রবিবার, ২২ মে, ২০২২

সৌমী আচার্য্য

                 


পর্ব-৯


দেবপ্রিয়া ফোনটা কেটে খানিক সময় চুপ করে  চেয়ে রইল সমুদ্রের দিকে। সূর্য মধ্যগগনে। ঊশ্রী একা বসে রয়েছে হ্যামকে। কী ভাবছে কে জানে? ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে কাঁপা হাতে নম্বরটা ডায়াল করল।

-আমি দুঃখিত, উত্তেজনার বশে ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম। আমি আজই কোলকাতায় ফিরে যাচ্ছি কিন্তু ঘটনাটার যে এখানেই শেষ এমন তো কোনো কথা নেই অনুজ।

-হ্যাঁ সেই গ্যারান্টি নেই বিশেষ করে তোমরা যখন একবার ওদের নজরে এসেছ তখন...আচ্ছা ঊশ্রীর এবার কোন ইয়ার?

-কেন বলোতো?

-ভাবছিলাম তোমরা যদি আমার এখানে আসো  মেয়ের সাবজেক্ট তো জিওগ্রাফি তাই না?

-এ খবর তুমি জানো? হ্যাঁ ওর এবছর বিএসসি ফাইনাল ইয়ার কিন্তু তোমার ওখানে যাবার প্রশ্ন উঠছে কেন?

-দেখ প্রিয়া আমার মনে হয় তুমি একা সবটা সামলে উঠতে পারবেনা তাছাড়া এখানে আমার অন্তত পাঁচ বছরের প্রজেক্ট। ততদিনে মেয়ের একটা চাকরীবাকরি হয়ে গেলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় এই আরকি। আর শোন আপাতত বেশি ঘাবড়িও না, আমি ফোন করে দিয়েছি।

-কোথায়?

-যেখানে ফোন করলে কাজ হবে। হয়ত দেখতে পাবে দুজন ফলো করছে। দরকারে ওরা যোগাযোগ করে নেবে। ঘাবড়িও না। প্রয়োজনে ফোন করো। আর চিন্তাভাবনাটা মাথায় রাখো প্লিজ। অন্য কোনো ইস্যু নয় প্রিয়া তোমাদের সুরক্ষাটাই এখন আমার একমাত্র চিন্তা।

-এতদিন তো ভাবোনি অনুজ। আজো নাই ভাবলে। আমরা মা মেয়েতে ঠিক সব সামলে নেবো। আমি কোলকাতা ছাড়ব না অনুজ।

-প্রিয়া, এমন পরিস্হিতিও তো এতদিন হয়নি। প্লিজ।

ফোনটা রাখার পরে বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল। যে মানুষটা একদিন তার ছিল কেবল আজ ষোলাটা বছর তাকে ছাড়াই কেটে গেল। জীবন কত কী যে দেখায়। বাইরে মেঘ করেছে। ঊশ্রীর তাতে যেন কিছু যায় আসে না। নির্বিকার ভাবে বসে রয়েছে। দেবপ্রিয়া গিয়ে দাঁড়াতেই জলভরা চোখে তাকাল।

-কেন ফোন করেছে লোকটা?

-তুই কথা না বলে ফোনটা কেটেছিস কেন? আর লোকটা আবার কী? 

-আমার কাছে তার আর কোনো পরিচয় আছে কি? সারা দেশের মানুষের জন্য তার ভাবনা কেবল আমি তুমি ছাড়া।

-তুই কি ওর খবর রাখিস নাকি?

-হ্যাঁ রাখি। কেন তুমি আপত্তি করবে?

-মোটেই না। তোমার বাবার সাথে তুমি সম্পর্ক রাখলেও আমার কিছু যায় আসবে না মুনিয়া। 

-সম্পর্ক না মা। আমার কেবল একটাই রাগ আজ বাবা থাকলে বরুণ দত্ত কি আমাদের সাথে ঘটনাটা ঘটাতে পারত?

-হয়তো না, তবে ঘটনাটার জন্য তোমার কি কোনো দায়িত্ব নেই মুনিয়া।

-আছে মা, প্রথমে ও আমার কাছে ফাদার ফিগারই ছিল কিন্তু আমার দিকে ওর তাকিয়ে থাকা, আমাকে স্পেশাল ফিল করানো, তোমার অনুপস্হিতিতে একান্তে আমায় ছুঁয়ে যাওয়া আমার মনে আশ্চর্য শিহরণ জাগিয়েছিল। বোধহয় আমার তোমাকে বলা উচিৎ ছিল কিন্তু আমার সত্যি খুব ভালো লাগত। 

-তুমি চুপ করো মুনিয়া আমি শুনতে চাইনা।

-তুমি কখনোই চাওনি মা শুনতে। যতটা ভেবেছ তোমার চরিত্রদের নিয়ে ততটা আমায় নিয়ে ভাবোনি। তাহলে দেখতে পেতে তোমার পনেরো বছরের মেয়ের গায়ে লাভ বাইটের চিহ্ন ছিল।

-শাট আপ প্লিজ। 

-প্রথম দিদামা দেখেছিল, বুঝেওছিল। তাই কাছ ছাড়া করতো না আমায় কিন্তু দু'বছর বাদে দিদামা চলে যাওয়ার পর তুমি আরো ডুবে গেলে নিজের ভেতর আর আমি আবার একা হয়ে গেলাম। ঠিক তখন বরুণ দত্ত আবার আমাকে গিলে নিল। আমায় না দেখে সে নাকি থাকতেই পারছেনা তাই ছবি তুলে নিল আমার। এমন ছবি যা তোলার সময় আমার আয়নাও লজ্জা পেয়েছে।

যন্ত্রণায় বেঁকেচুরে গেল দেবপ্রিয়া। ঊশ্রীর হাতদুটো জড়িয়ে হ্যামকের কাছে বালিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল, 'মুনিয়া আমি যে আর পারছি না।'

-আমিও পারিনি মা যখন দেখলাম আমার গোপন ছবি তোমায় দেখিয়ে আসলে বরুণ দত্ত তোমায় ভোগ করতে চাইছে। সেদিন আমি দুভাবে হেরেছি মা। আর ভীষণ ভীষণ রাগ হয়েছে বাবার উপর। বাবা থাকলে আমি কাউকে ফাদার ফিগার করতে চাইতাম না আর না তো কেউ আমাদের এভাবে ভোগ্যপণ্য ভাবত মা।

মায়ের কোমড় জড়িয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে ঊশ্রী। বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি আসে। শ্রাবণের ধারায় ভিজতে থাকে দুই অসম বয়েসী নারী। যাদের দুজনের তীব্র অভিমান অনুজের উপর আর ভয়ংকর রাগ বরুণের প্রতি।



(ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন