মন – খোলা জানালা
মনেরপুষ্টির জন্য কি কি করা প্রয়োজন।
শিশুর জন্ম থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে শরীরের পুষ্টি কি করে বৃদ্ধি পাবে সেটা নিয়ে। শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে করুণ আর্জি চলে স্বাস্থ্যবান বাচ্চা চাই। কতরকম খাবার খাওয়ায় তাকে। আজকাল সকলেরই একটা কি দুটো বাচ্চা। পরিবারের পুরো মনোযোগ থাকে শিশুর উদর কতটা পূর্ণ হল অথবা হল না। শিশু কোলে মায়েদের নিরন্তর অনুযোগ চলতেই থাকে তার বাচ্চা কিছু খায় না! এখন কথা হল, জন্মের পরে দৈহিক পুষ্টি গুরুত্ব পায় আর মনের পুষ্টি? তার কথা কতটুকু ভাবে মানুষ? একজন শিশুর মনের গঠন ঠিক ভাবে গড়ে উঠছে কি না, সেটা দেখা পরিবারের কর্তব্য। খুব ছোট্ট থেকে এমনকি যখন মাত্র কয়েক মাস বয়স, তখন থেকেই শিশুটির মনের ভিতর নানারকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সেইসময় কিভাবে শিশুর মন আনন্দে ভরপুর থাকবে, সেটা বোঝা উচিত।
*****
আজ যে শিশু আগামীকাল সে একজন দায়িত্ব বান নাগরিক। মজবুত শরীরের সঙ্গে চাই একটি মজবুত মন। সে যেন সমস্ত রকম সমস্যার সামনে স্থির রাখতে পারে নিজেকে। প্রতিকূল পৃথিবীতে লড়াই করতে গেলে স্থিতিশীল মনের প্রয়োজন খুব।
ক্রমবর্ধমান স্ট্রেস সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। এর ফলে আমাদের ক্ষতি হয়। অনেকটা স্লোপয়জনিং এর মত। খুব ধীরে ধীরে চিন্তা গ্রাস করে আমাদের।
বিজ্ঞান বলে, দীর্ঘদিন চাপের মধ্যে দিয়ে গেলে মস্তিষ্ক প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষকে শান্ত করতে সাহায্য করে। সেইসময়, ডোপামাইন বা ডোপামিন ( dopamine)। বলে একপ্রকার হরমোন ক্ষরণ হয়।
এই হরমোনের কাজ হল , খুশি উৎপন্ন করা। অর্থাৎ চাপ মুক্ত করতে সাহায্য করা। কি সাংঘাতিক কাজ করে এই হরমোন। ( বলে রাখা ভালো, এই প্রবন্ধ কোনো নিউরো সার্জনের লেখা নয়। কিন্তু, আমার বক্তব্যের সঙ্গে শরীর যুক্ত। তাই এই কথা গুলো সংক্ষেপে হলেও আনতে হবে)।
খুশি উৎপন্ন করে এমন হরমোন, যা কিনা neurotransmitter হিসেবেও কাজ করে, তার এত গুরুত্ব কেন?
কথায় কথায় আমরা বলি, feel good, আনন্দে থাকো। খুশিতে থাকো। ডোপামাইন হরমোন ভালো থাকার প্রেরণা যোগায়। ভালো কাজ করার প্রেরণা যোগায়। ভালো ভাবে থাকার প্রেরণা যোগায়। আরো অনেক অনেক কাজ করে, অনেকেই হয়তো এ সম্পর্কে জানে। অর্থাৎ, ভালো থাকতে হলে ডোপামাইন নিঃসরণ সুন্দর ভাবে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
২
মানুষ স্বাভাবিক ভাবে ভালো থাকতে চায়। সে কাজে তাকে সাহায্য করে তার মস্তিষ্ক।
আমরা ভাবতে পারি কি ? যে, আনন্দ দেওয়া এই হরমোনের উদ্দেশ্য। এবং, এই হরমোন সঠিক পরিমাণ নিঃসরণে মানুষ নানা ধরণের কাজে উৎসাহ পায়। শরীরের অন্যান্য ইন্দ্রিয় শক্তিশালী হয়। সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু যে স্ট্রেস প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে বাইরে থেকে, সে তো ছিনিয়ে নিচ্ছে আমাদের খুশি? তবে? উপায়? বিভিন্ন কারণে চলে যাচ্ছে খুশির অনুভব। মহামারীর সংকট এই মুহূর্তে একটি বড় কারণ। সেটা মেনে নেওয়া যায়, যদিও স্নায়ুর উপর প্রবল চাপ ফেলছে এবং বহু মানুষ মনের রোগের শিকার হচ্ছেন।
এই বড় কারণ ছাড়াও, ছোট ছোট বহু করণের ফলে ক্ষয় হচ্ছে আনন্দের ভূমি। সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভের। পার্থিব জগতে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মধ্যে টানা পোড়েন থাকে তীব্র। সর্বক্ষণ একটা ভয় কাজ করে। এই বুঝি হারিয়ে গেল! এই বুঝি অমুক পেল সম্মান , এই বুঝি ...! আমি পারলাম না। আমি হেরে গেলাম। ভাবলে অবাক হতে হয়, ছোট বাচ্চাদের মনের মধ্যেও এরকম ক্ষোভ দুঃখ হতাশা জেগে ওঠে। অর্থাৎ, যে সুন্দর কাজ আমাদের খুশি দিতে পারে, সে কাজ যদি কোনো কারণে সাফল্য না পায়, তবে আমাদের মনের ব্যালান্স শূণ্য হয়ে যেতে পারে!
অবসাদ আচ্ছন্ন করলে ডোপামাইন হরমোন নিঃসরণ ঠিক মত হয় না অথবা বেশি হয়। দুটোই ক্ষতিকর। কম মাত্রায় হলে, প্রচুর রোগ খুব ধীরে ধীরে আক্রমণ করে। এবার যেই মাত্র অবসাদ ঘিরে ধরছে, সহজ উপায় খুঁজে নিচ্ছি ভালো থাকার। ভিডিও গেম, সিগারেট, নানারকম নেশা, বিকৃত পোস্ট, ইত্যাদি বহুরকম কাজ করলে সাময়িক মন খারাপ ভুলে থাকা যায়। খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যারা এই ধরণের নেগেটিভ কাজ করে, যে বাচ্চারা বেশি ট্যাব আসক্ত ... কোথাও না কোথাও তাদের মনের প্রবলেম আছে। তারা জানেও না, বাইরের থেকে আনন্দ নিয়ে ভিতরের কতখানি ক্ষতি হচ্ছে। খুশি যদি অযথা অকারণ অদরকারি হয়, তবে হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলেও শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথম কথা, নেশা ছাড়া তখন আর খুশি থাকা যায় না। বাচ্চার থেকে ট্যাব নিলে সে হিংস্র হয়ে ওঠে। নানা রকম অপরাধ মূলক কাজ, অযথা অভিযোগ অভিমান ... এ সমস্তই ধীরে ধীরে অধিকার করে ফেলে আমাদের সমস্ত নিজস্বতা।
৩
প্রাচীন কাল থেকেই, ভালো থাকার একটা উপায় বলা হয় শ্বাস নেওয়া, মেডিটেশন করা অথবা কিছুক্ষণ মৌন থাকা। নাম জপ করা... ইত্যাদি ইত্যাদি। এই কাজগুলো মনের ব্যায়ামের অঙ্গ। সবচেয়ে বড় কথা, মনের ব্যায়াম ঠিক মতন করলে, ডোপামাইন হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটা আমার মনে হয়। সত্যি কথা বলতে কি, এই কিছুদিন আগে একজন কাউন্সিলিং করতে এসেছে,( হয়ত সে পড়ছে এই প্রবন্ধ,) তার বাচ্চাটি ট্যাব আসক্ত। আমি এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবিষ্কার করি,শৈশব থেকেই ওর মধ্যে ছিল খুশির অভাব। এখন ও খুশি খুঁজে নিচ্ছে ট্যাব দেখে। আরো এক জায়গায় পড়লাম, যদি ডোপামাইন নিঃসরণ বেশি হয়, তবে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ, নিজের এক দুনিয়া বানিয়ে নিয়ে সুখে থাকা। পারিপার্শ্বিক কারো সঙ্গ ভালো না লাগা। একলা থাকা। নিজের মত।
৪
আমি এত জটিল বিজ্ঞান বুঝি না। মনের জন্য ওষুধ খেতে হয়, সে বিশ্বাসও করি না। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন," সুখ দুখ সমভাব চ।
এই উপদেশ হল আবেগ নিয়ন্ত্রণের মূল কথা। সাফল্য আর ব্যর্থতা বলে কিছু হয় না। এক দরজা বন্ধ হোক। সুখী হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। আবেগ যেমন চালিকা শক্তি তেমনি অতি আবেগ ক্ষতিকর। মনে রাখতে হবে, বেঁচে থাকাই হল সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। একবার এক চাকর আর এক রাজা দুজনেই জলে ডুবে মারা যায়। জলে ডুবে চেহারা বিকৃত হওয়ায় কেউ বুঝতেই পারল না , কে চাকর আর কে রাজা? লোকজন অনেক ভেবে চিন্তে আন্দাজে দেহ দুটির একটিকে রানীর কাছে অপরটি চাকরদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিল।।
এই তো জীবন! যতক্ষণ আছি ডিউটি করে যাই। ফল পাবার হলে পাবো, না হলে পাব না। সেটা আমার হাতে নেই। কিন্তু , ফল না পেলে দুঃখী হব কি না সেটা আমার হাতে আছে।
বাচ্চাকে আনন্দে রাখা আমাদের কর্তব্য। তবে ওর ভিতর খুশিতে ভরে উঠবে। অনেক কাজ ও আনন্দে করবে। না হলে ধীরে ধীরে মনের চারিদিকে জঞ্জাল জমতে থাকবে।
অবসাদ , আবেগ , ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায়,
অ উ ম অথবা সো হ ম উচ্চারণ করা। প্রতিদিন। আর প্রতিদিন নিজেকে বলা
আমি ভালো আছি।
খুব সুন্দর বললে
উত্তরমুছুন