রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১

সুজয় যশ

                                       


এই সংখ্যার কবি সুজয় যশ।  হৈড়গ্রাম, হাটগোবিন্দপুর, বর্ধমানের  নিবাসী । 

[১]
' বৃহন্নলা '
-----------------

সারারাত গর্ভদ্বার পাহারায় সময়!
তবু ভোরের আলোয়,
জন্ম নিল বৃহন্নলা ।
সমাজ মুখ ফিরিয়ে ধৃতরাষ্ট্র ।

প্রত্যেকটা সূর্য ঘড়ির কালো ছায়া
শুধু বয়স বাড়িয়ে তোলে।
রোজ , নিজের উলঙ্গ শরীর ছুঁয়ে
মানুষের অসম্পূর্ণ সংঞ্জা খোঁজে ।

গলায় রক্ত দলা পাকায়---
চিৎকার করে বলা হয়ে ওঠে না ---
' আমি নারী থেকে পুরুষ ---
পুরুষ থেকে নারী---
তথাকথিত সমাজবৃক্ষে, আমিও মানুষ ' !

চারদেওয়ালে বন্দি পৃথিবী---
ধূসর মাটি, চোখের কোণে---
শূন্যে ভালোবাসা খোঁজে নীল শিরা।

সব পুরুষ নারী খোঁজে ---
নারী খুঁজে চলে পুরুষ ---
প্রেম খোঁজে না কেউ,
ভালোবাসা দেখে না কেউ----
বৃহন্নলার চোখে !

জোর করে আইন জন্ম নেয়---
অধিকার চেপে বসে সমাজে।
মাটি তবু ধূসর,  ক্লান্ত!
সমাজ হেসে চলে মুখ টিপে---
মানুষের চামড়া গলে রক্তের সাথে ।

একদিন প্রেম আসে হামাগুড়ি দিয়ে,
ভালোবাসা ফিরে আসে ছোট্ট আঙুল ধরে।
শিশু মন হাত রাখে গালে ---
চুমু খায় চোখে---
শিহরনে চোখ খোলে, বৃহন্নলা !

হাজার হাজার শিশু
এগিয়ে আসছে মানুষ হয়ে---
যৌনাঙ্গ হীন সবুজ সমাজে।

বৃহন্নলার শরীর জুড়ে
মানুষের গন্ধ !




[২]
' কবি সম্মেলন '

-------------------------

সারা রাত বুকে বালিশ চেপে
একটা কবিতা লিখলাম,
' মানুষের ইতিহাস ' !
খোলা মাঠে কবি সম্মেলন----
অনেক বাহবা,  হাততালি ।
শেষ ভিড়ে
উঠল, একটা শীর্ণ হাত---
বলে গেলো----
" তোমার কবিতা, আমায় ভাত দিতে পারল না " !

হাততালি গুলো
আমার পাঁজর গুড়ো করে ফেলল।
পাণ্ডুলিপি জুড়ে
আমার গুড়ো হাড়ের গন্ধ !

এখন আমি
কবিতা রান্না করি।
ভাত ফোটাই
আমার পাণ্ডুলিপির আগুনে ।
শুধু অপেক্ষায় আছি
পরবর্তী কবি সম্মেলনের ।





[৩]
' অনুভূতি '
-------------------

তোমার আদর গুলো
ছায়ার মত, শরীর জুড়ে হাঁটে ।
সেই লজ্জা নুপুর
সকাল থেকে, আলতা পায়ে ছোটে।

বড় ইচ্ছে করে
এক পোশাকে, দোলনামাখা চোখে----
তোমার ইচ্ছে ডানা
এক বিকেলে, হলদে পাখির বুকে ।

তোমার আগুন শরীর
লতার মত, কামড়ে ধরে চোখ।
দেখি বৃষ্টি ভেজা জলনুপুরে
নদীর গোপন স্রোত ।

তুমি উড়তে পারো
বুক আকাশে, রঙিন ঘুড়ির মত।
আমি শিকড় জুড়ে
তোমার বুকে, লিখব গল্প যত।

তুমি চুপটি করে
শাড়ির খুঁটে, আমায় বেঁধে রেখো।
বুনো লতার মত
জঙ্গলী ফুলে,ছায়ার মতোই থেকো।




[৪]
' কি হবে '
---------------

কি হবে,
যদি একমুঠো মাটি ছিঁড়ে নিই
তোমার হৃদপিন্ড থেকে!
যদি ভুলে যাই ,জরায়ু উপড়ে
আর একটা মাংসপিন্ড গিলে খেতে!

কি হবে
যদি মেঘের পালক ছিঁড়ে
তোমাদের আকাশ সাজাই!
গাছের দম বন্ধ করে
আর একটা কৃত্রিম ফুসফুস বানাই!

কি হবে
যদি সব নদী মোহনা ভুলে
ফিরে যায় উৎসের সন্ধানে!
যদি শহরের গলি জুড়ে
রাশি রাশি ক্যাকটাস জেগে ওঠে!

কি হবে
যদি একদিন সব শরীর
আগাছার প্রেমে পড়ে!
সঙ্গম ভুলতে থাকে
উদ্ভিদের শিকড় উপড়ে নেওয়া মাটি!

আমরা জরায়ু পাল্টে নেব তখন !
কিছু ভাঙাচোরা দিন
মুছে নেব পকেট রুমালে।

কই কিছুই তো হলো না এখনো!



[৫]

' রাস্তা '
----------------

ঢেউ আছড়ে পরার আগেই
শুকিয়ে নুন গুঁড়ি!
লবণাক্ত রক্ত থমকে
গতি হারানোর ভয়ে ।
ফিরে আসার অঙ্গীকার বুকে
জঙ্গলের ওপারে নূপুরের শব্দ ক্ষীণ------
কালো বেড়াল রাস্তা আগলে বসে,
রাস্তা পাল্টায় নদী ------
ঝাউবনে নূপুরের শব্দ!




[৬]
' স্বপ্নের রাত '
---------------------

বাইপাস ছুঁয়ে
ছুটে চলে আমার স্বপ্নের রাত,
বুকের টানেল ভেঙে
কুয়াশার মতো বাড়ে নিঃস্ব ইচ্ছে ।
জড়াজড়ি সিগন্যাল
ছুঁয়ে দেখে ছায়ার রাস্তা,
রাতের অনুভূতি
খুলে নেয় অবিনশ্বর মন।
ভালোবাসা বাড়ছে
নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে ,
অন্ধকার এখনো
আমার নিঃসঙ্গতার প্রেম মেখে।

আগুন মেখেছে সোহাগের রাত,
গোটা বাইপাসে আমার গুড়ো !
ভালোবাসার আগুনে
বাইপাস জুড়ে গলে বিটুমেন,
আগুন মাখে
আমার বুকের পুরনো বরফ!





[৭]

' অবৈধ '
-----------------

ক্লান্ত চোখ আদর খোঁজে ,
ঘুমের শরীরের অবৈধ গন্ধ
নিজেকে বিবস্ত্র করে !

ওবেলার বাসি ভাতের গন্ধ
খিদের ঠোঁটে চুমু খায়,
খিদের শরীর কামুক হয়ে ওঠে
পর পুরুষের ছোঁয়ায় ।

মুখের সামনে আধঢাকা শরীরে, বৌ
প্রেম মাখিয়ে দিচ্ছে বাসি ভাতে ।
শরীরে লেপ্টে থাকা ক্লান্তি, পরকীয়া চোখে
ওদের নির্লজ্জ প্রেম দেখে ।

আঙুল কে আস্কারা দেয় মন,
আদর মেখে ভাগ করে খায়
বাসি ভাতের প্রেম!
ক্লান্তি মুখ লুকোয় সতিনের অস্থির জঠরে।

ক্লান্ত চোখ আদর খোঁজে
ঘুমের স্তনবৃন্তে ,
আধখোলা শরীরে ওরা , সারারাত !






[৮]

' সোনালী মাটি '
---------------------------

(ক)
পাথর ভাঙতে ভাঙতে
খুঁজে পাওয়া গেল সোনালী মাটি,
সহস্র যোজন দূরে
খড় কুটোয় পোড়া মাটির পাহাড়ে।
বুনো আগাছায় ঢাকা জিভ,
পাহাড়ের নুন চেটে, বুঝতে চাইছে
জীবন পোড়ার গন্ধ!

(খ)
এবার বুড়িটা ঠিক মরবে !
কেউ  ভাবতেই পারেনি
রাস্তা পার হওয়া বাচ্চাটাকে
এক হেচকায় ফেলে দিয়ে -----
বুড়ি নিজেই পার হবে,
সোনালী মাটির খোঁজে , অন্ধকারে!

(গ)
ভালোবাসার সব এঁটো ধুয়ে,
আদিম হওয়ার লোভে
পাথর ভাঙতে রাজি সবাই ।
সোনালী মাটি উধাও!
বুড়িটা পৌছে গেছে পাহাড়ের চূড়ায়।

(ঘ)
বুড়ির পাকা চুলে কালবৈশাখী ,
নিজেকে গুড়ো করে হাসছে
শুক্ন হাড়কঙ্কাল বুড়ি!
হাওয়ায় উড়ছে সোনালী মাটি,
বুড়ি নিঃস্ব!

(ঙ)
পাহাড়ের নিচে উলঙ্গ হচ্ছে মানুষ
জিভের আগাছা মাড়িয়ে
এবার নতুন খেলা,
বুড়ি ছোঁয়া!





[৯]

' ব্ল্যাক ক্রমোজোম '
---------------------------

আমার চোখের নোনা দেওয়ালে,
বৃষ্টিরা আজ মুখচোরা ।
আমার আঙুল নীল লিটমাস,
স্মৃতির পাতায় আনকোরা ।
আমার শাখায় গুড়ো ক্যাকটাস
শিকড় কাটে মাঝরাতে।
আমার পৃথিবী অনেক পুরনো
শৈশব খোঁজে কার সাথে?

তোমার জানলা চোখ বুজে আছে
বৃষ্টি আগলে বারান্দায় ।
তোমার দু চোখে লাল লিটমাস
স্মৃতিরা কাঁদছে একলা হায়!
তোমার কবিতা জ্বলছে ধোঁয়ায়
মাটি হারিয়েছে ক্রমোজোম ।
তোমার পৃথিবী কংক্রিট ঘেরা
বিষের প্যাকেটে মাইক্রোজোম।

আমার পকেটে ডি এন এ ঠাসা
তোমার মুঠোর অপেক্ষায় ।
পাটিগণিতের শতকরা মেপে
মাটির পৃথিবী উপেক্ষায়।

সূর্যের কুঁড়ি
ভোর রাতে ফোটে।
তবুও পৃথিবী
রোজ কেঁদে ওঠে।
------------------- @@ ----------------


[১০]

' ঈশ্বরী '
--------------------

তোমার মনের ভেতর,
আমি শিশুর মতো ঘুমিয়ে ।
তুমি আঁচল ছোঁয়ালে,
নিদারুণ ভালোবেসে,  লুকিয়ে ।

আমার রুগ্ন মন,
তোমার চুলের গন্ধে সবুজ।
তুমি বৃষ্টি ভেজালে,
আমার আকাশ এখনো অবুঝ ।

তোমার বাগান জুড়ে,
অবুঝ খেয়াল হেসে ওঠে।
তুমি গাছ হয়ে ওঠো,
আমার অসুখ করা ঠোঁটে ।

তোমার বাকলে দেখি,
আমায় জড়িয়ে রাখা দাগ।
তুমি হয়ে ওঠো, ঈশ্বরী------
ঈশ্বর নতজানু,  নির্বাক!








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন