সৃজন এই সংখ্যার কবি পায়েল দেব৷ কবিতা যার বাঁচার রসদ।জন্ম- ২৭ শে জুলাই, ১৯৮৭৷শিক্ষা- পদার্থবিদ্যায় স্নাতক,শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর, বি. এড ৷পেশা- শিক্ষকতা । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
কুয়াশার সানস্ক্রিন - ২০১৭
স্কেচবুক- ২০১৯
গাছের গোপন অসুখ - ২০১৯
নিমফুল -২০২০
আত্মাহুতি
--------------
মৃত ঝাউবনে
সহজেই খুলে যায় বাতাসের অভিমুখ
অলৌকিক বয়ন- কৌশল
চড়ুইয়ের সৎকার শেষে
ওমহীন ডিম
বিরহী পালক
মিহি দানার আত্মস্বর
আগুনের লিপি
গোপন উরুসন্ধি
বৃত্তাকার মাঠে জমা দিতে আসে উলঙ্গ পাহাড়ী যুবক
স্ট্রীট- শো
-------------
কত- তম খোলস বদলেছে পৃথিবী
সাদা- কালো ঘর ঠেলে
বিছিয়েছে প্রেম কুশনের মতো
কম বেশি উড়ছি সকলে
উড়ালপুলের ছায়ায়
আত্মহত্যা লেগে আছে মড়কের মতো
পিলারের গায়ে জলছবিটবি আঁকা
শিশুরা বিস্ময়ে গুনে
ভুলভাল তারা গুনার মতো
এসব শব্দ- খোলশ, কুশন, ছায়া, উড়ালপুল, পিলার সমার্থক মনে হয়
পিলারে হেলান দিয়ে
উড়ালপুলের তলায়
কুশনের উপর
খোলশ জড়িয়ে
ছায়ার মতোন
মড়কের গায়ে শিশুফুল ফুটে থোকায় খোকায়।
যীশু
-----------
পৌষের মাঝামাঝি এখানে প্রয়োজনের বেশি শীত পড়ে। সমস্ত স্ট্রীট লাইট নীরেন্দ্রনাথ হতে চায়। পারে না। কেননা তাদের ভাষারীতি জানা নেই, কবিতার ক্লাস তাদের ধাতস্থ নয়, বোঝাপড়া নেই বাতাসের সাথে, ভুলভাল বকা নেই, মারমুখী সত্যি বলা নেই। কেবল আন্দাজ করে- দূরে কোনও অ্যাপার্টমেন্টের ব্যালকনিতে ফুটে আছে পারিজাত।রাস্তায় রাস্তায় বড়দিনের কেক হাতে বেরিয়েছে পথ-শিশু। গোল্ডেন, পারপল্ কালারের ফুরফুর ঝালরের শখ নিয়ে হঠাৎ ডেকে উঠছে রুপোলী পাখির দল। তাদের ডানা নেই।তাদের কাছে বৃদ্ধ বাবার মতো একঘেয়ে লাগে এই স্ট্রীটলাইট আর শীতকাল।
আন্তর্জাতিক
-----------------
সত্যিই কি জোহানসবার্গ নিরাপদ ছিল,
যেসময় সরলবর্গীয় চির হরিৎ বৃক্ষরা জন্ম নিচ্ছিল?
অক্সফোর্ড রোড থেকে এলোপাথাড়ি আলোছায়া আসত
তুমিও তো হারিয়ে গেছিলে
বেনামি হলুদ খাম খুলে বের করে আনতে হল মনের অসুখ
যেদিন সমান রাস্তা হল,বনসাই করে নামিয়ে আনা হল গাছের পার্লার,
বলেছিলে প্রতীক্ষার মতো দীর্ঘ কোনও দূরত্ব নাই আর
আমাদের বিশুদ্ধ উন্মাদনার খাতিরে
যৌনতার মতো প্রিয় একটি শব্দ তখন অভিযোজনগ্রস্ত।
হে প্রিয় জোহানসবার্গ, তোমাকে সামনে থেকে দেখিনি
তবু কত চকিতে ঢুকে গেছ কবিতায়
অসাড় পৃথিবীর কৃত্রিম সংসারে তোমার সুস্বাগতম!
তুমি জলপাই গাছ পাঠিও, আমি পাঠাব ম্যাপলের রঙ
প্রিয় জোহানস,
এখানে শিরিষ-শিমূল হতে নামে হেমন্ত
তুমি চিরপ্রেমিক,মৃত্যুর মতো চিরবসন্ত।
সম্বল
------
বিকলাঙ্গ শরীর এক নৌকায়,
পৃথক নৌকায় পদার্থবিদ্যা আর ভ্রমণের পাণ্ডুলিপি,
মাঝখানে নিথর জলের উপর সম্ভাবনাময় সেতু,
আলো থেকে দূরে সরে যাওয়া দিনের পরবর্তী সীমা,
এসব ফেলে রেখে
গাছের ছায়াজাত ঘুম চোখে
কেউ কেউ মাঝরাতে কবিতা পড়ে, আমি দেখেছি।
কাজ শেষে সব রাস্তার দুপাশে ঠেলে ফেলে,
লোহার গেটে আঙুল ছোঁয়ালে বুঝি,
নিজের মৃতদেহ নিয়ে ঘরে ফিরছি।
এ শহরে আমার কোনো আত্মীয় নেই,
কে পোড়াবে আমাকে?
তাই প্রতিদিন ফিরিয়ে আনতে হয় মৃতদেহ,
আমার আর মুক্তির মাঝে এটুকুই দূরত্ব,বেঁচে থাকার পরিসীমা।
উপহার
---------------
রাত বারোটায় চুমুটুমু খাই
কেক কাটি ফুলেফুলে
মৃত সন্তানের কোলাজ জানে
দুজনেই দুজনের মতো একাকী
অন্তরে অন্তরে
তোষকের উপর, গোলাপের পাপড়িও জানে,
বিষাদের অহংকার নিয়ে
দূর বসতির কাছে শুতে গেছে
অভিমানী আদর
বিবাহের ধুন থেকে দূরে
আরও দূরে পালাচ্ছে আমাদের ফাল্গুন-বার্ষিকী
স্তুতি
------
স্নানের জলে প্রতিদিন গাছের ছায়া মিশে
গাছ থেকে কত দূরে রাখি স্নানঘর,তবু...
সুন্দর রাতের পর যে ভোর হয়,জলরঙে আঁকা হয় আমাদের কোমল গ্রাম,গুল্ম, কাঁটাঝোপ, চিরতা,
মনে মনে তুলে দেব তোমার হাতে
সারি সারি গাছ পেরিয়ে ৮ নং জাতীয় সড়ক
রোদে জলের মতো গরম হয়
মাঝখানে শুয়ে থাকে মনু,নিস্তরঙ্গ হাঁটুজল,
গোপন চাঁদের টানে চুপচাপ জলের আশ্রয়
একটু একটু করে কত মনু তুলে ফেলেছি
এসব গাছ জল তুলে আনার সাক্ষী
আর জাতীয় সড়ক আমার নিরন্তর পাল্টে যাওয়া দেহের শ্রী
যদি পারো আমার প্রার্থনার সামনে একবার নতজানু হয়ো...
সমবেগ
----------
এই যে মনের মতো বিকেল ছেড়ে যাচ্ছে গাছের ছায়া
রাতের গায়ে আচানক ঘুম ভেঙে গেলে
পাখিরা নেমে পড়ছে শীতঋতুর ভেতর
ঘরে ঘরে দাম্পত্যের সুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে অবোধ স্বপ্ন
বিবাহের মালাবদল, দধিমঙ্গল এসব ফেলে
বেরিয়ে আসছে বর-বৌ এর ক্লান্ত শরীর
শাবকের অজান্তেই ওড়ার সময় পেরিয়ে গেছে
গাছ থেকে ফুল,ফুল থেকে মালা
একগাছি সুতো উড়ে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে
পরস্পরের প্রতিরূপ হয়ে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে- মা,বাবা আর একটি গাছ
তৃতীয় বিশ্ব
---------------
রাতগুলো একে অপরকে ধাওয়া করে।
এখানে একটি বন্দর
দূরে কোথাও সমুদ্রের শব্দ-নিঃশব্দ মিলিয়ে
তোমাকে ভালোবাসি আমি
আমার চুম্বন তোমার ঠোঁট পেরিয়ে যেদিকে গেছে
ঐখান থেকে আকাশ অনেক উঁচু,আরও উঁচু থেকে তার তারাগুলো
বন্দর আর আমার বুকে ঝরে পড়ে
পুরনো নোঙরগুলোর মতো
আঁধারে সামুদ্রিক পাখিরদের জলক্রীড়া
আমি এক অন্ধ
অন্ধের আলাদা ঘরানা
ভিন্ন এস্রাজ ভিন্ন দিলরুবা।
স্কেচ
-------
নিজেকে আদর করলে
নয়নতারার মতো লাগে দাম্পত্য
অনুপ্রস্থ তারে ঝোলা সংসার
টপটপ ঝরে পড়া রঙ,
যাবতীয় আলতা,
সিঁদুরের দায়ভার,
মাসিকের সময়
বিস্তীর্ণ মাঠের দিকে কান্নার বাদ্যকর
মাটির অন্তরে অন্তরে বিষ ঝাড়ে
যেনো তাঁর রাগ
আমরা কেন কবিতা লিখি
কেন লিখে রাখি নিজের ফণা তোলা
চশমার মনমরা পাওয়ার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন