রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়

                                                     



এই সংখ্যার কবি সমিধ গাঙ্গুলি। ইতিহাসে  স্নাতকোত্তর হওয়ার পর আপাতত  সরকারি চাকুরে।পেশাগত সময়টুকু বাদ দিলে বাকি সময় ইতিহাস আর কবিতা নিয়েই কাটে।কবিতা সংক্রান্ত যে-কোনো আলোচনায় নিবিড় শ্রোতার ভূমিকায় নিজেকে দেখতে ভালো লাগে।

আর ছুটিছাটায় পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়াটা সোনামুগের

সঙ্গে আলুপোস্তর মতই অবশ্যম্ভাবী।



সুষুপ্তির জেব্রা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে 

----------------------------------------------



১.

তার বিহনে পাগলাঝাঁপ ছুটি

দিনের শুরু, নিছক বাড়ি ফেরা

মহুয়াভীরু দাওয়ায় খুনসুটি

রোদে মিশছে পাহাড়বালকেরা


ভাল্লাগেনা বিরহী বিস্কুট

চুমুর আগে ঠোঁটের গলে যাওয়া

তোমার হাতে অচেনা মনছুট

আমার কাছে ধুলোর মত হাওয়া


আস্কারার জামায় মোছা ঘাম

সন্ধ্যেবেলা লুকিয়ে বাড়ি ফেরা

মেঘলা হ'লে পায়রা ওড়াতাম

রোদ শেখাত বিষাদপালকেরা...



২.

বাস্তুহারা বিগত সংসার

ইস্ত্রিহীন উঠোনে তানপুরা

আদায় করা ম্যাপের অধিকার

অভিনয়ের শর্ত আনকোরা


লাগাম যদি আগুনে বশ থাকে

শৌখিনতা কাহারবায় বুঁদ

শান্ত চাঁদ ঘুমোলে মৌচাকে

ঢিলের কাছে ব্যর্থতার সুদ


আগলে রাখা বেহুঁশ ক্যাথিটার

ঘোলাটে হয় বধির কানকোরা

আদায় জানে লাভের অধিকার

শিরদাঁড়ার শর্ত আনকোরা...



৩.

ক্যাকোফোনির বেহাগে আংরাখা

মগজরঙা হ্রদয় কাঁদে না

গুমটি। মাঠ। সদ্যোজাত পাখা।

মেজাজী ধোঁয়া জীবন বাঁধে না


দশমিকের বাঁ পাশে রাখা বিষ

দেরাজ খোলে আনপাড়ার ঠেকে

মেহফিলের মাহুত আনুবিস

পূর্বাভাস বুঝিয়ে সংক্ষেপে


উঠে দাঁড়ায়। প্রজাতিহীন চাকা

হেঁচকি তোলে নরম ছাঁদে না

দিঘি।বাগান। মেদুর। পটে আঁকা।

মাসকাবারি জীবন সাধে না...



৪.

শিশুআঙুল মগ্নতাকে ছুঁলে

খিচুড়িভোগে অনাদি তরী বাওয়া

গৃহপালিত জাবনা খুঁড়ে তুলে

জরুরী ছিলো তোমার কাছে যাওয়া


শুকনো চোখা মরসুমের দাঁড়ে

চশমাওয়ালা গর্জনের চাষ

নুনছালের শীলিত টংকারে

মাখানো ঝরা পাতার নির্যাস


অক্ষরের উলটো বাহুমূলে

মন্ত্রপূত অন্ধ হতে চাওয়া

কাফের,তবু ভেজা আগুন ছুঁলে

জরুরী হয় তোমার কাছে যাওয়া...



৫.

এবং থাকো গোপন শিরাপথে।

মজা পেলেই গুছিয়ে নাও খাট

ধর্ম লেখে যে যার প্রিয় গতে

মানুষ পাওয়া ভীষণ ঝঞ্জাট


এবং থাকো মোহিনী বিদ্যায়।

কেতাবী রুচি তোমার পরাধীন

ডুবতে পারো যে কোনো বন্যায়

প্রস্তাবনা পাঠাবে মরফিন


এবং দ্যাখো মাকাল,প্রতি বাঁকে

হাওয়াই চটি।চালাকি,রাজপাট।

বর্ম পেলে যে যার মতো থাকে

মানুষ হওয়া নোংরা ঝঞ্জাট...



৬.

যেমন কাঁচাকথন ভাতে পাই

লোহাকরুণ আংড়াভাসাতেই

জড়তা ভাঙে বন্ধুদের ছাই

এখনো আছি বাংলাভাষাতেই


মোরগঝুঁটি দোলানো বাস্কেট

বুড়ো হওয়ার দু-মুঠো নষ্টামি

হিয়ার মাঝে জিয়ল সংকেত

শোনো,তোমায় বলতে চাই আমি


জর্দা যদি পানের কিংখাবে

তুমিও শুধু সর্বনাশাতেই

সে-সব ব্যথা কালকে ভাবা যাবে

আজকে থাকি বাংলাভাষাতেই...



৭.

চোখের পাশে তাগড়া আস্তিন

গোটালে তুমি প্রেমিক হতে পারো?

চমৎকার আহত আস্তিক

মাংস নয় আবেগ দিয়ে মারো


জেহাদি পথ,বাঁধাকপির ক্ষেত

সীমানা ঘেরা যৌথ পরিবার

কথকতার বাক্সে রাখা বেত

বড় হলেই বলবে "জমি ছাড়"


আবহমান গোমড়া বাস্তিল

আবহাওয়ায় রসদ পেলে আরও

তিনভাঁজের ব্যহত আস্তিন

চাবুকে নয় পাঁজরে পিষে মারো...



৮.

ফিরতি নায়ে তোমার দেখা পাই

বাঁশরী যদি ভালোবাসায় ধরো

সভ্যতার নিহিত খাইখাই

অফুরবেলা ছিলিম টেনে মরো


বসেই থাকো চৌকাঠের দলে

তন্ত্রে আনো মহাদেবীর ছাঁচ

অপরিমিত বিশ্বাসের মলে

প্রাদেশিকতা রপ্ত করে নাচ


জলের দেহে খাস্তা জমি পেলে

সুজাত রাগ তুমিই সম্বরো

পাকস্থলী নির্বাসনে গেলে

দ্বিধালবণ ধোঁয়ায় কেশে মরো...



৯.

মেধা এখন বিষয়ভিত্তিক

কোন সোহাগে কটা বলদ জোটে

প্রশ্নমালা হাসলে ফিকফিক

অনধিকারচর্চা মজা লোটে


তুমিও প্রভু আমার মতো বেঁচে

থাকতে করো রেশন মঞ্জুর

বিশ্বাসীরা কবেই মিলিয়েছে

বুকে হাঁটার তর্ক কিছুদূর


আগাম কোনো ধৈর্য নেই মোটে

ডিগ্রী বশবর্তী হবে ঠিক

স্বভাবে তবু পঙ্গপাল জোটে

কারণ মেধা বিষয়ভিত্তিক... 



১০.

চারুপথ ভুলে যাও ক্রিসেনথিমাম

অ আ ক খ অভ্যাস পাঁশুটে হাওয়ায়

দেহপট সনে মাখো সুবচনী ঘাম

পাথেয় ফুরোতে পারে এটুকু চাওয়ায়


তুমি হবে বর্ণনা অতীতের মতো

ভজনালয়ের পাশে পাহাড়ি মাতাল

ওজনে সমান রেখো হিসেবের ক্ষত

মগজের ভাতঘুমে নিশুতি আকাল


কামিনী অঙ্গ তবু ভাঙে উদুখল

বসন্তে একা বীজগাণিতিক ট্রাম

তোমার বিশদে চেয়ে বসলে অতল

পোশাকটা ধুয়ে নিও ক্রিসেনথিমাম...

1 টি মন্তব্য: