রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সৌমাল্য গরাই

                                                     


সৃজন এই সপ্তাহের কবি সৌমাল্য গরাই জন্ম ১ লা জুলাই, ১৯৯৬।
বাঁকুড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাকাইজুড়ি। সেখানেই তার জন্ম, সেখানেই শিক্ষার সাথে বেড়ে ওঠা। বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজ হয়ে বর্তমানে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তরে পাঠরত। কবিতাই তার নিভৃত আশ্রয়, বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবি লিখে চলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম দেশ, কবিতা আশ্রম,কৃত্তিবাস, শ্রীময়ী, লালমাটি, রুখুডি ইত্যাদি।



সহজাত 

চোখের গভীর কোনও চোখ 
খুঁজেছে তোমায়

   অতিদীর্ঘ অন্ধকারে
   না থাকাও  কথা বলে তার



     যেভাবে শোনায় গাছ
               মাটির কবরে শুলো যারা
হারিয়ে গিয়েছে ভেবে আক্ষেপ করো না
তারাই ত উঠে আসে পাতার পোশাকে?
           না হলে কীসের লোভে        ওই শেকড়েরা   এত মাটি
      বুকে   ধরে  রাখে

 
বিভ্রম

যতটা সীমানা তার ততদূর নয় আসমান
আলোরা মায়ার মৃগ অন্ধকার বনে
অতর্কিতে ফাঁদ পাতে দৃষ্টির আড়ালে

অনেক ভ্রমণ শেষে ধ্বংসস্তূপে এখনো দাঁড়ালে
কেবল বিভ্রমে কেঁপে উঠি, যাকে এতকাল ধরে   
খুঁজেছি নিজের ভেবে সাক্ষী রেখে নিজস্ব আয়নায়
মিলেনি কিছুই তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ মাপ
আমিও নকল তাই বিপরীত দিকে
আমাকেই ভ্রম ভেবে ছায়া আরও বড় হতে চায়

আবহমান

নদী তুমি পার করে দিও দেহজ নৌকার ভার। বইঠা হারিয়েছে মন তাকে মাঝি করে দিও
চর্যাপদে গুঞ্জাফুল গাঁথা শবরীটির মতো। ভুলে যাই কীভাবে বাঁধিব অক্ষর স্রোতচূর্ণিমালা  

উদ্দেশ্য বিহীনভাবে পালিয়ে এসেছি বৃক্ষ ও ব্যাধের ধ্যান থেকে। দুজনের ধ্যানসত্য থেকে জেনেছি এসব লক্ষ্যভেদী। এর চেয়ে ভালো  সমুদ্র মুখর হাওয়াদের কাছে যাওয়া। সমুদ্রের লবণাক্ত ডাকে সাড়া দেয় লক্ষ্যহীন। নীল ফেনায়িত রাতে প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে ঘুমোয় সবুজ শ্যাওলারা, তার আঁশগন্ধ পেয়ে জল জাগে আর ছুটে ছুটে যায় তীর থেকে তীরে।

যে ছেড়েছে ঘর— ক্রীতদাস হতে ইচ্ছে করে তার, যেন জীবনকে ঘোরাতে পারি আমার পিছু পিছু

খাদক ধর্ম

খিদে মেটানোর আগে 
 নিভে যায় যে আগুন 
সে আগুন ছিল না কখনো সৎ

রক্ত কোথাও নেই আমাদের আছে শুধু খুন
আহার ফুরিয়ে এলে শোনও খিদে
চোখের উপর থেকে তুলে নেব বিশুদ্ধ নুন 


খাঁচাবন্দী 

একটাই খাঁচা,  তাকে রোজ দুভাবে পুষেছি
আমাদের দ্বারে থাকেনি কোথাও
ঘন বন, আত্মমগ্ন গাছ
 ভয়ে ভয়ে থাকা একদিন, যে পাখি উড়েছে
পেয়েছ কী টের
সে পাখি কেবলই ছিল একাকী খাঁচার
কখনো ছিল  না  আমাদের...
বৃক্ষজন্ম

যে মানুষ জীবন কুড়োতে কুড়োতে কিছুই পেল না
তাকে কুঁড়ি দাও, 
 একবার তার বৃক্ষজন্ম হোক, 
মাটি পাক নিজস্ব শিকড়,  পাতা,ফুল, ফল
ঝড়- বাদলের দিনে
অন্তত মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অধিকার


দিগন্ত- পাঠ

কোথাও কোনও বিচ্ছেদ নেই
 এরকমভাবে শুয়ে আছে দিগন্ত
নীচু হয়ে আছে বক, নির্নিমেষ মাঠ—
বুক খুলে শুয়ে আছে। একে একে সব পাখি একাকী আকাশ

অসীম দূরত্বে তাই —
আমাদের খুদকুঁড়ো, দু'বেলার বেঁচে থাকা লড়াইকে 
করজোড়ে প্রণাম জানিয়ে 
 ফিরে যাচ্ছে সূর্যাস্ত- দেবতা

সৌমাল্য গরাই
বাঁকুড়া  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন