পুরুষরাত্রি
খয়েরি রক্তের কথা,নক্ষত্রের মিহিন গোলাপ...
কুঁকড়ে ওঠা গাঁজাখোর পিঠ-পল্লীপ্রান্তে কুমকুম জল
এরপরও বিকেল ফুরোয় না -
অগ্নিকুণ্ড ঘিরে চঞ্চু নেমে আসে, খুবলে নেয় ফিনকি অগ্নি
নরম ডিমের পরিমিত হলুদ পুঁছে দালানে ফিরে আসে যুবতী
ঐখানে ভরসন্ধ্যে,পোষা স্তনের গল্প বলে
তিনসত্যি ডোমবন আর রহস্য ছেঁকে নেয় আমাদের
পরিপুষ্ট আঁচে মাংস,আদ্যাশক্তি, কস্তুরী রস গড়িয়ে নামে
ধূ ধূ নিশীথে অর্ধস্ফুট সুড়ঙ্গে ঘুমজড়ানো মৃগয়া
উজাগর ঝকঝকে শাটার, শূলে উঠে, খিলখিল হাসে
ছায়াদের কেউ ধরতে নামে না
ধারাগৃহে সিঁদুরফোটা রাত ফুরোয় না...
আঁকশিঘর
লোহার পাতে জড়িয়ে থাকা সরীসৃপ
গিঁট খুলে খুলে যে সিঁড়িঘর মন্ত্রতাপ জানে
কেরোসিন বাতির আগে - পরে যে সবুজ কিম্বা লাল
এক কামরার সেই ঘরগুলোয় বিষম লুকোচুরি আর
খিলানের তিন কব্জা এঁটে চুরি দেখা চোখ
ভরপুর ফলের পতন শব্দে হাহাকার ঘুম
কাহার নিয়ে গেছে তাদের ঝকঝকে প্রিয় পালকি
ত্রিশঙ্কু উপত্যকায় – যেখানে হাপর টেনে ক্ষয়াটে মাছ
ওড়ে,চামড়ার অনেক গভীরে গড়ে আঁকশিঘর...
বাষ্পীয় মৃত্যুর অনুকরণ
১।
হাইড্রাঞ্জিয়ার ওপারে তফাৎ রেখে সাদা নৌকা পাড়ি দিচ্ছে
গাঢ় জলের দেশে, যেখানে মানুষকে ঘিরে মানুষেরা বড় হয়
সাঁকোর ওপর টলছে ক্রিমসন গোল আলো আর ভেতর ভেতর
ক্রমাগত বেড়ে উঠেছে বিষম দৌত্য
চূড়ান্ত চুম্বনগুলি যখন এঁকে দিচ্ছিলে প্রবাসী প্রেমিকার ওষ্ঠে
ব্রদেল থেকে প্রেমের ক্কাথ হাতে ঘূর্ণিপথ দিয়ে জ্যোৎস্নার উষ্ণ
উদ্গিরণ দেখে ফেলেছিল পথকুকুরের দল
নৈসর্গিক হাওয়ায় পুরনো বাস্তু আরও স্পষ্ট করে রেখেছে
ম্যাজেন্টা কাঁচ,যার ওইপারে ,হ্যাঁ ,বিস্তর আত্মহন্তারক
বনৌষধী নিয়ে বৃহৎ এস্টেটে নিছক পদরোপণ করেছে
ক্যাফের ঘনিষ্ঠ টেরেসে উত্তাপ বিনিময়ের শেষরাতে
দলিল দস্তাবেজগুলি ভ’রে উঠেছিল তেমনই পিছল সম্মোহে...
২|
তারপর কটিবন্ধ কখন যেন প্রতীক হয়ে ওঠে
রৌদ্রের নীচে চেকার্ড টেবিলে পরওয়ারদিগার রেখে গেছে
তাঁর অলংকৃত মঞ্জুষা... চিনে নাও
মায়াবন থেকে অভ্র ছেঁচে তোলা উজ্জ্বল তুষার
বৃন্ততটে ঝরে পড়ে
জাহাজের শেষ কার্নিভ্যালের মতন
যুক্ত ভ্রুয়ের পর ওই আহ্লাদিত চক্ষু
ফেনিল মদ ঢেলে দেয় কলিচুন ও মাটির নানান স্তরে
কফিনে ফিরে আসে ময়নাতদন্তের তর্জমা...
রেল গল্প
১.
লাল ঝকঝকে পতাকার মিথ ছিল
রুমাল নড়ে ওঠে অন্যান্য টেরেসে
যেন বিপজ্জনক কথা শোনার এই সময়
সাধু থেকে ঈশ্বর সরিয়ে দিতে
এক পরম পবিত্র
অর্গল খুলে নিতে হয়
খুনের আগে ও পরে ত্রস্ত ছুরি
উপেক্ষা করতে হয়
ধর্মাবতার, যূপকাষ্ঠে এই স্নেহপ্রবণ মাথা –
তেলচিটে সিঁদুর আর আগুনের ফ্ল্যাশ ।
বিষণ্ণ হলুদ পেঁচা প্রত্যেক বিকেলে
সময় বুঝতে পারে
সকালের সূর্য কোথাও ছিল না তখন
ট্রামগাড়িতে পুতুল মেনে নেওয়া
গল্প গড়িয়ে যায়...
২.
আর হলুদ পেঁচার সমবেদনায়
নোনা হাওয়া বুঝে নেয় এই উপকূল শহর
ঘোর-লাগা সাঁতারে একে অপরের নিঃশ্বাস ছুঁয়ে
গম্বুজ রশ্মি পড়ে চোখ - চোখের খানিক নীচে
ধাতব শব্দ অনুসরণের উদ্দেশ্যে এই বৈদ্যুতিক চোঙ
ড্রেসিং রুমের আলোয় বাজিমাত থাকবে
আলোড়িত হ্যারিকেন হাতে কেবিনের দোতলা
থেকে নোঙর দানের কথা বলে উঠবে কেউ...
৩.
সিঁদুর আলোয় রেলের ট্র্যাকগুলি এগোয় পিছোয়
লোহার গন্ধে লাফিয়ে ওঠে কেবিন
আমাদের শূন্যতা থেকেই লাল পতাকার ড্রাফ্ট...
হাতের পেছনে অনেক মুখ ঢেকে একের পর এক
মেইল ট্রেন ধাতব গড়িমসি নিয়ে চলে ।
গাঢ় ব্রিজের মানচিত্র - যারা জানলা দেখছে
তাদের জন্য - সিঁড়ি থেকে টেলিফোন ঘর অবধি
রেলিঙের চারপাশে তিনরকম সাবধানতায়
আমাদের চলাচল...
একঘন্টার অপেক্ষা
উজ্জ্বল কোট গায়ে তুমি এই বিভেদকে অস্বীকার করতে পারো
যখন প্রিয় বস্তুদের রং দুলে উঠছে সান্ধ্য আলোয়
আর আকাশ থেকে খসে পড়ছে খয়েরি খয়েরি পাথর
তোমার হাতের মুঠোয় তখন যেকোন প্রিয় বর্ণহীন হাত...
এটুকুই তো রং
যা আঘাতের মতন তোমায় সতর্ক করবে
এটুকুই সেই চিহ্ন - যা সিংহের মতন,
তোমার ওই চওড়া কাঁধে ভাগ বসাতে চাইবে !
আবার ক্লান্ত হয়ে পড়বে একটা কালো কাচের গাড়ি
আর ততোধিক কালো উজ্জ্বল স্যুট তোমায় মূল্যায়িত করবে...
ছিদ্রাল বাড়িটির বিষয়ে হতবাক হ’তে হ’তে
আধপোড়া একটা পিয়ানো জায়গা করে নিচ্ছে তখন
আধডোবা একটা হাত, অনুতপ্ত হয়ে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে
এবং এই কালো কাচের গাড়িতেও ... কারো ফেরার কথা ছিল না...
বিচারকক্ষ
ঘরভর্তি লোক তীব্র উচ্ছ্বাসে তাকিয়ে ফেলছে
ঘোড়ার প্রতীয়মান অংশগুলিতে ...
মুখে নানারকম ধ্বনিসহ বাজি রাখছে ওরা
ঘোড়ার উচ্ছ্বাস বিষয়ে
ঘোড়ার ফুঁসে ওঠা নাসায়
টর্চ জ্বেলে বাতাসের ধার পরীক্ষা করছে কেউ কেউ
সূর্যের তীক্ষ্ণতা নিয়ে ওদের কোনও বক্তব্য নেই
সূর্যের নীচে শিহরিত হ’তে হ’তে ওরা
ঘোড়ার স্বীকারোক্তি নিয়ে অনুতপ্ত হচ্ছে ...
উৎসর্গ
মায়াজন্ম ছেড়ে লাল পাথুরে রাস্তায় বিস্তর দিন
তামাটে যুবতীরা অভ্যর্থনায় ভরিয়ে তোলে গ্রীষ্মসকাল
তুলট ফল মুখে গুঁজে রেখে গেছে কেউ
বিজাতীয় শিশির ওষ্ঠে গেঁজে ওঠে
করপুটে তুলে ধরি লুন্ঠিত পদ্মবীজ, কৃষ্ণ নক্ষত্র
এসব তোমার উদ্দেশ্যে,হে মৃদু ত্বকের দেশ !
রাণীর গরিমায় তোমরা প্রভাতফেরি দেখে
রণক্লান্ত পাঞ্জা রাখো এ ক্লীবতায়
সর্পিল চলনে আরও মুগ্ধ ,আরও অগাধ প্রশস্তি
তোমার সম্মুখে - গির্জাঘর ছেড়ে এ মায়াজন্ম
চিত্রকর ফুটিয়ে তোলে হলুদ রঙের অতিব্যবহারে
যেন এক নিঃসীম খোলা জানলা
রাখা আছে তোমার পাশে
যেন এক বিস্তৃত শোভাযাত্রা সেজে উঠছে
তোমারই উদ্দেশ্যে ...
খুব সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুনঅপূর্ব!
উত্তরমুছুন