সৃজন এই সংখ্যার কবি অনিন্দ্য পাল।
সাপের খোলস // অনিন্দ্য পাল
=====================
মুখোসের উপর মুখোস চড়িয়ে
লুকিয়ে পড়েছি সবাই
গভীর
ঘুরন্ত অন্ধকারে!
অন্ধকার কি শব্দহীন?
না, খিদের শব্দ এখানে
হিস-হিস...
অন্ধকার কি শর্তহীন ?
তাহলে তার পোষাক নেই কেন
লজ্জাস্থানে!
অন্ধকার কি লোভহীন ?
তবে এত মালা কেন গলায়
সর্বাঙ্গে!
আসলে আমরা সবাই বিবর্তনের শিকার
সাপের ছেড়ে ফেলা খোলসের মত পড়ে থাকি
চুপচাপ,
ফাঁপা শরীরের খিদে এঁকে রাখি
বেওয়ারিস খোলসের
ভিতরপিঠে...
============================== ==
আঁকা মানুষ। // অনিন্দ্য পাল
===========
শেষ হয়ে যাওয়া সময়টুকু পেরিয়ে এসেছি সবে
সব নাম-বেনাম বেরিয়ে গেছে শেষ নিঃশ্বাস হয়ে
আমার "আমি"র মুখে বারবার এঁকে রাখা সব মুখোশ
খরার আদরে ফাটাফুটি দোঁয়াশের মত চেয়ে আছে
আকাশের দিকে,
ধরো সেখানে ভেসে আছে একটাই মেঘ
অথবা অভিশাপ
বৃষ্টি হলে ,ধুয়ে যাবে রঙের পরত
না হলে , ধূসর গুঁড়ো হয়ে বাতাসে মিশে যাবে
আঁকা পরিচয়
স্তরে স্তরে গড়ে তোলা বল্মীক জীবন
এখন দেখছো এই সব শব যা চেয়ে দেখ
আকাশের দেওয়ালে ফুটে আছে নাম
আঁকা মানুষ ...
============================== ====
বসন্তের শেষে //অনিন্দ্য পাল
======!!!!=====
আজ বসন্ত চলে গেছে এই খানিকটা আগে
চৌকাঠে ডানপা বাড়িয়ে দিয়েছে গ্রীষ্ম
শীতকাল চলে গেছে বলে কষ্ট হচ্ছে না আর
সিলিং-এ পাখাটা ঘুরছে, নামছে বাতাস আবার
বসন্ত চলে গেছে বলে কোকিল ডাকলোনা আর
অথচ
কোকিলের ছানাপোনা সব এখনো কাকের বাসায়
কোকিল কি ভুলে যেতে পারে সন্তানের কথা
কোকিল কি ভুলে যেতে পারে সেই সব পথ
আগামী বসন্তে আসতে হবে আবার
বোকাসোকা কাকের মাতৃস্নেহ লুঠ করতে
কোকিল ভোলেনা কাকের অপত্যপ্রেম
তবে কাক ভুলে যায় বারবার বিগত বঞ্চনার ইতিহাস।
=========================
অনুরোধ // অনিন্দ্য পাল
========
আমাকে ফেলে দিও না কাঁটাঝোপে
ঘুলঘুলি থেকে পড়ে যাওয়া চড়ুই বাসার মত ,
বরং দিও এক সানগ্লাস সূর্যবাঁধ
গুমটি মনের ফোস্কাতে দিও কিংশুক চুমু
দহনরাগ জুড়াবো যখন অন্ধকার ঠাসা কোণে
আলোকে দিওনা ঠিকানা লুকানোর
কোন নদীজলে দিয়েছি ডুব
মিশে গেছি কোণ বনে ...
অহল্যাঘুম ভাঙিও না আমার
জীবনঘড়িতে দিওনা ঘুম ভাঙাবার চাবি
আটকে দিওনা মোলায়েম শীতের বাতাস
এ ভাবেই বাঁচি আমি এটুকুই আমার দাবী,
সময় ফুরিয়ে এলে চলে যাবো ঠিক
যেমন যেতে হয় হরিণকে মৃগনাভি ছেড়ে
নাহলে প্রত্নবীজ হয়ে থেকে যাব হাজার বছর,
যদি আসো তারও পরে, কালের সেচখাল পেরিয়ে
ছুঁয়ে দেখো প্রথম বেরোনো কচিপাতা দুটো
চারাগাছে পাবে নরম ভালোবাসা,
কাঁটার প্রেম এড়িয়ে।
============================== ======
ভালোবাসার বাড়ি // অনিন্দ্য পাল
===============
মোমের শিখার মত লাজুক আগুন
ছড়িয়ে দিয়েছ বুকের গভীরে
সেখানে অনশনরত একগুঁয়ে ম্যাগমারা তখন
একে অন্যের ইচ্ছা পানে ব্যস্ত,
তবু তোমার এই পেলব দহন সয়ে নিতে পারি
বেতাল জীবনের মত,
আরও পারি মৃত সভ্যতার শৌচাগার হতে
অথবা অন্ধ দাবানল হয়ে গিলে নিতে পারি
সবুজ কলমি লতা,
অথবা যদি তুমি বলো, পুষ্পহীন করে দিতে পারি
রাধার কুঞ্জবাগান,
শেষ লহমায় ছিনিয়ে আনতে পারি অ্যানুবিস হয়ে
রতিমগ্ন প্রেমিকযুগল,
কিন্তু এত সব করেও কী পাওয়া যায়, পাওয়া গেছে
কখনও কোনকালে বেহুলার প্রেম?
তাই আর আদেশ নয়, নয় কোনো আইন জারি
এস,লালরডোডেনড্রনের মত ঝরে পড়ি পাথরপাহাড়ে
ফুলের শব দিয়ে বানাই ভালোবাসার বাড়ি।
==================≠===========
ভালোবাসার বনসাই // অনিন্দ্য পাল
=========
সেই প্রথম দিন, প্রথম দেখা
একঝাঁক পায়রা এবং তুমি
হাতে সোনালী শস্যদানা
বানভাসি উপত্যকা আমি
তুমি, আমি এভাবে গড়ায়নি আর দিন
ক্যালেন্ডার নতুন হয়েছে বারবার
ঘুমের মধ্যে তুমি লেডি আলাদিন
অর্ধেক দিন বেচে আমার রোজগার
আমি দানা খুঁজি কবুতর জীবন
চাঁদপ্রেমে উড়ে গেছ সমুদ্রশহর
কুয়াশা বাষ্পে চুমুক দেয় তৃষ্ণা সৌরদিন
পেয়ালায় ঢেলেছি স্মৃতি, রাত্রি উজাগর
ইতিহাস অতীত কখনো ডাকেনি পিছনে
তলানিতে ঘোলাটে সুখ, বসত করে মনে
আমার বাগান জুড়ে আগাছা গুল্ম ঘাস
তোমার দোলনাটবে বনসাই ভালোবাসার চাষ ...
============================== ==
একফোঁটা সুখের জন্য // অনিন্দ্য পাল
================
মুষ্টিবদ্ধ সুখ খুঁজে ছিলাম মরিচীকার মত
বেলেমাটি লেপা মেটে দাওয়ায়
সেখানে বসত ছিল হলুদ ঝরাপাতার...
নীলচে শিরায় উপভোগ শ্লথগতি
আপেলশামুক বাসা বাঁধে স্পন্দনঘরে
দু-একফোঁটা সুখেই ভিজবো, ভেবেছিলাম
মেঘের আদর ভেসে চলে গেল, হঠাৎ মরুঝড়ে
এত বড় আকাশ এত বৃষ্টি ঝরে
আমাকে ভেজাবে কে, আমার একলা ঘরে
ভালোবাসা ফুটে আছে দেখি রাতের জ্যোৎস্নাতলায়
একফোঁটা সুখ তোমার গন্ধ নিয়ে
আমাকে উদাস করে ...
=============================
আবার প্লাবন আসুক, ব-দ্বীপে // অনিন্দ্য পাল
==≠=================
তোমার আধচেরা ব-দ্বীপে এখন
অস্তরাগের বিষণ্ণ প্রতিলিপি
তবে কি এবার দিন ফুরিয়ে এল?
ঋতুহীন খনিগহ্বর চাঁদ গেলে গোগ্রাসে...
জোনাকিরা এখনও ছড়ায়নি দেহগত আলো
তুমি কি নিতান্তই অমাবস্যা চেয়েছ, বীতকাম
প্রতিরাত ভোরে,
প্লাবন আসবে কবে তোমার ব-দ্বীপে আবার?
আলুনি উর্বরতা আর সুখ দেয়না, শান্তি দেয়
স্নেহ আর উৎসবে কেটে যায় রাত, অচঞ্চল
কঠিন বাঁধে কি আটকেছো মোহনার নোনাজল?
তবু আমি আশাদীপ জ্বেলে রাখি প্রাণপনে
তোমার পলিপল্বল উঠোনে
আবার যদি ফিরে আসে সেই সব প্লাবিত উচ্ছ্বাস
থেকে যাবো তবে, এই দ্বীপে,আনাচে-কানাচে
অথবা বিশুষ্ক হও যদি লবণ বালিয়াড়ি
ফুরিয়ে যাবো তবে, একান্ত একা আনমনে...
============================== =
বন্ধুকে / অনিন্দ্য পাল
=========
যে ভাবে হারিয়েছিল তোমার উত্তরকাল
আজ সেই আলুথালু পথে
যেতে হবে ঐন্দ্রজালিক পদক্ষেপে,
না কোনো প্রশ্ন নয়, কৌতুহলের ওষ্ঠে রাখ
ধৈর্যের বাটখারা
তোমার শত্রু নয় কেউ, তুমিও নও বন্ধু সবার
ভঙ্গুর পলিথিনে মুড়ে পুরসভার ডাস্টবিনে ফেল
ষড়যন্ত্র আর মিথ্যার মাসকারা
এ অভিশাপ এনেছ কিষ্কিন্ধ্যা থেকে
বৈরিতা বিদূষক হয়ে শুয়ে আছে তোমার হারেমে
মনসার সুড়ঙ্গ ভুলে তুমি তুলে নিয়েছ ধনুক
দেবতার লড়াইয়ে বলি হতে হয়, রাবন আর রামে
সুগ্রীবের ছলনায় বধেছ সহোদর
এখন বদলেছে সব, আগের মত নেই কালের নগর
তবু তোমাকে বলছি আমি বন্ধু হই তোমার
তুমিও শত্রু নও, কেউ বন্ধু নয় তোমার!
============================== ======
অদ্ভুত কথা // অনিন্দ্য পাল
=========
ধরবো বলে ছুটেছিলাম একবগ্গা
সময়ের পিছনে
নীল লন্ঠন জ্বেলে এগিয়ে ধরেছিল
অবসৃত আদিম আত্মীয়রা
আত্মার আলোয় যেটুকু ছিল পূর্ণিমা
ব্রহ্মাণ্ডের গাছেরা তাও নিয়েছিল শুষে
তবুও গোড়ালির আঘাতে ভেঙে ফেলে
সভ্যতার মাইলফলক
পেরিয়ে এসেছি প্রজন্ম পারের পঞ্চভূতে
এখানে এখন সমুদ্র সমতল
গুল্মজাতীয়রা ছেঁটে দেয় বট-অশ্বত্থের ডানা
হৃৎপিণ্ডের আবহবিকারে জন্মনেয়
লঘু আর গুরু
এখানে সবাই স্বাধীন, অথচ প্রশ্ন করতে মানা,
মেরুদণ্ড বন্ধক রেখে সিংহাসনে রাখা হয় চুমু
উচ্চরক্তচাপে ভোগে তরুন সময়
খোলাবাজার থেকে কিনে নেয় বোতলের লোভ
কফিনে ঘুমিয়ে থাকে মরেও বেঁচে থাকা
বাস্তু ঘুঘু ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন