সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শোভন বাগ

#আগুন


১.
এক গেলাস চা আর খানকয় লেড়ো বিস্কুট খেয়ে, গেলাসটা ঠক্ করে নামিয়ে রাখলেন পুরুষ্টু বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও হীরক খচিত তর্জনি।
গরিবি খিদের আগুন থেকে পায়রা ওড়ানো বনেদিয়ানায় ফিরে এসে, তাচ্ছিল্যের আগুনে নিজেকে সেঁকে, স্ফটিকের কুঠুরির দরজা বন্ধ করলেন ঠক্ করে।

২.
চায়ের দোকানের ছেলেটি ফেলে আসা ঘরের মায়ায়, না যেতে চাওয়া স্কুলের টানে, ছেঁড়া কাঁথায় মায়ের ওমের খোঁজে, ছুঁড়ে দেয়া ভাতের অনাদরের সাথে লড়তে লড়তে - খিড়কির পুকুর, পুকুরের ওপর ঝুঁকে আসা খেজুর গাছ, পোষা নেড়ি, খেলার মাঠ, শাঁখের শব্দ, বাবা-মা-ভাই-বোন সবার সাথে গা ঘসাঘসি করে না থাকতে পারার ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে, হীরের আংটির প্রতি হিংসায় এঁটো গেলাসটি ঠক্ করে নামিয়ে রাখে ধোয়ার জায়গায় ।

৩.
রাতেরবেলা ফেরার পথে, হীরের আংটি দামি গাড়ির দরজা খুলে, রাস্তার পাশ থেকে তুলে নেয় রঙ মাখা শরীর ।দশ পনেরো মিনিট পর দড়াম করে খুলে যায় দরজা । ছিটকে পড়ে শরীর। যে অঙ্গগুলো একটু আগেও ছিল কামনার, এখন সেগুলো শুধুই কিছু কুৎসিত শব্দ । মুখ দিয়ে সেইসব কুৎসিত শব্দ ওগরাতে ওগরাতে, একরাশ থুথু আর কয়েকটি নোট ছুঁড়ে দিয়ে হুশ করে চলে যায় দামি গাড়ি।

কিছু পরে চুলার আগুনে প্রেসার কুকারে ভাতের ভোঁ ওঠে।

৪.
জড়োয়া গয়না তখন নাইটিটা বুক পর্যন্ত গুটিয়ে তুলে, তুমুল আশ্লেষে কাছে টেনে নিচ্ছিল ছোকরা চাকরকে।
"বল, কী খাচ্ছিস?"
"বল, কী ঢোকাচ্ছিস?"
"বল, কী করছিস?"
অশ্লীলতা আর শীৎকারের শব্দে শরীরের আগুন সুখ খুঁজে পায়। তারপর খুট করে দরজা বন্ধ করে চাকরটা ফিরে যায় নিজের ঘরে ।
মোবাইলে ভেসে আসে, "বাবা, এবারে জমিখান ঠিক ছাড়িয়ে নেব।"

বাবার চাষী-বুকে জ্বলতে থাকা আগুনে শান্তির জল পড়ে।

৫.
বাড়ী ফিরে হীরের আংটি চেপে ধরল কলিংবেল। দরজা খুলে দিল কেউ।
জড়োয়া গয়না শুনতে পাচ্ছে খট খট শব্দটা এগিয়ে আসছে তাদের শোবার ঘরের দিকে।
খুট। খুলে গেল দরজা।
খুট। খুলে গেল আলমারি। আরেকটা গয়না হল জমা।
আরেকটা শব্দ হল। অভিধান বলল, ওটা চুম্বন।

শুধু আগুনটাই যা জ্বলল না।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন