এই সংখ্যার কবি জয়ীতা ব্যানার্জী।নিবাস - বাঁকুড়া। ২০১৬ সাল থেকে প্রত্যক্ষ ভাবে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও ব্লগে লেখেন। একক কোনও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি।
আতিথেয়তা ও শীতকাল
― জয়ীতা ব্যানার্জী
১
সেসব লোডশেডিং, আধখাওয়া চাঁদের কাছে
হাঁটুমুড়ে বসে থাকা। তারাদের উপকথা বেয়ে
তখনও নামত নীল। মাকড়শার জালে আটকে
শেষ হতে হতে ফের জ্বলে ওঠা। কাওকে না বলে
এমনি বেহায়া সিঁড়ি থেমে যেত। চিলেকোঠা একা
লোডশেডিং সেসব, রঙিন ছায়ার সমারোহ
২
আমাকে উঠোনে ফেলে উঠে গেছে ও বাড়ির সিঁড়ি
কলতলা বাঁয়ে রেখে চুপিচুপি সরেছে বয়স
আমার পায়ের থেকে বটগাছ দুহাত দূরেই-
এখন অনেক বড়। ঝুরি বেয়ে ওঠে নামে স্মৃতি
কোথা থেকে জল আসে, পিছুটান ধুয়ে ধুয়ে শেষে
পিছল শ্যাওলা আর একমুঠো ঘাস রেখে যায়
৩
ঠিকানা লিখতে বসি। সহজ যদিও চিঠি লেখা
প্রতিবার ভুল হয়, খাম থেকে চোখ তুলে আনি
লাল ধুলো মনে পড়ে, বালিহাস, দুচারটে নামও
অনায়াসে বলে দিই। অথচ বাড়ির মেঠোপথ
ঠিকানা লিখতে বসে সদর দরজা ঢেকে যায়
নামের আখর খুঁজি, নেমপ্লেট ভেঙে পড়ে থাকে
৪
কিছুটা রোদের মতো, একা একা জ্বলে আর নেভে
রাখতে শেখেনি তবু, পরিয়েছ স্মৃতির আগল
একটি মোটেই তালা ! বাঁধবে কীকরে ফিরে আসা
উঠোনের কাছাকছি শীত এলে বেশ বোঝা যায়
একদিন এখানেও ভোরের আজান শোনা যেত
তুলসী মঞ্চের পাশে পরিপাটি আমপাতা, ঘট
৫
আঁচল পেতেছে ঘাটে সোহাগী শিশির বোনা আলো
সাদা কালো ঘুম ভেঙে তুমি ফেরো ভোরের উঠোনে
নদী পেয়ে বর্তে গেছে, ভুলে থাকা জনপদ ভাবে
জল পেয়ে জল ভাবে বয়ে চলা কতটা সহজ
সফর রেখেছ হাতে। পরিযায়ী শীতের কাছেই
সে সফর শেষ হলে, ওইচোখে পালক চিনিয়ো
৬
জানালা নিয়ম করে রঙিন শিশিতে রোদ ভরে
মেলে দেয় সারি সারি উপশম। প্রবীণ ব্যথারা
তখনও আলগা পায়ে রাত্রিদোষ জড়িয়ে রেখেছে
আপাত বিস্মৃত জ্বর। গরম জলের স্বাদ জিভে
তিক্ততাই সমঝোতা যতক্ষণে জেনেছে আত্মীয়
কোলের আতিথ্য ফেলে সোহাগী বিড়াল চলে গেছে
৭
পিছল পাথর আর পাতায় মেশানো যত জল
নীল হয়ে আছে মেঘ। অথচ তেমন বর্ষা কই
মাঠের হরিণ দেখে শিকারী ডেরায় ফিরে আসে
নামতে নামতে রাত হরিণ-ও ঘুমোতে গিয়ে দেখে
উল্টানো চাঁদের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের সাথে
শিকারীর মরদেহ। এমনি হেলায় পড়ে আছে
৮
ভুলবার মন্ত্র বল, দ্যাখো অনুরোধ করছি না
যতটা পেরেছ নিজে, ছিটেফোঁটা তার, বাকিটুকু
নেই বলে ধরে নেব কোনওদিন ছিল না আসলে
অথবা অতিথিসম। এসেছ খেয়ালে, চলে গেছ
আমিও লিখেছি কিছু আতিথেয়তা ও শীতকাল
প্রেমের আক্ষেপে নয়, ভালোবেসে অবজ্ঞা শেখাও
৯
মায়া ফেলে গেছে ভোর। উঠেছ যখন ক্ষীণ আলো
সুতোর মতন যেন মেঝের চাদরে ছায়া আঁকে
কুড়িয়ে নিয়েছে খই। একপাশে নিকোনো উঠোন
শেষযাত্রার মতন বিসমিল্লাহ বেজেছে তার
প্রতিটি শ্বাসের সাথে। মায়াময় ফেরেনি তবুও
শুধু ছায়া সরে এসে প্রশ্রয়ের সদর পেরোয়
১০
সেদিনও নবান্ন ছিল। দুধসাদা আতপের ঘ্রাণ
নিকোনো উঠোন আর আলপনা মাটির সরায়
ধূসর শীতের সাথে বোঝাপড়া সয়েছে। রয়েছে
ধানের আলোর কোলে মাথা রেখে জমিয়েছে জল
মলমাস শেষ হল ? ফিকে হয়ে এসেছে হলুদ
আরবার রং দিয়ো। রং ছাড়া অপেক্ষা বাঁচে না
এই সিরিজের ১০ টি কবিতাই অনবদ্য । আপনার লেখা যে কটি সিরিজ পড়েছি । তার মধ্যে সবচেয়ে মুগ্ধ করছে এই সিরিজটি । অসামান্য প্রতিটি কবিতা । কবিতাগুলোতে একটা স্মৃতির টানটান আবহাওয়া আছে, সেইসঙ্গে জীবনের গভীরতা । বরাবরই যেমন পড়েছি আপনাকে, আপনি তেমনই লিখেছেন ।
উত্তরমুছুন।। শুভদীপ নায়ক ।।
লেখা যদিও নিজস্ব অসহায়তা, তাগিদ।পাঠকের মুগ্ধতা তাকে অন্য মাত্রা দেয়। ধন্যবাদ শুভদীপ।
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুনসব কটি কবিতাতেই শীত এবং নরম উত্তাপ।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুনঅশেষ ধন্যবাদ
মুছুনজয়ীতার কবিতার শব্দজাল আচ্ছন্ন করে রাখে পাঠের পরে আরও অনেক ক্ষণ অব্দি।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ তনিমা'দি।
মুছুনজয়ীতার কবিতার শব্দজাল আচ্ছন্ন করে রাখে পাঠের পরে আরও অনেক ক্ষণ অব্দি।
উত্তরমুছুনদি, তুমি এভাবেই কবিতায় রঙ ভর 🙂 আর পাঠকের অপেক্ষা বেঁচে থাক 😍
উত্তরমুছুনধন্যবাদ সৌমিতা
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনসব কবিতাগুলিই খুব ভালো গো জয়ীতা, ভালোবাসা
উত্তরমুছুনধন্যবাদ জয়শ্রী'দি
মুছুনছন্দের নিঁখুত পটুতাই জয়ীতাকে চিনিয়ে দেয়। দেয় তাঁর তুলোতুলো স্মৃতির অভিজ্ঞান, যেন কুয়াশারঙ ভোর!
উত্তরমুছুনধন্যবাদ শাশ্বতী।
মুছুনছন্দের নিঁখুত পটুতাই জয়ীতাকে চিনিয়ে দেয়। দেয় তাঁর তুলোতুলো স্মৃতির অভিজ্ঞান, যেন কুয়াশারঙ ভোর!
উত্তরমুছুন