রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়

                                        


এই সংখ্যার গদ্যকার মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়৷জন্ম হাওড়া জেলায় । পড়াশোনা বাণিজ্য নিয়ে হলেও শৈশব থেকেই সাহিত্য প্রীতি ।  সাপ্তাহিক বর্তমান, আজকাল রবিবাসর, কথাসাহিত্য, গল্পপাঠ, পুরুলিয়া দর্পণ, ভবিষ্যত সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং অবাণিজ্যিক পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে একটি অণুগল্পের একক সংকলন শপিজেন বাংলা থেকে । তাছাড়াও বহু যৌথ সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা গল্প ও অণুগল্প । আসুন পড়া যাক তার একটি গল্প।



অন্তর্ধান

দূরে ঢালাই কারখানায় যখন ঢং ঢং করে বারোটা বাজলো, ঠিক সেই মুহূর্তে সুবর্ণ তার কাজ শেষ করে হাতটা ঝাড়লো । খুব নোংরা হয়ে হয়ে গেছে হাতদুটো । কিছুটা সময় নিয়ে প্রথমে হাতটা হাল্কা হাতে ঝেড়ে, তারপর পাশে জলের বালতিটার দিকে তাকালো । যাহ্‌, বড্ড ভুল হয়ে গেছে । তাড়াহুড়ো করে জলের বালতি আনতে ভুলে গেছে । এই তার মস্ত দোষ । কিছুতেই নিঁখুত হয় না তার কাজ । কিছু না কিছু ঘাটতি থেকেই যায় । যাকগে, আজকের কাজে এটা কোন ভুল হিসেবে ধরা যায় না । তবু মনটা খুঁতখুঁত করছে সুবর্ণর ।

তবে মনের মধ্যে একটা ফুরফুরে ভাব টের পাচ্ছে । ইচ্ছে করছে এখানে চিৎ হয়ে শুয়ে ছোটবেলার মতো চেঁচিয়ে কোন কবিতা বলতে । সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে ভেবে নিজেকে নিরস্ত করে সুবর্ণ । তবে এটা ঠিক, আর উঠতে-বসতে তাকে জ্ঞান শুনতে হবে না, মনে হবে না সে ছোট হয়ে যাচ্ছে কারো কাছে । শুধুই কী মনে হওয়া ? ভাবে সুবর্ণ । না কক্ষনো নয় । তাকে ডেলিবারেটলি ছোট করা হতো । চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হতো সে কতটা ছোট, কতটা নীচ মনের অধিকারী । শুধু কী তাই ? তার সঙ্গে যেভাবে কথা বলা হতো, তাতে পরিস্কার বুঝিয়ে দেওয়া হতো সে আসলে কতটা ব্যর্থ মানুষ । আর তারপর রিয়াক্ট করলে ?  শুনতে হতো, “তুমি অসুস্থ । তোমার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন ।” চেষ্টা চলেছে প্রচুর সুবর্ণকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার । তবে সুবর্ণকে বাগে আনা এত সহজ নয় । 

এই তো দিন দশেক আগের কথা । সেদিন সে আর . . . আচ্ছা, প্রথম থেকে শুরু করব নাকি দশদিন আগের কথাটা বলে নিয়ে আরও পুরনো ঘটনায় যাব ? 

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে সুবর্ণ কে আর তাকে কার কাছেই বা জ্ঞান শুনতে হয় আর কার কাছেই বা ছোট হতে হয় । তাহলে একটু নিজের মতো করে বলি । দেখুন তো আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয় কিনা ।  

সেদিন সুবর্ণদের বাড়িতে খুব খুশির দিন । দীর্ঘ সাত বছর পর সুবর্ণর মায়ের কোল আলো করে এই প্রথম নতুন অতিথি ওই বাড়িটায় আসতে চলেছে । সব ঠিকঠাকই ছিল । কিন্তু সুবর্ণর মা নার্সিং হোমের সামনে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে কীভাবে যেন পা জড়িয়ে পড়ে গেলেন । আশপাশ থেকে হইহই করে উঠল মানুষজন । শুধু সুবর্ণর বাবা বলে উঠলেন, ‘ক্যালাস একটা । কিছুই পারে না ।’ মায়ের গর্ভে সেদিন সুবর্ণ কেঁপে উঠেছিল । 

এই বিপত্তি সত্ত্বেও সুবর্ণর জন্মে কোন সমস্যা হয়নি । আর শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়নি সুবর্ণ । বাড়ির লোক থেকে ডাক্তার সবাই স্বস্তির শ্বাস নিয়েছিল ।

সেই সুবর্ণ এখন অ্যাডাল্ট । বিয়ে হয়েছে বছর দুই । আনন্দীর সঙ্গে । স্মার্ট, আধুনিকমনস্ক মেয়ে আনন্দী । চাকরি করে একটা সরকারী স্কুলে । তার সঙ্গে একটা এনজিওর সঙ্গে যুক্ত । একে অপরকে ভালবেসে বিয়ে করেছে তারা । সুবর্ণর ইচ্ছাতেই ওরা বাবা-মাকে ছেড়ে এসে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে । কিন্তু আনন্দী চেয়েছিল সুবর্ণর বাবা-মা আর তারা একসঙ্গে সুবর্ণদের নিজেদের বাড়ি টালাতে থাকবে । 

বিয়ের পর থেকে সুবর্ণর মাকে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হতো আনন্দীর । সব বিষয়ে ভয়, জড়তা, আড়ষ্টতা । আর সুবর্ণর বাবা প্রতি মুহূর্তে ওই মহিলার ওপর যেন মারমুখী হয়ে আছেন । সুবর্ণকে কিছু বলতে গেলে সে বলত, ‘বাবা-মায়ের ব্যক্তিগত ব্যাপারে মাথা ঘামাতে যেও না ।’

‘কিন্তু তুমি ? তুমি তো মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারো ।’

‘কেন ? কিসের জন্য ? মা-কে তুমি চেনো না । মায়ের সবকিছুকে গুবলেট করে দেওয়া স্বভাব । তাই বাবা ওভাবে রেগে যায় । ঠিক করে । আমার নিজেরও বিরক্ত লাগে ।’

অবাক লেগেছিল আনন্দীর । খুব খারাপ লেগেছিল সুবর্ণর কথা । কিন্তু নতুন জীবনের শুরু, চোখে স্বপ্নের মায়াকাজল, এই খারাপ লাগাকে স্থায়ী করতে পারেনি ।

আনন্দী আস্তে-আস্তে কেষ্টপুরে তাদের নিজস্ব দু-কামরার ফ্ল্যাটে নিজেদের জগৎ গড়ে তুলছিল । কিন্তু বাধ সাধল সেদিনের সেই ঘটনাটা । পার্টি ছিল সুবর্ণদের অফিসের । আনন্দী স্বীয়-স্বভাবের গুণে খুব অল্প সময়ে সবাইকে আপন করে নিতে পারে । আর অন্যেরাও বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তাকে কাছে টেনে নেয় ।

সেদিন সুবর্ণদের অফিস পিকনিক ছিল । খুব জমজমাট হাসিখুশি পরিবেশ । আলাপ হয়েছিল অনেকের সঙ্গে । তার মধ্যে সুমনদা একজন । প্রাণখোলা মানুষটার সঙ্গে আনন্দীর অনেক কথা হয়েছিল । সুমনদাকে বেশ ফ্যামিলিয়ার মনে হয়েছিল আনন্দীর । তার বাড়িতে কে আছে, ছোটবেলা কীভাবে কেটেছে, কী পছন্দ . . . একেবারেই ঘরোয়া আলোচনা । কিন্তু ফ্ল্যাটে ঢুকেই সুবর্ণর আচমকা চিৎকারে চমকে যায় আনন্দী ।

‘এত কী কথা সুমনদার সঙ্গে ? পিকনিকে তো আরও অনেকেরই মিসেস গিয়েছিলেন । কই, তারা তো কেউ সুমনদার সঙ্গে গল্প করতে বসে যায়নি ?’

‘সেরকম কোন কথা নয় । এই ছোটবেলার কথা, বাড়িতে কে কে আছে এইসব জানতে চাইছিলেন ।’ থতমত খেয়ে বলে আনন্দী ।

‘ও, আচ্ছা ! সেরকম কোন স্পেশাল কথা হয়নি বলে আফশোষ হচ্ছে বুঝি ?’

‘ছিঃ ! কী বলতে চাইছ তুমি ?’

‘যা বলতে চাইছি সেটা ঠিক বুঝেছ । আর ন্যাকামি করতে হবে না ।’

স্তব্ধ হয়ে যায় আনন্দী । এ কোন সুবর্ণকে দেখছে ! বিয়ে ছমাস হলেও আগে এই মানুষটার সঙ্গে গত দেড় বছর মেলামেশা করেছে । কখনো তো এই ধরণের কথা শোনেনি ।

  হঠাৎ মনে পড়ে যায় আনন্দীর । তখন তারা চুটিয়ে প্রেম করছে । সিসিডিতে কফি খাচ্ছে । উল্টোদিক থেকে একটা ছেলে হাঁ করে তাকিয়ে দেখছিল তাকে । আনন্দী বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল । কিন্তু সুবর্ণ দুম করে উঠে বলে উঠেছিল, ‘স্যরি ভাই, ম্যাডাম বুকড্‌ । চোখটা এবার সরিয়ে নিন ।’

তখন খুব জোরে হেসে উঠেছিল আনন্দী । কিন্তু আজ ? খুব খারাপ লাগছে সুবর্ণর কথাগুলো । কেমন অচেনা মনে হচ্ছে এতদিনের চেনা মানুষটাকে । একসঙ্গে চলার ছন্দে সেদিন প্রথম তাল কেটেছিল ।

এর মাসখানেক পরের কথা । আনন্দী হাসতে-হাসতে হাতে একটা কাগজ নিয়ে ঘরে সুবর্ণর কাছে আসে ।

‘এই, এটা দ্যাখো, একটা দারুণ খবর ।’ আনন্দী কাগজটা সুবর্ণর হাতে দেয় ।

‘ও আচ্ছা ! এখন মাস্টারনীর  সমাজসেবীর তকমা না পেলে চলছে না ?’ চিবিয়ে-চিবিয়ে বলে সুবর্ণ ।

‘মানে ! কী যা তা বলছ ? এটা আমার অ্যাচিভমেন্ট । এই কাজটা বিয়ের আগে থেকে করছি । আজ তার স্বীকৃতি পাচ্ছি । শুধু তাই নয়, এই পুরস্কারের সঙ্গে যে টাকাটা পাব তাতে ওই অসহায় বাচ্চাগুলোর ঠিক করে থাকা, ন্যুনতম খাওয়া, কিছুটা পড়ার খরচ উঠে যাবে । এটা কম কথা নাকি ?’

‘যাও, যাও । বেশি জ্ঞান দিতে এসো না ।’

সরে এসেছিল আনন্দী । কিন্তু বাধাটা এভাবে আসবে ভাবেনি । যেদিন তার পুরস্কার প্রাপ্তির অনুষ্ঠান, সেদিন বিকালে তৈরি হতে গিয়ে আলমারির চাবি কোথাও পায় না । তন্নতন্ন করে সারা ফ্ল্যাট খুঁজে ফেলে । কিন্তু না, কোথাও পায়নি চাবি । সুবর্ণকে ফোন করে । বারবার শোনে ফোন স্যুইচড অফ । কান্না পেয়ে যায় আনন্দীর । এই কাজ সুবর্ণ ছাড়া কেউ হতে পারে না । কেন এমন হয়ে গেল সুবর্ণ ! সেদিন সামনের ফ্ল্যাটের মাসিমার শাড়ি পরে গিয়ে কোনরকমে মান বাঁচায় আনন্দী । 

সুবর্ণর আচরণে ক্রমশ হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে আনন্দী । শ্বশুরমশাইকে সুবর্ণর কথা জানালে তিনি অক্লেশে বলে দেন, ‘অ্যাডজাস্ট করে চলতে শেখায়নি তোমার মা বাবা ? স্বামীর ত্রুটি না খুঁজে স্বামীর মনোমত হয়ে চলার চেষ্টা করো ।’

আনন্দী আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করার চেষ্টা করে । সুবর্ণ যাতে রাগ না করে, তার সঙ্গে দূর্ব্যবহার না করে তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করত । আচমকাই এলো ওদের দুজনের জীবনে খুশির খবর । ওরা দুজনেই একেবারে খুশিয়াল হয়ে উঠল । মা হতে চলেছে আনন্দী । সুবর্ণ অস্থির হয়ে উঠল, কী ভাবে আনন্দীর সেবাযত্ন করবে । ডাক্তার, ওষুধ তো বটেই, নিজে হাতে রান্না করেও আনন্দীকে খাওয়াত । একদিন একটা ছোট্ট পুতুল এনে হাজির করল সুবর্ণ । আনন্দী তো খুব খুশি । কী দারুণ দেখতে পুতুলটাকে ! চোখদুটো পিটপিট করছে, একরাশ কোঁচকানো চুল, গাল থেকে গোলাপি আভা বেরোচ্ছে । পুতুলটাকে কোলের মধ্যে নিয়ে আনন্দী বলে, ‘এইরকম একটা তার মেয়েই চাই ।’ সেদিন সুবর্ণর চোখদুটো খেয়াল করে উঠতে পারেনি । পারলে হয়তো . . .

নাহ্‌, পারেনি আনন্দী মা হতে । আচ্ছা আনন্দী পারেনি, নাকি তাকে মা হওয়ার পরিপূর্ণতা থেকে বঞ্চিত করা হলো । আর সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে । সেদিন মনে না হলেও আজ আনন্দী নিশ্চিত । কিন্তু সে মুক্তিও চায় না । ভাবে সুবর্ণ ঠিক বুঝবে তাকে আগের দিনগুলোর মতো । নিজেকে ঠিক সংশোধন করে নেবে ।  আবার তারা সুন্দর করে তাদের জীবন কাটাতে পারবে । 

বাথরুমেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল আনন্দী । অ্যামবুলেন্সে সারাটা রাস্তা তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল সুবর্ণ । বুঝিয়েছিল, আবার সে মা হতে পারবে । তাদের জীবন একটা পুচকে আলো করে রাখবে । ওই পুতুলটার মতোই তাদের একটা মেয়ে হবে ।

শোক একটু হলেও সামলে উঠছিল আনন্দী । সুস্থ হয়ে নার্সিংহোম থেকে ফেরার দিন তিনেক পরে সুবর্ণ গভীর আদরের মাঝে যে কথাটা বলে উঠেছিল তাতে চমকে উঠেছিল আনন্দী ।

‘আমাদের মাঝে কেউ আসুক আমি চাই না । সে নিজের সন্তান হলেও …’ 

কথাটার শেষ পর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি আনন্দী । দৌড়ে পাশের ঘরে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি তুলে দিয়েছিল । বাইরে সুবর্ণর চিৎকার আর গালিগালাজে ঘরের ভিতর বাকি রাতটা ঠকঠক করে কেঁপেছিল । ভোররাতে সুবর্ণ যখন কেঁদেকেটে ক্ষমা চেয়েছিল তখন আনন্দীর মন আবার দুর্বল হয়ে পড়তে চাইছিল তার ভালবাসার মানুষটার ওপর ।  

ইদানীংকালে সুবর্ণ তার আদরকে অত্যাচারের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ঠেকিয়েছে । কিন্তু আনন্দী সবটুকু সহ্য করছে নিজের ভিতর আর একটা প্রাণের উপস্থিতি পাওয়ার জন্য । তার আশা অলীক জেনেও বুক বাঁধছে । 

সেদিনের রাতের পর সুবর্ণর মধ্যে অনেকটা বদল লক্ষ্য করেছিল আনন্দী । তাদের জীবনের দিনগুলোর একঘেয়েমি কাটাতে আনন্দী একপ্রকার জোর করে সুবর্ণকে নিয়ে এসেছিল ওদেরই দেশের বাড়িতে । সুবর্ণদের দেশের বাড়ি ফাঁকাই পড়ে থাকে । বহুদিনের বিশ্বস্ত লোক বেণীকাকা বাড়ির দেখাশোনা করে । 

প্রথম দুটোদিন খুব ভাল কেটেছিল ওদের । কিন্তু গতকাল রাতে যা ঘটল তাতে শেষপর্যন্ত আনন্দী সব কিছু ধরে রাখতে পারবে কিনা সেই ব্যাপারে নিজেই সন্দিহান হয়ে পড়েছে । গতকাল রাতে চূড়ান্ত আদরের মধ্যে সুবর্ণ সজোরে তার গলা টিপে ধরে । ভীষণরকম ধ্বস্তাধ্বস্তির পর নিজেকে ছাড়াতে পারে আনন্দী । 


# # #


কাজ মিটিয়ে সুবর্ণ ঘরে এসে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে । খুব হাল্কা লাগছে তার নিজেকে । তার সঙ্গে একটা ছটফটানিও কাজ করছে তার মধ্যে । গুনগুন করে গানের এক কলি গেয়ে নেয় । তারপর বিছানা থেকে উঠে ঢকঢক করে বেশ অনেকটা জল খেয়ে নেয় । এবার সোফায় বসে কুশনটা বুকে টেনে নেয় । কাল রাত থেকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত যা যা ঘটেছে আরও একবার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে করতে চায় সুবর্ণ । কিন্তু কেন ?

কাল রাতে চূড়ান্ত আদরের পর আনন্দী একটু-একটু করে একেবারে নেতিয়ে পড়ল । মনে হয় গলায় চাপটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল । এখন সেরকমটাই মনে হচ্ছে সুবর্ণর । ভাল করে বুকের ওপর মাথা রেখেছিল, নাকের নিচে হাত রেখে পরীক্ষা করেছিল । যা অনেক আগে করতে চেয়েছিল আজ প্রস্তুতি ছাড়াই সেই কাজ করে ফেলেছে সে । তবে তার জন্য কোন আফশোষ নেই তার । অনেকগুলো দিন হয়ে গেল আনন্দীকে একেবারেই সহ্য হতো না তার ।

কাল রাতেই মাটি খুঁড়ে ফেলেছিল । আনন্দীকে নিয়ে যেতে পারেনি । কেননা ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটে গেছে । আজ রাতে কাজটা সম্পূর্ণ করে ফেলেছে সে । কিন্তু জল না দিলে মাটিটা ঠিক মতো বসবে না তো । নাহ্‌, আজ রাতেও আর বিশ্রাম হলো না । ভাবে সুবর্ণ । 

 জলের বালতি নিয়ে পিছনের বাগানে আবার যায় সুবর্ণ । জলটা ঢালার আগে কী মনে হতে মাটিটা দুহাতে আবার খোঁড়ে । আসলে সুবর্ণর নিজের ওপর কনফিডেন্স চিরকাল কম । 

এটা কী হচ্ছে ! সুবর্ণ টের পায় তার হাতটা কেউ টানছে মাটির ভিতর থেকে । জলের বালতিটা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সুবর্ণ । 

রাতের অন্ধকার চিরে শুধুই একটা ভয়াল আর্তনাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।

দুদিন পর খবরের কাগজে একটা ছোট খবর বেরোয় । 

দেশের বাড়িতে বেড়াতে এসে স্বামী-স্ত্রীর রহস্যজনক অন্তর্ধান…

1 টি মন্তব্য: