আলেকজান্ডারের স্বপ্ন
তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। শুধুমাত্র আমি যা যা করলাম সেটুকুই দয়া করে সবিস্তারে জানিও। তাহলেই বুঝতে পারবে তোমাদের রাজা। এবার তুমি এসো। ক্ষুব্ধকণ্ঠে বললেন অ্যারিস্টটল।হতাশ হেরাস সম্রাটের গুরুর মাথার ব্যামো আছে নিশ্চিত হয়ে ঘোড়ার পিঠে গিয়ে উঠল।
(৩)
আলেকজান্ডারের কাছে এসে আধোবদনে
দাঁড়াল হেরাস। ম্যাসিডোনিয়ার বীর রাজা তাকে দেখে খুশি হয়ে উঠলেন। এবার সহজেই সংকট
নিরসন করা যাবে। ভাবলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরামর্শ দিলেন গুরুদেব?
আলেকজান্ডারের দিকে একবার তাকিয়েই মুখ
নামিয়ে নিল হেরাস। ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল, আমাকে মার্জনা করবেন মহারাজ! আমি কোনও
পরামর্শ আনতে পারিনি তাঁর থেকে!
তাঁর সঙ্গে কি তোমার দেখা হয়নি? তিনি কি এখন এথেন্সে নেই?
দেখা হয়েছে মহারাজ। উনি আমার সবকথা
শুনলেন মন দিয়ে। কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও মতামত দিলেন না!
আজ তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তি নিশ্চিত
জেনে কুঁকড়ে রইল হেরাস।
আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছ! এত বড়
স্পর্ধা তোমার?
বিশ্বাস করুন মহামান্য! উনি সত্যিই
কোনও পরামর্শ দেননি। আমার কথা শোনার পরেও ওনার কাণ্ডকারখানা দেখে আমি অবাক
হচ্ছিলাম। শেষে বললেন, আমি যা যা করেছি সেটাই বোলো তোমাদের রাজাকে। তাহলে সে বুঝতে
পারবে।
গুরুদেবও কি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে
হাত মেলালেন! ভাবলেন আলেকজান্ডার। নাকি আমাকে মিথ্যে কথা বলছে এই সেনা? গুরুদেবের
সুপরামর্শ হয়তো জানিয়ে এসেছে আমার শত্রুপক্ষকে! মাথা গরম হয়ে উঠছে তাঁর। তবু
বিচলিত না-হয়ে জানতে চাইলেন, গুরুদেব ঠিক কী কী করছিলেন আমাকে খুলে বলো।
এবার পূর্ণ চোখে তাকাল হেরাস। অবধারিত
মৃত্যুর হাতছানি এগিয়ে আসছে তার দিকে বুঝতে পেরেছে সে। তবু গুরুদেবের সমস্ত
কাণ্ডকারখানা সে বিস্তারিত জানাল।
প্রথমদিকে আলেকজান্ডার কিছুই বুঝতে
পারছিলেন না। পরে যখন বুঝতে পারলেন গুরুর ইঙ্গিত, তখন তাঁর মুখে ফুটে উঠল হাসি।
বললেন, আমি বুঝেছি গুরুদেব কী বলতে চেয়েছেন। দীর্ঘ পথশ্রমে তুমি ক্লান্ত। এখন
বিশ্রাম নাও। তার আগে সেফাস্টিয়ানকে একবার ডেকে দিও।
এসবের বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারল না
হেরাস। মহারাজ মৃত্যুদণ্ডের বদলে তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, এতেই তার ধড়ে
প্রাণ ফিরে এল। দ্রুত সে সম্রাটের সামনে থেকে সরে গেল।
প্রায় ছুটতে ছুটতে হেফাস্টিয়ান চলে
এলেন সম্রাটের কাছে। এসেই জানতে চাইলেন, কী সংবাদ এনেছে হেরাস। আমি জানতে চেয়েছিলাম
মহারাজ। কিন্তু ও কিছুই না-বলে চলে গেল। এতটা বেয়াদবি তো করার কথা নয়! এই সেনাকে
হেফাস্টিয়ানই নির্বাচন করে দিয়েছিলেন। তাই উদ্বিগ্নতা তাঁকে ঘিরে রেখেছে।
আলেকজান্ডারের চোখমুখ থেকে ঝরে পড়ছে
আলো। তিনি বললেন, হেরাস তোমাকে কী আর বলবে! ও নিজেই তো জানে না গুরু অ্যারিস্টটল
কী নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।
সম্রাটের কথাটা কেমন যেন হেঁয়ালির মতো
মনে হল হেফাস্টিয়ানের কাছে। যে লোকটা নির্দেশ বয়ে নিয়ে এল, সে নিজেই জানে না! এ
আবার কেমন কথা! সংশয় নিয়ে বললেন, আমাকে সব খুলে বলুন মহারাজ। আমি তো কিছুই বুঝতে
পারছি না।
আলেকজান্ডার অ্যারিস্টটলের
ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ গুছিয়ে বললেন হেফাস্টিয়ানকে। কিন্তু তাঁর মাথায় কিছুই ঢুকল না।
জিজ্ঞাসা করলেন, এমন অদ্ভুত আচরণের মানে কী সম্রাট?
গুরুদেব বোঝাতে চাইলেন বৃদ্ধ সেনাপতি
আর সৈন্যদের অব্যাহতি দিতে, যাতে তরুণরা দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। তাই তিনি
গাছের বড় বড় কয়েকটা ডাল ছেঁটে দিয়েছিলেন।
আর হলুদ ডালগুলো? জানতে চাইলেন
হেফাস্টিয়ান। তখনও তাঁর ঘোর কাটেনি।
হলুদ ডালপালা কাটার অর্থ হল যারা
কমজোরি, বা যুদ্ধের ব্যাপারে অনাগ্রহী, তাদের যুদ্ধের আয়োজন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে
হবে। কেটে ফেলা ডালপালাগুলো মাটিতে পুঁতে দেওয়ার মানে কী জানো হেফাস্টিয়ান? এর
অর্থ শত্রুদের এদের নিশ্চিহ্ন করে দাও।
কিন্তু মহারাজ, গুরুদেব তো খোলাখুলিই
বলতে পারতেন দূতের কাছে। অন্তত একটা পত্র লিখে জানিয়ে দিতে পারতেন!
(ক্রমশ:)
চিত্র- অন্তর্জাল
\
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন