রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                        





মধ্যবয়স/ নাচ / মেজাজের পারদ


________________________

 মধ্যবয়স। মরুভূমির মত। অতিক্রম করা মুশকিল। নতুন যৌবনের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকানো। চলে যায়... চলে যায়... বসন্তের দিন চলে যায়... ! 

 দীর্ঘ যাত্রাপথ। ধীরে ধীরে চলতে হয় বার্ধক্যের দিকে। শরীরে বাসা বাঁধে হরেক রোগ। ডাক্তার ভরসা। বেঁচে থেকে আর কি হবে... এমন বোধ। কেউ মনোযোগ দেয়না। কেউ বসে কথা শোনে না। 

কিছু কিছু সেলিব্রেটি,  আরো করুণ অবস্থায় পৌঁছে যান। বয়স ভুলে থাকার নানারকম প্ররোচনা কাজ করে তাদের চারিদিকে। জেনে বুঝে হলেও সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন, সাময়িক উত্তেজনার জন্য। এটা মহিলা পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়। 

 বার্ধক্য গুটিগুটি এগিয়ে আসে। অবোধ মানব ব্যায়াম করে, পার্লার যায়, সাজুগুজু করে। খুব ভালো করে। তারপর দিনের শেষে একাকীত্বে ভুগতে থাকে। কুয়াশার মত ঘিরে ধরে একাকীত্বের বোধ। 

 *****

  মধ্যবয়সে বিষাদ, খুব স্বাভাবিক। আমি যেটা বারবার বলি...সেটা হল, সমস্ত কিছু স্বাভাবিক ভাবতে হবে। আমার কিছু ভালো লাগছে না... এটা কখনো অকারণ নয়। তুচ্ছ করার নয়। বিলাসিতা নয়। ভালো না লাগার পিছনে কারণ আছে। এবার দেখতে হবে সেই কারণ কতখানি গুরুতর? বা, কেন হল সে কারণ? কোনো মৃত্যুশোক? সন্তানের কঠিন ব্যবহার? পারিবারিক অসাফল্য? চূড়ান্ত অবমাননা? প্রতারণা? ক্যান্সার? মৃত্যুর পরোয়ানা? 

সেইসঙ্গে বয়সের প্রকাণ্ড ভার! 

হতাশ মানুষ ভাবে, আর পারা যায় না! সত্যিই তাই। আর পারা যায় না! মনের জমি ধূ ধূ করছে। শূণ্য। সে জমিতে একটি গাছ নেই, যার নিচে আশ্রয় নিতে পারে তাপিত মধ্যবয়স! সুতরাং... ! দারুণ দুঃসহ দিন। প্রতিদিন!

******

 তবে উপায়? আছে বইকি। বৃদ্ধ বয়স নিরাপদ করতে ব্যাংকে টাকা রাখি। ফিক্সড ডিপোজিট করি। আরো কি কি জানি করি।

 অথচ,  বৃদ্ধ হতে থাকে সময়ও। তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য চল্লিশ বছর বয়স থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমে তৈরি করতে হয় মনের জমি। তাতে লাগাতে হবে কিছু গাছ। দিনে দিনে বেড়ে উঠুক। ডালপালা মেলে দিক। 

যৌবন থেকে বর্ধ্যকের দিকে যেতে যেতে সেই সব চেতনার বৃক্ষ আশ্রয় হোক আমার। দুঃখের ঝড়, বিষাদের বৃষ্টি... ওদের ডালপালা ভেদ করে পড়বে হয়ত দু এক ফোঁটা অশান্তি। কিন্তু, ক্ষতি হবে না বিশেষ। 

********

 মধ্য বয়সে অনেকেই লাফিং ক্লাবে যোগ দেন। সুগার প্রেসার ভালো থাকে। আমি বলি কি, নাচবেন একটু? কোমর দোলাবেন? লজ্জা পাবেন না। আদিমযুগ থেকেই নাচ একটি অদ্ভুত থেরাপি। মহিলার হাত ধরে নাচ মানেই অসভ্যতা নয়। ভালো থাকা। অসভ্যতা করে ভালো থাকা যায় না। কিন্তু, একটা সুন্দর মিউজিকের সঙ্গে পা মেলালেন, সঙ্গী হল বিপরীত লিঙ্গের কেউ, খুব খুব ভালো থাকা যায়। লিঙ্গ দেখবেন না। মানুষ দেখুন।

  আজকাল অনেক কফি হাউস হয়েছে। গম্ভীর মুখে কফি খায় তরুণ প্রজন্ম। এমন এক ভাব, যেন কোনোদিন তারা আর বুড়ো হবে না! কেন এমন? কেন গিটার বাজে না? কেন কোনো বয়স্ক সেখানে অনাহুত? কেন হাতে হাত মিলিয়ে পায়ের ছন্দে মেতে উঠবে না দুই প্রজন্ম? তরুণ আর মধ্যবয়স? 

 এতে মস্তিষ্ক সতেজ থাকে। অ্যালজাইমার দূরে যায়। বিষাদ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। আমি যার সঙ্গে সপ্তাহে দুই দিন নাচি, সেই মেয়েটি আর আমার ছেলে একই সালে জন্মেছে। ছেলে লন্ডনে। তাতে কি? সে মেয়ে আর আমি নাচি। শেষ হলে হালকা  হয় শরীর এবং মন। 

  সমাজ সুন্দর হয় সকলকে নিয়ে। তারুণ্যের মত সুস্থ বার্ধক্য প্রয়োজন। তাই, বৃদ্ধ মানুষের মন ভালো থাকা জরুরি। মেজাজের পারদের ওঠা নামা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে। প্রেসার সুগার কন্ট্রোলে আসবে।

 একটু নেচে ওঠো। বদলে যাবে দুনিয়ার রঙ। লজ্জা নয়। প্রয়োজন।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন