রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২

সৌমী আচার্য্য

                              




শ্রাবণের ধারার মতো



পর্ব _১



মাথার ভিতর তীব্র জ্বালা নিয়া তিন চারিদিন অতিবাহিত করিয়া অবশেষে সোহাগবালা আদিত‍্যনাথের সমীপে উপস্হিতি হইল।মুখভঙ্গি দেখিয়া অচিরেই বুঝিল নিজের অবস্হান হইতে বিন্দুমাত্র সরিয়া আসার অভিপ্রায় আদিত‍্যর নাই।তথাপি সোহাগবালা শেষ চেষ্টা করিতে ছলছল চক্ষে আদিত‍্যের হাত দুইখানি চাপিয়া ধরিল।

-আমার সাথে কাটানো সব সময় কি তবে মিথ‍্যে?তুমি কি আমায় কোনদিন ভালোবাসো নাই!সেই সব মধুর শব্দ,স্পর্শ কেবল ছলনা!

আদিত‍্য এই অবুঝ নারীটিকে কিছুটা শান্ত করিবার অভিপ্রায়ে বলিয়া বসিল,'যতসব অস্বাভাবিক কল্পনায় নিজেকে পীড়া দিয়া যদি তুমি শান্তি লাভ কর তাহাতে আমার কোন অসুবিধা নাই।শুধু একটিই অনুরোধ দয়া করিয়া আমায় একা থাকিতে দাও।তোমার সাথে অকারণ বাক‍্যব‍্যয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই।'

-জানি তোমার সকল আগ্রহ এখন কেবল চন্দ্রনাথের বৈঠকখানায়।আমার সঙ্গ আর ততটা মধুর নয়।

-অহেতুক বাক‍্যালাপে আগ্রহ বোধ করিনে।দীর্ঘকাল তোমার পীড়া হইবে বোধ করিয়া নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়া নিজের ভেতরেই এক অসন্তোষের বারুদ স্তূপিকৃত করিয়াছি।সেই বারুদে অগ্নি সংযোগ করিলে বোধকরি বহু সম্পর্ক নষ্ট হয়।

সোহাগের দুইচক্ষু ভাসিয়া যাইতে লাগিল।মহিলামহলে তাহার স্বামী সোহাগী নামটি বুঝি মিথ‍্যে বলিয়া প্রকাশ হইয়া পড়ে।কেবলি ভালোবাসায় উথলিত স্বামীর আচরণ মনে পড়িতে লাগিল আর ততই সে বিচলিত হইয়া উঠিল।কি করিবে ভাবিয়া না পাইয়া সজোরে মস্তকে করাঘাত করিয়া বসিল।এরূপ আচরণে আদিত‍্যনাথ যারপরনাই অসন্তুষ্ট হইয়া চিৎকার করিয়া তীব্র ভর্ৎসনা করিল সোহাগকে।

-অন‍্য কোন পুরুষমানুষ হইলে তোমাকে আচ্ছা করিয়া বুঝাইয়া দিত স্ত্রীর অধিকার ঠিক কতটুকু।যতখানি তোমার ভালো লাগা মন্দ লাগার দাম দিয়াছি তাতেও তুমি সন্তুষ্ট নও।সবটুকু গ্রাস করিলে তবে তোমার শান্তি!আর নয়,নিজের ইচ্ছার সঙ্গে যতটুকু আপোষ করিয়াছি সেই ঢের।শুধু তোমাকে ঘিরিয়া বাঁচিবার মতো মন আমার নাই,এই সত‍্য।

সোহাগ ফুলিয়া ফুলিয়া নিজেকে সম্বরণ করিবার বৃথা চেষ্টায় ঠোঁট চাপিয়া ধরিল,'তবে তোমার মনে এই ছিল!সব মিথ‍্যে,সব।তুমি অন্তরে অন‍্য কোন মানুষ হইবার বাসনা পোষণ কর!আর প্রকাশ কর অন‍্য কিছু!'

দৌড়াইয়া ঘরে ঢুকিয়া শয‍্যায় আছাড় খাইয়া পড়িল সোহাগ।তাহার সব ধারণা মিথ‍্যে!সে সুখি হইয়াছে ভাবিয়া মনে মনে অহংকার করিত সে সব ধূলিসাৎ হইয়া গেল।কিন্তু কেন তাহার মন চাহিতেছে আদিত‍্য এই মুহূর্তে ঘরে আসিয়া তাহাকে বক্ষে জড়াইয়া ক্ষমা চাহিয়া বসুক?আদিত‍্য বারন্দা হইতে আকাশে উড়িতে থাকা পাখির দিকে করুণ চক্ষে চাহিয়া মনে মনে জপিয়া ওঠে,'মুক্তি চাই বাসায় ফিরিতেও চাই।এই দুইয়ের ভেতর যে অদৃশ‍্য সুতোটি এতদিন আমার আয়ত্তে ছিল তা বুঝি ছিঁড়িয়া যায়।ফিরিয়া যাইতে চাই সোহাগের কাছে কিন্তু এবার ফিরিলে আর বাহির হইতে পারিব না।'

(ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন