শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

সুমিতা মজুমদার



ক্ষমতায়ন
********

সালটা ১৯৭১। বাড়ীর পিছনদিকে সুইপার যাওয়ার রাস্তা দিয়ে পা টিপে টিপে এসে দরজায় মৃদু আওয়াজ করল সায়ন টক, টক। রাত তখন গভীর। সায়নের দিদিয়া এসে দরজাটা খুলে দিল চুপিসারে। অন্ধকার পথ দিয়ে নিয়ে এসে ঘরে তুলল ভাইকে।

এবার নিশ্চিন্ত। প্রতিদিন রাতে ভাই শুতে না আসা অবধি অজানা আশঙ্কায় বুকের ভেতর লাব ডুব লাব ডুব আওয়াজ ক্রমশ বাড়তে থাকে। পড়াশোনায় তুখোড় ভাই প্রেসিডেন্সিতে পড়তে গিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনে নাম লিখিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বয়সে অনেক ছোট মা মরা ভাইকে প্রায় কোলেপিঠে করেই মানুষ করেছে দিদিয়া।

ঠিক তক্কে তক্কেই ছিলেন থানার ফার্ষ্ট অফিসার রজতাভ সেন। পূর্ণিমার আলোয় যেই পরিষ্কার দেখলেন পাখী খাঁচায় ঢুকেছে অমনি সামনের দিকের দরজায় আওয়াজ নক , নক । পুলিশের ঘেরাটোপ এড়িয়ে পালানোর কোন উপায় নেই। ভ্যানে উঠিয়ে ধাপার মাঠের কাছে গাড়ী থামিয়ে মামুলি প্রশ্ন করে ছেড়ে দিলেন সায়নকে। রাতের আকাশ লাল হয়ে আসছে নতুন দিনের সূর্যের আলোয়। ফিরে যাচ্ছে সায়ন। 

এবার কি একটু দ্বন্দ্বে পড়লেন দারোগামাশায়! একেবারে নিজের ছেলের বয়সী ছেলেটা !! কিন্তু না ,ওদের দলই তো বলেছে "বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস"। তাই অবসান হল দ্বন্দ্বের, জয় হল ক্ষমতার। রিভলবারের ট্রিগারে একটা আঙুলের চাপ , একটু আগুনের ঝলকানি। ভোরের রেডিওতে বন্দেমাতরম শেষ হতেই সংবাদ পাঠক দেবদুলালের আওয়াজে শোনা গেল " নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ধাপার মাঠে মৃত একজন। মৃতের নাম সায়ন হালদার।"
(শব্দ সংখ্যা -২০০,নাম সহ)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন