রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১

যুগান্তর মিত্র

 



আলেকজান্ডারের স্বপ্ন 


হেফাস্টিয়ান! অ্যারিস্টটল হলেন মহান গ্রিক দার্শনিক। তাঁর বুদ্ধিমত্তা কী পরিমাণ আমি জানি। আমি তাঁর কাছে পাঠগ্রহণ করেছি। তিনি একজন অপরিচিতকে বিশ্বাস করবেন কী করে? তাকে আমিই যে পাঠিয়েছি, তেমন নিশ্চিত হবেন কী করে তিনি? ধরা যাক, আমি পাঠিয়েছি সেটুকু বিশ্বাস করলেন। কিন্তু তিনি মৌখিক যে পরামর্শ দেবেন বা পত্র দেবেন, সেটা যে আমার দূত শত্রুপক্ষকে জানিয়ে দেবে না, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায়? তাই আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানেন, এই ছাত্রের পক্ষে তাঁর সংকেত বোঝা সম্ভব, কিন্তু সকলের পক্ষে নয়। এজন্যই তিনি আমার কাছে নমস্য ব্যক্তি। এই কারণেই আমি তাঁকে এতটা ভরসা করি হেফাস্টিয়ান! 
উজ্জ্বল হয়ে উঠল হেফাস্টিয়ানের মুখ। তিনি বলে উঠলেন, সত্যিই মহান  গুরু অ্যারিস্টটল। তাঁর বুদ্ধি ও কৌশলের কাছে আমরা নিতান্তই শিশু। তবে মহামান্য সম্রাট, আপনিও আমাদের মহান রাজা। ঠিক তাঁর কৌশল বুঝতে পেরেছেন। এমনি এমনি তো আর বিরাট ভূখণ্ডের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠেননি! এত দেশ জয়, এত রাজাদের বশ্যতা স্বীকার তো এমনি হয় না। আপনি বুদ্ধিমান এবং মহান। 
হেফাস্টিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে সম্রাট আলেকজান্ডার প্রবীণ সেনাপতিদের সরিয়ে দিলেন ক্ষমতা থেকে। বয়স্ক কয়েকজন সেনাকে বাহিনীর পেছনের সারিতে নিয়ে গেলেন। যারা সম্রাটকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের প্রাণদণ্ড দিলেন একে একে। আর এতেই কাজ হল।  
কিছুদিনের মধ্যেই সেনাবাহিনীতে  শৃঙ্খলা ফিরে এল। তরুণ সেনাধ্যক্ষরা খুশি মনে আর উদ্যমে কাজ শুরু করে দিলেন। এবার আলেকজান্ডার নিশ্চিন্ত। তাঁর স্বপ্ন ভারত অভিযান। সেই অধরা স্বপ্নের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।   
দিনাবসানের সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। আলেকজান্ডার তাঁবুতে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগেও বন্ধু হেফাস্টিয়ান ছিলেন তাঁর সঙ্গে। এখন তিনি একা। দিনের আলো মুছে গিয়ে নেমে এল সন্ধ্যা। দ্বীপাধারে আলো জ্বেলে দিয়ে গেছে নির্দিষ্ট কাজের লোক। আকাশে লক্ষ কোটি তারা ফুটে উঠে ঝলমল করছে। সেদিকে তাকিয়ে আছেন সম্রাট। কিছুক্ষণ বাদে এসে দাঁড়ালেন তাঁবুর বাইরে।  
রোক্সানেকে তাঁর কাছে আসার জন্য খবর পাঠিয়েছিলেন। সডগিয়ার ব্যারণের কন্যা রোক্সানে। অপূর্ব তাঁর শ্রী। প্রথম দেখাতেই আলেকজান্ডার মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন আগে তাঁকেই বিবাহ করেছেন তিনি। রোক্সানে যখন মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান, আলেকজান্ডারের সমস্ত ক্লান্তি কেটে যায়। অদ্ভুত এক মাদকতায় ভরে যায় তাঁর মনপ্রাণ। 
এবার ভারত জয় করতে পারলেই তাঁর যুদ্ধ অভিযানের সমাপ্তি ঘটবে। তিনি ফিরে যাবেন নিজের দেশে, ম্যাসিডোনয়ায়। সেখানে গিয়ে রোক্সানের সঙ্গে শুরু হবে তাঁর নতুন জীবন। 
পিছন ফিরে দেখতে পেলেন রোক্সানে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। আলেকজান্ডার তাঁর জন্য অপেক্ষা না-করে নিজেই এগিয়ে গেলেন কাছে। আগামীকালই ভারত অভিযানে যাত্রা করবেন। দু-হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রেয়সীর দিকে। যে ঝলমলে তারাগুলো তিনি একটু আগে দেখছিলেন আকাশের কালো চাদরের গায়ে আঁকা আছে, সেই তারাগুলোই যেন রোক্সানের চোখেমুখে ঝলসে উঠছে। মুগ্ধ হয়ে সেই ঝিকিমিকি তারা দেখতে থাকলেন রাজা আলেকজান্ডার। ভারত অভিযানের পূর্বরাত্রে তাঁর মন খুশিতে নেচে উঠল।
( সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন