মধ্যবয়স/ মুড সুইং/ আধ্যাত্মিক দিক।
আধ্যাত্মিকতা কথাটা খটোমটো। ইংলিশ সহজ। স্পিরিচুয়ালটি। spirituality.এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সংযোগ নেই। অর্থাৎ ধার্মিক লোক স্পিরিচুয়াল হতে পারে কিন্তু স্পিরিচুয়াল ব্যক্তিকে ধার্মিক হতে হবে না।
মধ্য বয়স আলোচনা করতে গিয়ে আধ্যাত্মিকতা কেন এলো , সেটা বোঝাতে গেলে, বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
ধৃ + মন = ধর্ম। ধৃ মানে হল ধারণ বা গ্রহণ করা আর মন হল অন্তর , আত্মা পরমাত্মা। তাহলে, ধর্মের অর্থ হল , মন যাহাকে গ্রহণ করে শান্তি লাভ করে।
এখন ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রদায় কেন্দ্রিক। বৃহৎ অর্থ হারিয়ে গেছে। মধ্যবয়সে পৌঁছে মানুষের মন টাল মাটাল হতে থাকে। শরীর এবং মন উভয় দিকেই পরিবর্তন আসতে থাকে। পুরনো দিনের কথা বড় বেশি করে গ্রাস করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, লেখক লেখিকা মধ্যবয়সে পৌঁছে অতীত চারণ করেন বেশি। পুরানো সেই দিনের কথা... আক্রান্ত করে। কলেজ লাইফের দুরন্ত জীবন...খুব মনে পড়ে। এইরকম একটা সময়ে বেশ অনেকেই ধর্ম করতে ছোটেন। এমনও বলতে শোনা যায়: বুড়ো হতে চলেছি। ধর্ম কর্ম নিয়ে থাকি এইবার।
অতঃপর আশ্রম এবং বাবাজীর খপ্পরে পড়তে বেশি দেরি হয় না।
তাহলে? ঈশ্বর সাধনা করতে হবে না? দান ধ্যান পুজো কিছুই লাগবে না?
কিছু পুজো বাড়ির পরম্পরা। সেগুলি রক্ষা করতে হয়। কিন্তু, মধ্য বয়সে হঠাৎ করে ধর্মে আসক্তি হলে সমস্যা হয় এটাই, ভীষন ভাবে আচার সর্বস্ব হয় মন। অর্থাৎ, এই বারে এই খাব না। অমুক সময় ঘরে থাকব। আরো হাজার কিছু। কেউ কেউ প্রচন্ড রকম শুচি বাই হয়ে পড়েন। মহিলাদের ক্ষেত্রে বেড়ে চলে বাতিক। সুস্থ শরীর কে ব্যস্ত করে তোলার নানা প্রক্রিয়া চলে। মধ্য বয়সে মনের জানালা আপনা থেকেই সঙ্কুচিত হতে থাকে। ধর্ম যদি সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহার করা হয়, তবে জানালা বন্ধ হয়ে যায় পুরোপুরি। মন নষ্ট হতে থাকে। বিকার গ্রস্থ হতে থাকে।
***********
এখানেই প্রয়োজন spirituality. ধর্মকে ঠিক মত ব্যবহার করা যায়, যদি মানুষটা আধ্যাত্মিক হয়। অর্থাৎ পরিণত হয়। কোনো কিছুই অন্ধের মত বিশ্বাস করে আঁকড়ে ধরলে বিপদ হতে পারে। বয়সের তেজ যত ঢলে যেতে থাকে, লাঠির প্রয়োজন তত বেশি। মন সর্বদাই ভাবতে থাকে: অমুক এলে কি ভালো হয়। অথবা, আগে কত লোক আসত, এখন কেউ আসে না। আনন্দের উৎস, যদি ব্যক্তি বিশেষ অথবা বস্তু বিশেষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন অনুগ্রহের পাত্র হয়ে দাঁড়াতে হয়। সবচেয়ে খারাপ লাগে, যখন বোঝা যায়, কেউ উপেক্ষা করছে। বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে আছে। খারাপ লাগলেও, সঙ্গ ছেড়ে দেবার মত মনের জোর পাওয়া যায় না। একা কি করে ভালো থাকা যায়?
********
আধ্যাত্ম কিতা কিভাবে সাহায্য করে:
আবারও বলছি, ধর্ম বা আচারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। তাহলে? দরকার কি? এটা একটা থেরাপি। মনের অবস্থা উন্নত করার থেরাপি। যেমন, মানুষের শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী জীবন সম্পর্কে তাদের গভীর ভ্রান্ত ধারণা। অনেক মধ্য বয়েসী মনে করেন, দুঃখিত হয়ে কিছু পাওয়া যায়। কষ্টের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে লোকের কাছে সহানুভূতির আশা করে।
***
আধ্যাত্মিকতার অর্থ হল, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি করা। আমার আনন্দের উৎস আমি নিজে... এই সত্য হৃদয়ে আত্মস্থ করা। মধ্যেবয়সে এসে আমরা অনুভব করি, পার্থিব অনেক কিছু আছে। যেটা নেই সেটা হল আনন্দ। শান্তি। কারণ, জীবন কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বৈষয়িক উপার্জনে। শান্তি আনন্দ এগুলি যে উপার্জনের বিষয়, সেকথা কখনো ভাবার অবসর ছিল না।
******
আধ্যাত্মিকতা কিভাবে সাহায্য করে।
&&&&&&&&&&&&&&&&
There is something greater than myself, something more to being human than sensory experience, and that the greater whole of which we are part is coshmic or divine in nature.
খুব কটমট কথা। আসলে, এটা খুব সরল এক উপায়। মনের জমিতে নিয়মিত আলো, জল, সার ইত্যাদি দিয়ে তাকে উর্বর করে রাখা। তাহলে, আবেগের উপর সংযম আসবে। শরীর মন আবেগ শক্তি এগুলির সঠিক পরিচর্যা করলে,ধীরে ধীরে ভিতরে এক শক্তির জন্ম হয়। বিচার বুদ্ধি সতর্ক হয়। বোধ পরিণত হয়। জীবন তখন আলাদা মাত্রায় ধরা দেয়।
**********
মানুষকে নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হয়। নিজের গন্ডীর বাইরে গিয়ে তাকালে তবে বৃহতের অনুভূতি হয়। পার্থিব ছাড়তে শিখতে হয়। জলে দুধে মিশে থাকবে, দুধটুকু তুলে খেতে হবে। সংসার সর্বস্ব হতে নেই। তাহলে, সংসারের অবহেলা মনে ধাক্কা দেয় না। এই অভ্যাসটা হল আধ্যাত্মিকতা। জীবনের শিক্ষা মাত্র। যার জন্য আমরা আনন্দে থাকতে পারি।
********
বোঝা গেল, নিজের মনের গভীরে প্রবেশ করতে জানা হল এই প্রক্রিয়ার উৎস। যেমন, সাঁতার জানি, রান্না জানি, যৌনতা জানি তেমনি এটাও জানতে হয়, কিভাবে নিজের ভিতর হতে আনন্দের উৎস খুঁজে পেতে হয়। এই জানার অপর নাম spirituality. মধ্যবয়সে সবচেয়ে বেশি কাজের হল এই অভ্যাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন