সান্ধ্যসঙ্গীত
…………………
যুগান্তর মিত্র
সন্ধ্যারতি শুরু হলেই ঝুরঝুরে হাওয়া
নেমে আসে উঠোনে জুড়ে
আর সেই হাওয়ায় মিশে যায়
যন্ত্রণার অভিজ্ঞানমালা।
# # # #
ও চাঁদ, নিশিথ সুন্দরী,
তোমার উড়নিতে জড়িয়ে যাচ্ছে
আমার নাতিশীতোষ্ণ আবদার,
যাবতীয় ভালো লাগার প্রাচীন মুহূর্ত।
উড়ে যাচ্ছে জবানবন্দির মতো নিজস্ব অক্ষর।
আর যে শোকের অনুবাদ নিয়ে
আমি একা একাই ফেরি করি অক্ষরবিন্যাসে
সেসব গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরে পড়ে মাটিতে
জড়ো হয় স্তূপের আকারে।
জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া প্রিয় মুখ
সারি সারি জমা হয় ধুলোর মলাটে।
(২)
বিকেল যখন উবু হয়ে বসল
ঠিক তখনই আলো ছুটে গেল
নদীর কাছে, জলোচ্ছ্বাসের কাছে।
গান ঝরে পড়ছিল তার শরীর থেকে।
হাওয়া এসে সেই গান কুড়িয়ে নিয়ে
ছড়িয়ে দিল দিগ্বিদিকে।
ইমনের সুর বেজে উঠছে হাওয়ায় হাওয়ায়।
ও আলো, চিরবিলাসিনী আলো,
তোমার শরীরজুড়ে এত প্রেম
এত মুগ্ধবোধ, কে পরাল মালা ?
আমাকে ঐ মালা থেকে খসে-পড়া
একটি ফুল দিতে পারো চিরমগ্নতার ?
আমি এক আজন্ম কাঙাল।
(৩)
আমার উঠোনে মাঝে মাঝে উঁকি মারে
ক্ষণজীবী আলোরেখা,
পরজীবী গাছপালা।
ও আমার মাতৃমুখ,
তোমার চিবুকে কার গোপন ইশারা !
আমাকে একলা রেখে চলে যাচ্ছ
সীমান্ত স্টেশনে ?
আমি তবে কার কাছে জানু পেতে
বৈরাগ্য ভিক্ষা করে মরে যাব বলো ?
(৪)
দূরে ঘন্টা বাজে,
শঙ্খধ্বনি আর মাগবীরের সুর
আছড়ে পড়ে স্তূপে,
কারা যেন মশাল জ্বালাতে চায় নিজস্ব আগুনে।
ও হে প্রতিবেশী আনন্দঘুম,
এবার মশালের আলোয় মুখ ধুয়ে নাও,
চোখে পরো স্বপ্নের কাজল।
নতুন নতুন বার্তা আস্তানা খুঁজে নিক
তামাম ঠিকানায়।
(৫)
সন্ধ্যা ঢলে পড়ছে ক্রমশ আলোর বিপ্রতীপে।
বেহালার ছড় টানছে অচেনা কিশোর !
আড় বাঁশি হাতে নিয়ে যারা
মেঠো সুর ধরবে বলে প্রতিশ্রুতি দিল,
তার আজ পশ্চিমী গানে ডুবে যায়।
লাল নিশানের চিহ্ন ফিকে হচ্ছে দূরে।
আহা শীতকালীন নৈঃশব্দ্য,
আমাকে একটু যৌথতার সূত্র খুঁজতে দাও,
আমি তোমার দোসর হতে রাজি।
(৬)
সন্ধ্যারতি শেষ হলে
প্রার্থনায় জেগে ওঠে
মৃত্যুউপত্যকার মতো কৃষ্ণবর্ণ চাঁদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন