রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

সুবীর সরকার

                    


গৌরীপুরের পান আর গোলকগঞ্জের গুয়া



২০.
নদী গঙ্গাধরের ভাটিতে চন্দ্রকান্ত দেউনিয়ার জোত জুড়ে এই হেমন্তে হেউতি ধান কাটার মরসুম।ধান নিয়ে গো_মহিষের গাড়ি চলেছে কৃষকের ঘরে। এ দৃশ্যে উৎসব জড়িয়ে থাকে।জীবনের মায়া জড়িয়ে থাকে।বগা বগির দল উড়ে যাচ্ছে রতিয়াদহর দিকে,বালাজানের দিকে, বিষখোয়ার দিকে,আগমনীর দিকে,গোলকগঞ্জের দিকে,আগমনী পেরিয়ে রূপসীর দিকে।মাঠ মাঠ ধানের মাঝখান থেকে মেয়ে বউদের সমবেত গান ভেসে আসে_
"আজি কার বা বাড়ির ভোন্দা বিলাই
দুয়রত করিলেক হায় ম্যাও"
ধান কাটতে কাটতে কণ্ঠে গান আসে,শরীরে পুলক জাগে।আর শরীরের পেশিতে জেগে উঠতে থাকে নাচের মুদ্রা।বাদ্য থাকে না।বাজনা থাকে না।কিন্তু নাচ থাকে।নাচের সাথে জড়িয়ে থাকে গান।চিরকালের সব গান,যা জীবন নিংড়ে উঠে আসা_
"ধর তো দ্যাওরা ছাওয়াটাক
মুই বিলাইওক সাজা দেও"
জীবন বয়ে চলে এভাবেই।দুর দুরান্তরে ছড়িয়ে পড়া বগা_বগি একসময় ফিরে আসতে থাকে।হেমন্তের ধানের মাঠে তাদের ডানার শান্ত ছায়া বিছিয়ে পড়তে থাকে।
২১.
জীবনের গল্প কখনো শেষ হয় না।হাটপর্ব ফুরোয় না কখনো!আসলে হাট হারানো একটা জীবনের কথা ভাবতেই পারে না মানুষ।গঙ্গাধর নদীর উজান ভাটি জুড়ে কত কত মানুষের জমায়েত।আসা যাওয়া।জমায়েতের ভেতর সারি সারি সাজানো সব গল্পেরা।
এক গল্প শেষ না হতেই নুতন গল্পের শুরু হয়ে যায়।
গল্পে গল্পে মানুষ বাঁচে।মানুষকে আসলে বেঁচে থাকতে হয়।জন্ম জন্ম জুড়েই।
আমরা আবার দেখি হেমন্তের ম্যাজিক জমে থাকা মাঠে আবার বাওকুমটা বাতাস।বগা_বগির হাহাকার মিশে থাকা কান্নার সুর।
আর মাঠের সিথানে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা আবহমান কালের জোড়া মহিষ।ময়কান্ত ব্যাপারী।
আর গুয়া পানের মৌতাতে গান গাইতে থাকেন ফুলেশ্বরী আবো_
"ধান কাটে ধানুয়া ভাইয়া রে
ছাড়িয়া কাটে ওরে নাড়া
সেই মতন মানুষের দেহা
পবন গেইলে ওরে মরা জীবন রে"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন