নষ্ট কথা
মাঝে মাঝে কালো চাঁদোয়া চুঁইয়ে বিষাদ নেমে আসে
বৃষ্টি খুঁজি না আমি
বৃষ্টির রঙ এখন সাদা নয়
মাঝেমধ্যে নিজেকে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হয় অকারণে
কথার পিঠে কথা
কিম্বা নিপাট বাতুলতা
দরজার পায়ের তলায় ছায়াপথ গড়ে ভেসে বেড়ায় অকারণে
নষ্ট শৈশবের গল্প
প্রাকৃতিক বিচ্যুতি
অসহ্য লাগে শেষ বিকেলের পড়ন্ত তামাটে রোদ্দুরে
মাঝে মাঝে ছড়াই
নিজেকে নষ্ট করে ফেলি, অকারণে।
*****
ঝিম রিম
সকাল থেকে বাজবি ভেবে তিনতারে সুর বাঁধছিলি
ঘরের মধ্যে রাগ বেহাগে ভায়োলিনে কাঁদছিলি।
যুক্তি দিয়ে কোর্টকাছারির চলতে পারে কাঠগড়া
আদর করার ইচ্ছেগুলো কে বলে রে মনগড়া?
চর্বক্তিম চর্বণে চঞ্চরিত ভুতের দল
গুজব ছড়ায় টাকলামাকান ভগবানের হুকোর জল।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে মনে
সাজিয়ে রাখা গ্রামের শ্রী ছন্নমাতাল বনে।
বৃষ্টি ভাসায় মহানগর রাত ঝমঝম বিষাদ
বৃষ্টি এলেই সুভদ্রজন অস্ত্র হাতে নিষাদ।
সকাল কখন দুপুর হলো, দুপুর হলো রাত
ভিজতে গেলেই লুডোর ছকে জলপ্রপাত।
লোডশেডিং এর অন্ধকারে বেগম আখতার
রাত জমজম জল ঝিমঝিম অভিমানের ঝাড়।
কখন কিসে ভালো হবে কখন হবে মন্দ
পথ হারানো মাতাল শোঁকে বৃষ্টি ভেজা গন্ধ।
এ তোর বাড়ি ও তোর বাড়ি বাড়ি ওপরপড়া
শুরু হলো বৃষ্টি যে ফের বাইরে গিয়ে দাঁড়া।
জল ছপছপ রাস্তা হাঁটে কুকুর পাখি প্রেস
নৌকা হাঁটে আমিও হাঁটি বৃষ্টি রাখে রেশ।
*****
যুগ অন্তরের বৃষ্টি
দীর্ঘ বারো বছর নিস্পলক তাকিয়েই কেটে গেছে আগুন ঝরা দুপুর,ফ্যাকাশে রাত্রি। মরুভূমির শীর্ণ জলের ধারা যত গভীর থেকে আরো আরো বেশি গভীরে লুকিয়েছে, ততই বালির উত্তপ্ত দানা গলিত লোহাকেও লজ্জা দেবার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে।
সাঙ্খ্যদর্শনে সিদ্ধ নৈয়ায়িকদল, ব্যাকরণ অসিদ্ধ গুনগুন উড়ে বেড়ানো আলাভোলা কবির দল কিম্বা নিতান্তই লায়লা মজনুর রঙ মেখে রাতের পর রাত মঞ্চমুখোশের দল এ তপ্ততার স্পর্শ প্রকাশ করতে পারেনি ষোল লক্ষ শব্দেও। আর সেই মরচে ধরা তালার চাবি তুই কোথায় পেলি পাখি?
জানিনা সেই নিষিদ্ধ ভুতুরে ঘরের অনিচ্ছুক দরজা শীৎকারে হ্যাঁ সুলভ আপত্তি জানিয়ে যখন খুলছিল, দীর্ঘ বসত করা চামচিকে, মাকড়, অন্ধ সাপের খোলস একে একে বেরিয়ে আসছিল সৈনিক শৃঙ্খলতায়, এক দমকায় মুক্তি পাচ্ছিল যুগ, যাবজ্জীবন সাজার শেষে- ঠিক তখনই মেঘ পরতের পরে পরত সাজিয়ে ঝুঁকে পড়ল বলি আক্রান্ত মরুর ওপর।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো রে পাখি…হা আ আ আ…বারো বছর পর…
*****
মেঘ বৃষ্টি কাম
মেঘটা চরে বেড়াচ্ছিল
এদিকে ওদিকে
প্রতিবেশীর বাগানে
রাস্তায় ভ্যাটে
একফালি মোহন
জনার ক্ষেতের প্রান্তসীমায়।
সকাল থেকেই উতল উতল হাওয়া
সকাল থেকেই হাতছানি কোন দূর
বাড়িতে কেউ নেইতো এখন
আসবে মুসাফির?
ব্যালকনিতে দাঁড়ানোমাত্র
মেঘটা দেখলো
মেঘ মুখ তুলে
উচাটন সুর তুলে
ডাকতে থাকলো একটানা,
ওর মুখের লালা ছিটিয়ে
ভিজিয়ে দিল হাত।
সন্ধে এলো আলুথালু
সন্ধে এলো বিবশ কামুক পায়ে,
সারাগায়ে তাপটুকুনি ধরে
সন্ধে এলো এড্রিনালিন ভয়ে।
একদৃষ্টে নির্দ্দিষ্ট দূর গন্ডীবদ্ধ হয়ে
মেঘ দেখছিল,
দেখেই চলেছিল অস্থিরতায় -
হঠাৎই আশার পুঁচকে ভেলা
ছিঁড়েখুড়ে মেঘ
সূর্যকে লাথি মেরে কাঁদলো।
*****
পোড়া বৃষ্টির গপ্পো
নাদান বৃষ্টি
অঝোর ছাদে
ঝরছে এখন
যখন তখন
জমছে জল
ভাঙা রাস্তা
হচ্ছে আয়না
আকাশ মগন।
কিন্তু ব্যাঙের
ডাকও উধাও
উধাও পোকা
উধাও মাকড়
সাপ কমেছে
পাখিও হাপিশ
বিশ্বায়ন আজ
খুঁড়ছে কবর।
হচ্ছে বৃষ্টি
পড়ছে বৈকি
বলেছি কি
পড়ছে না!
মানুষ মেলছে
জ্যান্ত পেখম
বৃষ্টি মনে
ধরছে না!
বৃষ্টি এখন
গ্লোবালাইজড
বৃষ্টি এখন
ফ্যাক্টরি মেড
সহজ সরল
নেই দুনিয়ায়
উধাও সাদা
কালোর শেড।
প্রতিটা কবিতাই ভিন্ন স্বাদের ও অতি উচ্চ মানের। কবিকে শুভেচ্ছা জানাই।
উত্তরমুছুন