রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০

সোহেল ইসলাম

                                         

   


এই সপ্তাহের কবি সোহেল ইসলাম।জন্মঃ ১৯৮৫ ১লা মে । ২০০১ থেকে লেখা শুরু। প্রথম লেখা ব্যাক্তিগত না পাওয়া থেকে।তারপর দেখেছেন শুধু নিজে নয় হাজার হাজার মানুষ না পাওয়ার পুকুরে গলা জলে ডুবে যাচ্ছে,ডুবে আছে, তাদের কাছে নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য লেখা। কবির মতে লিখলে ,না বলা গুলো, না বোঝাতে পারা গুলো বলতে পারেন। কবিতা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "সবাই প্রতিরোধ শিখুক,প্রতিবাদ শিখুক,নিজের দাবি নিজেরাই জানাতে শিখুক।কেউ কারুর কান্না কেঁদে দেয় না।রাজস্থানের গ্রামে রুদালি ভাড়া পাওয়া যায়,কিন্তু আমাদের রুদালি আমরাই হব।কাউকেই এক ছটাক জমি ছাড়বো না।" প্রিয় কবিঃ রঞ্জন আচার্য। প্রিয় বই : সম্পর্ক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - আব্বাচরিত(প্রথম প্রকাশ : নভেম্বর, ২০১৮।দ্বিতীয় প্রকাশ : এপ্রিল,২০১৯ প্রকাশক : নাটমন্দির)।লেখা 'উত্তর দক্ষিণ' পত্রিকাতে শুরু,আজও সে পত্রিকার সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন।আসুন পড়ি তার কবিতা I

সাতে সমুদ্র
সোহেল ইসলাম
১.
যেদিন দুজনে নদী পার করলাম
পায়ে বালি নিয়ে
নতুন ঠিকানার নেশায়,
আড়চোখে তাকাল পৃথিবী
হলুদ আলোটা ধরতে যাবো যেই
বিকেল লুকিয়ে নিল

আমাদের এক হওয়ার উৎসবে
অন্ধকারে শুধু সাঁতার কাটলাম
২.
আবৃত্তি শেখা স্কুলের গলিতে ঘুরপাক খাচ্ছি
পাশ দিয়ে রিক্সা পার হল
রিক্সার চাকায় পিষে গেল অপেক্ষা

কাপড়ের তারে উড়ে এল দুটো পাখি
মাঝখানে আধভেজা কাপড় আমাদের
বাঁধের রাস্তাটা দেখছে,
ওই রাস্তাতেই
আলাদা হতে হতে মুখ ফিরিয়েছিল
ছায়া ―
        যেন হারমোনিয়ামের দুটো রিড

একটা সাদা                 একটা কালো
৩.
ভাঙা সাইকেলের ছায়া শান বাঁধান পুকুরের মত
শরীরে খয়েরি রঙের শেওলা
অথচ,লোহার কঙ্কালে একদিন জীবনের শিস ছিল
যমুনার স্রোত ছিল 

আজ,
বাজারের ব্যাগ
এতদিনকার চলা পথ
পথের হিসেবেই শুধু বেঁচে থাকা
খোঁজ খবরে আকুল কোনও কাপড়
ঝাড়পোছ করে না
বিশ্বকর্মার ফুল সিঁদুরও পড়ে না কতকাল

নিজের ছায়াকে দূরে পাঠানো
আর কাছে টেনে আনাই এখন তার কাজ
৪.
খন গানের আসরে
সীতার নুপুর খুলে গেছে
রামচন্দ্র ঝুঁকে বসছে মাটিতে
হ্যাজাক লণ্ঠনের আরতিতে
মায়ার হিড়িক―
এ দৃশ্যটা উলের কাটায় আসনে তুলেছিলি,
যত্নে আছে,
কাঁসার থালায় আমন ধানের দুঃখ নিয়ে খেতে বসি

দশভূজা,তখন তুই কোন আসনে 
আমাকে খুঁজিস ?
৫.
সমস্ত কিছু চুলোয় যাক
এভাবে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে
ভুলে যাওয়া ঢের ভালো
কিন্তু পারছি না
এর বেশি জানানোর নেই আপাতত

রাস্তা দিয়ে তাকাতে তাকাতে যাই
ফেরার সময়ও তাকিয়ে থাকি
বারান্দায় ফাঁকা টুল
তোমাকে দেখি না

এর সব কিছু
থেকে যাবে―
দেওয়ালের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেড়ে ওঠা
বট পাঁকুড় হয়ে,
শুধু,তুমি আমি থাকব না
৬.
মনে মনে চাইছি
তুমুল বৃষ্টি নামুক
মাঝের গর্ত ভরে যাক জলে
তখন না হয়
সাঁতার কেটে এক হওয়া যাবে
৭.
তুমি যেই মুখ ফেরালে
আমি কলম তুলে নিলাম
কিছু একটা ছিল বলেই না
এই চাওয়া
তুমি মানতেই চাইলে না
সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেট পার করে গেলে
শামুকের খোলা মুখের দিকে ফিরেও তাকালে না

কি আশ্চর্য,এই সম্পর্কের ওঠানামা

১৯টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর স্যার,, এভাবেই লিখে যান

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো । আলো আরো ছড়িয়ে পড়ুক ।

    উত্তরমুছুন
  3. রিয়া চক্রবর্তী৯ আগস্ট, ২০২০ এ ১২:১০ PM

    খুউব সুন্দর ।সম্পর্ক তো এমনই। বাউণ্ডুলে। ঘরও চায়, আবার বাঁধনেও হাঁপিয়ে ওঠে।প্রতিটা লেখা খুউব সুন্দর হয়েছে সোহেল।

    উত্তরমুছুন
  4. ১,৩, ৫ দারুণ লাগলো। বাকিগুলো ভালো।
    তবে তোমার কাছে বিষ্ফোরণ এর প্রত্যাশা করি। - কৌস্তুভ কুন্ডু

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বিষ্ফোরণের আগে জ্বলে ওঠার প্রয়োজন,সেটাই যে পারছি না পার্থ,ভালোবাসা নিও,তোমার কথা মনে রাখব

      মুছুন
  5. খুব ভালো লেগেছে সোহেল। ভালো থেকো।

    উত্তরমুছুন
  6. খুব ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা সোহেল।

    উত্তরমুছুন
  7. চমৎকার লেখা। মায়াবী হলেও বড় রক্তমাংসের এই লেখা। এই লেখার ধারাটি গভীর পরিণতির দিকে যাবে। আমার মন বলছে। আরে একটু বেশি লেখো। আমরা তো কতদিন অপেক্ষায় আছি।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. পঙ্কজ দা তোমার মতামত মানেই তা দিঘির মতো গভীর।সব কিছু হচ্ছে শুধু নিজের লেখাটাই হচ্ছে না।অবশ্যই আরও বেশি লেখার চেষ্টা করব।ভালোবাসা নিও।

      মুছুন
  8. আচ্ছন্ন হলাম। টুপি খুললাম।

    উত্তরমুছুন
  9. খুবই সুন্দর।
    "মাঝের গর্ত ভরে যাক জলে
    তখন না হয়
    সাঁতার কেটে এক হওয়া যাবে"
    আবার এই লাইনটা
    "দশভূজা,তখন তুই কোন আসনে
    আমাকে খুঁজিস ?"

    বোঝাই যায় ক্রমশঃ নিজেকে ভাঙে নতুন করে তুলে ধরার চেষ্টা।

    শুভেচ্ছা।
    আরো ভালো কিছু লেখার জন্য।

    উত্তরমুছুন