সাঁঝবিহান --পর্ব ৫
মনের মধ্যে অস্থির একটা চঞ্চলতা সতীশের ।একবার শাল্মলীকে লিখবে বলে কাগজ কলম হাতে নেয় আর একবার তা রেখে ঘরময় হেঁটে বেড়ায় ।কি বলবে মেয়েটাকে ? বলবে সাঁঝ ও তার পরিবারকে ঘিরে ওর অবচেতনে একটা অস্থিরতা তৈরী হয়েছে ?নানা ,কিকরে বলবে এসব ও?
কতো কি ভাবনা ভীড় করে আসে ।কিন্তু লিখে উঠতে পারেনা ।শুধু লেখে -"তোর সাথে আমার অনেক গল্প আছে শাল্মলী ।আজ জঙ্গলের পথে ফেরার সময় ইচ্ছে করে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম জানিস ।ভেবেছিলাম কোনো গন্তব্যেই ফিরবনা নির্ভুল ঠিকানা চিনে ।"
কিন্তু কি এক সংস্কার অবশ চেতনা কে তাড়া করে বেড়ায় ।অজানা কে জানতে এসে এই অসহায় পরিবারটির কষ্টকর জীবনযাত্রা ওর জানা জগৎটাকে ওর থেকে দূরের করে দিয়েছে ।এতে ওর আক্ষেপ নেই যদিও কোনোও, শুধু এই বদলে যাওয়া জীবনে শৈশব থেকে জমিয়ে রাখা স্বপ্নটার বদল হয়ে গেছে ।একথা এবার ওকে বলার সময় এসেছে ।কিন্তু ও জানেনা এই সত্যের মুখোমুখি করাবে কি করে শাল্মলী কে ।
গতকাল সতীশ চলে আসার পর গ্রামের হোমরাচোমড়াদের নিয়ে কলমির বাড়ীতে চড়াও হয়েছিলো গোমস্তা ।শাসিয়ে গেছে কলমিকে সতীশ যেন ওখানে আর না আসে ।বলেছিল যদি সতীশকে কলমির বাড়ির আশেপাশেও দেখে তবে ওর লাশ নাকি কাকে শকুনে খাবে এমন ব্যবস্থা করবে ।আর যদি সে সাঁঝকে বিয়ে করে তবে আলাদা কথা ।কিন্তু ও মেয়েকে বিয়ে করে আর কি হবে এই বলে তারা নিজেদেরই মধ্যে মস্করা করে ।আর এতেও যদি কাজ না হয় তবে সাঁঝের যা হয়েছিলো সেটা ওর ছোট দুই মেয়ের সাথেও হতে পারে । কলমি জ্বলে ওঠে এই প্রথম ।মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে বলে 'হারামির বাচ্ছারা' ।এরপর ফজিরাম কে সাথে নিয়ে থানায় যায় নালিশ জানাতে ।
ফজিরামই এসে জানালো সব ।বলল ছোট দারোগাবাবুও নাকি খুব হেনস্থা করেছে ।জিগ্গেস করেছে সতীশবাবু কি মা ও মেয়ে দুজনকেই........!এ পর্যন্ত বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ফজিরাম । আরও বলল কলমি নাকি লজ্জাতেই আসতে পারেনি ওর কাছে ।সে নাকি বলছে বারবার" আমার মেয়েটার চিকিৎসা করতে এসে এ কি বিপদে পড়তে হলো বাবুকে ফজি দাদা! "
এরপর কুয়োতলিতে জল তুলতে তুলতেই ফজিরাম বলে,
---বাবু যে কোনোদিন হয়তো আপনার নামে ওয়ারেন্ট বেরোবে ।সতীশ ঘেন্নায় তেতো হয়ে যাওয়া মুখের থুথুটা ফেলে জিগ্গেস করে
--কিসের ওয়ারেন্ট ?
----দারোগাবাবুর ইচ্ছাই ওয়ারেন্ট ।
---আচ্ছা
---আসলে ওরা আপনাকে এই দেশ ছাড়া করতে চায় বদনাম দিয়ে।
---আচ্ছা
---তবে তুমি চিন্তা করোনা বাবু, আমি গ্রামের লোকেদের জানিয়েছি
সবাই তো আর ওই জানোয়ার দের মতো নয় ।তোমাকে জবরদস্তি করলে আমরাও দেখে নেবো ।
সতীশ ঘেন্নার মধ্যেও ওই অশিক্ষিত সরকারী উর্দিধারিদের বুদ্ধির বহরের কথা ভেবে হাসে ।ফজিরামকে বলেনা কিছুই ।এই মানুষগুলোর কাছে ওর অনেক ঋণ । তাছাড়া শহুরে শিক্ষিত মানুষ যা করেনা এরা তাদের জীবন দিয়ে হলেও সেটা করে ।আত্মীয় শব্দটার প্রকৃত সত্ত্ববহনকারী হলো এরাই ।ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ।খানিক আগের তেতো ভাবটা কেটে গিয়ে ওর মনটা কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে ওদের প্রতি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন