রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০

শৌনক দত্ত

                                       




সৃজন এই সংখ্যার কবি শৌনক দত্ত।জন্ম - ৭ ই আগষ্ট( ২১ শে শ্রাবণ ) কোচবিহারের ব্যাঙচাতরা রোড। স্কুল জীবন শুরু জেনকিন্স -এ আর সেই সময় থেকেই লেখালিখির সূত্রপাত। সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা এবং ওয়েবজিনের। বর্তমানে ইরাবতী ডেইলি ওয়েবজিনের সাথে যুক্ত।

প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ :

জল ভাঙে জলের ভেতর (২০১১)

ঠোঁটে দাও জ্যোৎস্নার বিষ (২০১২)

ডুব সাঁতার (২০১৭)

নিরুদ্দেশ গাছে সন্ন্যাসীর মুখ (২০১৭)

গল্প গ্রন্থ :

কারুময় খামে অচেনা প্রেম (২০১২)

শখ বইপড়া, লেখালেখি, ছবিতোলা, গান শোনা, ভ্রমণ। বেশ কিছু গানও লিখেছেন।

রা' প্রকাশন থেকে দুই মলাটে বন্দী হতে চলেছে তাঁর প্রবন্ধের সমাহার।


পরকীয়া

অন্য  বিছানায় শুয়ে 

সমুহ সময় 

ধাতস্থ হবার

 আগে অন্যকেউ

 মুখস্থ করে ফেলে 

নকশীকাঁথা বুনন।

বৃষ্টির নকশীকাঁথা তুমি আমাকে উপহার দেবে

আর

আমি তোমাকে উপহার দেব নিঝুম দ্বীপের শাড়ি।


কুয়াশা ভেজা রোদ,দুপুর

০৭ জানুয়ারি,২০১৮



আমার ছেলেবেলা

যে-শহরে বেড়ে ওঠা-তার ডাকটিকিট জুড়ে পাহাড়। যখন-তখন আমরা সর্ষে ফুলের গন্ধ পকেটে নিয়ে পাহাড়ে যেতাম। বড়রা যেত সমুদ্রস্নানে।তোর্ষার বাতাসে ভেসে বেড়াত তাদের অলৌকিক মেয়েবন্ধুদের শিহরণজাগানো সব ফিসফাস। ঢেউয়ের ডানায় চেপে ‘লাল দোপাট্টা’ উড়িয়ে তারা ফিরে আসতো।আমরা রঙধনু বোতাম খুলে উড়িয়ে দিতাম ঘুড়ির শৈশব।


শীত সন্ধ্যা,আশ্রম

১২ ফেব্রুয়ারি,২০১৮


আমার শরীর


তোমার সাথে কাটানো যে শরীরটা রোদ ভাঙলো ...

সে শরীর প্রতি রাতে পাহারা দিই, 

দেখি 

এক নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের দিকে দরজা খোলা

যেখানে ধ্যানী বয়স শিরার ভেতর বিশ্রাম নেয় 

অবসন্ন জাহাজ চোখে অবতরণ করলে

আমরা প্রতিবিম্বিত হই

জোছনায় বোনা লাইট হাউজে।



বেডরুম,মধ্যরাত

১২ আগষ্ট,২০১৮



নির্জনতার ডাকনাম মৃত্যু


জন্ম খুলে বসে আছে মৃত্যুর বিস্ময়,একটা প্রেমহীন আয়নায় প্রতিদিন মুখগুলো গলে যায় রোদের বিকালে মৃত ডুমুরের নীরবতায়। ক্রমশই রহস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে চিলেকোঠায় পুরোনো চিঠির বান্ডিলে শব্দের সিম্ফনি, নৈঃশব্দ্যের নিঃশ্বাস।

বল “মৃত্যু” এবং পুরো বাড়িটা জমে যায়—


পড়ন্ত বিকাল, স্টাডি

০৩ জানুয়ারি,২০১৯



হঠাৎ পাওয়া ছেলেবেলা...


রাফ খাতা ভর্তি দুপুর, সাইকেল নির্জনতা

সেই সব ছায়াপথ… সেই সব মুখরতা

হঠাৎ পাওয়া ছেলেবেলা!

ঘড়িপাড়ার পুল পেরিয়ে স্মৃতি বনের পাশ দিয়ে যে রঙ্গীন ঢালু পথ চলে গেছে, তার শেষ মাথায় সুনসান একটা ছেলেবেলা দাঁড়িয়ে । নয়নাপাড়ায় কুটুম্ব বৃষ্টি নামলে নির্জনতার বুকে জমা হওয়া সমস্ত বিষন্নতার সংগীত আমার মুখস্থ আমি তার স্বরলিপি লিখে রেখেছি জং ধরা নীল বেহালার তারে.

ফেরিওয়ালাঘুম দুপুরে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা পথের উড়নচন্ডী ধুলোয় যত হাহাকার ডুবে থাকে,সোনালী, রুপালী আধুলির ছক আঁকতে আঁকতে খুব তাচ্ছিল্যে আটকা পড়েছে আমার যাবজ্জীবন আমার ক্ষয়ে যাওয়া পেন্সিলের পাশে,

সে পথ আমার সমগ্র সংসার হারিয়ে ঘরের দিকে ফিরে যাওয়া......

শীতে বেডরুম ঢাকা, 

মধ্যদুপুর

০৫ জানুয়ারি,২০১৯




শীত ২০১৯



দিন গুলো অ্যাজমাটিক… নিঃশ্বাসের টানাপোড়েন। আমাদের নাগরিক জনপদে শীত আসে দূরবর্তী মফঃস্বল থেকে উলাক্রান্ত জানালায় । শীত এলো আমাদের শহরে, শীতের গল্প নিয়ে....

আমাদের ক্যালেন্ডার শীত রঙের দাগে ভরে যাচ্ছে, হিমফুল চোখে প্রতিদিন দেখি। রঙিন শিশির বিন্দু বিন্দু মুগ্ধতায় নির্বাক বায়োস্কোপে ছবি হয়ে ফোটে। অমিলিত বিচ্ছেদে তুমি শেষমেষ দুরত্বপ্রবাল।

পায়ের ছাপ হারিয়ে যেতে যেতে হলুদাক্রান্ত দুপুর গুলো বাজেয়াপ্ত । শৈতপ্রবাহ শেখায় দুই অক্ষরের মাঝে বিচ্যুতির ব্যবধান। বার বছর আগের একটা শীতার্ত প্রেম কম ভোল্টেজের আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বুকের ব্যালকনিতে, প্রায়ই। খুব উসখুস ৷ একা একা এক কাপ লাল চায়ে ঊষ্ণতার ঘ্রাণ এবং কতিপয় দৃশ্যের বিষন্ন জলরঙ,

অথচ আমার কিছুই জানা হয়না…

শুধু শুধু সারাটা শীতঘুম জুড়ে সুনীতি হাইস্কুল

পুকুর ঘাটে সবুজ পাড়ের শাড়ি পুড়ে যায়, যাচ্ছেতাই....


সন্ধ্যা,বেডরুম

০৬ জানুয়ারি,২০১৯








শহরের শীতকালীন উৎসব

___________________________

আজকের আবহাওয়ায় কোন শোক নেই ।

জাহাজ ভিড়েছে 

নাবিকের সমুদ্র ভেজা নিঃশ্বাস ঢুকে পড়ছে... শহরে, অলিতে গলিতে ।


নিশুতি যাপন… খুব অগোচরে, 

যেমন করে পড়ে থাকে ঘুমের ভেতর বহুকাল আগের আধুলি স্বপ্ন ।

কবরের নৈঃশব্দ্যে সন্ধ্যা নামছে ৷গ্রীলে ঝুলছে তরুনী বউদের রাত্রিকালীন পোষাক । 

এখানে আমার কোন উপাসনালয় নেই ।


মাঝেমধ্যেই রানিপুরম ধরে ধরে একটা সুড়ঙ্গ পথে যেতে সাধ হয়

যে পাহাড়ের নিচে রেখে এসেছি সোনারঙ ‍দুপুর, 

রাতের ডুব, কিছু ভেজা আঙুল ।


আমি বাড়ি ফিরে এসেছি... অগোচরে 

দূরে... দূরে সরে যাচ্ছে বন্দর

ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে গুটিয়ে থাকা পথের রঙ ।

মধ্যদুপুর

১৬ জানুয়ারি,২০১৯


নগর

_______

ঝুপঝাপ সন্ধ্যা নামছে

গাছ মুছে দিয়েছে

রোদের যৌবন

করিডোরের অশ্রু চেটে নেয় অন্ধ স্ট্রীট লাইট

হেঁটে যায় জ্যামিতি-বক্সের দিকে-

ঠিকানাবিহীন এক চিঠি

গতি কামড়ে ধরেছে পা

পাতায় পাতায় ভেঙে পড়ছে ঘর-বাড়ি

উটের ছায়ায় ছায়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে নগর।


সন্ধ্যা,নগরের পথে

২০ জানুয়ারী,২০২০


ফ্যান্টাসি

__________

পেরেক আর দেয়ালের প্রেম নিয়ে কথা ফুরালে

চুমু থেকে উড়ে যায় ঠোঁট

শপিং মলের ভেতর জ্বল জ্বল করছে

এক আকাশ তারা।

জঙ্গল সাঁতরে ফিরে এসেছে ঘুম

যুবতীরা টুপটাপ ঢুকে পড়ছে আধ খাওয়া আপেলে

পাটিগণিতের প্রস্তাব থেকে

গড়িয়ে পড়ছে ঘুঙুর।

ভোরবেলা!

নদীর শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে পোড়াবাড়ির গন্ধ!


মধ্যরাত, ব্যালকনি

২৩ জানুয়ারী,২০২০



মাধুকরী হাতে নিয়ে

___________________________



পোয়াতি পালক থেকে ঝেড়ে ফেলো অতীতের সব পাণ্ডুলিপি। জানো তো-

সুতীব্র আলোও এক আজানা অন্ধকার।


যে শৈশব বন্ধু অলিন্দে সাগর হয়ে বেলাভূমি খোঁজে। তার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছি পাখির শিস!আলোর ফেনিল থেকে মুছে নিয়ে বিদেহী আগুন। কুটিরের দায় মুছে সূর্যের প্রলেপ দিয়ে প্রতিদিন অন্ধকার লিখি। আর,চিরুনী জুড়ে তল্লাসী জীবন!


গোপন জ্বরের মতো পৃথিবীরও আজ স্বপ্নদোষ। ঐ দেখো,ভিক্ষার থালা থেকে শালিক খুঁটে খুঁটে খায় দিন।

চোখেতে বর্ষামঙ্গল লিখে আমার নিখোঁজ। অন্ধ চিত্রকর ক্যানভাসে হাসি ছড়িয়ে কান্না আঁকছে হাজার বছর।


আমরা জবা ফুলের মতোন মুখস্থ করেছি বিমুগ্ধ জলের ছাপ!



বাসা,মধ্যরাত

১৬ জুলাই,২০২০



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন