রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

সুবীর সরকার

                     


গৌরীপুরের পান আর গোলকগঞ্জের গুয়



১৮.
কবেকার কোন এক হেমন্তের হাটে হেমকান্ত দেখে ফেলেছিলেন সেই জোড়া কৈতর। আর হাটে ঢুকে পড়া মেয়েরা তাদের শরীরে নাচ নিয়ে শুরু করেছিল গান_
"আরে নবরঙ্গের ময়না
ময়না না যান গৌরীপুরে রে"
নাচের পর নাচ গানের পর গান চলে,চলতেই থাকে
হেমন্ত জুড়ে।মাঠে মাঠে সোনার ধান।
মানুষের ঘরবাড়ি থেকে দৈনন্দিন কথা বার্তা ভেসে।
হিমে ভেজে খোলানের নিঃসঙ্গ আখা।
দূরে কোথাও আগুন জ্বলে ওঠে।
আগুন ঘিরে মানুষের ছায়া আবছায়া।
আল ও আলি দিয়ে দৌড়ে পালায় হেমন্তের ছাইবর্ন শৃগাল।
রহস্যময় মনে হয়,মনে হতে থাকে দূরে কাছের গ্রামদেশ।
মস্ত চাঁদ ওঠে। জোড়াদিঘির জলে চাঁদ আর সুপুরি গাছের ছায়া।
কোথাও পুঁথি পড়া হয়।
আর গান জেগে ওঠে_
"বাপরে বাপ কি জাড়
মাওরে মাও কি জাড়
জাড়ত কাপে দেখং এল্যা
দিন দুখির সংসার"
এভাবে জীবন সেজে ওঠে।জীবন প্রবাহিত হয়।
জন্ম আর মরণের ঘোর জাগিয়ে রেখে
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন হেমকান্ত।
আর হেমন্তের মাঠে খেতে হাহাকারের মতন ছুটে
যায় গান_
ওরে মানুষের দেহা
পবন গেইলে হবে মরা"
১৯.
হেউতি ধান,পাখির পালক,শেষ হেমন্তের নদী,ধান নিয়ে ঘরে ফেরা কৃষক,নির্জন কলাগাছের পাতা_এই সব দৃশ্যের মায়া আর ম্যাজিক কেমন নিরিবিলি করে দেয়।
এই সব আসলে চিরকালীন,আবহমান।
যেভাবে জীবনের পর জীবন মানুষ বাঁচে,মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়।
পুরোন মানুষ হারিয়ে যায় এই মর পৃথিবী থেকে।
নুতন মানুষ বেঁচে থাকাটাকে ছুঁয়ে থাকে।
জন্ম জন্ম জুড়ে এ এক ধারাবাহিক পক্রিয়া।
ছয় নদী আর নয় ফরেস্ট জুড়ে জুড়ে গল্প নির্মিত কিংবা বিনির্মিত হতে থাকে।শিমুল গাছের শরীরে নখের আচড় রেখে আসে চিতাবাঘ।
হাতির পাল নেমে আসে উত্তরের ধানবনে।
নদীর শিথানে খুব নির্জন হয়ে বসে থাকে সেই আবহমান কালের বগা বগি।
এই জীবন তো আদতে এক ফাঁদ।
আমরা সবাই "ফান্দে পড়িয়া কান্দি"!
আর কার্তিকের কুয়াশায় ভেসে আসে গান_
"চাষার মুখত আর
নাইরে সেই গান"।
জীবনের অদ্ভুত এক মায়া আছে।দূরাগত হাওয়ায় বুঝি জীবনেরই ঘ্রাণ ভেসে আসে!কত কত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়।গল্প হয়।মানুষের জীবন জুড়ে না ফুরোন কত গল্প।রতিকান্ত পাইকারের গল্পে কখন বুঝি মিশে যেতে থাকে হাতি জোতদারের হলুদ খামারবাড়ি।আমি নদী পেরিয়ে,চরের পর চর পেরিয়ে হেঁটে যেতে থাকি এরাজ ধনীর জোতে।এইসব আসা যাওয়ার মাঝখানে ছায়া ফেলে জোনাকির আলো। কোথাও দোতরা বেজে ওঠে।দেহতত্ত্বের গান উঠে আসে আর ঘুরে বেড়াতে থাকে টাড়ি বাড়ি নদী উপত্যকা জুড়ে।
এভাবেই জীবন কিভাবে বুঝি উদযাপন হয়ে ওঠে!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন