এই সপ্তাহের কবি শ্যামাশ্রী চৌধুরী মজুমদার। জন্ম ১৩ ই ফেব্রুয়ারি,১৯৮২, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়। ইংরাজি সাহিত্যের ছাত্রী। বর্তমানে যুক্ত শিক্ষকতায়। দ্বাদশ শ্রেণি থেকে লেখালেখির সূচনা। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ তিনটি বিষয়েই স্বচ্ছন্দ। লেখা প্রকাশিত হয়েছে 'বর্তমান', 'শুকতারা' , 'নক্ষত্র' 'দেশ' ইত্যাদি পত্রিকায় ও 'জ্বলদর্চি' , 'সময়সন্ধি', 'অবেক্ষণ', 'সিলি পয়েন্ট'সহ নানা ওয়েবজিনে।
কবিতার খাতা
(১)
প্রতি ভোরে কবিতার কাছে আসি।
তখন আমি মাধবীলতার প্রতিবেশী।
শব্দেরা আমার ঠোঁট ছুঁলেই কোথা থেকে উড়ে আসে দোয়েল, টুনটুনি।
খাদ্য নয়,জলও নয় কি এক আশ্চর্য উদ্ভাসে আমায় ঘিরে রাখে তারা।
পাখিরা তবে কবিতার অনুরাগী?
নাকি কবিতার শরীর ঘেঁষা মুখে ওরা সবুজ পৃথিবী খুঁজে পায়?
(২)
যে মানুষ একা হাঁটে শহরের পথে, সূর্য থেকে নিয়ত বাড়ে অযুত তফাৎ;
যে মেয়েটির স্নেহ ঋণ থমকে গেছে কানাগলির গন্তব্য হীনতায় ; যে কিশোর বন্ধক রেখেছে তার বৈভবের মাঠ পাকশালার অনন্ত গ্রাসে;
তাদের নিত্যই দেখি বাজারে, ফুটপাতে, কেরোসিনের লাইনে...
চিৎকার করে বলি," বদলে দেবো ব্যথার পৃথিবী।"
অথচ তোমরা আমাকে শক্ত করে বেঁধে রেখেছ পাঁচ মাথার মোড়ে।
নিরুত্তাপ ধূসর কুন্ডলী দলা পাকানো কান্না হয়ে ঢেকে দেয় চরাচর।
অতঃপর চাঁদ ওঠে মসৃণ দেওয়ালে।
(৩)
বোশেখ শেষের বেলায়
সকাল একেবার গড়িয়েই ভরন্ত দুপুর।
ন'কাকিমার একতোরা চিঠি, সেই যে ন'কাকু বম্বে থেকে পাঠাতো ! সোনা দাদুর ডায়েরি, মাথার পাশেই থাকত যারা আজীবন ! ছোট্ট সদস্যের ফুরিয়ে যাওয়া আঁকার খাতা,তার গোলাপী আকাশ, হলুদ নদী, হোমটাস্কের বাতিল ফোর লাইনার;
গৃহিনীর উনকোটি চৌষট্টি রকম আঁকিবুঁকি আর হিসেবের ছেঁড়া পাতা। দু'একখানা কবিতাও যেন লিখেছিলেন তাতে ভুল করে।
মনেও নেই আজ।
সব উপুড় হয়ে পড়েছে উঠোনে কালিঝুলি মেখে
বসির চাচার অপেক্ষায়।
হেকিমপুরের পাঁচঘড়া থেকে আসবেন ঘন্টি বাজিয়ে।
দুপুর আরো খর আর নিকষ হলে "গোপনীয়তারা'' বসির মিঞার বস্তায় চেপে পার হবে ট্রাম লাইন, বাসরাস্তা, চেনাবাউলের মাঠ
অচেনার গাম্ভীর্যে ভাসতে ভাসতে ফিকে হতে হতে।
(৪)
বিছিয়ে রয়েছে প্রেম,
করতলে শব্দক্ষুধা নিষেধ প্রাচীর।
জ্বলে গেছে আদিগন্ত ফসলের মাঠ
নিশান্তে প্রলেপ আনে আবছায়া চাঁদ।
দিনলিপি নিত্য স্রোত সুরধনী ছুঁয়ে
আমৃত্যু শস্যঋণ;
হাত পেতে থাকি ক্রমান্বয়ে।
(৫)
একবুক প্রত্যাশা মেলি অলস রোদ্দুরে।
নষ্ট মন বৃষ্টি জলে ধুয়ে বসি প্রসন্ন জানলায়।
ঝরাপাতার ভিড়ে মিশে থাকে মায়া।
সময় বদলালে হেসে বলি,
"অবুঝ ঈশ্বর, তুমিই প্রেমিক হলে?"
নষ্ট মন বৃষ্টি জলে ধুয়ে পাতি ঘাসের শরীরে।
ঢাকা দিই নতুন পুরোনো ক্ষত।
যাবতীয় ধুলো মুছে ভেসে ওঠে সুখ।
ভুলে যাই আর ডেকে বলি,
"মগ্ন ঈশ্বর, তুমিই কাছে এলে?"
(৬)
"সাবধানে থেকো" শুনলেই মনে হয়
বিপদকে কেবলই গন্ডী কেটে
দাঁড় করিয়ে রেখেছি বাইরে।
অথচ
"ভালো থেকো" উচ্চারণে এক সুগন্ধি
কুয়াশা ঘিরে ধরে
অবিকল শীত দুপুরের রোমাঞ্চে।
(৭)
প্রথম আলোর প্রশান্তিটুকুর জন্য
সামান্য এ জীবন পুষে রাখি।
দূর থেকে চেয়ে দেখি দু'একটা লাল নীল ফড়িংয়ের অস্থির কাঁপন।
মনে মনে ঘুরতে বেরই।
কোনো সমুদ্র শহরে সূর্যোদয় দেখে বালি,কাঁকর ছড়ানো পথে ফিরি।
ভোরের অ্যালার্ম,মাসকাবারি বাজার, সবুজ,অবুঝের হাজার দাবিদাওয়া তাড়া করে না পিছুপিছু।
তারাও নিয়েছে ছুটি ক্লান্ত অবসরে।
(৮)
পরিধির বাইরে থেকে তোমায় দেখি
অপরূপ,অনুপম তুমি ।
বৃত্তের ভিতরে যখন পাশাপাশি,
হে প্রেম, কোথাও তুমি নেই,
সুগন্ধের অন্ধকার সেখানে।
(৯)
কোনো কোনো ব্যর্থ দিনের ওপার থেকে
উঠে আসে সেইসব জোনাকিরা।
কাঁটার মতো বিঁধে যায় অজস্র অবয়বে
তারা জ্বলে-নেভে নির্বাক ঘোরের ভিতর;
জাগি আমি দিনান্ত থেকে ভোর।
(১০)
তারিখ হারিয়ে গেছে।
লেখার শেষে হাতড়াচ্ছি অনির্দেশ সময়।
কেবলই খুঁজছি নিজের জন্য, নিজের কাছে,
নিজেকে দেওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য
'সুসময়'...
বড় যত্নের হাতে অনিঃশেষ দাবি তাই।
সুন্দর মায়া মেশানো লেখা
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনমায়াবী, গুছিয়ে বলা কবিতার পংক্তি। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅশেষ ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনবেশ ভাল লাগল। আরও কবিতা পাওয়ার আশায় থাকলাম।
উত্তরমুছুনঅশেষ ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন