে প্রশান্তি পাহাড়ি পথ দিয়ে নামতে নামতে আবার ওঠা খোঁজ। জীবনের প্রতি ধাপে যে-বিস্তার যে-শোক যে-বিয়োগ তমসার প্রাণ আলোর উচ্ছ্বাস । মুগ্ধ করে রাখে আকীর্ণ করে জীবনের ঘটনা। বহু শব্দ বাক্য গঠন মনে দাগ কেটে গেল। আহা!!! বাকিটা চারটা পড়ে পড়ব। তখন আবার অনুভূতি প্রকাশ করব।

    উত্তরমুছুন
  2. পুরো ১০টি কবিতা অনন্ত জীবনের গাথা। কত যে বোধ গাঁথা রইল। কত ভাঙাগড়া গাছ হওয়া

    উত্তরমুছুন
  3. "মায়ার মতো মানুষের সবকিছুরই ইন্দ্রপতন ঘটে"

    আগেই পড়েছি। দশটি একসঙ্গে পড়ে ওঠবার সুযোগ পেলাম এতদিনে। বেশ ভালো লাগলো কবিতাগুলি। বিশেষত সিরিজ হিসেবে প্রতিটি কবিতাই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে আবার প্রতিটির এক স্বতন্ত্র প্রকাশও রয়েছে। শুভেচ্ছা জানবেন।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ নেবেন । হ্যাঁ, প্রতিটি কবিতা স্বতন্ত্র ভাবেই লিখেছিলাম সেই সময় । আবার কবিতাগুলো সিরিজ হিসাবেও জন্ম নিল । ঠিকই ধরেছেন । আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।

      ।। শুভদীপ নায়ক ।।

      মুছুন
  4. খাজা লেখা। ভাষার দক্ষতা তৈরি করুন আগে। ।

    উত্তরমুছুন