রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১

সুবীর সরকার

                             


গৌরীপুরের পান আর গোলকগঞ্জের গুয়া



২৬.
গঙ্গাধর আর গদাধর নদীর পারে পারে কত কত হাট।বড় হাট মাঝারি হাট জৌলুস হারানো কিংবা জাকজমকের হাট।এই সব হাট ঘিরে ভূমিলগ্ন মানুষের বেঁচে থাকা।মানুষের জীবন ঘিরে এত এত হাটের কুহক।
সে আলমগঞ্জের হাট বলো, প্রতাপগঞ্জের হাট হোক,পাগলাহাট বা কাছারিহাট যাই হোক না কেন;
সব হাট ছাপিয়ে ভেসে উঠতে থাকে গৌরীপুরের হাট।গোলকগঞ্জের হাট।এই আখ্যানের প্রায় সব চরিত্রই একবার হলেও ঢুকে পড়ে গৌরীপুর আর 
গোলকগঞ্জের হাটের কেন্দ্রে।
আমরা দেখে ফেলি গৌরীপুরের হাটে গান গাইতে গাইতে ঘুরে বেড়ানো ভিখিরিদের।তাদের মুখের লালায় জিভের শরীরে লেগে থাকে গৌরীপুরের খিলি পান।গোলকগঞ্জের মজা গুয়া।হাটের প্রান্তে প্রান্তে উড়ে বেড়াতে থাকে তাদের গান_
"নদীত ফোটে 
নদীয়া হোলা"

২৭.
"একবার হরি বল মন রসনা
মানব দেহাটার গৈরব কইরো না"

মালতিগুরির চর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এই রহস্য মাখা অঘ্রান সন্ধ্যায় চরের কোন অন্দর থেকে এই গানের সুর হাহাকার জাগিয়ে বা হাহাকার জড়িয়ে ছুটে আসছিল নন্দকান্ত বায়েনের দিকে।কিন্তু তখন
নন্দকান্তর ঘাড়ে তার চিরদিনের সেই ঢোলটি ছিল না।কিন্তু এই গান নন্দকান্তর সমগ্র শরীরের পেশিতে কেমন এক উন্মাদনা এনে দিতে থাকে।তার ইচ্ছে করে ঢোল নিয়ে কুয়াশার ভেতর দিয়ে কোন এক গানের জুলুসে চলে যেতে।তারপর গানে গানে জীবনের মস্ত আখ্যান বয়ন করতে করতে জীবন মায়ায় কেবল কান্না আর কান্না বিছিয়ে দিয়ে একপর্বে মালতিগুরির চর অতিক্রম করে নন্দকান্ত বায়েন নেমে যেতে থাকেন নদী তোর্সার শীতল জলে।
আমরা জল ভাঙবার শব্দ শুনি।আর ভাঙা জলের সোতায় নন্দকান্তর ছায়া দুলতে থাকে।
এভাবেই জীবনের পর জীবন বাঁচে এই সব হাটপরিধী জুড়ে জুড়ে।আখ্যানের পর আখ্যানের পরিসরে তীব্র এক গঞ্জহাটের কোরাস!

(সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন